![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এ সময়ের আলোচিত ও বিতর্কিত চরিত্র আল্লামা আহমদ শফীর হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম (মাদ্রাসা প্রধান) ও হেফাজতে ইসলামের প্রধান হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের ইতিহাস। কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের রাজনীতি থেকে দূরে থাকার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যকে গুঁড়িয়ে দিয়ে রাজনীতির ‘নোংরা খেলায়’ টেনে আনার কুশীলবও এই আল্লামা শফী। তাঁর এই উত্থান ‘প্রাসাদ-ষড়যন্ত্রের’ মতই লোমহর্ষক।আল্লামা শফীর জীবন আফগান তালেবান নেতা মোল্লা ওমরের মতই রহস্যে ঘেরা। নিজেকে তিনি সাধারণ মানুষতো বটেই এমন কি কওমী মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকেও আড়াল করে রাখেন। হাটহাজারীর মানুষ যেমন জানে না তাঁর ক’জন বিবি, তেমনি জানে না তাঁর সন্তান সংখ্যা কতো। আল্লামা শফীর জন্মস্থান কোথায় তা নিয়ে রয়েছে রহস্য। আল্লামা শফীর সহযোগীরা প্রচার করে আসছেন তিনি জন্মেছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া। কিন্তু অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ভিন্ন তথ্য। ভারতের বিহারে জন্ম নেওয়া আল্লামা শফী প্রথমে বাংলাদেশের নোয়াখালিতে আসেন এবং সেখান থেকে পরবর্তীকালে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ায় আস্তানা গাঁড়েন। আর তাঁর জন্মস্থান নিয়ে এই রহস্য তৈরির পেছনে রয়েছে হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রধানপদে নিজের নিয়োগকে বৈধতা দেওয়া। আল্লামা শফীর কর্মজীবন নিয়েও রয়েছে নানান বক্তব্য। তার ঘনিষ্টরা দাবি করেন, আল্লামা শফী হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসাতেই প্রথম শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, আল্লাম শফী প্রথম পটিয়ার আল জামেয়া আল ইসলামি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। পটিয়া মাদ্রাসায় ঢুকেই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে টেনে আনার চেষ্টা শুরু করেন তিনি। কিন্তু আল্লমা শফীর জন্য দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙ্গে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে নিয়ে আসা এতো সহজ ছিল না। শত চেষ্টার পরও আল জামেয়া আল ইসলামের ছাত্র-শিক্ষকেদের রাজনীতিতে টেনে আনতে ব্যর্থ হন আল্লামা শফী। ওই মাদ্রাসার শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষের সংগে জড়িয়ে যান নানান ফ্যাৎনা-ফ্যাসাদে এবং এক পর্যায়ে সেখান থেকে চলে আসতে বাধ্য হন তিনি। ওই মাদ্রাসা থেকে চলে এসে আল্লামা শফী পটিয়াতেই জিরি মাদ্রাসায় কিছু সময় শিক্ষকতা করেন। পটিয়ার ওই দুটি মাদ্রাসা এখনও আল্লামা শফীর রাজনীতির বিরোধী-ব্লক হিসেবে কাজ করছে। পটিয়া মিশন শেষ করে আল্লামা শফী সাধারণ শিক্ষক হিসেবে চাকুরি নেন দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে। এই মাদ্রাসারই ছাত্র তিনি। নিজের ‘আলমা মাতারে’ ফিরে ঢুকতে পেরে আল্লামা শফী কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট করার জন্য ভয়ংকর ও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। তবে একজন সাধারণ শিক্ষক হয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাজনীতি করা কঠিন ছিল আল্লামা শফীর পক্ষে। এছাড়া, তৎকালীন সময়ে হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষকেরাও দারুণভাবে রাজনীতিবিমুখ ছিলেন। তাই, আল্লামা শফীর একমাত্র টার্গেট ছিল হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মুহতামিম হওয়া। সোজা পথে ওই মাদ্রাসার মুহতামিম হওয়া সম্ভব ছিল না আল্লামা শফীর। তাই তিনি শুরু করেন নানামুখী ষড়যন্ত্র। আবদুর রহিমের বার্ধক্যের সুযোগ নিয়ে তিনি ওই মাদ্রাসার অন্যতম ক্রীড়ানক হয়ে ওঠেন। ১৯৮৪ সালে হাটহাজারীর মুহতামিম মাওলানা আবদুর রহিম (আব্দুল খালেদ) মারা যাওয়ার পর সে সুযোগ চলে আসে আল্লামা শফীর সামনে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় মুহতামিম নির্বাচনের নির্ধারিত আইন। হাটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার নিয়ম অনুসারে যোগ্য শিক্ষকদের মধ্যে কেউ হাটহাজারীর বাসিন্দা হলে তিনিই হবেন মাদ্রাসা প্রধান। স্বাভাবিকভাবেই, অগ্রাধিকারভিত্তিতে মাওলানা রহিমের ভাই আল্লামা সেলিমের মুহতামিম হওয়ার কথা । কিন্তু আল্লামা সেলিমের কর্তৃত্ব কখনোই নিরঙ্কুশ হয়নি। নানান জটিলতার কারণ এই মাদ্রাসার ইমাম বা অভিভাবকের দায়িত্ব চলে যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমের খতিব উবায়দুল হকের কাছে। এদিকে আল্লামা সেলিমের বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগ তুলে মাদ্রাসা প্রাঙ্গনেই আল্লামা সেলিমকে মারাত্মকভাবে শারিরীক নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীকালে শাস্তি স্বরূপ আল্লামা সেলিমের মুহতামিম হওয়ার সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যায়। পর্দার সামনে চলে আসেন আল্লামা আহমদ শফী। হাটহাজারীর স্থানীয় অনেক ব্যক্তিই মনে করেন, আল্লামা সেলিমের বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগটি তাকে ঘায়েল করার হাতিয়ার ছিল। কিন্তু মাওলানা সেলিমের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে মুহতামিম পদ থেকে তাকে দূরে থাকতে বাধ্য করা হলেও মাদ্রাসাটির প্রধান হওয়া সম্ভব ছিল না আল্লামা শফীর পক্ষে। অবশেষে বিএনপির দ্বিতীয় বারের শাসন আমলে আল্লামা শফী বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব ও মাদ্রাসা ইমাম মাওলানা উবায়দুল হকের সঙ্গে তার ঘনিষ্টতাকে কাজে লাগিয়ে এবং উবায়দুল হকের প্রভাব-প্রতিপত্তি ব্যবহার করে মাদ্রাসা প্রধানের পদটি দখল করেন। আল্লামা শফী হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম হওয়ার পরই রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। নানান চেষ্টার পর ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম নামের একটি সংগঠন তৈরী করেন এবং হেফাজতে ইসলামের সার্বিক কর্তৃত্ব নিয়ে নেন। হেফাজতে ইসলাম পরিণত হয় এক ব্যক্তি, এক নেতার সংগঠনে। এযেন বিংশ শতাব্দীর ভাগ্যবান আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।
©somewhere in net ltd.