![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গত বছর ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২, শুভ মধু পূর্ণিমার বরণ রাতে হামলায় পড়েছিল সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। সেদিন পূর্ণিমার রাতেই বৌদ্ধরা মধু পূর্ণিমা উদযাপন করছিল। রাত যত ঘনীভূত হচ্ছিল, চারিদিক থেকে সশস্ত্র লোক ট্রাক, মিনিবাস, হোন্ডাযোগে আসা শুরু করেছিল। তারা আতঙ্ক সৃষ্টি করে বাড়িঘরের বেড়া ভাংচুর চালিয়েছিল। মিছিল নিয়ে যেয়ে প্রথমে আগুন দিয়েছিল লাল চিং বিহারে। আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলতে থাকে রেঙ্গুনী কাঠের কারুকার্যময় কয়েক শত বছরের লাল চিং বিহার। প্রাণভয়ে ছুটতে থাকে নিরীহ বৌদ্ধ সম্প্রদায়। একই সঙ্গে অপর্ণাচরণ বিহারে আক্রমণ ও আগুন লাগানো হয়েছিল। বিহারের গেটে দুটো সিংহ মূর্তি ছিল, ভেঙ্গে চুরমার করে দিল হামলাকারীরা। বিহারে স্থাপিত সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তিসহ সব শেষ করে দেয়া হয়েছিল। এরই মধ্যে সাদা চিং এ আক্রমণ করে শ্বেতপাথরের বুদ্ধমূর্তির মাথা ভেঙ্গে দেয়া হলো। তবে বিহারে অনেক চেষ্টা করে আগুন লাগাতে ব্যর্থ হলো সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। দানবাক্সসহ লুট করল বিহারের দামী জিনিস। ধর্মাসনে উঠে আনন্দে উলঙ্গ নৃত্য করতে লাগল, যেন মহাবিজয়ী মহাবীর। সারা রাত তাণ্ডব চলছিল অন্য বিহারগুলোতেও। এর পরের দিন ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া, পটিয়ায় হামলা হলো। কি এক ভয়ানক দৃশ্য। মুহূর্তে শেষ করে দিল তিন চার শত বছরের ইতিহাস। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেদিন দেশে ছিলেন না। আমেরিকায় জাতিসংঘে শান্তি মিশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে ছিলেন। ফিরে এসে ৮ অক্টোবর ২০১২ রামুতে ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। ঘোষণা করলেন, বৌদ্ধ বসতবাড়ি ও বিহারগুলো পুনর্নির্মাণ করার। তিনি তাঁর কথা রাখলেন। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে কাজে লাগিয়ে বৌদ্ধ বিহার, বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ করে দিলেন সরকার। দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধ বিহারগুলো আবার পেল তাদের হৃতগৌরব। কক্সবাজারে যারা সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যায়, তাদের দ্বিতীয় পছন্দ হলো কক্সবাজার রামু’র বৌদ্ধ বিহারগুলো। এ কাজে হয়ত পর্যটন শিল্পের বিকাশ হবে। বৌদ্ধরা আবার মাথা তুলে দাঁড়াবার সাহস ফিরে পাবে। এ ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোন আন্তরিকতার অভাব আমরা দেখিনি। তাছাড়া সেনাবাহিনী না হলে এ অল্প সময়ে এক সঙ্গে এত বিহারের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়া দুরূহ ছিল। কেন এ ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটল? জাতির জনকের কন্যার পক্ষেই সম্ভব অসাম্প্রদায়িক, সুখী, সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে। আমরা আপনার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং আমাদের স্থায়ী নিরাপত্তা প্রত্যাশা করছি। যারা এ হামলার পরিকল্পনাকারী, যারা সম্প্রীতি নষ্টকারী, অবশ্যই তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ এবং বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টকারীদের। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে যারা ফায়দা লুটতে চায়, সেই সুযোগ সন্ধানীরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। আমাদের মনে রাখতে হবে দেশেকে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে চাইলে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তা একমাত্র সম্ভব সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মুক্তবুদ্ধির মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যেমে। আমরা চাই না এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক। স্থায়ী নিরাপত্তাই দিতে পারে বৌদ্ধদের স্বস্তি ও বিশ্বাস।
©somewhere in net ltd.