![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবির ভাষায়- ‘পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়/ জ্বলে-পুড়ে মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।’ এই-ই হলো বাঙালীর চারিত্র্য-বৈশিষ্ট্য আর বাংলাদেশের সত্তাশক্তির অনমনীয় দৃঢ়তার চিরাচরিত রূপ। এ কারণেই যুদ্ধ-সংগ্রাম, মারী-মড়ক, ধ্বংস-বিপর্যয়, দুর্ভিক্ষ-আকালে এ জাতি কখনও হতোদ্যম হয় না। পিছু হটে না। এই শক্তিময়, অপরাজিত বৈশিষ্ট্যের সুবাদেই ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা এসেছে। আমরা আজও এগিয়ে চলেছি শত বাধা-প্রতিকূলতাকে অগ্রাহ্য করে। সামাজিক-রাজনৈতিক অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝার মাঝেও তাই আমাদের অর্থনীতি বার বার হোঁচট খেলেও মুখ থুবড়ে পড়ে না। বিরোধী দলের ঘন ঘন হরতাল-নৈরাজ্যের পরও যখন নানা ক্ষেত্রে উন্নয়নের সন্তোষজনক অবস্থা লক্ষ্য করা যায়, তখন শত প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা আশান্বিত হই না, আমরা মচকাব তবু ভেঙ্গে পড়ব না। আমাদের অর্থনীতি, বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্রমস্ফীতি স্বাধীনতার পর এই ৪৩ বছরে সর্বোচ্চ। রিজার্ভের এই বৃদ্ধি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটেনি। এর পেছনে রয়েছে যথাযথ নীতি-ব্যবস্থা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সক্রিয়তার শক্তি। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুটি খাত হলো জনশক্তি রফতানি ও তৈরি পোশাক শিল্প রফতানি। এর মধ্যে জনশক্তি রফতানি সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আসে। বিশ্বের ১৫৫টি দেশে কর্মরত ৯০ লাখ শ্রমিক-কর্মীর হাড়ভাঙ্গা খাটুনির বিনিময়ে অর্জিত বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এসে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে। বর্তমান সরকারের আমলে এই খাতটি উল্লেখযোগ্যভাবে চাঙ্গা হয়েছে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে, মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দূর-প্রাচ্যের দেশসমূহে জনশক্তি রফতানি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে রেমিটেন্সের পরিমাণও। সরকারের বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছে। রেমিটেন্স আয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে গার্মেন্টস বা তৈরি পোশাক শিল্প খাত। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বিশেষ সুনাম রয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। গুণে-মানে এবং দামে অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে এসব পোশাকের কদর সর্বত্র। এ কারণে রানা প্লাজার মানবিক বিপর্যয়সহ অন্য কিছু পোশাক কারখানায় দুর্ঘটনার ফলে এ শিল্প কিছুটা থমকে দাঁড়ালেও সেই অবস্থার এখন পরিবর্তন হচ্ছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলেও পোশাক খাতে এখনও কোন বিরূপ প্রভাব পড়েনি; কিন্তু এই পরিস্থিতিতে হাত গুটিয়ে বসে থাকারও অবকাশ নেই। একদিকে জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে নতুন নতুন বাজার অন্বেষণ, অন্যদিকে কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলে অধিক সংখ্যায় দক্ষ কর্মী পাঠানোর বিষয়ে যতবান হওয়া জরুরী। এতে রেমিটেন্সের পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। আমাদের গার্মেন্টস খাত অশেষ সম্ভাবনাময়। পাশাপাশি অন্যান্য রফতানিযোগ্য খাতকেও অধিকতর চাঙ্গা করা গেলে সার্বিকভাবে তা জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়।
©somewhere in net ltd.