![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৩।।
কোন ভাবেই কোন কুল কিনারা করতে না পেরে রিয়া কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। ওকে সাজিয়ে রেডি করে রেখে গেছেন ফুপু। কাজি আসার জন্য অপেক্ষা করছে সবাই। রিয়া অনেকবার কিছু বলতে চাইলো কিন্তু কেউ তার কোন কথা শুনতে রাজি না। না বাবা মা, না ফুপু। বিশ্বাস করা তো পরের খবর। এদিকে আরিফের চেহারা দেখেও মনে হচ্ছেনা সে কিছু করবে। রিয়া ব্যাকুল হয়ে বারবার স্বপ্নকে ডাকতে লাগলো।
- স্বপ্ন, আমাকে বাঁচাও। আমি জানিনা আমার কপালে কি আছে। তুমি বের হয়ে আস আমার মন থেকে। যেভাবে পারো, বের হয়ে আসো। আমাকে এখানে থেকে দূরে কোথাও নিয়ে যাও। তোমার বাস্তব অস্তিত্ব আছে কি নেই, আমি কিচ্ছু জানিনা। আমি শুধু জানি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি এক মুহূর্ত থাকতে পারবো না। এতদিন তুমি বলছ, আমি অন্য কাউকে বিয়ে করলে তুমি মরে যাবা। এখন তুমি কোথায়? আমি মরে যাচ্ছি। আমাকে বাঁচাও। প্লিজ স্বপ্ন, চুপ করে থেক না। কিছু একটা কর। মনের ভেতরে আর কতকাল চুপচাপ বসে থাকবা? এভাবে বসে থাকলে আমাকে হারাতে হবে তোমার। প্লিজ তুমি বের হয়ে আসো। একমাত্র তুমি ছাড়া আর কেউ আমাকে বাঁচাতে পারবেনা।
রুমের মেঝেতে বসে চোখ বন্ধ করে কথাগুলো বলছিল রিয়া। চোখ উপচে অজস্র কান্না গাল বেয়ে পড়ছে। নাদিভ কখনো কাউকে এমন ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে দেখেনি। আরিফের ফোন পেয়েই সে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছুটে এসেছে। আকদের খবরটা শুনে ওর মনে হচ্ছিল, কেউ ওর মাথায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সে যখন আরিফের সাথে ফোনে কথা বলছিল, তানহাও ওর পিছু পিছু গিয়েছিল। ততক্ষনে কথা শেষ। সে ঘুরেই দেখলো তানহা দাঁড়িয়ে আছে। ফোন রাখার সাথে সাথেই একগাদা প্রশ্ন শুরু হয়ে গেল,
- কে ফোন করছিল? কার সাথে এত কথা? আমার বান্ধবীরা আসছে তোমার সাথে পরিচিত হইতে। আর তুমি ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়ছ। আমার জন্য কোন সময়ই নাই তোমার। দেখি, কে ফোন করছে? মোবাইলটা আমার হাতে দাও।
তখন এতসব কথা শোনার সময় নেই নাদিভের। সিদ্ধান্ত নেয়া শেষ। তানহা ওর কাছে মোবাইল ফোনটা চেয়েছিল, কিন্তু সে ফোনের বদলে এনগেজমেন্টের আংটিটা ধরিয়ে দিল। মুখে শুধু বললো, আই অ্যাম স্যরি। তারপরই ছুটলো রিয়ার বাসার দিকে। গিয়ে দেখে আরিফ বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। অস্থির হয়ে পায়চারি করছে। কাজি চলে এসেছে। আরিফের মামা রওনা হয়েছেন। মামা বাসা ঠিক মত চিনবে কিনা এই অজুহাত দেখিয়ে আরিফ নিচে চলে এসেছে। এদিকে রিয়ার বাবাও ফোন করে কাছের কিছু আত্নীয়দের জানিয়েছেন। সবাই আরিফের মামা আর রিয়ার আত্নীয়দের জন্য অপেক্ষা করছে। সবাই চলে এলেই বিয়ে পড়ানো শুরু হবে।
নাদিভ এগিয়ে এসে রিয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো। রিয়া তখনো মাথা নিচু করে কেঁদে যাচ্ছে। আর মনে মনে স্বপ্নকে ডাকছে। সে হাত বাড়িয়ে রিয়ার গাল বেয়ে পড়া চোখের পানি মুছে দিলো। গালে হাতের স্পর্শ পেয়ে রিয়া চোখ খুললো। ওর সামনে বসে আছে স্বপ্ন!!! রিয়া ওকে জড়িয়ে ধরলো,
- স্বপ্ন, আমি জানতাম, তুমি ঠিকই আসবা। তুমি আমাকে নিয়ে যাও। যেভাবে পারো, এখান থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাও। প্লিজ স্বপ্ন। ওরা সবাই মিলে তোমার কাছ থেকে আমাকে কেড়ে নিচ্ছে।
কান্নার ফাঁকে ফাঁকে বলতে গিয়ে কথাগুলো বেশ জোরে শোনা যাচ্ছে। কেউ শুনলে প্রবলেম হয়ে যাবে। সে রিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। রিয়া ওর বুকের মধ্যে মুখ লুকালো। কান্নাটা বন্ধ হয়েছে কিন্তু ফোপানোটা তখনো বন্ধ হয়নি। শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন এসেছে ওকে নিয়ে যেতে। সে জানতো, স্বপ্ন আসবেই। অন্য কারো সাথে ওর বিয়ে হয়ে যাবে এটা স্বপ্ন কোনভাবেই সহ্য করবেনা। রিয়া নাদিভের বুকে মুখ ঘষতে শুরু করলো। বললো,
- স্বপ্ন, তুমি আমাকে নিয়ে যাও এখান থেকে। আমি তোমার হাত ধরে যেখানে খুশি যেতে পারবো। আম্মা বলেছে তোমার সাথে আমার বিয়ে দেবে না। তোমাকে ভুলে যেতে বলছে। তোমাকে কিভাবে ভুলবো আমি? এর থেকে মরে যাওয়াও অনেক ভালো। তোমার জন্য যদি মরতে হয়, তাও পারবো। তুমি যা বলবা, আমি তাই করবো। তুমি শুধু আমাকে বুকের মধ্যে আকড়ে ধরে রাখ। আমাকে ছেঁড়ে চলে যেও না।
নাদিভ কোন কথা বললোনা। রিয়া ওকে স্বপ্ন ভাবছে কেন? হয়ত খেয়াল করেনি। চোখের পানিতে ওকে ঝাপসা দেখেই স্বপ্ন বলে ধরে নিয়েছে। যা ভাবে ভাবুক। সে স্বপ্ন নাকি নাদিভ সেটা পরে বলা যাবে। এখন হাতে সময় নেই। রিয়ার রুমে এই মুহূর্তে কেউ না থাকলেও যে কোন মুহূর্তে যে কেউ চলে আসতে পারে। সে রিয়ার মুখটা দুই হাতে উঁচু করে ধরলো। রিয়া এখন ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখ দেখে মনে হচ্ছেনা সে নাদিভকে চিনতে পেরেছে। রিয়া বললো, সেইইই আসলা তুমি, এত দেরী করে। আরো আগে আসলে কি হতো? আমি শুধু তোমাকে ভালবাসি। আর কাউকে না। বিয়ে করলে শুধু তোমাকেই করবো।
- আর নাদিভ?
রিয়া পাগলের মত বলতে লাগলো, আমি কাউকে চিনিনা। কাউকে ভালোবাসিনা। শুধু তোমাকে চিনি। তোমাকে ভালোবাসি। আমি শুধু তোমার।
বলার মত আর কোন কথা খুঁজে পেলো না নাদিভ। রিয়া কি পাগল হয়ে গেছে? এত কাছে থেকে দেখেও সে ওকে চিনতে পারছেনা। বারবার স্বপ্ন বলে ডাকছে। রিয়া কেন ওকে স্বপ্ন ভাবছে, সে জানেনা। আপাততঃ না জানলেও চলবে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরী কাজ হচ্ছে, এই বাসা থেকে তাড়াতাড়ি বের হওয়া। সে রিয়াকে বলল,
- চলো। অনেক দূরে নিয়ে যাব তোমাকে, অনেক দূরে। কেউ তোমাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবেনা।
- না না। বের হতে গেলে তোমাকে সবাই দেখে ফেলবে। তখন তোমাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করে ফেলবে। তোমাকে অনেক দূরে সরিয়ে দিবে।
রিয়া অপ্রকৃতস্থের মত আচরন করতে শুরু করলো। বারবার না না বলতে লাগলো। নাদিভকে কোন কথা বলারই সুযোগ দিলোনা। ওকে আরো বেশি করে জাপটে ধরলো। রিয়াকে থামাতে নাদিভ ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো। চেপে ধরে রাখলো যাতে আর কোন কথা বলতে না পারে। খানিক সময় পরে রিয়া শান্ত হয়ে গেলো। নাদিভ ওকে বললো,
- তাড়াতাড়ি যেতে হবে। সময় নাই একেবারেই।
- কিভাবে বের হবো এখান থেকে? ওরা সবাই দেখে ফেলবে। আমাদের আটকাবে।
- কেউ দেখবেনা। আমার উপর ভরসা রাখো।
- আমি কিচ্ছু জানিনা। তুমি আমাকে নিয়ে যাও এখান থেকে। আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকতে চাইনা। ওরা তোমাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করে দিবে।
- শসসস......চুপ। আমরা দরজা দিয়ে বের হবো না। বারান্দায় চলো।
বারান্দায় গিয়ে নাদিভ রিয়াকে বুঝিয়ে বললো কিভাবে নিচে নামতে হবে। শাড়ি পড়া অবস্থায় রিয়ার জন্য প্রবলেম হয়ে যাবে কিন্তু এভাবেই নামতে হবে। এখন কাপড় পালটানোর সময় নেই। কেউ এখনি চলে আসতে পারে যে কোন মুহূর্তে। ধরা পড়ে গেলে অনেক বড়ো প্রবলেম হয়ে যাবে।
বারান্দার পাইপ বেয়ে রিয়াকে নিয়ে নেমে এলো নাদিভ। বাসার সামনে বামপাশের কোনায় আরিফ দাঁড়িয়েছিলো। এখানে একটা বড়ো কাঁঠাল গাছ আছে। সেটার আড়ালে দাঁড়িয়ে ওদের ডাকল। নাদিভ ওকে বললো,
- তোর মামা আসলে তুই উপরে চলে যাবি। যত যাই হোক, মুখ বন্ধ রাখবি। তুই কিছু জানিস না। কিছু দেখিস নি।
- কিন্তু তুই রিয়াকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস? আমি তোকে বললাম বিয়ে বন্ধ করতে।
- রিয়াকে পাওয়া না গেলে বিয়ে আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে যাবে।
- কিন্তু তুই ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
- এতকিছু ভাবতে হবে না তোর। আমার বউ আমি যেখানে খুশি নিয়ে যাচ্ছি।
- তোর বউ?
এরকম অবস্থার মধ্যেও নাদিভ হেসে ফেললো।
- হুমম...আমার বউ। আমার বউ না হলে কি এত তাড়াতাড়ী নিচে নেমে আসতো?
- থ্যাংকস দিতে ইচ্ছা করতেছে তোকে। দিতে পারতেছিনা। তুই আমাকে অনেক বড়ো বিপদ থেকে বাঁচালি। তুই না থাকলে আমি কই যে করতাম। কোনদিন তোর এই......
- ঋণ শোধ করার কোন দরকার নাই। আমি যা করছি, আমার নিজের জন্য করছি। তোর জন্য কিছু করিনাই।
আরিফের মাথায় নাদিভের কথা কিছুই ঢুকলো না। নাদিভ নিজের জন্য কি করছে? এতকিছু ভাবার সময় নাই এখন। পরে জিজ্ঞেস করলেই হবে। সে তাড়াতাড়ি করে বাসার ভেতরে চলে গেলো। যাবার আগে রিয়াকে থ্যাংকস দিতে ভুললো না। আরিফ ভেতরে চলে যেতেই নাদিভ রিয়ার হাত ধরে টান দিলো,
- চলো রিয়া।
রিয়া নড়লোনা। সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। উলটো নাদিভের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। সে ভেবেছিল, স্বপ্ন সত্যিই এসেছে ওকে বাঁচাতে। এখান থেকে নিয়ে যেতে। সে জানতো, স্বপ্ন আসবেই। স্বপ্ন কখনো অন্য কারো সাথে ওর বিয়ে হতে দিবেনা। কিন্তু নিচে নেমেই ওর ঘোর ভেঙ্গেছে। নাদিভকে আরিফের সাথে কথা বলতে দেখেই সে বুঝে গেছে, স্বপ্ন আসেনি। এসেছে নাদিভ। আরিফ ওকে ফোন করে ডেকে এনেছে। রিয়া ওকে দেখে স্বপ্ন বলে ভুল করেছিল।
- কি হলো? চলো।
- আমি যাবনা। আমি আপনাকে দেখে স্বপ্ন বলে ভুল করছিলাম। আপনি স্বপ্ন না, আপনি নাদিভ। আমি আপনার সাথে কোথাও যাবনা।
নাদিভ থমকে গেলো। রিয়ার প্রবলেম কি? একবার সে ওকে স্বপ্ন ভাবতেছে, আরেকবার নাদিভ বলে চিনতে পারতেছে। এরকম করতেছে কেন মেয়েটা? রিয়া বাসার ভেতরে যাবার জন্য পা বাড়াতেই নাদিভ ওর হাত চেপে ধরলো,
- আমার হাত ছাড়ুন। আমি আপনার সাথে কোথাও যাবোনা।
- তুমি আমার সাথেই যাবা। এখন এই মুহূর্তে।
রিয়া জোর করে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। হাত ছাড়লো না নাদিভ।
- আমার হাত ছাড়ুন। শেষবারের মত বলছি হাত ছাড়ুন। আমি কিন্তু এখন চেঁচিয়ে সবাইকে ডাকবো।
- আমি তোমার হাত ছাড়বোনা। আমি খালি হাতে ফিরে যাব বলে আসিনি। তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি। আর তোমাকে নিয়েই আমি এখান থেকে যাবো। কোন কথা, কোন অজুহাত কোন কিচ্ছু শুনতে চাইনা আমি।
রিয়া বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। মনের ভেতর থেকে স্বপ্ন নাদিভের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে ঠিক এই কথাগুলোই বললো। প্রতিটা শব্দ একসাথে। একটুখানিও এদিক ওদিক হয়নি। দুইজন মানুষ দুই জায়গায় দাঁড়িয়ে হুবহু একি রকম কথা একি সময়ে বলতে পারে কিভাবে? এটা কি করে সম্ভব? (চলবে)
©somewhere in net ltd.