নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু হেনা মোঃ মাসুদ (রাসেল)

দি রিফর্মার

যা ভাল তা ভাবতে চাই,যা ভাবি তা করতে চাই,সুন্দর পৃথিবী গড়তে চাই।

দি রিফর্মার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি অফিস করি আর লোকজন পরিবারের সবাইকে নিয়ে মজা করে ঈদ কাটায়।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:১৮

সামনে কোরবানীর ঈদ। পরিবারের সবাইকে নিয়ে যাব গ্রামের বাড়িতে ঈদ উৎযাপন করতে। যেহেতেু ৯ই সেপ্টেম্বর থেকে ঈদের ছুটি শুরু তাই ওই দিনের ট্রেনের টিকিট কেটে নিলাম (টিকিট কাটার বিড়ম্বনা এখানে বাদ দেওয়া হল)। ছেলে মেয়েতো খুবই খুশি তারা বাড়িতে বেড়াতে যাবে। যথারীতি এল সেই বাড়ি যাবার দিন। সকালবেলা কোন রকম নাস্তা সেরে স্ত্রী,পুত্র কন্যাদের নিয়ে গেলাম ষ্টেশনে। গিয়ে তো দেখি ষ্টেশনে তিল ধারণের ঠাই নেই। ট্রেনের অপেক্ষায় সময় পার হয়ে যাচ্ছে। ছেলেমেয়েরা আনন্দের আতিশয্যে কোনো কষ্টই তাদের গায়ে লাগছে না। ক্রমেই ভিড় বাড়ছে। কিন্তু ট্রেনের কোন দেখা নেই। ঘন্টা দুয়েক পার হয়ে গেল। ষ্টেশনটা কেমন যেন নির্জীব মনে হচ্ছে। ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক সেদিক লক্ষ্য করতে লাগলাম। দেখি আমার মত অনেকেই এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। হঠাৎ যেন সম্বিৎ ফিরে পেলাম। ষ্টেশনে রেলের কোন লোক জন দেখা যাচ্ছে না। শুধু সমান্তরাল রেললাইন গুলো চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে। আশ্চর্য রেলের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী আজ অনুপস্থিত। জানা গেল, তারা সবাই সরকারী ছুটি উপভোগ করবেন। যেহেতু ঈদের ছুটি উপভোগ করার অধিকার তাদেরও আছে তবে কেন ঈদের ছুটিতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আনন্দটাকে মাটি করবে। ছুটলাম বাস টার্মিনালের দিকে। সেখানেও একই অব্স্থা। তারাও ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাবে। অগত্যা বাড়িতে ঈদ করার আশাটি দপ করে নিভে গেল।

রাত তখন বারোটা। হঠাৎ ছোট ছেলেটি আমাকে বলল, তার পেটের ভিতর কেমন যেন করছে আর বেশ কয়েকবার পাতলা পায়খানাও হয়েছে। দেখতে দেখতে ছেলের অবস্থা খারাপের দিকে যেতে লাগল। কোনরকম একটি সিএনজি যোগার করে ছুটলাম হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে দেখি গেইটে বিরাট তালা ঝুলছে। ব্যানারে বড় বড় করে লেখা ''৯ই সেপ্টেম্বর হতে ১৪ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালের সকল বিভাগ বন্ধ থাকবে। সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত।''


যাই হোক, আর কল্পনা করতে পারছি না। এবার বাস্তবতায় ফিরে আসি।

আসল কথা হল, গত কিছুদিন যাবৎ ফেসবুকের বদৌলতে দেখা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের স্ট্যাটাসে লিখছেন, আমারা কি মানুষ না? আমাদের কি পরিবার নেই? ঈদের ছুটিতে কেন আমরা ডিউটি করব? সাথে এটে দিচ্ছেন একটি মনমরা সেলফি।




আমরা কমেন্টে ঘরে তাদের সমবেদনা জানাচ্ছি। অনেকে আবার তাদের এই কোরবানী (ঈদের ডিউটি) কবুল করার দোয়া করে, ''আমীন'' লিখছি।

পেশাগত কারণে অনেকের জন্য পরিবারের সাথে ঈদ কাটানো সম্ভব হয় না। বিশেষ করে হাসপাতাল, রেল, নৌ, বিমান, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থা, সেই সাথে জনগনের বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনেকেরই ঈদের দিনটি কাটে তাদের কর্মস্থলে। তাদের এই ত্যাগ আমরা সকলেই স্বীকার করি।

কিন্তু তাদের এই ফেইসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে গভীর ভাবে ভেবে দেখলে আমরা বুঝতে পারব যে, যে বা যারা এমন স্ট্যাটাস লিখেছেন তাদের মনের মধ্যে একধরনের ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা তো জনগনের সেবা করবে এই লক্ষ্য নিয়ে এমন পেশা বেছে নিয়েছে। তাহলে তাদের এই পেশায় আসাই ঠিক হয়নি। জনগনের সেবা দেওয়া যে এই সকল প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সেই কথাটিই বেমালুম ভুলে যাচ্ছে। আজকাল শুধু নিজের লাভ দেখি আর প্রাপ্তির হিসাব কষি। সকলেই যদি নিজের পেশার প্রতি আন্তরিক থাকি তবে এই দুঃখ অনেকাংশেই লাঘব হয়ে যায়। প্রতিটি পেশার যে একটি আদর্শ ও লক্ষ্য আছে দিনদিন ভুলে যাচ্ছি। একজন স্ট্যাটাস দিচ্ছে, আমি নাইট ডিউটি করছি আর সবাই আনন্দে নিদ্রা যাচ্ছে। আমরা কি ভাবতে পারি না, ''তোমাদের নিশ্চিন্ত ঘুমের জন্যই আমি জেগে আছি।''

অফিসের সহকর্মীদের সাথে আন্তরিকতার সাথে ছুটি ভাগাভাগি করে সকলের ঈদকে আরো আনন্দদায়ক করে তুলি, সেটাই হোক আমাদের লক্ষ্য।

(বিঃদ্রঃ আমি নিজে ৯-১৪ সেপ্টেম্বর ছুটি কাটিয়েছি ০০১দিন)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.