![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
৯।।
রিয়ার মোবাইলটা বেজেই যাচ্ছে। রিয়া স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখলো অপরিচিত একটা নাম্বার। কিন্তু এখন ফোনটা রিসিভ করা সম্ভব না। সে এখন ক্লাসে। স্যার লেকচার দিচ্ছেন। ফোনটা বারবার বেজেই যাচ্ছে। থামার নাম নেই। যদিও ক্লাসে রিয়া সব সময় ফোন সাইলেন্ট করে রাখে। তারপরেও ভাইব্রেশন হচ্ছে বেশ জোরেই। রিয়া স্যারের লেকচারে মনোযোগ দিতে পারছেনা। বাধ্য হিয়ে রিয়া টেক্সট পাঠালো।
- কে?
- ফোন ধরো।
- আমি ক্লাসে
- ক্লাস থেকে বাইরে যাও।
- সম্ভব না
- কখন ছুটি হবে? তোমার সাথে কথা আছে।
- আপনি কে?
- ফোন ধরলেই জানতে পারবা
- ১২টার পর ফোন করেন।
ক্লাস ছুটি হবার পর রিয়া নাম্বারটা চেক করলো। অপরিচিত একটা নাম্বার। ১২টা বেজে গেছে কিন্তু এখন আর ফোন করার নাম নাই। রিয়া একবার ভাবলো কল ব্যাক করবে। পরক্ষনেই সে চিন্তা বাদ করে দিল। যার দরকার, সেই আবার ফোন করবে। আরিফও হতে পারে। সে অনেকবার রিয়ার মোবাইল নাম্বার চেয়েছে। রিয়া দেয়নি। মা আর ফুপুকেও মানা করে দিয়েছিল যাতে মোবাইল নাম্বার না দেয়। বলেছে, পরীক্ষার সময়ে কারো সাথে কথা বলতে চায়না সে। একান্তই কথা বলার দরকার হলে বাসার নাম্বারে ফোন করলেই হবে। কে জানে হয়ত মা বা ফুপু কেউ একজন নাম্বার দিয়েছে। রিয়া বান্ধবীদের সাথে ক্যান্টিনের দিকে গেল। ঠিক ১২টা ১৫তে আবারো ফোন বাজলো রিয়ার।
- হ্যালো
- কোথায় তুমি?
- আপনি কে সেটা আগে বলুন।
- আমি কলেজের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। তুমি গেটের বাইরে আসো।
- কিন্তু আপনি কে?
লাইনটা কেটে গেলো। রিয়ার খুব অবাক লাগলো। কে এই ছেলে? গলার স্বর তো চেনা মনে হচ্ছেনা। কথা বলার ভঙ্গিটাও ভালো না। রিয়াকে অর্ডার দিচ্ছে কলেজের গেটে যেতে। দুই দুই বার সে জিজ্ঞেস করলো, কে সে। একবারো উত্তর দেবার দরকার মনে করলোনা। ফাজলামি নাকি? মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলো রিয়া, ধুর!! কে না কে ফোন করলো আর সে তার কথা মত কলেজের গেটে গিয়ে দাঁড়াবে। এত ঠ্যাকা পড়েনাই। আর এটা যদি আরিফ হয়, তাহলে তো কলেজের গেটে যাবার প্রশ্নই আসেনা। বিয়ে করতে রাজি হইছে, এটাই বেশি। এত দেখা দেখি করার কোন দরকার নাই। দেখা যাবে আবারো কোন একটা অজুহাতে সে নাদিভকে পাঠিয়ে দিয়েছে। রিয়া চায়না নাদিভের সাথে ওর আবারো দেখা হোক। নাদিভকে সেদিন দেখেই চেপে রাখা কষ্টটা গলা পর্যন্ত উঠে এসে দলা পাকিয়ে ছিল। চোখে কান্নার পানিও চলে এসেছিল। নাদিভের সাথে তানহার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। কে জানে হয়ত এই এক মাসে বিয়ে হয়েও গিয়েছে ওদের। মনে হতেই নাদিভের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলনা সে। হাত পা কাঁপছিল খুব। মনে হচ্ছিল, এখনি বুঝি পা ভেঙ্গে বসে পড়বে। স্বপ্নও তখন অনেক আবোল তাবোল বকছিল। রিয়া, একবার আমাকে বলো ভালোবাসি। আমি তোমার হাত ধরব, তোমাকে আমার বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরব। তোমার হাতটা ধরে তোমার বাবামায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াবো। সারাজীবনের জন্য তোমাকে নিজের করে নিবো। একটু সুযোগ দাও আমাকে। আর কতদিন এভাবে মনের মধ্যে কষ্ট দিবা আমাকে? স্বপ্নর এই আকুতি রিয়াকে ভেতরে ভেতরে পাগল করে দিচ্ছিল। রিয়া অনেক কষ্টে দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুঠিবদ্ধ করে তখন নিজেকে সামলে নিয়েছিল। নাহ, নাদিভের সাথে আর কোনভাবেই দেখা করা সম্ভব না। আরিফের সাথেও না।
একটু পর আবার ফোন বাজলো। রিয়া ফোন না ধরে টেক্সট পাঠালো। আমি কলেজের গেটে যেতে পারবোনা। তারপরেও ফোনটা বেজেই চললো। রিয়ার খুব বিরক্ত লাগলো। আরে, এ তো দেখি ছ্যাচড়ার মত ফোন করেই যাচ্ছে...। কিছুক্ষন পর টেক্সট আসলো, তুমি বাইরে না আসলে কিন্তু আমি ভেতরে ঢুকবো। সবার সামনে তোমার হাত ধরে কলেজের বাইরে নিয়ে আসবো। সেটা কি খুব ভালো হবে? রিয়া এবার ভড়কে গেলো। সবার সামনে হাত ধরে বাইরে নিয়ে আসবো মানে কি? জোর যার মুল্লুক তার নাকি? রিয়া একরকম নিশ্চিত হয়ে গেলো, এটা অবশ্যই আরিফ। অন্য কেউ হলে এরকম টেক্সট পাঠানোর সাহস করতো না। এতদিন রিয়া ওকে এড়িয়ে গেছে। দেখা করেনি। মোবাইল নাম্বার দেয়নি। বাসার ল্যান্ড নাম্বারে ফোন করলে ব্যস্ততার ভান করেছে। আজকে তো মনে হচ্ছে, আটঘাট বেঁধেই এসেছে দেখা করবে বলে। যদি সত্যি সত্যি কলেজের ভেতরে চলে আসে রিয়াকে খুঁজতে?? তার চেয়ে গেটের সামনে যাওয়াই ভালো হবে। বান্ধবীরা তেমন কেউ রিয়ার বিয়ে ঠিক হবার কথা জানেনা। রিয়া তাদেরকে কিছু জানায়নি। দেখা যাক আরিফ কি বলে? রিয়া টেক্সট পাঠালো, অপেক্ষা করুন, আসতেছি।
কিছুক্ষন পর রিয়া গেটের সামনে গিয়ে চারদিকে তাকালো। আশেপাশে তেমন কাউকে চোখে পড়ছেনা। সে টেক্সট ব্যাক করলো, আমি কলেজের গেটে। আপনি কোথায়? আর কোন খবর নেই ছেলেটার। রিয়া নাম্বারটাতে কল ব্যাক করলো। কিন্তু কেউ রিসিভ করলো না। রিয়া অবাক হয়ে গেলো, ছেলেটা ওকে ফোন করে কলেজের গেটে ডেকে এনে এখন নিজেই ফোন রিসিভ করছেনা!!! এসবের মানে কি?
কিছুক্ষন অপেক্ষা করে এদিক ওদিক তাকিয়ে রিয়া আবার কলেজের ভেতরে যাবার জন্য পা বাড়ালো। ঠিক সেই মুহূর্তে নাদিভ এসে রিয়ার পথ আটকালো। নাদিভকে দেখে রিয়া ভুত দেখার মত চমকে গেলো।
- কি হলো? চমকে গেলেন যে? নাদিভের মুখে হাসি।
- আপনি?
- হ্যা আমি।
- আপনি এখানে কি করছেন?
- আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি।
- আপনিই আমাকে ফোন করেছিলেন?
- হ্যা।
- আরিফ কি আপনাকে আবারো কিছু বলতে পাঠিয়েছে।
- আসলে সেদিন যা বলতে চেয়েছিলাম, সেটা বলাই হয়নি। তাই আজকে আবার দেখা করতে এলাম। কথাগুলো আজ বলতে চাই।
- কি কথা তাড়াতাড়ি বলেন।
- এত তাড়া কিসের? আপনার তো ক্লাস শেষ।
- ক্লাস শেষ তো কি হয়েছে? বাসায় যেতে হবে।
- আমার মনে হয় এত তাড়াতাড়ি আপনার বাসায় না গেলেও চলবে।
- দেরী হলে বাসায় চিন্তা করবে।
- আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আপনি চাইলেই আপনার হবু বরের সাথে ঘুরতে পারেন বাইরে। বাসা থেকে ফোন করলে বলে দিবেন আপনি হবু বরের সাথে ঘুরতে গেছেন। ফিরতে দেরি হবে।
- আপনি তো আমার হবু বর না।
- আজকের জন্য ধরে নিন, আমিই আপনার হবু বর। অন্ততঃ কিছু সময়ের জন্য। চলুন।
- আমি কোথাও যাব না। যা বলার এখানে দাঁড়িয়েই বলুন।
নাদিভ রিয়ার হাত চেপে ধরলো।
- চলুন আমার সাথে।
(চলবে)
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৫
রুপালী তারা বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৩
টুনটুনি০৪ বলেছেন: ছবি সুন্দর হয়েছে।