![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
৩।।
- কই, তোমার না আজ আসার কথা ছিল।
- গিয়েছিলাম তো।
- এসেছিলা? কই, আমি তো দেখিনি
- তুমি দেখবা কিভাবে? তুমি তো একমনে কাজ করেই যাচ্ছিলে।
- হ্যা, আজকে একটু বেশিই ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু তুমি তো আমার সাথে কথা বলনি। কথা ছিল, তুমি ব্যাঙ্কে এসে আমার খোঁজ করবা।
- খোঁজ করছিলাম তোমার কলিগের কাছে। তোমাকে দেখিয়ে দিল।
- তাহলে আমার সাথে কথা বল নাই কেন?
- দেখলাম, তুমি মন দিয়ে কাজ করতেছ; তাই বিরক্ত করলাম না।
- এটা কোন কথা হলো? আমি তো তোমাকে দেখলামই না।
- দেখছ তো। মনে করে দেখ। একবার আমার দিকে তাকাইছিলা।
- উমম... কি রঙের ড্রেস পড়ছিলা?
- তোমার প্রিয় রঙের।
- আমার প্রিয় রঙয়ের?
-হ্যা।
- তুমি কিভাবে জানো, আমার প্রিয় রঙ কি?
- আমি জানি।
- কি জানো?
- নীল।
- নীল?
- হুম। আমি আকাশী নীল রঙের একটা শাড়ি পড়ছিলাম।
- নীল তো আমার প্রিয় রঙ না।
- নীল তোমারই প্রিয় রঙ। নীল রংটা আমার মোটেও ভালো লাগেনা। শুধু তোমার জন্যই পড়ি।
- আমি ঠিক বুঝলাম না নীল আমার প্রিয় রঙ এটা তোমাকে কে বললো?
- আমাকে কেউ বলেনি। আমি জানি।
- কিভাবে জানো?
- আশ্চর্য, তোমাকে এতদিন ধরে দেখতেছি আর তোমার প্রিয় রঙ কোনটা সেটা জানব না??
- আচ্ছা... নীল যে আমার প্রিয় রঙ আগে জানতাম না। তোমার কাছে থেকে এই প্রথম জানলাম।
- জানবাই তো। আমি তোমাকে তোমার নিজের থেকেও বেশি চিনি।
- আমি এরকম কাউকে ব্যাংকে দেখেছি বলে তো মনে পড়তেছেনা
- বললাম তো, তুমি একমনে কাজ করতেছিলা। আমাকে খেয়ালই করনাই ঠিক মত।
নাদিভ চিন্তায় পড়ে গেলো। মেয়েটার কথাবার্তা এত অগোছালো। একেকবার একেকরকম কথা বলছে। নীল নাকি নাদিভের প্রিয় রঙ। অথচ নীল কখনোই ওর প্রিয় রঙ ছিল না।
- চুপ করে আছ যে??? কি হল?
- ভাবছি
- কি ভাবছ?
- ভাবছি, এটা একটা চিটিং হলো
- কি রকম?
- আমাদের আজকে দেখা করার কথা ছিল। মানে, আমরা একজন আরেকজনকে দেখব। তাই না? কিন্তু তুমি আমাকে দেখলা আর আমি তোমাকে দেখলামই না। এটা চিটিং। আমার টেবিলে এসে তোমার উচিত ছিল নিজের পরিচয় দেয়া। আর তুমি কি করছ? দূর থেকে দেখে চলে গেছ। আমার সাথে কথাই বলনাই।
- আমি তোমার সাথে ইচ্ছে করেই কথা বলিনি। দেখলাম, তুমি আমাকে দেখেই চিনতে পারো কিনা।
- কি দেখলা?
- দেখলাম, তুমি আমাকে চিনতেই পারলানা।
- চিনতে পারব না, এটা তো জানা কথা। ব্যাংকে কত মেয়েই যাচ্ছে, আসতেছে। কতজনকে দেখব আর চিনব?
- তুমি তো একবার আমার দিকে তাকিয়েছিলা। তোমার জায়গায় আমি হলে ঐ একবারেই চিনে ফেলতাম। বুঝে ফেলতাম, ঐটাই তুমি।
- একবার তাকিয়েই চিনে ফেলার মত কিছু আছে কি আমাদের মধ্যে?
- অবশ্যই আছে। আমি তো ফেসবুকে তোমার ছবি দেখেই চিনে ফেললাম।
নাদিভ বুঝে গেলো, এই মেয়ে সিরিয়াস রকমের মানসিক রোগী। নইলে এরকম হেয়ালি করে উলটা পালটা কথা কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মেয়ে বলবেনা। নাদিভ তাকে কোন কালেই দেখেনি, চিনেনা, জানেনা। অথচ এই মেয়ে বলছে, ওর নাকি একবার তাকিয়েই মেয়েটাকে চিনে ফেলা দরকার ছিল। ঠিক সরাসরি না বললেও তোমার জায়গায় আমি হলে চিনে ফেলতাম কথাটা বলে মেয়েটা এটাই বুঝিয়েছে। চ্যাটবক্সটা ক্লোজ করে দিল নাদিভ। এই পাগলের সাথে কথা বলার কোন মানে হয়না। কিন্তু রিয়া ওকে নক করেই চললো। বাধ্য হয়ে নাদিভ আবারো কথা বলা শুরু করলো। তাছাড়া এখন ওর নিজেরও খুব আগ্রহ হচ্ছে। একবার দেখা করাটা খুব দরকার।
- হুম বলো, এখন তাহলে কি করবা?
- কি করবো?
- তুমি তো আজকে আমাকে দেখলা। আমি তোমার দিকে একবার তাকিয়েও চিনতে পারলাম না। নেক্সট......
- নেক্সট কি?
- কবে দেখা হবে?
- আমি তো পারলে এখনি দেখা করতে চাই।
- এখনি???
- না, মানে বলছিলাম যে, কালকেই দেখা করতে পারবো। কিন্তু তোমারই তো সময় হয়না।
- আচ্ছা, কালকে আবার আসো ব্যাঙ্কে। দেখি কালকে চিনতে পারি কিনা তোমাকে।
- ঠিক আছে। কাল দেখা হবে আবার।
পরের দিন সকাল থেকেই কাজের ফাঁকে ফাঁকে চারদিক নজর রাখলো নাদিভ। কে হতে পারে রিয়া? আজকেও রিয়া কোন নির্দিষ্ট সময়ের কথা বলেনি। এমনকি কেমন ড্রেস পরে আসবে সেটাও বলেনি। লাঞ্চ আওয়ারের আগে নাদিভ কাজে মন দিতে পারলো না। চারদিকে তাকিয়েই সময় পার করে দিল। কিন্তু তেমন কাউকে রিয়া বলে মনে হল না। মেয়েটা কি আজ সত্যিই আসবে? কেন মেয়েটা ওর সাথে এমন লুকোচুরি করছে? কি চায় সে?
লাঞ্চ পর্যন্ত কেউ আসলো না। নাদিভের মেজাজ খারাপ হতে লাগলো। কোথাকার কোন মেয়ে, তার জন্য সে আজকের সকালটা এমন করে নষ্ট করলো। আজ মনে হয় না মেয়েটা আসবে। আসলে আগেই আসতো। লাঞ্চের সময় বাইরে চলে গেল নাদিভ। ফিরে এসে দেখে, ওর টেবিলে একটা রক্তলাল গোলাপ। রিয়া এসেছিল? উফ...অনেক বড় মিস হয়ে গেলো। রিয়া এই লাঞ্চের সময়টাকেই বেছে নিয়েছিল ওর সাথে দেখা করবে, কথা বলবে বলে। আর সে কিনা লাঞ্চের সময়টাতেই বাইরে চলে গেল। একবারও মনে হল না, লাঞ্চের সময় রিয়া আসতে পারে।(চলবে)
©somewhere in net ltd.