![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বরিশালের ছোট্ট একটা শহরে এক ছেলে বাস করত । সে ছিল অন্য আট-দশটা ছেলে থেকে আলাদা । সে তার নিজের জগতের মধ্যেই আবদ্ধ থাকতো । তার তেমন বন্ধু ও চিলনা । অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে গেলে তার অস্বস্তি লাগত । বাবা-মা –ই ছিল তার বন্ধু ।
একদিন সে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল । হটাৎ সে সে রিকশায় একটি মেয়েকে দেখল । মেয়েটিকে দেখে তার অদ্ভুত এক অনুভূতি হল । বুকের মধ্যে কেমন জানো করে উঠল । জীবনে সে অনেক মেয়ে দেখেছে । কিন্তু আগে কোন মেয়েকে দেখেই তার এমন লাগে নি । মেয়েদের থেকে সবসময় দূরে থাকতেই পছন্দ করে । কিন্তু এই মেয়েটিকে তার মনে হল যেন স্বর্গের অপ্সরী ধরিত্রিতে নেমে এসেছে । সে তার মায়ের সাথে কি নিয়ে জানো কথা বলছিল আর হাসছিল । তার হাসি থেকে যেন হলুদ এক আভা বের হচ্ছিলো। অদ্ভুতভাবে ছেলেটি টের পেল সে ও হাসছে । মেয়েটি চলে যাওয়ার পর সে হেঁটে হেঁটে বাসায় চলে আসলো । সে নিজেকে বুঝাল এটা তেমন কিছুই না । সুন্দরী মেয়ে দেখলে হতেই পারে ।
বাসায় ফেরার পর সে কিছুতেই সে মুখ ভুলতে পারছিল না । সে মেয়েটির কথা ভাবতে থাকল । তার মা যখন তার ঘরে আসলো তখন তিনি দেখলেন তার ছেলে কি নিয়ে জানো ভাবছে আর তার মুখে হাসি ।
- কিরে কি ভাবছিস , বাবু ?
- (ছেলেটি অবাক হোল এবং উঠে বসলো ) না আম্মু , কিছু না , এক্সাম আসে কালকে । তাই চিন্তা করছিলাম ।
- এক্সাম নিয়ে চিন্তা পরে করিস । এখন খেতে আয় ।
- আচ্ছা তুমি যাও । আমি আসছি ।
ছেলেটি তারপর উঠে খেতে গেল । খাওয়ার পর আবার সে মেয়েটির কথা ভাবতে থাকলো – কি নাম হবে তার ? একটা মেয়ে এত সুন্দর কিভাবে হয় ? এসব চিন্তা করতে করতে কখন সে সকাল হয়ে গেসে সে টের পাই নি ।
এরপর থেকে প্রতিদিন বিকেল বেলায় ছেলেটি ঐ রাস্তায় যেত যদি সেই মেয়ের দেখা পায় ! কিন্তু সে মেয়েটি আর ঐ রাস্তা দিয়ে যায় না । ছেলেটির মেয়েকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে । প্রত্যেক দিন নামাজ পরে সে আল্লাহের কাছে যায় যেন সে মেয়েটিকে আরেকবার দেখতে পায় ।
ও ! ছেলেটির নামই বলা হয়নি ! ছেলেটির নাম অভ্র ।
এভাবে ছয় মাস চলে গেলো । অভ্রের মা বুঝতে পাড়ছিলেন তার ছেলের কিছু হয়েছে । সে তার সাথে ঠিকমত কথা বলে না । যতক্ষণ বাসায় থাকে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখে । ঠিকমত খাওয়া-দাওয়াও করে না । কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে সামনে এক্সাম তাই পরাশুনা নিয়ে খুব টেনশন করে । তিনি তোহ মা । জানেন তার ছেলে পরাশুনা নিয়ে টেনশন কখনই করে না । ছোটবেলা থেকেই তার ছেলে ভাল student . প্রত্যেকটা পরিক্ষায় ওর রেজাল্ট ভাল । এস.এস.সিতে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে । এইচ.এস.সিতেও পাবে এটা তার বিশ্বাস ।
আরো এক মাস পর একদিন ফেসবুক এ লগিন করে সে দেখল অবন্তি চৌধুরি নামে একটা মেয়ের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট । সে মেয়েটির প্রোফাইল চেক করতে যেয়ে দেখলো যে এতদিন ধরে সে যাকে খুজছে এটি ই সেই মেয়ে । ছেলেটি এতটাই অবাক হয়েছিল যে উত্তেজনায় তার হাত থেকে মোবাইল পরে গেল । সে দৌড়ে একটা সাইবার ক্যাফে তে গেল এবং সাথে সাথে ফেসবুক এ লগিন করল । কিন্তু সে কোন রিকুয়েস্ট খুজে পেল না । তারপর সে মেয়েটির নাম লিখে ফেসবুক এ সার্চ দিল এবং পেয়েও গেল আইডিটি । সে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাথালো এবং মেসেজ এ লিখলো , “ অবন্তী , আমি তোমার বন্ধু হতে চাই । আমার মনে হয় আমরা একই শহরে থাকি এবং আমি তোমাকে দেখেছি । “ এরপর প্রতিদিন অভ্র ফেসবুক চেক করত যে মেয়েটি ওর ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করেছে কিনা । ৫ দিন পর ফেসবুক এ ঢুকে সে দেখল যে অবন্তী তার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করেছে । এরপর থেকে তারা চ্যাট – এ কথাবার্তা বলা শুরু করল । তারা ভাল বন্ধু ও হয়ে গেল । মেয়েটি একদিন ছেলেটিকে তার মোবাইল নাম্বার দিল । তারপর থেকে তারা ফোনেই কথা বলত । অবন্তীর কন্ঠ ছিল অনেক সুন্দর ঠিক তার চেহারার মত । অবন্তী মাঝে মাঝে অভ্রকে গান শোনাতো । আর অভ্র টুকটাক কবিতা লেখত । সেগুলো সে অবন্তীকে শোনাতো ।
একদিন কথায় কথায় অবন্তী জানাল যে সে রেহান নামে একটা ছেলেকে পছন্দ করে । রেহান অভ্রের সাথেই পড়ত । অভ্র ভালোভাবেই জানে যে রেহান মোটেও ভাল ছেলে নয় । অনেক মেয়েদের সাথে রেহানের মেলামেশা । তাই অভ্র অবন্তীকে রেহানের ব্যাপারে সব জানাল । রেহানকে ভুলে যেতে বললো । এসব শুনে অবন্তী কেদে ফেলল । কেন জানি অভ্রের খুব কস্ট হচ্ছিল । বুকের বাম পাশে চিন চিন ব্যাথা করছিল । সে অবন্তীকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করল কিন্তু মেয়েটা কাঁদতেই থাকলো ।এক সময় কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেল । আর অভ্র সারাটি রাত জেগে কাটিয়ে দিল । তার মনে হচ্ছিল যেন চিৎকার দিয়ে বলে –“ অবন্তী আমি তোমাকে ভালবাসি । তোমার কষ্ট আমার সহ্য হয় না ।“
এভাবেই তিনটি মাস কেটে গেল । এই তিনমাস সবসময় অভ্র অবন্তীর পাশে ছিল । মাঝে মাঝে বিকেলে তারা রিকশায় সারা শহর ঘুরত । অভ্র তখন অবন্তীর বিষণ্ণ মুখের দিকে চেয়ে থাকত । তাকে হাসানোর চেষ্টা করতো । আস্তে আস্তে অবন্তী স্বাভাবিক হতে শুরু করে । অভ্র ঠিক করলো পহেলা বৈশাখে অবন্তীকে বলে দিবে তার ভালবাসার কথা । একটা কবিতাও লেখে ফেলল সে ।
‘যদি পাশে থাকো তুমি
তাকাবো না ঘড়ির দিকে
চলে যাক সময়
আছো তো সাথে তুমি
যদি পাশে থাকো তুমি
ভুলে যাব সব ব্যথা
সব কষ্ট, দুর্দশা
চেয়ে রইব শুধু তোমার দিকে
যদি পাশে থাকো তুমি
পেরিয়ে সব ঝড়-ঝঞ্চা
ভুলে সারা দুনিয়া
আমি থাকবো তোমার কাছে |’
এপ্রিলের ১ তারিখ , বিকেলে অভ্র আর অবন্তী ঘুরতে বের হয়েছিল রিকশায় করে । সাদা শাড়িতে অবন্তীকে পরীর মত লাগছিল । অভ্রের ইচ্ছা করছিল অবন্তীর হাতটা ধরতে । হঠাত একটি ট্রাক এসে পেছন থেকে রিকশাটিকে ধাক্কা দেয় । ভিড় জমে যায় চারপাশে । হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাদেরকে ।
২-৩ দিন পর অভ্রের যখন জ্ঞ্যান ফিরল সাথে সাথে সে অবন্তীর ব্যাপারে জানতে চাইল । ডাক্তাররা তাকে জানাল অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে অবন্তী মারা যায় । অভ্র পুরো পৃথিবী যেন নড়ে উঠল । সে তার মাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে উঠলো – ‘আল্লাহ ! কেন তুমি অবন্তীকে আমার থেকে কেড়ে নিলে ? আমি তোহ বেশি কিছুর স্বপ্ন দেখি নি । শুধু যাকে ভালবাসি তাকে পাশে চেয়েছি ।’
সুস্থ হয়ে অভ্র এইস.এস.সি পরীক্ষা দিল । তারপর সে বাবা-মাকে নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নীল এবং সুইডেন চলে গেল । এখন সে খুব সফল একজন শিল্পপতি । কিন্তু যখনই দিন শেষে সে ঘরে ফিরে তার অবন্তীকে মনে পড়ে । তখন সে তার ডাইরির পাতা উল্টায় আর তার অবন্তীকে নিয়ে লেখা গুলো পড়ে আর অবন্তীর ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে । সে কখনো মেয়েটিকে বলতে পারে নি কতটা ভালবাসে সে তাকে । নিজের ভেতর জমে থাকা সে ভালবাসা তাকে পুড়িয়ে যায় সিগারেটের তামাকের মত ।রাত গভীর থাকে আর অভ্র মনে মনে আওরাতে থাকে তার লেখা একটা কবিতা ,
‘ধোয়ার মাঝে লুকিয়ে তুমি
হন্নে হয়ে খুজি আমি তোমায়
চারিদিকে কোথাও নেই তুমি
লুকিয়ে রয়েছো অদৃশ্য এক জগতে
কুয়াশার মাঝে দেখা দেয় তোমার ছায়া
রবির আলোতে অস্পষ্ট এক চেহারা
শুনেনা সে আমার আর্তনাদ
বুঝে না এই চোখের মায়া
দূরে থেকে হাসে এক নিস্প্রাণ হাসি
ভালবাসি সেই হাসি
বড্ড ভালবাসি |’
#লেখাটা নিতান্তই কাল্পনিক চিন্তার ফসল । প্রথম গল্প লেখা তাই ভুল থাকতে পারে । কোনো কিছু নিয়ে বলার থাকলে গল্পের ব্যাপারে অবশ্যই কমেন্ট এ জানাবেন ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৩২
অপ্রচলিত বলেছেন: প্রথম গল্পে প্রথম ভালো লাগা। কমন কাহিনী নিয়ে লিখেছেন, মোটামুটি সবই পড়ার আগেই আন্দাজ করে ফেলেছি। তারপরও ভালো লাগল, লেখনী বেশ সাবলীল।
নিরন্তর শুভ কামনা লেখক।