নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি লিখতে ভালোবাসি। তাও আবার শুধুই বাংলায়..........

রুপালী তারা

রুপালী তারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:২৬

১।।
হঠাত করে চেহারাটা দেখে থমকে গেলো রিয়া। চেহারাটা খুব পরিচিত ওর কাছে। সেই কবে থেকে একটু একটু করে চেহারাটা মনের ক্যানভাসে এঁকেছে। কতদিন কতরাত মনে মনে সেই চেহারার সাথে কথাও বলেছে। স্কুল কলেজ পার হয়ে এখন রিয়া ইউনিভারসিটিতে অনার্স পড়ছে। এখনো চেহারাটা ওর মনের আকাশে জ্বল জ্বল করছে। যত দিন গেছে, ততই একটু একটু করে চেহারাটার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। একটু একটু করে ভালোবেসেছে। চেহারাটার একটা নামও দিয়েছে রিয়া। স্বপ্ন। স্বপ্ন রিয়ার জীবনে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। প্রতিদিন প্রতিক্ষনে রিয়া স্বপ্নর সাথে কথা বলে। হাসে। সবাই ভাবে, রিয়ার একা একা কথা বলার রোগ আছে। এ নিয়ে বান্ধবীরা অনেক হাসাহাসি করে। মায়ের তো চিন্তায় ঘুম হয়না। কার সাথে এত কথা বলে রিয়া? কার সাথে হাসাহাসি করে? কেউ কেউ বলে রিয়ার সাথে জ্বীন আছে। জ্বীনের সাথে কথা বলে সে। রিয়া সেসব হেসেই উড়িয়ে দেয়। ধীরে ধীরে রিয়া সবার সামনে এভাবে একা একা কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। যখনি সে একা থাকে, শুধু তখনি স্বপ্নর সাথে কথা বলে। স্বপ্ন এ নিয়ে অনেক রাগ করে। কিন্তু রিয়ার কিছু করার নেই। আশেপাশের মানুষ কেউ বুঝতে চায়না। সবাই শুধু হাসাহাসি করে। রিয়ার মাথায় নাকি ছিট আছে। আরো সব উলটা পালটা কথা বলে। রিয়ার এসব শুনতে ভালো লাগেনা। সে চায়না, স্বপ্ন কে নিয়ে কেউ আজে বাজে কথা বলুক।
স্বপ্ন আছে বলেই রিয়ার কখনো কাউকে তেমন করে ভালো লাগেনি। যদিওবা কাউকে একটু আধটু ভাল লেগেছিল, স্বপ্ন প্রতিবারেই খুব রাগ করেছে। স্বপ্ন চায়না, রিয়া কখনো ওকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসুক। আর কারো সাথে কথা বলুক। রিয়া ভালো করেই জানে, স্বপ্ন ওর মনের কল্পনা। ওর কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই। তবুও, স্বপ্নকে সে কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেনা। রিয়ার প্রতিটা নিঃশ্বাসে মিশে আছে স্বপ্ন। ওকে কিভাবে সে এড়িয়ে যাবে? স্বপ্ন আছে বলেই কখনো কারো সাথে প্রেম করতে ইচ্ছে হয়নি, কাউকে ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়নি। সত্যি বলতে কি, তেমন করে কাউকে মনেও ধরেনি। স্বপ্নর জায়গায় অন্য কাউকেই মানায় না। রিয়া মনে মনে খুব গর্ববোধ করে স্বপ্নকে নিয়ে। স্বপ্নর কোন বাস্তব অস্তিত্ব না থাকলেও স্বপ্নকে পেয়ে তার জীবনের সব অপূর্ণতা দূর হয়ে গেছে। ভালোবাসার জন্য কোন বাস্তব অস্তিত্বের দরকার হয়নি কখনো। রিয়া নিজেকে পৃথিবীর সবচাইতে সুখী মানুষ ভাবে। শুধু স্বপ্ন আছে বলেই সে অনেক অনেক রঙ্গিন স্বপ্ন দেখতে পারে। সেগুলো সবই স্বপ্নকে নিয়ে।
রিয়া বড় হবার পর থেকেই বাসায় প্রায়ই বিয়ের প্রস্তাব আসে। বাবা আর মা খুব আগ্রহ করে সেসব প্রস্তাবের কথা রিয়াকে বলেন। রিয়া চুপ করে শুনে তখন। আর ভেতর থেকে স্বপ্ন খুব রাগ করতে থাকে। শেষে রিয়া ওর বাবা মাকে বলে, সে এখন বিয়ে করতে চায়না। আগে পড়াশুনা শেষ করতে চায়। কখনো বাবা একটু মনক্ষুন্ন হন, কখনো মা খুব রাগ করেন। ভালো ভালো বিয়ের প্রস্তাবগুলো হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু স্বপ্নর রাগের কাছে রিয়া খুব অসহায়। স্বপ্নকে সে কোনভাবেই কষ্ট দিতে পারবেনা। মাঝে মাঝে রিয়া ভাবে, এমন করে আর কতদিন? একদিন তো বাবা মা যে করেই হোক, রিয়ার বিয়ে দেবেন। তখন সে স্বপ্নকে ছাড়া বাঁচবে কি করে? রিয়া প্রায়ই স্বপ্নকে ওর এই আশঙ্কার কথা বলে। শুনে স্বপ্ন হাসে আর ওকে বলে, একদিন ঠিকই চলে আসবো তোমার সামনে। তখন দেখব, কি করে তোমার বাবা মা তোমাকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দেয়? শুনে রিয়া হেসেই উড়িয়ে দেয়। স্বপ্ন তো রিয়ার মনের কল্পনা; সে কিভাবে বাস্তবে থাকবে?
একদিন ফেসবুকে স্বপ্নর চেহারাটা দেখে থমকে গেলো রিয়া। এই চেহারাটা রিয়ার একান্তই নিজের। এর যে আরো একটা মালিক থাকতে পারে, কখনো ভাবেইনি সে। ছেলেটার ফেসবুক প্রোফাইল ঘুরে তেমন কিছু পাওয়া গেলনা। শুধু প্রোফাইলের ছবিটা ছাড়া। নাম নাদিভ। একবার ভাবলো, ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাবে। কিন্তু ছেলেটা যদি একসেপ্ট না করে? অথবা একসেপ্ট করলেও যদি রিয়াকে জিজ্ঞেস করে, রিয়া ওকে কিভাবে চেনে? তখন কি জবাব দেবে সে? সত্যি কথাটা বললে ছেলেটা কখনোই বিশ্বাস করবেনা। হয় রিয়াকে পাগল ভাববে, নয়ত ভাববে রিয়া বানিয়ে বলছে এসব; একটা মেয়ে যেচে পড়ে অবাস্তব একটা গল্প বানিয়ে একটা ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইলে ছেলেটা যে তাকে কি চোখে দেখবে, সেটা ভেবেই আর ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালো না। কিন্তু মনটা পড়ে রইলো ফেসবুকেই। ছেলেটার প্রোফাইলে। অনেক খুঁজে পেতে বুদ্ধি বের করলো রিয়া। ফেইক একাউন্ট খুলে নাদিভকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালো। তারপর থেকে শুরু হলো রিয়ার অপেক্ষার প্রহর। একদিন যায়, দুইদিন যায়, নাদিভ আর ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করেনা। এভাবে মাসখানেকের মত পার হয়ে গেলো। রিয়া নাদিভকে ভুলে স্বপ্নকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। যদিও স্বপ্নর সাথে প্রায়ই নাদিভের ব্যাপারে কথা হয়। স্বপ্ন ওকে বলে, আমি আসবো খুব শীঘ্রই। (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.