নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি লিখতে ভালোবাসি। তাও আবার শুধুই বাংলায়..........

রুপালী তারা

রুপালী তারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৯

১২।।
নাদিভের মুড অফ। এই মুহূর্তে সে একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে তানহা আর ওর বান্ধবীদের সামনে। রিয়ার সাথে দেখা করার পরে সে বাসায় গিয়ে দেখে তানহা বসে আছে। অপেক্ষা করছে ওর জন্য। আজকে বান্ধবীরা সবাই মিলে নাকি তানহাকে ধরেছে হবু জামাই দেখবে। নাদিভ প্রথমে রাজি হয়নি। সে সারাদিন বাইরে ছিল। কিছু খাওয়া হয়নি। রিয়াকে একবার বলেছিল খাওয়ার কথা। রিয়া রাজি হয়নি। তাই ওরও খাওয়া হয়নি। তাই সে ভেবেছিল বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে ঘুমুবে।
রিয়ার কথাগুলো শোনার পর থেকে ওর মাথা ঘুরছে। বার বার রিয়ার কথাটা মাথার মধ্যে ভাঙ্গা রেকর্ডের মত বাজছে, আমি স্বপ্নকে ভালোবাসি। কে এই স্বপ্ন কে জানে?? এই স্বপ্নর ভুত কিভাবে রিয়ার মাথা থেকে সরানো যায়, বাসায় ফেরার সময় সারাটা রাস্তা এটাই ভেবেছে সে। রিয়া ওকে ভালোবাসুক আর নাই বাসুক, ওকে দেখার পর থেকেই নাদিভ রেস্টলেস হয়ে গেছে। সারাদিন মাথার মধ্যে শুধু রিয়া আর রিয়া। ব্যাংকে গিয়ে কাজে মন বসাতে পারতেছেনা। অমনোযোগী থাকার কারনে কয়েকটা ফাইলে গড়বড় করে ফেলেছে। সেটা নিয়ে ম্যানেজার ওকে অনেক কথা শুনিয়েছেন। তাতেও ওর কোন ভাবান্তর নাই। সে ম্যানেজারের সামনে দাড়িয়েও ভাবছিল, কিভাবে রিয়ার সাথে একবার দেখা করা যায়। ম্যানেজার যখন বুঝতে পারলেন, উনি কি বলছেন, সেদিকে ওর মন নেই, তখন আর কিছু না বলে ওকে ছুটি নিতে বললেন। এক সপ্তাহের ছুটি। এক সপ্তাহ নাদিভ বাসায় বসে রেস্ট করুক। নিশ্চয়ই ওর উপর দিয়ে খাটুনি গিয়েছে অনেক। কিন্তু ম্যানেজার তো আর এটা জানেন না যে, রেস্ট শব্দটা নাদিভের ডিকশনারি থেকে আচমকাই উধাও হয়ে গিয়েছে রিয়াকে দেখার পর থেকে।
এদিকে তানহা একের পর এক প্রবলেম করেই যাচ্ছে। একেকদিন একেক বাহানা। একেক আবদার। তানহাকে অবশ্য কোন দোষ দেয়া যায়না। দুইদিন পরেই যার সাথে বিয়ে হচ্ছে, তার সাথেই তো এখন সময় কাটানো উচিত। কিন্তু নাদিভ ওকে একেবারেই সময় দিচ্ছেনা। নাদিভ তানহাকে অনেক বুঝালো সে ক্লান্ত। ওর পক্ষে কোথাও যাওয়া সম্ভব না। সারাদিন রিয়ার পিছনে দৌড়িয়ে এখন ওর মধ্যে বিন্দুমাত্র শক্তি নাই আর কোথাও যাবার, কারো সাথে দেখা করার। কিন্তু তানহা কোন কথাই শুনতে চাইলো না। সে জিদ ধরে থাকলো। ওর একটাই কথা, নাদিভকে ওর বান্ধবীদের সাথে দেখা করতে যেতেই হবে। সেটা আজকে এবং এক্ষুনি। নাহলে বান্ধবীদের কাছে ওর প্রেস্টিজ থাকবেনা। নাদিভের মা এসব দেখে ওকে বললেন তানহার সাথে যেতে। মায়ের কথা কখনোই ফেলতে পারেনি নাদিভ। আজকেও পারলো না। যেতেই হলো।
তারপর থেকেই নাদিভের মুড অফ। তানহা কখনোই ওর প্রবলেম গুলো, ইচ্ছা অনিচ্ছা বুঝার চেষ্টা করেনা। সবসময় নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছাগুলো ওর উপর চাপিয়ে দেয়। বিয়ে ঠিক হয়েছে মাত্র ৩/৪ মাস হলো। এর মধ্যেই নাদিভ হাপিয়ে গেছে। তানহার সাথে সারাজীবন কাটানোর কথা ভাবতেই ওর এখন গা কাপিয়ে জ্বর আসে। রিয়াকে দেখার পর থেকে এই অবস্থা আরো খারাপের দিকে গেছে। একেবারে চরমে গিয়ে উঠেছে। তানহাকে এখন আর কোনভাবেই সহ্য হচ্ছেনা ওর। সে একশ ভাগ নিশ্চিত এই মেয়েকে বিয়ে করলে তার কপালে শনি আছে। কিন্তু ব্যাপারটা এখন এমন পর্যায়ে চলে এসেছে যে, পিছিয়ে যাবার কোন উপায় নেই। খুব ধুম ধাম করে ওদের এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। সবাই জানে আর কিছুদিন পরে নাদিভ আর তানহার বিয়ে হবে। তানহার বাবা কিছুদিনের জন্য কানাডায় গেছেন। উনি ফিরলেই বিয়ের আয়োজন শুরু হবে।
তানহা নাদিভের বাবার ফ্রেন্ডের মেয়ে। ওরা কানাডায় সেটল। মাস ছয়েক হলো, পুরো ফ্যামিলি বাংলাদেশে থাকতে শুরু করেছে। আরো একটা উদ্দেশ্য আছে। তা হলো, বাংলাদেশের কোন একটা ছেলের সাথে তানহার বিয়ে দেয়া। মুলতঃ এটাই বাংলাদেশে আসার আসল কারন। ওরা বাংলাদেশে আসার পর পরই বন্ধুরা সবাই মিলে ফ্যামিলি সহ গেট টুগেদার পার্টি হয়েছিল। সেখানেই তানহার বাবা নাদিভকে দেখে পছন্দ করেন। তানহার জন্য এইরকম একটা ছেলে মনে মনে খুঁজছিলেন তিনি। কথায় কথায় বন্ধুকে পছন্দের কথাটা জানিয়েছিলেন। বন্ধু আর বন্ধুপত্নীর কোন আপত্তি নেই। তানহাকে তারা ছোটবেলা থেকেই চেনেন। তবে একবার নাদিভের সাথে কথা বলে ওর মতামতটা জানাবার কথা বলেছিলেন। নাদিভ তখন কোন আপত্তি করেনি। ওর জীবনে কখনো কাউকে তেমন করে ভালো লাগেনি। কখনো ভালোবাসাও আসেনি। তাই বাবা মায়ের পছন্দটাকেই মেনে নিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সে বুঝতে পেরেছে, তানহা আর সে দুইজন দুই জগতের মানুষ। ওদের মধ্যে চিন্তা ভাবনা, মন মানসিকতার কোন মিল নেই।
নাদিভ এই নিয়ে ওর বাবামায়ের সাথেও কথা বলেছিল। ওরা উলটো ওকে বুঝিয়েছেন, বিয়ের আগে একটা মেয়ে আর একটা ছেলের মধ্যে চিন্তা ভাবনার মিল থাকতে হবেই এমন কোন কথা নাই। আস্তে আস্তে দুইজন মিলে এডজাস্ট করতে হবে। একজন আরেক জনকে ছাড় দিতে হবে। তাছাড়া তানহা কানাডায় বড় হয়েছে। বাংলাদেশের জীবনধারা সম্পর্কে তার তেমন জ্ঞান নাই। তাই নাদিভের এমনটা মন হচ্ছে। আস্তে আস্তে তানহা নিজেকে ওর মত করে মানিয়ে নিবে। সেজন্য ওকেই সাপোর্ট দিতে হবে। এরপরে তো আর কোন আপত্তি থাকার কথা না। বাবা মা তো কোন অন্যায় কথা বলেনি।
কিন্তু রিয়াকে দেখার পর থেকে নাদিভ ভেতরে ভেতরে একটু একটু করে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। আরিফ রিয়াকে বিয়ে করবেনা। তারপরেও রিয়াকে পাওয়ার কোন আশা নেই। ওর নিজেরই তো হাত পা বাঁধা। তানহার সাথে এনগেজ হয়ে আছে সে। আরো কয়েকটা মাস আগে, এনগেজমেন্টের আগে রিয়ার সাথে দেখা হলে কি এমন ক্ষতি হতো? এখন সে নিজের বাবামায়ের কাছেই বা কি বলবে? সে তো নিজেই জানিয়েছিল, তারা যাকে পছন্দ করে, তাকেই সে বিয়ে করবে। এখন এনগেজমেন্ট হয়ে যাবার পর অন্যরকম কথা বললে বাবা মা কি সেটা মেনে নিবেন?? আর স্বার্থপরের মত নিজের কথা ভাবলে তো হবেনা। এতদুর এসে এখন পিছিয়ে গেলে তানহার প্রতিও কি অন্যায় করা হবেনা?
তাছাড়া রিয়াও তো জানিয়ে দিলো, সে নাদিভকে ভালোবাসেনা। এরপরে আর কি কথা থাকতে পারে? রিয়া যদি ওকে একবার বলতো ভালোবাসি, নাদিভ সমস্ত বাঁধা বিপত্তি পার করে ওকে নিজের করে নিত। যে ভাবেই হোক, যে করেই হোক, সে তানহার সাথে কথা বলতো এই ব্যাপারে। বাবা আর মাকেও ম্যানেজ করতো। এতসবের মধ্য দিয়ে যাবার মানসিক শক্তিটা রিয়াই জোগাতো। কিন্তু রিয়া নিজেই যা বলার, বলে দিয়েছে।
বেশ কিছুদিন ধরেই নাদিভ মনে মনে নিজের সাথে যুদ্ধ করছে। তাতে কোন লাভ হচ্ছেনা। মনকে যতই বুঝ দিতে চাইছে, মনটা ততই অবুঝ হয়ে যাচ্ছে। নাদিভের মা ছেলের এই পরিবর্তন খেয়াল করলেন। ওকে জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু সে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও মাকে কিছু বলতে পারেনি। সবকিছু গলার কাছে এসে আটকে যায় প্রতিবারে। এমনটা কেন হলো? সে তো নিজের মত করে ভালোই ছিল। রিয়ার সাথে কেন দেখা হলো? নিজের সাথে আর কত যুদ্ধ করা যায়? এই কয়েকদিনে ভেতরে ভেতরে খুব বিপর্যস্ত হয়ে গেছে সে। তার উপর তানহার উপস্থিতি ওকে আরো বেশি কষ্ট দেয়। ওকে মনে করিয়ে দেয়, রিয়াকে নিয়ে অযথাই ভাবছ। রিয়া কখনো তোমার ছিলনা, কখনো তোমার হয়নি, কখনো হবেও না। কিন্তু নাদিভ এটা মানতে প্রস্তুত না। রিয়া ওর খুব আপন কেউ। আগেও ছিল, এখনো আছে, সারাজীবন নাদিভের হয়েই থাকবে সে।
- কি হলো? এমন চুপ করে আছ কেন?
তানহার কথায় সম্বিত ফিরলো নাদিভের।
- হুম বলো।
- তোমার কি হয়েছে বলো তো। কিছুদিন ধরেই দেখছি সারাক্ষন কি সব চিন্তায় মশগুল থাকো। এত চিন্তা কিসের?
পাশে থেকে তানহার বান্ধবী টিটকারি দিলো,
- হানিমুনের চিন্তায় আছে।
আরেক বান্ধবী বললো,
- আরে, বিয়েই তো হলো না এখন। হানিমুন তো এর পরের খবর।
- তাহলে হয়ত বিয়ে নিয়েই চিন্তায় আছে। বিয়ে কবে হবে?
- তানহা তুই আঙ্কেলকে ফোন করে বল তাড়াতাড়ি আসতে। নইলে যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে...চিন্তায় তো মাথার চুল সব পড়ে যাবে।
নাদিভ চুপচাপ তানহা আর ওর বান্ধবীদের কথা শুনছিলো। এগুলো শুনেও ওর চেহারায় কোন ভাবান্তর নেই। কে কি বলছে, এসব ওর মাথায় ঢুকছেনা। ওর মনটা পড়ে আছে রিয়ার কাছে।
রিয়াকে রিকশায় তুলে দেবার পরে সে আরিফকে ফোন করে জানিয়ে ছিল যে, কথাগুলো সব বলা শেষ। কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে। আরিফ ওকে জানিয়েছে, ওরা সবাই মিলে রিয়াদের বাসায় যাচ্ছে। আরিফের মায়ের ইচ্ছা, আজকেই এনগেজমেন্ট সেরে ফেলবেন। শুনেই ওর মাথাটা ঘুরতে শুরু করেছে। সে শুধু আরিফকে জানিয়েছে, কি হয় না হয় সেটা ওকে জানাতে। সে ফোনের অপেক্ষায় থাকবে। রিয়া নিশ্চয়ই বাসায় গিয়ে একটা ব্যবস্থা করবে। আর আজকেই তো বিয়ে না। রিয়া কোন ব্যবস্থা করতে না পারলে আংটি পড়ানো হবে। তারপরেও ভেতরে ভেতরে খুব অস্থির লাগছে ওর। সারাদিনের ধকল সামলানো সম্ভব হচ্ছেনা। খুব ইচ্ছে করছে, বাসায় গিয়ে বিছানায় শুয়ে আরাম করে ঘুমুতে। ঊফফফফ...কখন যে এই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতে পারবে সে। ম্যাজিকের মত যদি কিছু করা যেত...। তানহা আর ওর বান্ধবীরা কি কি বলে যাচ্ছে, কে জানে। কিছুই ওর কান দিয়ে ঢুকছেনা।
ঠিক সেই মুহূর্তে নাদিভ টের পেলো, মোবাইল বাজছে। আরিফ ফোন করেছে। রেস্টুরেন্টে আসার আগেই সে মোবাইলটা সাইলেন্ট করে রেখেছিল। তানহার সামনে কেউ ফোন করলে, কেউ টেক্সট করলে, কোন নোটিফিকেশন আসলে মোট কথা মোবাইলে একটু শব্দ হলেই হাজারটা প্রশ্ন শুরু হয়ে যায়। কে ফোন করেছে, কেন করেছে, তার পরিচয় কি, কবে থেকে পরিচয়। নাদিভ ওর প্রশ্নের উত্তর দিবে নাকি ফোন রিসিভ করবে সেটাই তখন বুঝতে পারেনা। অন্য সময় হলে তানহার প্রশ্নের ভয়ে সে ভুলেও ফোন রিসিভ করতো না। কিন্তু এখন আরিফই সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এই ফোনটার জন্যই সে যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করছে।
নাদিভ তাড়াতাড়ি টেবিল ছেঁড়ে ঊঠে দাঁড়ালো। তানহার দিকে তাকিয়ে বললো,
- আমার একটা ফোন এসেছে। আমি বাইরে গিয়ে কথা বলে আসতেছি।
- এখানে বসে কথা বল। এখানে কি সমস্যা। বাইরে যেতে হবে কেন?
তানহার কথা শোনার সময় নেই নাদিভের। এক দৌড়ে বাইরে চলে গেলো। তানহার বান্ধবীরা সব অপ্রস্তুত। কিরে, তোর কথাই তো শুনলোনা। কি এমন আর্জেন্ট কল? এখন তোর থেকে ইম্পরট্যান্ট আর কি হতে পারে? বিয়ের পরে আচ্ছামত টাইট দিবি, নাইলে দেখবি সারাজীবন তোকেই পস্তাতে হবে। তানহার কাছে এগুলো মোটামুটি অপমানজনক কথা। বান্ধবীদের সামনে নাদিভ এভাবে দৌড়ে বাইরে না গেলেই পারতো। কিসের এত আর্জেন্ট কল? কে ফোন করছে? সে বাইরে গেলো নাদিভকে খুঁজতে। (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.