নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রূপগ্রাম এগ্রো ফার্ম

রূপগ্রাম এগ্রো ফার্ম › বিস্তারিত পোস্টঃ

টমেটো ও বেগুনের ঢলে পড়া রোগ দমনে জোড় কলম প্রযুক্তি

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৪

ড. কে, এম, খালেকুজ্জামান: ব্যাকটেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ ও শিকড়ের গিট রোগ টমেটো ও বেগুনের ব্যাপক ক্ষতি করে। মাটিবাহিত ঢলে পড়া রোগ নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। একমাত্র বন্য বেগুনের সাথে ভাল জাতের টমেটো ও বেগুনের জোড় কলমের মাধ্যমেই এ রোগসমূহ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বন্য বেগুনের মধ্যে পীত বেগুন ও কাটা বেগুন এই সকল রোগ প্রতিরোধ মতা সম্পন্ন। এদের মধ্যে পীত বেগুনকেই আদি জোড় গাছ হিসাবে ব্যবহার করা ভাল। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট টমেটো ও বেগুনের ঢলে পড়া রোগ দমনে জোড় কলম প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।

জোড় কলম করার উদ্দেশ্যঃ

১. টমেটো ও বেগুনের ঢলে পড়া, শিকড়গিট ও অন্যান্য মাটিবাহিত রোগ কমানোর জন্য দরকার।

২. বন্য বেগুনের মূল সবল হওয়ায় বেশী পরিমাণে খাদ্য দ্রব্য গ্রহণ করতে পারে, ফলে ফলন অনেক বেশী হয়।

৩. ফসলের জীবনকাল বেশী হয়।

বীজতলা তৈরী ও বীজ বপনঃ

১. ২ মি. ১ মি. আকারের বীজতলা তৈরী করতে হবে।

২. প্রতি বীজতলায় পরিমিত সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।৩ লাইনে বীজ বপন করতে হবে। গুড়া মাটি দ্বারা উপরিভাগ পাতলা করে ঢেকে দিতে হবে।

৪. রাত্রে পলিথিন সীট দ্বারা বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে।

৫. বীজতলায় ঝরণা দ্বারা মাঝে মাঝে হালকা ভাবে পানি দিতে হবে।

৬. বন্য বীজ বপন করার ১৫-২০ দিন পর ভাল জাতের টমেটো ও বেগুনের বীজ বপন করতে হবে।

৭. যখন বন্য বেগুনের চারা ১.৫ ইঞ্চি লম্বা হবে তখন প্রতিটি চারা পলিথিন পটে স্থানান্তর করতে হবে। এদেরকেই গ্রাফটিং এর কাজে ব্যবহার করতে হবে।

আদি জোড় নির্বাচনঃ
পলিথিন ব্যাগের বন্য বেগুনের চারার মোট বয়স ৪৫-৫০ দিন বা ৪-৫ পাতা বিশিষ্ট হলে তা জোড় কলম করার উপযুক্ত হয়।

উপজোড় নির্বাচন :
টমেটোর চারা ২৫-৩০ দিন এবং বেগুনের চারা ৩০-৩৫ দিন বয়সের বা ২-৩ পাতা বিশিষ্ট হলে জোড় কলম করার উপযুক্ত হয়।

আদি জোড় তৈরীঃ

১. বন্য বেগুনের চারাসহ পলিথিন ব্যাগটি নিয়ে ধারাল ব্লেডের সাহায্যে চারার গোড়া থেকে ৫-৬ সেমি: উপরে অর্থাৎ উপর থেকে ২-৩ পাতার নীচে আড়াআড়িভাবে কেটে ফেলতে হবে।

২. আদি জোড় থেকে সমস্ত পাতা ছিড়ে ফেলতে হবে।

৩. কান্ডের কাটা মাথাকে প্রায় ১ সেমি: গভীর করে ২ ভাগে লম্বালম্বিভাবে চিরতে হবে।

উপজোড় তৈরীঃ

১. টমেটো বা বেগুনের চারার মাথার উপরের অংশের প্রায় ৬ সেমি : নীচে কাটতে হবে।

২. উপজোড়ের পাতাগুলো ছিড়ে ফেলতে হবে।

৩. উপেেজাড়ের কাটা অংশের নীচের দুই পাশ থেকে প্রায় ১ সেমি: লম্বা “ঠ” অরের মত করে কাটতে হবে।

জোড়া লাগানোর পদ্ধতিঃ

১. টমেটো বা বেগুনের “ঠ”- এর ন্যায় মাথা (উপজোড়) টি বন্য বেগুন চারার কাটা স্থান (আদিজোড়)-এ ঢুকিয়ে দিতে হবে।

২. পরবর্তীতে পলিথিন স্ট্রিপ (ফিতা) বা প্লাস্টিক কিপ দিয়ে জোড়াটি ভালভাবে আটকে দিতে হবে।

৩. গাছের উপরের অংশে পানি ছিটাতে হবে।

৪. জোড়ার স্থানে যেন পানি না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৫. কলম করার কাজ বিকালে করাই উত্তম।

কলমের পরিচর্যাঃ

১. গাছ, বাঁশের শলা দ্বারা খাঁচা তৈরি করে পলিথিন ও চট বা কাল কাপড় দিয়ে খাঁচা ঢেকে দিযে ছাউনি তৈরী করতে হবে।

২. পলিথিন ও চটের ছাউনির মধ্যে নীচে খড় বিছিয়ে তার উপর কলম রাখতে হবে এবং এই খড় দিনে কমপক্ষে তিনবার ভিজিয়ে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন কলমে পানি না লাগে।

৩. কলম করার পর আর্দ্রতা বাড়ানোর জন্য ৭ দিন পর্যন্ত প্রতি দিন ৩-৪ বার কুয়াশার মত করে পানি ছিটিয়ে আবার ঢেকে রাখতে হবে।

৪. বৃষ্টি না হলে রাতে খাঁচার আচছাদন খুলে রাখা ভাল। ৫. দিনের বেলায় গাছ ঢেকে রাখতে হবে।

৬. এক সপ্তাহ পর পলিথিন সরিয়ে শুধু চট বা কাল কাপড় দিয়ে আবার ১ সপ্তাহ ঢেকে রাখতে হবে।

৭. কলম করার ১৫-২০ দিন পর গাছ মাঠে লাগানো উপযুক্ত হয়।

৮. চারা মাঠে লাগানোর আগে খাঁচা থেকে বের করে ৭ দিন ছায়ায় রেখে তারপর মূল জমিতে লাগাতে হবে।

৯. মাঠে কলমের চারা লাগানোর ৭-১০ দিন পর বন্য বেগুনের গাছের গজানো ডালপালা কেটে ফেলতে হবে।

১০. চারা মাঠে লাগানোর ১৫-২০ দিন পরে পলিথিনের বাধন বা ক্লিপ খুলে ফেলতে হবে।

লেখকঃ উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব), মসলা গবেষণা কেন্দ্র, শিবগঞ্জ, বগুড়া। মোবাইল: ০১৯১১-৭৬২৯৭৮

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.