নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি লিখতে ভালোবাসি। তাও আবার শুধুই বাংলায়..........

রুপালী তারা

রুপালী তারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৫৪

৫।।
- তুমি আজকে আসছিলা তাইনা?
- কিভাবে বুঝলা? তুমি আমাকে দেখেছ?
- টেবিলে ফুল রাখা দেখলাম। আমি কিন্তু ব্যাঙ্কের সামনে অনেক ক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম তোমার জন্য
- হ্যা দেখলাম তো।
- দেখলে সামনে এসে দাড়াওনি কেন?
- কিভাবে আসবো সামনে? তুমি তো অন্য কারো জন্য অপেক্ষা করছিলা।
- মোটেও না। আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। তোমার সাথে আমার সেরকম কথা হইছিল।
- তাহলে ঐ মেয়েটার সাথে চলে গেলা কেন?
- কি করবো? তোমার জন্য অনেক ক্ষন অপেক্ষা করলাম। কিন্তু তোমার কোন খবর নাই। লাঞ্চ আওয়ার শেষ হয়ে যাচ্ছিল, তাই চলে গেলাম।
- আমার খবর থাকবে কি করে? তোমার সাথে কেউ থাকবে এমন তো কথা ছিলনা।
- ও হুট করেই চলে এসেছিল।
- ওকে বিদায় করে দিতে পারতা।
- বিদায় হলো না। অনেক চেষ্টা করছি।
- মেয়েটা কে?
- আমার হবু বউ।
- ফাজলামো করতেছ?
- সত্যি বলতেছি। ফাজলামো করবো কেন?
- এরকম করলে কিন্তু আমি এখন রাগ করবো। ইচ্ছে করে আমাকে জ্বালাচ্ছ...
- জ্বালাচ্ছি না। আমি সত্যি কথা বলতেছি।
রিয়া চুপ হয়ে গেল। ঐ মেয়েটা স্বপ্নর হবু বউ? তা কি করে হয়? ওর আর স্বপ্নর মাঝখানে আর কেউ আসতে পারেনা। এটা কোনভাবেই সম্ভব না। ওর হাত পা কাঁপতে লাগলো। মাথাটা ঘুরতে শুরু করলো। মনে হলো যেন, পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে সে নিজেকে ঠিক রাখলো।
রিয়া কোন কথা বলছেন না দেখে নাদিভ ওকে নক করলো,
- কি হলো? কথা বলো না কেন?
- তুমি ফাজলামো শুরু করছ তাই।
- কি মুশকিল? ফাজলামো করবো কেন? ঐ মেয়েটা সত্যি সত্যি আমার হবু বউ। ওর নাম তানহা।
- তাই বুঝি? তা হবু বউ থাকতে আমার সাথে বসে বসে টাংকি মারতেছ কেন? তোমার হবু বউয়ের সাথে টাংকি মারো গিয়ে।
- আমার কোন কথাটায় তোমার মনে হল আমি তোমার সাথে টাংকি মারতেছি?
- এই যে আমার সাথে কথা বলতেছ, এটা কি হচ্ছে?
- চ্যাটিং।
- হবু বউ রেখে আরেকটা মেয়ের সাথে চ্যাটিং? আবার দেখাও করতে চাও?
- কেন? সমস্যা কোথায়? হবু বউ থাকলে কি অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলতে কি সমস্যা? আমি তো আর তোমার সাথে প্রেম করতেছিনা।
- তাহলে কি করতেছ?
- নরমালি কথা বলতেছি।
- তাই বুঝি?
- হ্যা তাই। এখন পর্যন্ত আমার কোন কথায় তোমার মনে হইছে যে আমি তোমার সাথে টাংকি মারতেছি বা প্রেম করতেছি? তুমিই তো উলটো আমার সাথে টাংকি মারতেছ। এমন ভাবে কথা বলতেছ যেন আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড।
- তুমি তো আমার বয়ফ্রেন্ডই।
- এত প্যাচাচ্ছ কেন? আমি জানি তুমি ইচ্ছা করেই এসব করতেছ।
- কি করতেছি?
- ফেইক আইডি খুলে চ্যাটিং করতেছ। আমি ভাল করেই জানি, এটা তুমি। অন্য কেউ না।
- আমিই তো।
- তোমার নাম রিয়া হলো কবে থেকে?
- যেদিন থেকে আমার জন্ম সেদিন থেকে।
- আমি জানি রিয়া বলে কেউ নাই। তুমি তানহা। এমন করলে কিন্তু ভালো হবেনা। তুমি কেন ফেক একাউন্ট খুলে এসব তালবাহানা শুরু করছ। আমাকে কি তোমার বিশ্বাস হচ্ছেনা?
- আমার নাম তানহা না।
- আবার শুরু করছ হেয়ালি? তুমি তানহাই। আজকে তুমি হাতে নাতে ধরা পড়ছ।
- তোমার কেন মনে হল, আমি তানহা?
- তুমি যদি সত্যি রিয়া হতে, তাহলে আমার সামনে এসে দাঁড়াতে। আমার সাথে কে দাঁড়িয়ে থাকলো, সেটা নিয়ে তোমার প্রবলেম হত না।
- আমি বললাম তো, আমি তানহা না।
- তাহলে তুমি কে? বলো তুমি কে? আমাকে কিভাবে চিনো?
রিয়া চুপ করে রইলো। কি উত্তর দিবে? কিভাবে বলবে ওকে রিয়া অনেক আগে থেকেই চেনে। ওকে ভালোবাসে। নাদিভ কি সত্যি কথা বলছে? সত্যিই কি তানহা নামের মেয়েটা ওর হবু বউ?
- কি হল? কথা বল না কেন? গল্প বানাচ্ছ নাকি মনে মনে।
- আমি তোমাকে কিভাবে চিনি সেটা বলতে পারবনা। বললেও তোমার বিশ্বাস হবেনা
- ঠিক। বানানো গল্প যতই নিখুঁত হোক, সেটা সব সময়ই অবিশ্বাস্য। তুমি যে তানহা সেটা আমি ভালো করে জানি।
- আমি তোমাকে কতবার বলব, আমি তানহা না। আমি রিয়া।
- আবারো সেই কথা... তুমি কি মনে কর, আমাকে বোকা বানানো এতই সোজা?
- তুমি কি প্রমান চাও যে আমি তানহা না?
- হ্যা চাই।
- তোমার ফোন নাম্বার দাও। আমি তোমাকে ফোন করতেছি।
- অন্য নাম্বার থেকেও কিন্তু ফোন করা যায়।
- নাম্বার দাও।
- আমার একটাই নাম্বার। আর সেটা তো তোমার কাছেই আছে।
- নাম্বার দাও।
- ০১৭১......
একটু পরে নাদিভের ফোনটা বাজলো।
- হ্যালো
- আমি
- তুমি?
- আমি তোমার হবু বউ না, আমি রিয়া।
লাইনটা কেটে গেলো। নাদিভ কল ব্যাক করলো। কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ ফোনটা রিসিভ করলো না। বেশ কয়েকবার ট্রাই করার পরে নাদিভ হাল ছেঁড়ে দিল। সে দ্বিধায় পড়ে গেছে। সে ১০০% নিশ্চিত, গলার স্বরটা তানহার না। তাহলে কে হতে পারে? আচ্ছা, এমন তো হতে পারে যে, রিয়া তানহার বান্ধবী। তানহার কথাতেই সে নাদিভের সাথে চ্যাট করতেছে । তানহাই হয়ত ওকে শিখিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তানহা কেন ওর বান্ধবীকে নাদিভের পিছনের লাগিয়ে দিবে? সে কি নাদিভকে বিশ্বাস করেনা? এতই যখন মনের মধ্যে অবিশ্বাস, তাহলে বিয়ে করার কি দরকার?
নাদিভ খেয়াল করলো, রিয়া তখনো অনলাইনে। সে রিয়াকে মেসেজ দিল,
- ফোন রেখে দিলা কেন? আরেকটু কথা বললে কি কোন সমস্যা হত?
- আরেকটু কথা বলার কি কোন দরকার ছিল?
- দরকার ছিল কি ছিলনা সেটা পরের কথা। আমি এতবার ফোন করলাম, তুমি রিসিভ করলা না। কেন?
- কারন, আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাইনা। তুমি প্রমান চেয়েছ, তাই ফোন করেছিলাম।
- আচ্ছা, বুঝলাম তুমি তানহা না। কিন্তু তানহার বান্ধবী তো হতে পার। হয়ত তানহাই তোমাকে বলেছে ফেক একাউন্ট খুলে আমার সাথে চ্যাট করতে।
রিয়া কোন রিপ্লাই না দিয়ে ফেসবুক থেকে লগআউট করে বের হয়ে গেলো। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। খুব ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। স্বপ্ন শুধু ওর নিজের। অন্য কারো না। অথচ নাদিভ বলছে, তানহা ওর হবু বউ। আর সে এখন ভাবতেছে রিয়া তানহার বান্ধবী আর তানহা রিয়াকে দিয়ে ফেইক আইডি খুলিয়েছে নাদিভের সাথে কথা বলার জন্য!! সেই কবে থেকে স্বপ্নর চেহারাটা রিয়া মনের মধ্যে একটু একটু করে এঁকেছে, তাকে মন প্রান দিয়ে ভালোবেসেছে আর এখন সে কিনা অন্য কারো হবু বর?
রিয়া বালিশে মুখ চেপে কাঁদতে শুরু করলো। এরকমই যদি হবে, তাহলে কি দরকার ছিল রিয়ার মনের মধ্যে স্বপ্ন হয়ে বসত গড়ার? কি দরকার ছিল দেখা দেবার? ফেসবুক কত প্রোফাইল আছে, সব বাদ দিয়ে স্বপ্নর ছবি দেয়া প্রোফাইলটাই কেন রিয়ার চোখে পড়তে গেলো? চোখে না পড়লেই তো ভালো হত। রিয়া কোনদিন জানতে পারতো না, ওর প্রিয় মুখটার অন্য একটা মালিকও আছে। সে তো কখনো স্বপ্নকে বাস্তবে দেখতে চায়নি। স্বপ্ন নাহয় ওর মনেই থাকতো। একান্তই ওর।
মনের ভেতর থেকে স্বপ্ন ওকে সান্ত্বনা দিলো, কাঁদছ কেন রিয়া? আমাকে হারাবার ভয়ে? আমাকে তো সেই কবেই তোমার মনের মধ্যে বন্দী করে রেখেছ। তাহলে হারাবো কি করে? আমি তোমার; শুধু তোমারি থাকব। কারো সাধ্য নেই তোমার মনের দরজার তালাটা খুলে আমাকে মুক্ত করে নিয়ে যাবে। চাবিটা যে হারিয়ে গেছে। কোথায় হারিয়ে গেছে, কিভাবে হারিয়ে গেছে কেউ জানেনা। না তুমি, না আমি। (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.