নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])
অফিসের একটা রুমে মাসখানেক ছিলাম। এরপর আলাদা একটা বাসা নেওয়ার দরকার ছিল। রাজধানীর মালীবাগে অবস্থিত সরকারি কোয়ার্টারে একটা ফ্ল্যাটে ওঠলাম। ভাড়া তিন হাজারের মতো।
ফ্ল্যাটে দুটো বিশালাকার রুম। একটায় অ্যাটাচড বাথরুম। ব্যালকনিও আছে। যিনি ভাড়া দিয়েছেন (আনোয়ার। সচিবালয়ে চাকরি করেন। বাড়ি ভোলা জেলায়।), উনি একটা রুমে থাকেন। একটাতে আমি। যদিও উনি চাচ্ছিলেন আমি যেন উনার সাথে ডাইনিং রুমে থাকি, বাকি রুম দুটো যেন উনি ভাড়া দিতে পারেন; কিন্তু আমি রাজি হইনি। টাকা দিয়ে যেহেতু থাকব, ডাইনিংয়ে কেন থাকব? পারলে উনি রুমে লোক উঠান।
কয়েকমাস এখানে চলে গেল। নতুন লোক ওঠে না। আনোয়ার একদিন বললেন, “ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে দিয়েছি।” আমি একটু চিন্তিত হলাম। এখন বাসা খুঁজব কোথায়? বাসা খোঁজা বহুত ঝামেলার কাজ। ওদিকে আবার উনার দিকও তো দেখতে হবে। এত বড় ফ্ল্যাট থেকে তো উনার লাভ হচ্ছে না। ফ্যামিলি উঠলে তো পুরো ফ্ল্যাট চাইবে।
যাহোক, আমাকে চিন্তিত দেখে উনি বললেন, “আরেকটা যে বিল্ডিং আছে, আমরা ওখানে একটা রুম নেব। সাথে আরও একজনকে নেব।” তিন জন থাকা সমস্যা, কিন্তু খরচ বাঁচাতে পারলে তো ভালোই। আমি সে প্রস্তাবে রাজি হলাম।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছেলে (রোকন। বসুন্ধরা গ্রুপে চাকরি করেন। বাড়ি কুড়িগ্রামে।) আমাদের সাথে ওঠলেন। তো যে বাসাটায় আমরা উঠলাম, ওখানে তিনটে রুম। দুটো রুমে বাপ-ছেলে থাকেন (পরিবারের বাকি দু’সদস্য মা-মেয়ে অন্য জায়গায় থাকেন।), একটায় থাকি আমরা তিন জন।
কয়েকমাস পর পরিবারের সেই দু’সদস্য চলে এলেন। তখনই বাঁধল গোল। রান্নাবান্না করতাম না আমরা। অফিসে একটা ব্যবস্থা করে নিয়েছিলাম। আমাদের অন্য সদস্য রোকন মাঝেসাঝে রান্না করতেন। আনোয়ার মেসে খেতেন। বাড়িওয়ালী আসার পর দেখা গেল উনি বেশ বিরক্ত হচ্ছেন। পরে জানা গেল, উঠার সময় আনোয়ার উনাদের বলেছিলেন আমরা রান্নাবান্না করব না। মানে গ্যাস খরচটা উনাদের বেঁচে যাবে। তাই কমে ভাড়া দিয়েছেন।
আরও জানতে পারলাম, আমাদের দু’জনের কাছ থেকে ছ’হাজার টাকা নিয়ে আনোয়ার মাত্র এক হাজার টাকায় রুম শেয়ার করেন। রোকন আর আমি অবশ্য এতে বিরক্ত হইনি, কারণ, তার মাধ্যমেই তো আমরা এমন ভালো জায়গায় থাকতে পারছি। বিরক্ত হলাম এ কারণে যে, তিনি আমাদের সাথে সব বলে নিতে পারতেন। না বললেও অন্তত গ্যাসের ঝামেলা মিটমাট করে নিতে পারতেন।
এসব নিয়ে তার সাথে কথা কাটাকাটি হলো। কিন্তু কী আর করার! যদিও সব জেনে বাড়িওয়ালাসহ আমরা তাকে শল্টু (বাটপার) বলতাম, টাকা থাকা সত্ত্বেও ছেঁড়া লুঙ্গি পরায় টিটকারি করতাম। আনোয়ার সেসবের থোড়াই কেয়ার করতেন। তবে এটা সত্যি যে, তার ব্যবসায়িক মনোভাব ছিল বলেই কম পয়সায় থাকতে পারছেন। একটা বড়ো ফ্ল্যাট নিয়ে ভাড়া দিতে পারছেন। আমি কী করলাম জীবনে?
একটা সময় পর আমাদের বাসাটা ছেড়ে দিতে হলো। কারণ, বাড়িওয়ালাদের নিজেদেরই আরও একটা রুম দরকার ছিল। ছেলেমেয়ে দু’জন দু’রুম৷ আর বাড়িওয়ালা-বাড়িওয়ালির জন্য এক রুম। এ ছাড়া একটা ফ্যামিলি বাসায় তিন জন ব্যাচেলর থাকাটাও শোভনীয় দেখায় না।
২
কোয়ার্টারের সেই বাসাটা ছেড়ে দেওয়ার পর সে এলাকায়ই একটা মেসে ওঠলাম। তখন খুব অভাব যাচ্ছিল আমার। চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। যখন ভাবছি ময়মনসিংহে চলে যাব, টিউশনির লিফলেট বিতরণ করেও টিউশনি পাচ্ছিলাম না; তখন হঠাৎ একটা টিউশন মিডিয়ায় যোগাযোগ হলো। ক্লাস মাঝেমধ্যে করাব। কারণ, তাদের যথেষ্ট শিক্ষক আছেন। তারা প্রতিদিন ক্লাস দিতে পারবেন না। এ অবস্থায় তারা মুগদা এলাকায় একটা টিউশনির ব্যবস্থা করে দিলেন। যদিও দু’হাজার টাকার, তবে ওই মুহুর্তে ওই টাকাটাই আমার কাছে অনেক দরকার।
যে মেসটায় উঠলাম, সেটা পরিচালনা করেন আব্দুল আজিজ নামে একজন। হাতে বেশি সময় ছিল না, তাছাড়া কম পয়সায় একটা মেসে উঠতেই হবে; তাই হুটহাট উঠে গিয়েছিলাম। কিন্তু বিপদ হলো যে, রুমে প্রচুর ছারপোকা। কয়েকদিন যেতে যেতে বুঝতে পারলাম, মূলত ছারপোকার কারণে লোকজন এই মেসে বেশিদিন থাকে না। এছাড়াও দেখলাম খাবারের মান খুবই খারাপ। টিউশনি কোচিং করে এসে এত ক্ষুধার্ত থাকতাম, কিন্তু তবুও সেই খাবার মুখে রুচত না। প্লেটের আধেক ভাত ফেলে দিতে হতো। হুট করে যে মেস বদলাব, তারও সুযোগ নেই।
পেটে রাজ্যের খিদে, অথচ খাবার মুখে রোচে না। একটু ভাত খেয়ে এরপর থেকে ভাবলাম বাকি ভাতটুকু রেখে দেব। পরে গুঁড়ো দুধ দিয়ে খাব। এক-দু’দিন চললও এমন। হঠাৎ নোটিশ আসে এভাবে খাওয়া যাবে না। ওরা ভাবল আমি ডাবল ভাত খাই।
এই যখন অবস্থা মেসের ম্যানেজার আজিজ বললেন, মেসের জন্য এক্সট্রা একটা চার্জ দিতে হবে। যাকে ডাইনিং চার্জ বলে। যেখানে ভাত খেতে পারছি না, সেখানে ডাইনিং চার্জ দিতে হবে! কোনো উপায় নেই; থাকতে হলে এটা দিতেই হবে। ধার করে হাজার খানেক টাকা এনে দিলাম তাকে।
এর পর বেশিদিন অবশ্য ওই মেসটায় থাকিনি। টিউশনি বা কোচিং থেকে যখন অন্তত খাওয়া-পরার ব্যবস্থা হলো, অন্য আরেকটা বাসায় উঠে গেলাম। সেটা মালীবাগের মেসটার কাছেই। একদিন বাসা থেকে বেরিয়ে দেখি সামনের দেয়ালে আব্দুল আজিজের মেসের টু-লেট টানানো।
এখনও যখন ওই এলাকায় যাই, দেখি চৈত্র-কার্তিক বারো মাস টু-লেট টানানোই থাকে। ওই মেস সবসময়ই খালিই থাকে। কেউ উঠলেও বেশিদিন থাকে না। লোক উঠে, ডাইনিং চার্জ দেয়। এক-দু’মাস থেকে অসহ্য হয়ে চলে যায়। তাতে আব্দুল আজিজের ব্যবসা হয়।
২২ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:৩৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: বর্তমানে ঠিক আছি। অন্তত আগের চেয়ে ঢের ভালো।
২| ২২ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:৫৬
বিষাদ সময় বলেছেন: আপনার সংগ্রামের কথাগুলো পড়ে যাই, বেশির ভাগ সময় কিছু বলা হয় না। দেখবেন হোচট খেতে খেতে একদিন পোড় খাওয়া সফল মানুষে পরিণত হয়েছেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
২৩ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:০৬
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমি দুঃখবিলাসী মানুষ। সবকিছু স্বাভাবিক মনে হয় ।
৩| ২৩ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: মানুষ অন্যকে ঠাকাতে পারলে সে নিজেকে অনেক চতুর মনে করে, আমি তাদের ভিতরের রুপ দেখার জন্য মাঝে মাঝে তাদের সাথে বোকার অভিনয় করি।
২৩ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৫০
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আগে থেকে বুঝতে পারলে ভালো। তবে অনেকে শুরুতে এদের চিনতে পারে না। এরা খুব ধূর্ত; মানুষকে ইমোশনালিও ব্ল্যাকমেইল করতে পারে।
৪| ২৩ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১:০৫
সোনাগাজী বলেছেন:
চাকুরী আছে? বিয়ে করেছেন?
২৩ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১:১৬
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: চাকরি আছে। বিয়ের তোড়জোড় চলছে।
৫| ২৩ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১:৪৩
কাছের-মানুষ বলেছেন: আনোয়ার আপনাদের সাথে কাজটি ঠিক করেনি। আপনি পোর খাওয়া অভিজ্ঞ মানুষ। আপনি কি এখন ঢাকায় থাকছেন?
২৩ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৮:০৫
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: একজন আরেকজনকে ঠকিয়ে খাচ্ছে; এমনই চলছে। এবং এ ঠগবাজরাই এখন ভালো থাকছে।
হ্যাঁ। ঢাকায়ই থাকছি।
৬| ২৩ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫১
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: যে ঠকে সে বোকা নয় সে বিশ্বাসী।
২৩ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৮:১০
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আর ঠগেরা মানুষের বিশ্বাস হারায়। নিন্দা কুড়ায়।
৭| ২৩ শে মার্চ, ২০২৪ ভোর ৪:৫৭
শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনার এই জীবনের গল্পগুলো ভালো লাগে।
আপনি আপনার পেশাগত ক্ষেত্রে সফল হোন, আরও এগিয়ে যান এই কামনা করি।
২৩ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৮:১১
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
৮| ২৩ শে মার্চ, ২০২৪ ভোর ৫:০৮
ফ্রেটবোর্ড বলেছেন: যারা ধান্দায় পারদর্শী তারা ঢাকা শহরে খুব আরামে থাকে। এদের প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে লজ্জা শরম নাই।
২৩ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৮:১২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ঠিকই। এরা বেহায়া বলেই আরামে থাকে।
৯| ২৩ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮
নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: এখন আপনার কী অবস্থা?
২৩ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:২৪
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মোটামুটি ।
১০| ২৩ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮
BM Khalid Hasan বলেছেন: খুবই আগ্রহের সাথে এতক্ষণ আপনার কাহিনী পড়লাম। আশা করি এখন যেখানেই আছেন ভালো আছেন। ঢাকা শহরে ব্যাচেলরদের ভালো পরিবেশে সার্ভাইব করা যুদ্ধ করার সমান।
প্রাইম স্পট গুলোতে কেউ ব্যাচেলরদের ভাল ফ্ল্যাট দেবে না, মনে করে ব্যাচেলর মানেই নোংরা, অগোছালো, জোরে গান বাজনা করে, নেশা করে! আর কম খরচের মেসে থাকলে একেকরকম মানুষ আসে, শান্তি পুরোই হাওয়া! আমি এজন্য অনেক খুঁজে খুঁজে কিছু বাসাতে থেকেছি। ২০/২৫ টা বাসা দেখে একটা সিলেক্ট করতাম।
বাসা দেখার চেয়ে বাসায় কারা থাকে এবং খাবার মান কেমন এটা দেখতাম, যেন আনোয়ার বা আজিজ টাইপের কারো ডেরায় না উঠি। গত তিন বছর আজিমপুরে আর মিরপুরে খুবই ভালো ফ্লাটে আছি, মাঝে একটা ফ্যামিলির সাথে যাত্রাবাড়িতে সাবলেটেও ছিলাম।
একবার ভূল বাসা সিলেক্ট করে এক রাত তেকে ৬ হাজার টাকা লস করে চলে গিয়েছিলাম! সারাক্ষণ বাসায় লোকের উপদ্রব হতো, ভেন্টিলেটরের দিয়ে রাস্তায় বখাটেদের আড্ডার শক্ধে ঘুমানো যেত না।
২৩ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:৩৭
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ভালো বাসা পাওয়া আসলেই খুব কঠিন। এখন যে বাসাটায় আছি, আশপাশের লোকজন এত নোংরা; থাকতে অস্বস্তি হয়। টাকাটা কম বলে নয় মাস রইলাম। সামনের মাসে অন্য বাসায় ওঠব।
আগে একটা বাসায় থাকতাম, একবেলা খাবার খেয়ে তিন হাজার টাকা গুনতে হতো। কখনও ভালো মাছ, বা মাংসের পিস পাইনি। কাড়াকাড়ি করে ভালো ভালো পিস অন্যরা নিয়ে নিত।
১১| ২৩ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৯
গণকবি বলেছেন: জীবনের দুঃখচিত্র। ভালো লাগল।
২৩ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:৩৮
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: তবুও জীবন থেমে থাকে না ।
১২| ২৫ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৪
রাজীব নুর বলেছেন: বিয়েতে দাওয়াত চাই। চাই। চাই।
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:৩৫
সোনাগাজী বলেছেন:
বর্তমানে কেমন আছেন? চাকুরী আছে? বিয়ে করেছেন?