নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি লিখতে ভালোবাসি। তাও আবার শুধুই বাংলায়..........

রুপালী তারা

রুপালী তারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৭

১০।।
নদীর পাড়ে একটু দুরত্ব রেখে পাশা পাশি বসে আছে নাদিভ আর রিয়া। দুইজনই চুপচাপ। কেউ কোন কথা বলছেনা। রিয়ার মাথা ঝিম ঝিম করছে। কলেজের সামনে নাদিভ ওর হাত চেপে ধরেছে। একটা রিকশা ডেকে ওকে রিকশায় উঠিয়েছে। তারপর এখানে নিয়ে এসেছে। সে কিছু বলতে পারেনি। এমনকি টু শব্দও করেনি। বাধ্য মেয়ের মত চুপচাপ চলে এসেছে।
রিকশায় নাদিভ ওর গা ঘেঁষে বসেছিল। রিয়া চেষ্টা করেছে সরে বসতে। কিন্তু নাদিভ এক হাত পেছনে দিয়ে ওকে ধরে রেখেছিল। সেই মুহূর্তে ওর হাত পা কাঁপছিল। মাথা ঘুরছিল। নাদিভ বুঝতে পেরে খুব উপভোগ করছিল। বারবার রিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছিল। লজ্জায় তখন রিয়ার মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল। সে যতটুকু সম্ভব মাথা নিচু করেছিল। রিকশা থেকে নেমে বেশ কিছুটা পথ হাটতে হয়েছে। তখনো নাদিভ রিয়ার হাতটা ধরে রেখেছিল। রিয়া একবার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। নাদিভ তখন মজা করে বলছিল, হাত ছাড়বো না। যদি পালিয়ে যান?? এসবের মানে কি রিয়া জানেনা। নাদিভকে আগের দিন যতটা ভদ্র মনে হয়েছিল, আজকে এর থেকেও বেশি অভদ্র মনে হচ্ছে। স্বপ্ন হলে কখনোই এমন কাজ করতে পারতো না। হুট করে অচেনা অজানা একটা মেয়ের হাত চেপে ধরা, তাকে জোর করে রিকশায় উঠানো, রিকশায় ঘনিষ্ঠ হয়ে বসা... এসব কি? রিয়ার রাগ হবার কথা ছিল। কিন্তু রাগ করতে পারেনি। উলটো লজ্জায় মাথা নুয়ে বসে ছিল।
রিয়া জানেনা নাদিভ কেন ওকে এভাবে এই নদীর পাড়ে নিয়ে আসলো? কি কথা বলতে চায় সে? আর কথাগুলো বলার জন্য এখানেই কেন আসতে হবে? অন্য কোথাও গিয়ে কি বলা যেত না? এখন আবার ভাব ধরে আছে। রিয়া উশখুশ করতে লাগলো,
- কি বলার জন্য এখানে নিয়ে এসেছেন?
নদীর দিকে তাকিয়ে ছিল নাদিভ। রিয়ার কথায় মুখ ফেরালো।
- সেদিন আমি আরিফের হয়ে আপনাকে কিছু কথা বলতে চেয়েছিলাম। পরে সেটা আর বলা হয়নি......
- আমি বুঝলাম না। আপনার বন্ধু আমাকে কিছু বলতে চায়। তার জন্য আমার কলেজের সামনে আসতে হবে কেন? আর তাছাড়া আপনাকেই বা কেন বারবার পাঠাচ্ছেন? উনি নিজে আসতে পারেন না?
- আরিফ যা বলতে চায়, সেটা আপনার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে চাচ্ছেনা। তাই আমাকে বলেছে ওর হয়ে কথাগুলো আপনাকে বলতে।
- সামনা সামনি না বলতে পারলে ফোনে বলুক। আপনাকে দিয়ে কেন বলাচ্ছে?
- আমি বললে কোন সমস্যা? আপনি মনে হয় আমাকে দেখে খুব একটা খুশি হন নি।
- আপনাকে দেখে খুশি হবার কোন কারন আছে?
- এমন রাগ করে কথা বলার মতও কিছু হয়নি।
- এভাবে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলেন কেন?
- হাত না ধরলে কি আপনি এখানে আসতেন?
- আর রিকশায় ওরকম করলেন কেন?
- রিকশায় আমি কি করলাম?
রিয়া অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো, অসভ্য একটা। নাদিভ বুঝতে পেরে বললো,
- এখানে অসভ্যতার কি হলো? আপনি যেভাবে সরে সরে যাচ্ছিলেন, তাতে করে আমার মনে হয়েছিল আরেকটু হলে আপনি পড়েই যাবেন চলন্ত রিকশা থেকে। তাই শক্ত করে ধরে রেখেছিলাম আপনাকে। আমি জানি, আপনি ব্যাপারটা পছন্দ করেন নি। কিন্তু আমি তো শুধু এক হাত দিয়ে আপনাকে ধরে রেখেছিলাম। আর তো কিছু করিনি। এর জন্য আপনি আমাকে অসভ্য বলতে পারলেন?
রিয়া কথা ঘুরিয়ে বললো,
- এখানেই কেন আসতে হবে? কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে বললে কি হতো?
- কথাগুলো ওখানে দাঁড়িয়ে বলা যেত না।
- কি এমন কথা...
- দেখুন, আপনার সাথে আমার অনেক কথা আছে। আরিফের কথাগুলো বলার পরে আরো কিছু বোঝাপড়া আছে। তার জন্য সময় দরকার। আর দরকার একটা নিরিবিলি জায়গা। আমার জানামতে, এই জায়গাটা পারফেক্ট। তাই নিয়ে আসলাম। আপনার যদি এই জায়গাটা পছন্দ না হয়, তাহলে আপনার পছন্দের কোন জায়গার কথা বলতে পারেন। সেখানেই যাবো। তাহলে আবারো রিকশায় উঠতে হবে কিন্তু।
- থাক, এখানেই বলুন কি কথা?
- আপনাকে এই বিয়েটা বন্ধ করতে হবে। যে করেই হোক।
- কেন?
- আরিফের এই বিয়েতে মত নেই। এক রকম বাধ্য হয়েই ওকে রাজি হতে হয়েছে। আমেরিকায় পড়াশুনা করার সময় ওর সাথে একটা মেয়ের পরিচয় হয়েছিল। ওরা একজন আরেকজনকে ভালোবাসে। ওরা ফ্যামিলিকে না জানিয়েই নিজেরা বিয়ে করে ফেলেছে।
- প্রথমেই ফ্যামিলিকে জানাতে কি সমস্যা ছিল? তাহলে তো আর ফ্যামিলি অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করতো না।
- আরিফ ওর বাবা মাকে ফোনে জানিয়েছিল। তখন ওর বাবা মা মেয়ের ফ্যামিলির সাথে যোগাযোগ করছিল। মেয়েটার ফ্যামিলিতে কিছু প্রবলেম আছে। এ কারনে ওর ফ্যামিলি মেয়েটার সাথে ওর বিয়ে দিতে রাজি হয়নি। তাই নিজেরাই বিয়ে করে ফেলেছে।
- তো?? এখন আর সমস্যা কিসের? বিয়ে তো হয়েই গেছে। এখন কেন জানাচ্ছেনা ফ্যামিলিকে?
- আরিফের বাবা খুব বদমেজাজি। সেই সাথে হার্টের রোগী। উনি হুট করে বিয়ের খবর জানতে পারলে উনার অবস্থা সিরিয়াস হয়ে যেতে পারে।
- একদিন তো জানাতেই হবে তাইনা? খবরটা কতদিন গোপন থাকবে?
- হ্যা একদিন জানাতে হবে কিন্তু আরিফ এখনি কিছু জানাতে চাচ্ছেনা। ওর কিছুদিন সময় দরকার। কিছু প্রিপারেশন দরকার। তাছাড়া ওর বাবার অবস্থাও এই মুহূর্তে খুব একটা ভালো না। এদিকে হুট করেই ওর ফ্যামিলি আপনার সাথে ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। এখন আপনাকেই বিয়েটা বন্ধ করতে হবে।
- আমি কিভাবে বন্ধ করব?
- যে কোন ভাবে। আপনি আপনার বাবা মা কে বলতে পারেন যে, আরিফকে আপনার পছন্দ হয়নি। অথবা অন্য যে কোন একটা কারন বলতে পারেন। বলতে পারেন আপনি কাউকে ভালোবাসেন।
- এটা বলা সম্ভব না।
- কেন?
- কারন, আমি কাউকে ভালোবাসিনা।
- সত্যিই কি তাই?
- কি বলতে চাচ্ছেন?
- আমার মনে হয়, আপনি কাউকে ভালোবাসেন।
- আপনার কেন এটা মনে হলো?
- এমনিই হঠাত মনে হয়ে গেলো।
- বললাম তো, আমি ...
রিয়া থেমে গেলো। শুনতে পেলো স্বপ্ন বলছে, মিথ্যে কথা বলো না রিয়া। তুমি আমাকে ভালোবাসো। সেটা জানাতে এত দ্বিধা কিসের তোমার? সত্যিকারের ভালোবাসায় কোন দ্বিধা থাকেনা। কোন সংকোচ থাকেনা। তোমার তো চিৎকার করে বলা উচিত, তুমি আমাকে ভালোবাসো। যদি আমাদের ভালোবাসার কথা নাই বলতে পারো, তাহলে আর কোনদিন ভালোবেসো না। এরকম গোপন ভালোবাসা আমার দরকার নেই।
- বলুন। থেমে গেলেন কেন?
- আমি একজনকে ভালোবাসি।
- আমি জানি। কাকে ভালোবাসেন?
- আছে একজন।
- তার পরিচয়টা কি জানতে পারি?
- তার পরিচয়টা দেয়া সম্ভব না।
- কেন? পরিচয় দিতে লজ্জা লাগছে?
- জ্বি??
নাদিভ রিয়ার কাছে সরে এলো। সরাসরি রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
- ভালোবাসো অথচ বলতে পারো না। কেন? ভালোবাসো অথচ সামনে এসে দাঁড়াতে পারো না। কেন? ভালোবাস অথচ গোপনে একটা রক্তলাল গোলাপ রেখে যাও? কেন? ভালোবাসো অথচ মাঝখানে একটা কাঁচের অদৃশ্য দেয়াল তুলে রেখেছ? কেন? ভালোবাসো অথচ তাকে ফেলে অন্যের বউ হতে যাচ্ছ? কেমন ভালোবাসা তোমার? একবারো কি বলা যেত না যে, তুমি আমাকে ভালোবাস?
রিয়া দম বন্ধ করে বসে রইলো। কান ঝা ঝা করছে। নাদিভকে এত কাছ থেকে দেখে একরাশ লজ্জা এসে ভর করেছে ওর মুখে। ঘামতে শুরু করলো সে। মনে হল, এখনি অজ্ঞান হয়ে যাবে। নাদিভ এইগুলা কি বলতেছে? ওর কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো? তানহার সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে অথবা বিয়ে হয়ে গেছে, যেটাই হোক, এরপরেও সে কিভাবে রিয়াকে এইসব বলতে পারে? তাও, রিয়া ওর কাছে পরিচিত হলে একটা কথা ছিল। হচ্ছেটা কি এসব? নাদিভের মুখে তখন নিঃশব্দ হাসি।লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলো রিয়া। নাদিভের চোখের দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছেনা। ওর খুব ইচ্ছে করছে নাদিভের বুকের ভেতর গিয়ে মুখটা লুকাতে।
অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলো। নিজেকে মনে করিয়ে দিলো সে স্বপ্নকে ভালোবাসে। নাদিভ কে না। স্বপ্ন আর নাদিভের চেহারা একি রকম হতে পারে। তাই বলে নাদিভ কখনোই ওর ছিলনা। নাদিভের জীবনের সাথে জুড়ে আছে তানহা। তানহাই নাদিভের সবকিছু। রিয়া কেউ না। আরিফের বন্ধু সে; তাই রিয়ার সাথে ইচ্ছে করে এমন করতেছে যাতে করে রিয়া ওর প্রতি দুর্বল হয়ে যায় আর বিয়েটা বন্ধ করে। বিয়ে বন্ধ করতে পারলে তারপর সে ঠিকই ফিরে যাবে তানহার কাছে।
তবে হ্যা, রিয়া ওর ভালোবাসার কথা অবশ্যই বলবে নাদিভকে। নাদিভের জানা উচিত রিয়ার ভালোবাসার কথা। জানলে ওর ভুল ভাঙ্গবে। কিছু বলার জন্য মুখ খুললো রিয়া। এই প্রথম সে নিজের ভালোবাসার কথা কাউকে বলতে যাচ্ছে.....বলতে গিয়ে টের পেলো ওর হাত পা কাঁপছে। গলাটাও কেমন কেঁপে উঠলো। ভেতর থেকে স্বপ্ন বলেই যাচ্ছে, বলো। একবার বলো। একটা বার বলেই দেখ। বলো প্লিজ। এমন সুযোগ আর কখনো নাও আসতে পারে...বলে ফেলো। উলটা পালটা চিন্তা করা বন্ধ কর রিয়া। বলে ফেলো। আজকে যদি বলতে না পারো, তাহলে আর কখনো বলার সুযোগ পাবেনা তুমি। বলতেই হবে আজকে। আজকে তুমি পার পাবানা কিছুতেই। বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো।
- দেখুন, আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
- তাহলে কাকে ভালোবাস?
- ওর নাম স্বপ্ন।
- স্বপ্ন? স্বপ্ন কে?
- স্বপ্নকে আমি ভালোবাসি। খুব ছোটবেলা থেকেই আমি ওকে ভালবাসতে শুরু করেছি। যখন থেকে আমি বুঝতে শিখেছি ভালোবাসা বলে কিছু আছে, তখন থেকেই।
- ও...আচ্ছা। নাদিভ অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। ওকে খুব হতাশ মনে হলো। সে ভেবেছিল, রিয়া ওকেই ভালোবাসে।
- আশা করি, এবার আপনার ভুল ভেঙ্গেছে। আপনাকে আমি চিনিই না। আপনি কিভাবে ধরে নিতে পারলেন, আপনাকে আমি ভালোবাসি?
- কিন্তু....
- কিন্তু কি?
- আচ্ছা বাদ দিন। তাহলে তো প্রবলেম সলভ হয়েই গেলো। আপনি আপনার বাবা মাকে স্বপ্নর কথা বলুন। আর স্বপ্নকেও বলুন, আপনাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে। এটাই তো স্বাভাবিক, তাইনা? এসব না করে আপনি আরিফকে কেন বিয়ে করতে চাচ্ছেন? স্বপ্নকে ভালোবাসলে তো আরিফকে পছন্দ হবার কথা না।
- আরিফকে আমি পছন্দ করিনি। আমার বাবা মা, ফুপু সবাই পছন্দ করেছে।
- সবাই পছন্দ করেছে আর আপনি চুপচাপ মেনে নিচ্ছেন? আপনাদের ভালোবাসার কি হলো তাহলে? স্বপ্ন কি চুপ করে থাকবে?
- স্বপ্ন চুপ করে থাকতে চাচ্ছেনা। চুপ করে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। কারন, সে কখনোই আমার বাবা মায়ের সামনে এসে দাঁড়াতে পারবেনা।
- ল্যাংড়া নাকি?
- জ্বি??
- কিছু না, এমনিই। তো...স্বপ্ন কেন আপনার বাবা মায়ের সামনে এসে দাঁড়াতে পারবেনা?
- কারন, ওকে আমি ছাড়া আর কেউ চিনেনা। কেউ দেখেনা। সব সময় সে আমার মনের মধ্যেই থাকে। আমরা সবসময় একসাথেই থাকি। কথা বলি। আমার ফ্যামিলিকে আমি কখনোই তার কথা বলতে পারিনি আর কখনো পারবোও না। আপনার বন্ধুকে আমি বিয়ে করতে চাইনা। কিন্তু তারপরেও বাধ্য হয়ে রাজি হতে হইছে।
- আমি ঠিক বুঝলাম না। স্বপ্নকে কেউ দেখেনা কেন?
- কারন, ওর কোন বাস্তব অস্তিত্ব নাই।
ব্যাপারটা বুঝতে নাদিভের একটু সময় লাগলো। সে নিশ্চিত ধরে নিয়েছিল রিয়া তাকেই ভালোবাসে। তাই রিয়া যখন স্বপ্নর কথা বলছিল, তখন ওর ভেতরটা একটু একটু করে ভাঙ্গতে শুরু করেছিল। রিয়ার কথাগুলো বিশ্বাস করতে অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু স্বপ্নর কোন বাস্তব অস্তিত্ব নাই শুনে সে ভাংচুরটা আপনা আপনি মেরামত হয়ে গেলো। একটূ সময় লাগলেও সে সহজেই ব্যাপারটা ধরে ফেললো।
ভার্সিটিতে পড়ার করার সময়ে একবার সাইকোলজি নিয়ে পড়তে হয়েছিল। তখনি এই ব্যাপারে কিছুটা জেনেছিল। একটা কেস হিস্ট্রিও মনে হয় এরকমই ছিল। একটা মেয়ে কিশোরী বয়স থেকেই একজনকে ভালোবাসতো। যাকে অন্য কেউ দেখতো না। মেয়েটা একা একা তার সাথে কথা বলত। একসময় বলতেও শুরু করেছিল যে, তারা নিজেরাই বিয়ে করে ফেলেছে। এভাবে চলতে চলতে মেয়েটা একসময় ভাবতে শুরু করে, তার কল্পনায় আঁকা মানুষটা বাস্তবেও আছে। তখন সে পাগলের মত তাকে খুঁজতে শুরু করে দুনিয়ার আনাচে কানাচে। পরে খুঁজে না পেয়ে একসময় সে আত্নহত্যা করেছিল। আসলে পুরো ব্যাপারটাই মনের তৈরী। এক ধরনের মানসিক রোগ যেটা প্রথম দিকে নিরাপদ মনে হলেও পরবর্তীতে কারো কারো ক্ষেত্রে সিরিয়াস হয়ে যেতে পারে। রিয়ারও কি তেমন কিছু? ব্যাপারটা কতখানি সিরিয়াস? স্বপ্নর সাথে সে কতখানি ইনভলভ?? হয়ত খুব বেশি না। কারন, এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষই ধরতে পারেনা যে তার কল্পনার মানুষের কোন বাস্তব অস্তিত্ব নাই। কিন্তু রিয়া সেটা ভালোমতই ধরতে পেরেছে। নাদিভ দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে ফেললো,
- স্বপ্ন তো থাকে তোমার মনের মধ্যে। বাস্তবে তো তুমি আমাকেই ভালোবাস তাইনা?
- আমি আপনাকে ভালোবাসিনা। বারবার কেন একি কথা বলতেছেন, আমি বুঝতেছিনা।
- তাহলে??
- তাহলে কি? আমি তো আপনাকে বললামই, আমি স্বপ্নকে ভালোবাসি। এখানে আপনি আসলেন কোথা থেকে? আপনাকে তো আমি সেদিনই প্রথম দেখলাম।
- সত্যিই তাই?
- মানে?
- তুমি সত্যিই আমাকে চিনো না?? আমাকে ভালোবাসো না?
- আশ্চর্য মানুষ আপনি...
- তোমার কি একবারো মনে প্রশ্ন জাগলো না যে আমি কিভাবে তোমার মোবাইল নাম্বার পেলাম?
- আরিফ আপনাকে দিয়েছে।
- আমি যতদুর জানি, তুমি আরিফকে তোমার মোবাইল নাম্বার দাওনি।
- তাতে কি হয়েছে? আপনার বন্ধু হয়ত আমার মা বা ফুপুর কাছ থেকে নাম্বার নিয়েছে। নাম্বার পাওয়াটা তেমন কঠিন কিছু না।
নাদিভ ওর মোবাইলটা বের করে রিয়ার দিকে এগিয়ে দিল। রিয়া জিজ্ঞেস করলো,
- কি?
- কিছু স্ক্রীনশটস। দেখ...
রিয়া মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো, মাসখানেক আগে সে ফেক আইডি থেকে নাদিভের সাথে চ্যাট করেছিল, সেগুলোর স্ক্রিনশটস। ওর হাত পা ঘামতে শুরু করলো। নাদিভ কিভাবে জানলো এই মেয়েটাই সে? ওকে চুপ করে থাকতে দেখে নাদিভ বললো,
- চ্যাটগুলোর একটায় দেখ, আমি রিয়া নামের কাউকে আমার নাম্বার দিয়েছিলাম। তার একটু পরেই একটা নাম্বার থেকে ফোনটা এসেছিল। নাম্বারটা আমি তখন সেভ করে রেখেছিলাম। আজকে আমি সেই নাম্বারেই ফোনটা করেছিলাম। আমি তখনো জানতাম না, এটা তোমার নাম্বার। তোমাকে কলেজে গেটে দেখার পর নিশ্চিত হলাম। আরো একবার নিশ্চিত হলাম, যখন তুমি জিজ্ঞেস করলা, আমিই তোমাকে ফোন করেছি কিনা। এরপরেও সবকিছু অস্বীকার করতে চাও? বলতে চাও যে তুমি আমাকে ভালোবাস না?
- আমি জানিনা কোন নাম্বার থেকে আপনার মোবাইলে কল এসেছিল। সেটা যে আমারই নাম্বার তার কোন প্রমান নাই আপনার কাছে। আপনি কার সাথে চ্যাট করেছিলেন কে জানে। এই আইডি আমার না।
নাদিভ এবার রিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।
- আর কত মিথ্যা বলবা রিয়া? তোমার গলার স্বরেই বুঝা যাচ্ছে, তুমি মিথ্যে কথা বলতেছ। আর কত প্রমান চাও? আমি যদি এখন আমার মোবাইল থেকে সেই নাম্বারে ফোন করি, তাহলে তোমার মোবাইলটাই বাজবে। কিভাবে এতটা নিশ্চিত হলাম জানো? কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে তুমি আমাকে ফোন করেছিলে। আমি রিসিভ করিনি। আমি ওভারশিউর হবার পরেই তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। এরপরেও কি তোমার আরো প্রমান লাগবে?? কেন মিথ্যা কথা বলতেছ এরকম? আমাকে ভালোবাসো তুমি, তারপরেও অস্বীকার করতেছ কেন? কোথাকার কোন স্বপ্ন......
- মুখ সামলে কথা বলেন। রিয়া এক রকম জোর করেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। - স্বপ্নকে নিয়ে কোন রকম উলটা পালটা কথা আমি সহ্য করবো না। আমি স্বপ্নকে ভালোবাসি। আপনাকে না।
- তাহলে স্বপ্নই তোমার জীবনে সবকিছু?
- হ্যা। স্বপ্নই আমার জীবনে সবকিছু।
- আর আমি? আমি কেউ না?
- না।
নাদিভের চোখে তখন আশাভঙ্গের দৃষ্টি। সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে রিয়া নদীর দিকে তাকিয়ে থাকলো চুপচাপ। নাদিভ তখনো ওর দিকে একমনে তাকিয়েই আছে। ওর কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছেনা রিয়ার কথাগুলো। কোথাও কি কোন ভুল হলো? স্বপ্নকেই যদি রিয়া ভালোবাসে তাহলে নাদিভকে কিভাবে চিনে? এক মাস আগে কোন উদ্দেশ্যে সে নাদিভের সাথে চ্যাট করেছিল? কি মনে করে দেখা করতে চেয়েছিল? নাদিভের যদি কোন ভুল না হয়ে থাকে, তাহলে সেসময়টায় রিয়া ওর জন্য একরকম পাগল ছিল। তখন তো স্বপ্নর কথা আসেনি। কি হলো এই এক মাসে যে, স্বপ্নই রিয়ার কাছে সবকিছু হয়ে গেলো। যার কোন বাস্তব অস্তিত্বই নাই। আর নাদিভ, বাস্তবেই ওর সামনে বসে আছে। তাকেই কিনা রিয়া উপেক্ষা করছে? রিয়া কি পাগল হয়ে গেছে?? (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.