নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি লিখতে ভালোবাসি। তাও আবার শুধুই বাংলায়..........

রুপালী তারা

রুপালী তারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:৫৫

৬।।
মাসখানেক হয়ে গেলো রিয়া সেই ফেক আইডিতে আর লগইন করেনি। আইডিটা সে ডিএকটিভেট করে দিয়েছে। এমনকি মোবাইল থেকেও নাদিভের নাম্বারটা ডিলিট করে দিয়েছে। ফেসবুকে নিজের আসল আইডিতেও এখন আর লগিন করেনা। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। কি দরকার? ফেসবুকে ঢুকলেই স্বপ্নর ছবি দেয়া প্রোফাইলটা ওকে টেনে নিয়ে যাবে নাদিভের কাছে। রিয়া ওকে মনের কুঠুরিতে বন্দী করে রেখেছে ঠিকই, আপন করে নিয়েছে। কিন্তু আসলেই কি তাই? নাদিভ তো কখনোই রিয়ার ছিলনা। নাদিভের জন্য কান্নাকাটি করে কি লাভ? সে তো কখনো রিয়ার এই কান্নার মানে বুঝবেনা। উলটো হাসবে। বলবে, রিয়া এসব গাজাখুরি গল্প বানিয়েছে। এর মধ্যে রিয়া অনেক চেষ্টা করেছে নাদিভকে মন থেকে মুছে ফেলতে। কিন্তু যে চেহারাটা ওর মনের মধ্যে গেঁথে আছে, সেটা তো নাদিভেরই। সেটা কি করে মুছবে?
সেদিনের পর থেকে রিয়া বুঝতে পেরেছে, কাউকে জোর করে মনের কুঠুরিতে বন্দী করে রাখা যায়না। নাদিভের সাথে ফেসবুকে দেখা হয়ে যাওয়াটা একটা দুর্ঘটনা। স্রেফ একটা দুর্ঘটনা। কিন্তু এই দুর্ঘটনাই রিয়াকে উলট পালট করে দিয়েছে। এত যত্নে গড়ে তোলা রঙ্গিন স্বপ্নগুলো নিমেষেই তছনছ করে দিয়েছে। অথচ, এগুলো একসময় রিয়ার কাছে অমুল্য সম্পদ ছিল। রিয়া এখন জেনে গেছে, এই রঙ্গিন স্বপ্নগুলো আসলে ওর না। অন্য কারো। যার নাম তানহা। তাই সে স্বপ্নগুলো মনের আকাশে ছড়ীয়ে দিয়েছে। মুক্তি দিয়েছে স্বপ্নকে। যেখানে খুশি চলে যাক স্বপ্ন। কিন্তু স্বপ্ন এখনো মনের কুঠুরিতে পড়ে আছে। সে বারবার রিয়াকে ডাকে। রিয়া কোন উত্তর দেয়না। চুপ করে থাকে। রিয়ার কাছ থেকে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে স্বপ্ন বারবার মনের দেয়ালে মাথা কুটে। অনেক রক্ত ক্ষরন হয় তখন। রিয়ার মনের সেই রক্ত ক্ষরন কেউ দেখেনা। রিয়া শুধু নিজের মনকে বোঝায়, স্বপ্ন বলে কেউ নেই।
রিয়ার জন্য বাসায় বিয়ের নতুন প্রস্তাব এসেছে। সে নিয়ে বাবা আর মায়ের মধ্যে প্রায়ই আলোচনা চলে। উনারা রিয়ার সাথেও এ নিয়ে কথা বলেছেন। এগুলো রিয়ার কাছে নতুন কিছু না। বিয়ের প্রস্তাব আগেও এসেছে। প্রতিবারেই রিয়ার বাবা মা খুব আগ্রহ নিয়ে রিয়াকে এ ব্যাপারে জানিয়েছেন। প্রতিবারেই স্বপ্ন সব শুনে অনেক রাগারাগি করেছে। প্রতিবারেই রিয়া শুধু স্বপ্নর জন্যই মানা করে দিয়েছে। এবার আর মানা করেনি। তবে মুখ ফুটে কিছু বলেওনি। চুপ করে থেকেছে। এবারেও স্বপ্ন খুব রাগ করেছে। অনেক চিৎকার চেঁচামেচি করেছে। তারপর আক্ষেপ করে বলেছে, তুমি আসলে আমাকে ভালোবাসোনা। তাই এভাবে কষ্ট দিচ্ছ। কিন্তু আমি দমে যাব না। তুমি অন্য কারো হতে পারো না। তুমি শুধু আমার। আমি ঠিকই একদিন তোমার সামনে এসে দাড়াবো। তোমার পথ আটকাবো। দেখব, কিভাবে তুমি আমাকে পাশ কাটিয়ে যাও। রিয়া শুনেও না শোনার ভান করেছে। মনে মনে বলেছে, স্বপ্ন বলে কেউ নেই। সব ওর মনের অতি কল্পনা।
বিকেলে ছাদে চুপচাপ বসেছিল রিয়া। হঠাত পায়ের শব্দে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো ফুপু এসেছে।
- কিরে? একা একা ছাদে কি করছিস?
- এমনি। বসে আছি।
- তোর মন খারাপ?
- না, মন খারাপ হবে কেন?
- ভাবির কাছে শুনলাম, তুই যেন কেমন হয়ে গেছিস। কলেজে যাচ্ছিস না ঠিক মত। সারাক্ষন হয় রুমের দরজা বন্ধ করে রাখিস, নয়ত ছাদে এসে একা একা বসে থাকিস। কি হয়েছে তোর?
- এমনিই, কিছু হয়নি।
- আরিফদের বাসা থেকে হ্যা বলেছে। ওরা তোকে অনেক পছন্দ করেছে। আরিফ তোর সাথে একবার দেখা করতে চায়। ওকে কি বাসায় আসতে বলবো নাকি বাইরে কোথাও দেখা করবি?
- কালকে তো সবার সামনে দেখা হলোই। এখন আবার আলাদা করে দেখা করার কি আছে?
- সবার সামনে দেখা হওয়া আর আলাদা করে দেখা করা তো এক হলো না। শুধু দেখা হলেই তো হলো না, চেনা জানার ব্যাপার আছে। আর তাছাড়া শুধু ওরা পছন্দ করলেই তো হলো না। তোরও তো পছন্দ হতে হবে।
- তোমরা তো পছন্দ করেছই।
- আমরা পছন্দ করলেও তোর পছন্দের কথা জানতে হবে। বিয়েটা তো সাধারন কিছু না। সারাজীবনের ব্যাপার। তোর পছন্দটাই আসল।
- তোমার যেটা ভালো মনে হয়, সেটা কর।
- আমার মনে হয় বাইরে কোথাও দেখা হলেই ভালো হবে।
রিয়া কিছু বলল না। রিয়ার ফুপু এই বিয়ের প্রস্তাবটা এনেছেন। ছেলে দেখতে শুনতে ভালো। ইঞ্জিনিয়ার। বংশ ভালো। ফ্যামিলিতে বাবা মা আর ছোট ভাই ছাড়া আর কেউ নাই। বাবা আর মা দুজনেরই ইচ্ছা এই ছেলের সাথে রিয়ার বিয়ে হোক। তবে এখানে রিয়ার পছন্দটাই আসল। তার পছন্দের উপর নির্ভর করবে এই সম্পর্কটা সামনের দিকে এগোবে কিনা। কিন্তু রিয়া কিছুই বলছেনা। কি বলবে সে? মন বলে আর কিছু নেই ওর। ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। একেকটা টুকরো কোথায় গিয়ে পড়েছে কে জানে। এখন আরিফের জন্য মনটা গড়তে হলে সেই ভাঙ্গা টুকরো গুলো খুঁজে আনতে হবে। তারপর আঠা দিয়ে জোড়া লাগাতে হবে। তারপরও কি আগের মত হবে মনটা? হবেনা। আর শুধু মনটাকে জোড়া লাগালেই তো হবেনা। নতুন করে ভালোবাসতে হবে। সেটা রিয়া কোনদিনই পারবেনা। সব ভালোবাসা শেষ হয়ে গেছে। স্বপ্নকেও তো বিদায় করতে হবে। স্বপ্ন এখনো মনের একটা ভাঙ্গা টুকরো আকড়ে ধরে আছে। রিয়া ওকে মুক্তি দেবার পরেও যাচ্ছেনা। হয়ত অনেকদিনের অভ্যাস। তাই মায়া পড়ে গেছে। ছেঁড়ে যেতে মন চাচ্ছেনা। থাকুক। সময় হলে আপনা আপনিই চলে যাবে। স্বপ্ন ওকে বলে দিয়েছে, এই বিয়েতে রাজি হলে স্বপ্নকে গলা টিপে মেরে তারপর বিয়ে করতে হবে। রিয়া কোন উত্তর দেয়নি। যার কোন অস্তিত্ব নেই, তার কথার উত্তর দিলেই কি আর না দিলেই কি। আরিফের সাথে যেদিন বিয়ে হবে, সেদিন ঠিকই চলে যাবে স্বপ্ন। অনেক দূরে...। আর কোনদিন ফিরে আসবেনা রিয়ার কাছে। যতদিন বিয়ে না হয়, ততদিন স্বপ্নর এই অত্যাচার সহ্য করে যেতে হবে।
শুরুতে অনেক রাগারাগি করলেও এখন স্বপ্নও চুপ হয়ে গেছে। একরাশ অভিমান নিয়ে সে রিয়ার মনের ভাঙ্গা একটা টুকরো আকড়ে ধরে এক কোনায় চুপ করে বসে থাকে। মাঝে মাঝে নিজে নিজে কথা বলে। সে কথায় শুধুই অভিমান আর কষ্ট। রিয়া তখন দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে রাখে। সে কথাগুলো শুনতে চায়না। কিচ্ছু শুনতে চায়না। সবকিছু মিথ্যা। মাঝে মাঝে স্বপ্ন রিয়াকে বলে, এত কষ্ট দিও না আমাকে। আমি সত্যি সত্যি মরে যাব। এত কষ্ট দেবার জন্যই কি আমাকে তোমার মনে জায়গা দিয়েছ? এতদিন ধরে একটু একটু করে ভালোবেসেছ? রিয়া শুধু চুপ করে শোনে। কোন উত্তর দেয়না। স্বপ্ন বলে কেউ নেই... স্বপ্ন ওর মনের একটা অসুখ। যেটা ওকে ছোটবেলা থেকে থেকে ভোগাচ্ছে। (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.