![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
৮।।
দুই দিন ধরে নাদিভের মনটা খুব অস্থির হয়ে আছে। কোন কাজেই মন দিতে পারছেনা সে। সারাক্ষন কেমন যেন একটা অস্থিরতা কাজ করে ওর মধ্যে। রাতেও ভালো ঘুম হচ্ছেনা। আরিফের সাথে যে মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়েছে, তার সাথে দেখা হবার পর থেকে ওর এই অবস্থা। সারাক্ষন ঘুরে ফিরে মেয়েটার কথাই মনে পড়ছে। ঘুমোতে গেলেও ওকেই স্বপ্নে দেখছে। রিয়ার চোখ ভর্তি পানি। সে কান্নায় অনেক অভিমান মেশানো। এখনি উপচে পড়বে। ঠিক তখনি ওর ঘুম ভেঙ্গে যায়। কে জানে হয়ত মেয়েটার কথায় অনেক অভিমান ছিল। নাদিভ সেটা ধরতে পারেনি। সে যদি তার অভিমানগুলো নাদিভের সামনে ঝেড়ে ফেলত, তাহলে ব্যাপারটা অনেক খানি সহজ হয়ে যেত নাদিভের জন্য। তখন সে আরিফের শিখিয়ে দেয়া কথাগুলো সহজেই বলে ফেলতে পারত। অবশ্য সেদিন এত রকম ভুমিকার কোন দরকার ছিলনা। আরিফ পাঠিয়েছে কিছু বলতে। বলেই চলে আসবে। এত ভুমিকা কিসের? খুব সহজ কাজ কিন্তু এই সহজ কাজটাই নাদিভ করতে পারেনি। রিয়ার চেহারায় কিছু একটা ছিল, যেটা দেখে সে সবকিছু গুলিয়ে ফেলেছিল। কিছুই বলতে পারেনি। আরিফ যা যা শিখিয়ে দিয়েছিল, তার ধারে কাছেও যেতে পারেনি। হেন তেন বলতে গিয়ে এমন এক পর্যায়ে গেল যে, রিয়া সরাসরি বলেই দিলো সে নিজের ইচ্ছেতেই এই বিয়েতে রাজি হয়েছে। ওকে কেউ জোর করেনি।
এরপরেও নাদিভের মনের মধ্যে খচ খচ করেই যাচ্ছে। আসলেই কি তাই? মুখে একরকম কথা বললেও চোখে কিন্তু অন্যরকম কথা ছিল। কেমন যেন এক ধরনের আকুতি। নাদিভ পুরোটা সময়ই রিয়ার দিকে তাকিয়েছিল। কিন্তু রিয়া একবারের জন্যও ওর দিকে ভালো করে তাকায়নি। কেমন যেন লুকোচুরি ভাব। একবার শুধু চোখাচোখি হয়েছিল। তাও খুব তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে ফেলেছিল রিয়া। কে জানে, হয়ত আরিফের জায়গায় তার বন্ধুকে দেখে সে হকচকিয়ে গেছে। নাদিভ শুনেছে, মেয়েদের নাকি সব সময় প্রিপারেশনের দরকার হয়। হুট করে কিছুই করতে পারে না তারা। সেজন্যই হয়ত হঠাত করে ওকে দেখে রিয়ার সব গুলিয়ে গিয়েছিল। খুব অল্প সময় হলেও নাদিভ রিয়ার জড়তা আর লুকোচুরিটা ঠিকই ধরতে পেরেছিল। কিছু একটা লুকাচ্ছিল সে। কি হতে পারে? কি লুকোচ্ছিল রিয়া? আরেকটু সময় কথা বললে হয়ত নাদিভ সেটাও ধরে ফেলতে পারত কিন্তু বেশি কিছু বুঝার আগেই কেমন তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো রিয়া।
রিয়া চলে যাবার পর অনেকক্ষন পর্যন্ত নাদিভ সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। কতক্ষন দাঁড়িয়ে ছিল সে জানেনা। আরিফ ওর কাঁধে হাত রাখার পর ওর হুঁশ ফিরলো।
- কিরে এমন করে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস?
- চলে গেলো।
- যা যা শিখিয়ে দিলাম, সব ঠিকঠাক বলেছিস তো?
- কিছুই বলা হয়নাই।
- কি বলিস? তাহলে এতক্ষন কি কথা বললি ওর সাথে?
- কি জানি, কি কি বললো, ঠিক বুঝলাম না।
- এটা একটা কাজের কাজ করলি তুই? তুই জানিস, কত কষ্টে এই মেয়েকে আজকে দেখা করার জন্য ম্যানেজ করলাম? এই মেয়ে তো দেখাই করতে চায়না, তার নাকি পরীক্ষা। আর আম্মাও দেখার করার কথা বললেই শুরু করে, এত দেখাদেখির কি আছে। বউয়ের পরীক্ষা শেষ হোক। তারপর বিয়ে করায়ে দিব। তারপর যত খুশি দেখা দেখি করিস।
আরিফের কথা শুনে নাদিভ হাসতে শুরু করলো। সেটা দেখে আরিফ ক্ষেপে গেলো,
- আসলে তুই একটা অপদার্থ। সব কিছু লাইন বাই লাইন শিখিয়ে মুখস্ত করিয়ে দিলাম। তুই শুধু রিয়ার সামনে গিয়ে কথাগুলো বলবি। এত সহজ কাজটা করতে পারলি না?
নাদিভ কোন উত্তর দিলো না। নিঃশব্দে হাসতে লাগলো। আরিফ আবারো বললো,
- কথা বলিস না কেন? বলদের মত হাসতেছিস খালি।
- স্যরি দোস্ত। এই মেয়েটা এত প্যাচায়ে কথা বলে, তুই না শুনলে বিশ্বাস করবিনা। সিম্পল একটা কথা বলতে গেলাম তাকে...সে শুরু থেকেই কথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেললো। বলতেই পারলাম না তোর কথাগুলো। তুই চিন্তা করিস না। আমি রিয়ার সাথে আরেকবার দেখা করব। তখন ঠিক ঠিক সব বলবো ওকে।
- কবে বলবি? বিয়ে হয়ে গেলে তারপর?
- বিয়ে হয়ে গেলে মানে কি? তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে কালকেই তোর বিয়ে। তুই এত অস্থির হচ্ছিস কেন? আজকে বলতে পারিনি তো কি হইছে। কালকে বলবো।
- কালকে তো এই মেয়ে তোর সাথে দেখা করার জন্য বসে থাকবে না।আমি আর আম্মাকে বলতে পারবোনা রিয়ার সাথে দেখা করার কথা।
- আচ্ছা, আমি নিজে ব্যবস্থা করব রিয়ার সাথে দেখা করার। তুই অধৈর্য হইস না।
- তোর আশায় থাকলে তো...
- এত ক্যাচাল করতেছিস কেন? বললাম তো, আমি রিয়ার সাথে যে করেই হোক, দেখা করব। তোকে আর ব্যবস্থা করতে হবেনা। তুই শুধু ওর মোবাইল নাম্বারটা দে। আমি ফোন করে ওর সাথে কথা বলব। তারপর দেখা করব।
- মোবাইল নাম্বার আমার কাছে নাই?
- নাম্বার দে
- বললাম তো, নাই।
- নাই মানে?
- নাই মানে নাই। না থাকলে কিভাবে দিব?
- তোর হবু বউ, বিয়ে প্রায় ঠিক হয়ে গেছে। আর তুই বলতেছিস, নাম্বার নাই তোর কাছে?
- সত্যিই নাই। আমি নাম্বার চাইছি অনেক বার। সেই মেয়ে নাকি শুধু কলেজে গেলে মোবাইল ইউজ করে। বাকিটা সময় মোবাইল বন্ধ করে রাখে।
- এটা কোন কথা হলো? এই যুগে...
- আমি কি করবো? আমি বারবার নাম্বার চাইছি, আমাকে ল্যান্ড নাম্বার দিছে কথা বলতে। সেখানে ফোন করলে আশে পাশে দুনিয়ার মানুষ থাকে। নিরিবিলিতে ঐ মেয়ের সাথে কথা বলার কোন চান্সই নাই।
- দুর শালা। একটা মোবাইল নাম্বার, তাই তুই জোগাড় করতে পারস না। তুই যা এখান থেকে।
-- তুই এতক্ষন কি কথা বললি? তোরে পুরো বিকাল দিলাম কথা বলার জন্য আর তুই...ঐ মেয়ে তো দেখলাম নিজেই কট কট করে কি কি বলে চলে গেলো। তুই হাবার মত শুধু শুনলি। তুই ওরে কথা বলার চান্স দিবি কেন? ৫-১০ মিনিট কি কোন সময় হইলো? আটকাতেও পারলিনা। বলতে তো পারতি যে তোর কথা এখনো শেষ হয়নাই। কি করলি তুই?
নাদিভ চুপ হয়ে গেলো। ওর মাথাটা কেমন ফাঁকা হয়ে গেছে। আরিফ কি বলছে, কিছুই ঢুকছেনা মাথায়। পুরো মাথা জুড়ে কেমন একটা শুন্য অনুভুতি। মনে হচ্ছে, কি যেন হারিয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে ।
পরের দিন অনেক ভেবে চিন্তেও রিয়ার সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করা গেলনা। আরিফ রিয়ার বাসার নাম্বারে ফোন করে রিয়াকে আরেকবার দেখা করার কথা বলেছিল। রিয়া নাকি অনেক কথা শুনিয়ে দিয়েছে। বন্ধুকে পাঠিয়েছে কেন, নিজের কথা নিজেই বলা উচিত আরো কি কি শুনিয়ে দিয়েছে। আরো বলেছে, সে নাকি আর দেখা করতে পারবেনা। যা কথা বলার, ফ্যামিলির মাধ্যমেই বলুক। এমনকি ফোন করতেও মানা করে দিয়েছে। ওর নাকি পড়ায় ডিস্টার্ব হয়। তারপর আরিফ ওর মাকে আবারো রিয়ার সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করে দিতে বলেছিল। এতে করে হিতে বিপরীত হয়ে গেছে। আরিফের মা ধরে নিয়েছেন, ছেলে এখনি হবু বউয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে। তাই প্রতিদিন দেখা না হলে চলছেইনা। তিনি রিয়ার বাসায় ফোন করে বিয়ের দিন তাড়াতাড়ি ঠিক করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বলেছেন, সামনের সপ্তাহেই তারা রিয়ার বাসায় যাবেন বিয়ের তারিখ ফিক্স করতে।
এতকিছুর পরেও রিয়ার সাথে দেখা করার কোন ব্যবস্থা হয়নি। রিয়ার ফুপু আরিফকে বলেছেন, রিয়ার সাথে দেখা করতে হলে আরিফ যেন সরাসরি বাসায় চলে আসে। ফরমাল দেখা সাক্ষাতের দরকার নাই। এখানেই অসুবিধা হয়ে গেছে। নাদিভকে তো আর রিয়ার বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবেনা। আর নিয়ে গেলেও রিয়ার সাথে নাদিভকে একা কথা বলতে দেখলে ব্যাপারটা কেউ ভালোভাবে নেবেনা। বিয়ে হবে আরিফের সাথে, নাদিভের সাথে কথা কিসের? কিন্তু রিয়াকে যা বলতে চায় আরিফ, সেটা সে নিজে কোনভাবেই বলতে পারবেনা। নাদিভকে দিয়েই বলাতে হবে।
রাতের বেলা ফেসবুকের ওয়ালের পোস্টগুলো দেখছিল আর রিয়ার কথা ভাবছিল নাদিভ। দুইদিন যাবত সে শুধু ভাবছে কিভাবে রিয়ার সাথে দেখা করা যায়। আরিফ রিয়ার ফেসবুক এড্রেস দিয়েছে যদি কোনভাবে ফেসবুকে কথা বলা যায়। রিয়ার ফেসবুকে গিয়ে নাদিভ রিয়ার পাবলিক ছবিগুলো দেখছিল। পুরো প্রোফাইলটা ঘুরে দেখছিল যতটা পাবলিকলি দেখা যায়। রিয়ার ছবি দেখে ওর মনে হচ্ছে খুব পরিচিত কেউ। নাদিভের খুব আপন কেউ, কোথাও সে রিয়াকে দেখেছেই। কিন্তু কোনভাবেই মনে করতে পারছেনা কোথায় দেখেছে। একবার ভাবল, ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাবে। তারপরে মনে হল, আগে থেকে হুট করে রিকোয়েস্ট পাঠালে রিয়া মাইন্ড করতে পারে। নাদিভের প্রোফাইল দেখেই বুঝে ফেলবে আরিফের বন্ধু। তখন ব্লক করে দিতে পারে। তার চেয়ে আগে দেখা হোক। কথা হোক। আরেকটু পরিচিত হোক। তারপর নাহয় ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানো যাবে। কিন্তু কিভাবে দেখা করবে? আরিফ বলেছিল, রিয়া সিটি কলেজে অনার্সে পড়ে। কলেজের সামনে গিয়ে দেখা করা যেতে পারে। কলেজে নিশ্চয়ই প্রতিদিন যায়।
হঠাত নাদিভের মনে পড়লো, মাসখানেক আগে একটা মেয়ে ওর সাথে দেখা করতে চেয়েছিল। সেও সিটি কলেজেই পড়তো। রিয়ার সাথে দেখা করার জন্য এই মেয়েটার কাছে হেল্প চাইলে কেমন হয়? সে কি নাদিভকে হেল্প করবে? করতেই হবে। যে করেই হোক, নাদিভ ওর থেকে হেল্পটা আদায় করে নিবেই। মেয়েটার ফেসবুক ডিএকটিভেট করা থাকলেও মোবাইল নাম্বার আছে নাদিভের কাছে। একদিন ফোন করেছিল। নাদিভ তখন নাম্বারটা সেভ করে রেখেছে। আচ্ছা, মেয়েটার নাম যেন কি ছিল? নাদিভ ফোনের কন্টাক্ট লিস্টে ঘেঁটে দেখলো, রিয়া নামে নাম্বারটা সেভ করা। মেয়েটার নামও তো রিয়া ছিল!!!
এর মানে কি? রিয়াই কি নাদিভের সাথে এক মাস আগে দেখা করতে চেয়েছিল? কিন্তু তখন তো আরিফের সাথে রিয়ার বিয়ের কোন কথা ছিলনা। রিয়া তখন কিভাবে চিনত নাদিভকে? নাদিভের মনে পড়লো, রিয়া সেদিন নাদিভকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠেছিল। কেন? নিশ্চয়ই সে নাদিভকে আগে থেকেই চেনে। আরো মনে পড়লো, ফেসবুকের মেয়েটা ওর সাথে অনেক রোমান্টিক ভঙ্গিতে কথা বলতো। ইশারা ইঙ্গিতে বুঝাতে চাইত যে সে নাদিভকে ভালোবাসে। নাদিভ পাত্তা দেয়নি। তারপর যখন শুনলো তানহা নাদিভের হবু বউ, তখন আর চ্যাট করেনি। ফেসবুক একাউন্ট ডিএকটিভেট করে দিয়েছে। নাদিভও আর তার সাথে কথা বলার দরকার মনে করেনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, কথা বলার দরকার আছে। এই মেয়েটাই যদি আরিফের হবু বউ হয়, তাহলে অনেক কিছু জানার আছে রিয়ার কাছে। সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে হবে। (চলবে)
©somewhere in net ltd.