নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি লিখতে ভালোবাসি। তাও আবার শুধুই বাংলায়..........

রুপালী তারা

রুপালী তারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

হারানো বন্ধু

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:২৬

সব কিছু ছাপিয়ে আজ তুহিনকে অনেক বেশি মনে পড়ছে। তুহিন আমার বন্ধু। আমার না দেখা বন্ধু। যার সাথে পরিচয় হয়েছিল ইন্টারনেটে। সময়টা ২০০৪/২০০৫ সালের। তখন নতুন নতুন ইন্টারনেট ইউজ করি। নতুন ইমেইল খুলছি ইয়াহুতে। মেসেঞ্জারে লগিন করে বসে থাকি। কেউ নাই মেসেঞ্জারে। একদিন বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ড (বর্তমানে বান্ধবীর জামাই; কিন্তু আমার ভাই। তার সাথে সম্পর্কটা দিনে দিনে এতই গভীর হইছে যে বান্ধবী এখন ভাবী হয়ে গেছে) ইয়াহু চ্যাট রুমের কথা বললো। কিভাবে চ্যাটরুমে যেতে হবে দেখায়ে দিল। সেই থেকে ইয়াহু চ্যাট রুমে যাওয়া শুরু হলো। প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাটরুমে ঢুকে বসে থাকতাম। কত মানুষ সেখানে। কত রকমের কথা। অনেকগুলো চ্যাটরুম। সব রুমেই দুনিয়ার মানুষ গিজ গিজ করতেছে। আস্তে আস্তে এ রুম সে রুম করতে করতে একটা নির্দিষ্ট চ্যাটরুমে গিয়ে থিতু হলাম। নানান রকমের, নানান বয়সের মানুষ ওখানে। কেউ লিখে কথা বলে, কেউ ভয়েস চ্যাট করে। একটা ফ্রেন্ড সার্কেল তৈরী হয়ে গেলো। একেক জনের একেক রকমের ইউজার নেম। জটিল পোলা, অপেরা দেবী, ১০০% ডিসকাউন্ট, সুবর্ণলতা লিও আরো কত কি নাম...এখন আর সব নাম মনে পড়ছেনা। প্রতিদিন জম্পেশ আড্ডাবাজি হতো। গল্প, কথা, কবিতা, গান কি ছিল না সেই আড্ডায়?? সবাই মিলে একটা ফ্যামিলির মত হয়ে গিয়েছিলাম। তুহিনের নাম ছিল ১০০% ডিসকাউন্ট। আমি একদিন ওকে পারসোনালি নক করে বললাম, তুই কিসে কিসে ডিসকাউন্ট দেস রে?...সেই থেকে শুরু। চ্যাট রুমে কথা তো হতোই। মেসেঞ্জারেও কথা হতো। ফাইনালি মেসেঞ্জারে কাউকে এড করতে পারলাম কথা বলবো বলে। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, আমরা কখনো কারো সম্পর্কে কিছু জানতাম না। জানতেও চাইনি কোনদিন। বলা ভালো, জানার দরকার হয়নাই। এতো ভালো একটা ফ্রেন্ড সার্কেল হয়ে গেছিল যে, কখনো কেউ কারো আসল নাম, পরিচয় জানার দরকার মনে করিনাই। তুহিনের সাথে মেসেঞ্জারে কথা বলতে শুরু করলেও নামটা জানা হয়নি তখনো। তারপর মেসেঞ্জারে এড হলো সুবর্ণলতা লিও। তখন জানা গেলো, লিও একটা মেয়ে। তাই ওর সাথে বন্ধুত্বটা খুব বেশি গভীর হয়ে গেলো। ফোন নাম্বার আদান প্রদান হলো। তুহিনও বাদ যাবে কেন? মেসেঞ্জার থেকে কথা শুরু হলো ফোনে। প্রায়ই তুহিনকে ফোন করতাম, লিওকে ফোন করতাম। তখনি জানা হলো, ১০০% ডিসকাউন্টের নাম তুহিন আর সুবর্ণলতা লিওর নাম সিনথিয়া। আরো একজন মেসেঞ্জারে চলে আসলো। নাম রাজু আচার্য। জটিল পোলাও আসলো। সে চিটাগাংয়ের ছেলে। এটুকুই মনে আছে। খুলনার একজন মুরব্বী ছিলেন। নাম রাকিব। সবাই তাকে মামু বলে ডাকতাম। একসময় ইয়াহু চ্যাটরুমে আমাদের এই ফ্রেন্ড সার্কেলের উপর কুনজর পড়তে শুরু করলো। বাইরের কাউকে আমরা আমাদের রুমে ঢুকতে দিতাম না। কেউ ঢুকলে উলটা পালটা কথা বলে বের করে দিতাম। মানুষের হিংসা বাড়তে লাগলো। সে কারনেই কিনা জানিনা, আমাদের মধ্যে ভাঙ্গন ধরতে শুরু করলো। ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আমরা ভাগ হয়ে গেলাম। তারপরেও আমাদের সবার মধ্যেই এক অন্যকে ধরে রাখার একটা আপ্রান চেষ্টা ছিল। তাই, হারাবো হারাবো করেও হারালাম না। মেসেঞ্জারে ভীড় করতে শুরু করলাম। তারপর থেকেই আমাদের আড্ডাবাজি হতো কনফারেন্সে। সেই যুগে ওয়েবক্যাম ছিল না আমাদের। তাই কারো চেহারা দেখা হয়নাই। কিন্তু মনের দিক থেকে আমরা সবাই এক আত্না ছিলাম। আস্তে আস্তে দিন গেলো, মাস গেলো, বছর পেরিয়ে গেলো। সবাই আড্ডাবাজি ছেঁড়ে জীবনের তাগিদে ব্যস্ত হয়ে গেলো। শুধু রয়ে গেলাম আমি, তুহিন আর লিও। আমি তুহিন আর লিওর সাথে সব সময় ফোনে কথা বলতাম। রাজু ছিল মেসেঞ্জারে। বাকিরা সব লাপাত্তা হয়ে গেলো। ভালোই চলছিল; পারিবারিক কারনে কয়েক মাসের জন্য সবকিছু থেকে দূরে থাকতে হলো। তখনি হারিয়ে ফেললাম তুহিনকে। লিওকে অবশ্য পাওয়া গেলো। লিও ততদিনে পারিবারিক কারনে বিধ্বস্ত এবং ব্যস্ত। কিছুদিন পরে সেও হারিয়ে গেলো। দুইজনকে হারিয়ে আমি রাজুকে কিছুতেই হারাতে চাইনি। মেসেঞ্জার থেকে সে চলে এসেছে ফেসবুকে। এখনো ফেসবুকেই আছে। অনেক ঝামেলায়, ব্যস্ততায় এখন আর কথা হয়না রাজুর সাথে। তারপরেও ওর প্রোফাইলটা দেখলে শান্তি লাগে...নাহ...রাজু তো আছে আমার পাশেই।
এভাবেই চলে যাচ্ছিল। বছর গড়িয়ে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। হুট করেই লিওকে ফেসবুকে খুঁজে পেয়েছি। সেই পুরানো বন্ধুত্ব নতুন করে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। সেই তখন থেকেই তুহিনের জন্য মনটা কেমন করে। তুহিনকে যতভাবে খোঁজা সম্ভব, খুঁজেছি। পাইনি। যত দিন যাচ্ছে, খুজেই যাচ্ছি। আর ততই অনুভব করছি, তুহিন কি ছিল আমার...। জীবনে অনেক বন্ধু জুটিয়েছি, অনেক বন্ধুত্ব হয়েছে...কিছু বন্ধুত্ব হারিয়ে গেছে, কিছু বিলীন হয়ে গেছে। কিছু বন্ধুত্ব রয়ে গেছে মনের কোঠায়। তুহিন আমার সেই রকম একটা বন্ধু। এতদিন পরে তুহিনের কথা মনে হলে মন জুড়ে একটা কান্নার আভাস পাই...তুহিন, বন্ধু আমার...কোথায় লুকিয়ে আছিস কে জানে...তবে, তুই যেখানেই থাকিস, ভালো থাকিস। তোকে দেখতে খুব ইচ্ছে হয় এখন। প্রতিটা দিন গুনি নতুন উদ্যমে তোকে খুঁজে পাবো বলে......ধরা দিবি কবে বল শিগগির...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.