নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাবুক ইসমাঈল পাগলা

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:২৬


“মা গো, তোমার পাগল ছেলে কান্দে, তারে দেইখ্যা রাইখো। ইল্ বাবা ইল্, ও দয়াল চাঁদ, রাস্তা দেখাও, দেখাও একনজর।”

কোনো এক জ্যোৎস্নাশোভিত রাতে ভাগ্গা নদীর পাড়ে ছোট্ট শালবনের জংলা থেকে শিয়ালের হুক্কাহুয়ার সাথে ঝিঁঝিঁ পোকার অনুরণনে রাত্রির লুকায়িত আভা ব্যাপ্ত হলো। এই পাড়ে ছোট্ট বাজার, নাম তার টান মরচী। লোকে বলাবলি করছিল- “পাগলার ওপর আবার মনে হয় আকাশ পরীরা ভর করেছে!”

কিছুক্ষণ পর আবার মিষ্টি হাসির শব্দ, কিশোরী বালিকাদের খিলখিল হাসি, আবার শেয়ালের ডাক। সময় রাত ১০টা বেজে ৪৫ মিনিট। এবার সারা বনে আলো আঁধারি খেলা আর আকাশের মেঘ সরে গিয়ে চাঁদের আগমনে একেবারে ফকফকা পরিষ্কার হয়ে গেল।

নিজের আবাদ করা গাঁজা গাছের কচি পাতা হুক্কায় ভরে আবার টান। গাঁজার মোহিত গন্ধে বুনো ফুলের সুবাতাসে এক বিরাট দার্শনিকতা তৈরি হলো ইসমাঈল পাগলার মধ্যে।

এবার মধুপুরিয়ার আগমন। বৃন্দাবনের রাধার মতো সঙ্গীনিদের নিয়ে ইসমাঈলের গানের তালে তালে ধীর লয়ে ধ্রুপদী নাচ আরম্ভ করল সে। এবার আরো জোরে খিলখিল হাসি... হে হে হা হা (কয়েকবার)।

“না হবে না! যতই মোহিত করো, আমায় আজ হবে না। ধরা দেব না।”

ইসমাঈল বলল এসব।

এদিকে লাস্যময়ী মধুপুরিয়া আরও কামিনী রূপে মোহিনী রূপ ধারণ করল। অতঃপর বলল, ‍‍‍“এসো, এসো, এসো ইসমাঈল! এসো প্রিয়!”

ইসমাঈল বলল, “না, আসব না। তুমি ফুলকুমারী, তুমি ছলনাময়ী!”

মধুপুরিয়া বলল, “রাজা কংস বর্মণ (প্রাগৈতিহাসিককালের কিছু শতাব্দী পরের রাজা) আমাকে তোমার হাতে সঁপে দেওয়ার জন্য সম্মতি প্রকাশ করেছেন। এসো এবার।”

পূর্বের রাত্রিরে অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে এ রাত্রিরে ছোট্ট টিলায় নালা থেকে নদীর দিকে পানি প্রবাহিত হওয়ায় এক মাদকতার ছন্দ লক্ষ্য করা গেল। যেন বন্য হরিণী রূপে মধুপুরিয়ার আর্বিভাব।

সদ্য যৌবনাপ্রাপ্ত সঙ্গম আকৃষ্ট কামুক হরিণীর সাথে কোনো এক বন্য শুয়োর পেছন থেকে রিরংসায় লিপ্ত হতে চাচ্ছে! এ বন্য শুয়োর যেন স্বয়ং রাজা কংস বর্মণ! তারই সাথে মধুপুরের কাকরময় লাল মৃত্তিকা যেন ধুলো হয়ে চারদিক আর্ত-চিৎকারে প্রকম্পিত করছে।

হঠাৎ ইসমাঈল খেয়াল করল মস্তিষ্কের প্রচণ্ড ক্ষিপ্ততায় হাতের কল্কেটা মুহূর্তেই প্রকাণ্ড শালগাছের এক পার্শ্বে আঘাত করল। মিলিয়ে গেল মধ‍ুপুরিয়া। আবার হাসি, আবার কান্না।

দুই
একবার গ্রীষ্মকালে বঙ্গ জনপদের করদ রাজ্য ভাগ্গার চতুর রাজা কংস বর্মণ শিকারে বের হলেন। বর্তমানে ইসমাঈল পাগলার যে জংলাভূমি শাল-পিয়াল গাছ বেষ্টিত, ঠিক তার উল্টো দিকে টিলার নির্জন খাদে মাটির হাঁড়ি কাঁখে নিয়ে মধুপুরিয়া জল সংগ্রহ করছিল। আর এ দিক দিয়েই রাজা কংস শিকারে যাচ্ছিলেন। পূর্বাহ্নে শিকার না পেলেও অপরাহ্নে এমন মানবী শিকার কি হাতছাড়া করা যায়!
রাজাঃ এই শোনো,
মধুপুরিয়াঃ বলুন।
রাজাঃ তোমার বাড়ি কোন বৈঠালে? তোমার নাম কী হে?মধুদুরিয়া বলব না বলে দ্রুত বনের মধ্য দিয়ে মাচাংয়ের ঘরে চলে গেল।

১৭৭৮ সালের কোনো এক স্নিগ্ধ রাতে অজানা লেখকের লিখা ‌‘রাজা কংস বর্মণ ও তার করদ রাজ্য’ বঙ্গ জনপদের ইতিহাস বই পড়ছিল ইসমাঈল। বইটি পড়াকালীন কল্পনায় ইসমাঈল নিজেকে করদ রাজ্যের লোকালয়ের প্রধান শিকারি হিসেবে আবিষ্কার করল। নয় শত কান্দার এই আঁষটে গন্ধ বিশিষ্ট লাল মৃত্তিকার ভূ-স্বামী সে। তার কথায় লোকালয়ের সবাই আনুগত্য করে, সম্ভ্রম করে।

তিন
ইসমাঈলের দাদা পণ্ডিত সর্দার গ্রাম্য মক্তব শেষ করে বাটীতে আসার সমর পাশের জংলা থেকে এক অজানা ফলের কয়েক থোকা পেড়ে আনলেন। এই অজানা লোভাতুর ফল দেখে সাথে সাথে ইসমাঈল গোটা কয়েক খেয়ে ফেলল। আধঘণ্টা পর হঠাৎ বমি শুরু হলো তার। বাড়িতে চিৎকার-চিল্লাচিল্লি শুরু হয়ে গেল। সবশেষে কবিরাজ মৃত্যুঞ্জয় এলেন। জানালেন, শয়তানের আছড় পড়েছে ইসমাঈলের ওপর, তাই তার মতিভ্রম হয়েছে, যা আর ভালো হবার নয়।

এর কিছুদিন পর ছেলের এমন বেগতিক মস্তিষ্ক বিস্মৃতি দেখে কষ্ট সইতে না পেরে ইসমাঈলের বাবা পরলোকগমন করলেন। ফলে ইসমাঈলের দেখাশুনা করার মতো আর কেউ রইল না।

হাটের দিন হাট থেকে তেল, নুন, চাল প্রভৃতি চেয়ে এনে রাত্তিরে ইসমাঈল খাবার আয়োজন করত। এভাবে গত ছত্রিশ বছর কেটেছে তার। আজ ইসমাঈল পাগলার প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে। কেননা দিনের বেলায় অধিক বৃষ্টির কারণে হাটে যেতে পারেনি সে। ফলে খিদে নিবারণের জন্য তার ডেরায় গাঁজা ছাড়া আর কিছুই নেই।

খিদে পেলে ইসমাঈল পাগলার কামনা জাগে, সে এক অদ্ভুত ব্যাপার-স্যাপার। কয়েকটি বড়ো বড়ো টানে সবটুুকু গাঁজা সাবাড় করে দিল সে! এবার মাথা খুলে গেল ইসমাঈলের। গাঁজা খেয়ে খিদে নিবারণের চরম উৎকর্ষতায় পৌ‍ঁছেছে।

আবারও মধুপুরিয়ার আগমন। ইসমাঈল বলতে লাগল, “দূর হ মাগি। আমাকে বিরক্ত করছিস কেন? আমি পাগল মানুষ। আমার এই কঙ্কালসার দেহে কী সুখ পাবি?”

কিছুটা এগিয়ে গিয়ে হেলে দুলে মাথা নাড়িয়ে কয়েকটা দার্শনিক উক্তি করল এবার। “ও দয়াল! শয়তান ফলের খপ্পরে পড়ে আমার মাথা গেল ধরে, দোষ করল দাদায় আর আমারে কেন দয়াল কাঁদায়?”

তারপর মাতলামোর সাথে গান শুরু করল।

“পিরীত হলো শিয়ালের,
পিরীত হলো শুয়োরের।
আমারে কান্দাইলা দয়াল কেন রে?”

তীব্র মাতলামো এবার শিথীল হয়ে গেল। হঠাৎ ইসমাঈল লক্ষ্য করল ডান পাশের আম গাছ থেকে পাকা আম মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ইসমাঈল এবার ভাবল মধুপুরিরা পাকা আম হয়ে এসেছে।

“তোকে এবার আস্ত খাব” বলে কয়েক কদম পা সম্মুখে ফেলতেই শুকনো খড়-কুটোর ভেতর লুকিয়ে থাকা এক মেটে সাপ উপর্যুপরি কয়েক কামড় বসিয়ে দিল পায়ের পাতার ওপর। ইসমাঈল নেতিয়ে পড়ল। দু’চোখ বুজে এলো তার। ইসমাঈলের মনে হচ্ছিল সতেরো বছর বয়সে পাঠ করা সেই অজানা লেখকের ইতিহাসের নায়িকা মধুপুরিয়া বুঝি সর্প হয়ে ক‍াম চুম্বন করে গেল।

মূল লেখাটা জনৈক বড়ো ভাইয়ের। তিনি নাম প্রকাশ করতে চান না। উনার অনুরোধে লেখাটা সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধন করে পোস্ট করলাম।

ছবি ইন্টারনেট

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:০৪

সাইফ-১২০৯ বলেছেন: চমৎকার হয়েছে দাদা আপনার বড় ভাইকে বিনম্র শ্রদ্ধা
তবে এই চরিত্র কি সত্য নাকি শুধুই লেখকের চিন্তাশক্তির একটি চরিত্র?

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:০৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ইসমাঈল পাগলা নামে একজন ছিল তাদের এলাকায়। জায়গার বিবরণও কিছুটা ঠিক আছে। তবে মূল কাহিনী কাল্পনিক।

২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:২৫

ডি এইচ তুহিন বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন ভাই, খুব ভাল লাগলো

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:৩২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:১৪

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: চমৎকার লেখা ,একটু অন্যরকম বিষয়বস্তু। এক নাগাড়ে পড়ে ফেললাম। চোখের সামনে ভেসে উঠলো ছোটো বেলায় দেখা নেংটা পাগলের কথা । কি জানি কি দুঃখে কাপড় রাখতো না গায়ে । সারা দিন কাগজ কুড়িয়ে ভাজ করে বড় একটা প্যেকেট করে এদিক সেদিক গুঁজে রাখতো। কারর সাথে কথা বলতো না। জানিনা তার কি গল্প আছে।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:০৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: তারও নিশ্চয়ই দুঃখের গল্প আছে।

৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:৫৩

কামাল১৮ বলেছেন: পাগলে পাগল চিনে।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৩২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: স্বাভাবিক।

৫| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: পাগলটার সাথে আপনার মিল আছে।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৩১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কী রকম?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.