নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জাপানের জন্য শোক

লিবিয়ায স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসুক।

আফরিন জাহান

You must remember that, you fighting against destiny. You have to make your own future.

আফরিন জাহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হায়! হাস-পাতাল!

১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৪৯

প্রায় ৩২ লাখ টাকা চিকিৎসা বিল। ১২ লাখ পরিশোধ। রোগী পরপারে। কিন্তু ২০ লাখ টাকার বিলের মৃত্যু নেই। তা পরিশোধ করেই নিতে হবে লাশ! এই হলো চিকিৎসা ব্যবস্থার কর্পোরেট কালচার। মেডিকেল শিল্পের বৈশ্বিক বাণিজ্যিকীকরণ। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক ডা. হিপোক্রেটিস কী নীতি করে দিয়ে গেছেন? দিয়েছেন চিকিৎসক তথা চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য একটি শপথনামা। যা বিশ্বব্যাপী হিপোক্রেটিসের শপথনামা বলে অভিহিত এবং সম্মানিত। চিকিৎসা সেবা আর মানবতাবোধের ক্ষেত্রে ১৯টি শপথের সমন্বয়ে তৈরি এই শপথনামা অত্যন্ত হদয়গ্রাহী, সুপঠিত এবং এক যুগান্তকারী সৃষ্টি। চিকিৎসক ছাড়া সাধারণ মানুষও যদি এটি পাঠ করেন, তাহলে তিনি যত খারাপ মানুষই হন না কেন, মানুষের সমাজে একটু ভেবেচিন্তে চলবেন। ডা. হিপোক্রেটিসের এই শপথনামা প্রত্যেক চিকিৎসকের শিক্ষার শুরু থেকে রপ্ত করতে হয় এবং শপথ অনুযায়ী তার চিকিৎসাসেবা আমৃত্যু বহাল রাখতে হয়। এটি চিকিৎসকের অন্যতম মৌলিক নীতিও।

অথচ আমাদের ইউনাইটেড হাসপাতাল সম্প্রতি আসলাম নামের এক রোগীকে চিকিৎসার নামে যে ঘটনার জন্ম দিলো, তা কোন্ নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত? চিকিৎসা তথা এই ব্যবস্থা নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে হলেও প্রায় চব্বিশ বছরের অভিজ্ঞতা আমার। ১৯৮৯ সালে আমার আপন ন’ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় এরশাদীয় স্বৈরাচারের শিকার হয়ে অসুস্থ হয়। সেই থেকে টানা চিকিৎসা। চলতি বছরের ২ জুলাই গ্রামের বাড়িতে মারা যায় আমার দাদা সুভাষ সানা। জীবদ্দশায় তাকে ঢাকা-কলকাতার অনেক চিকিৎসকের কাছে নিয়েছি। গিয়েছি অনেক হাসপাতালে। বস্তুত, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে ইউনাইটেড, অ্যাপোলো, স্কয়ার, ল্যাবএইড টাইপের উত্তেজনাপূর্ণ বিল-বাট্টা খাওয়া হাসপাতালগুলোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই হয়। এসব হাসপাতালে এদেশের সাধারণ মানুষের পা ফেলার বিল-বাট্টা পরিশোধেরও সাধ্য নেই; চিকিৎসা করে সুস্থ থাকা তো দূরের কথা! বিশ্বায়নের অসম প্রতিযোগিতার ভিড়ে এরাও রীতিমতো অসুস্থ প্রতিযোগী। রোগী বাঁচুক না বাঁচুক, এদের বিগ ইনভেস্ট বাঁচানো এবং পুঁজিকে দ্রুত পরিপুষ্ট ও স্বাস্থ্যকর করে তোলাই এসব কর্পোরেট চিকিৎসাচক্রের একমাত্র লক্ষ্য। ভেনটোলিন ধরনের ওষুধ খাইয়ে গরু-ছাগল দ্রুত মোটাজাতকরণের মতোই প্রয়োজনে মরা রোগীর চিকিৎসা করিয়ে বিরাট বিল-বাটোয়ারা আদায়ের মাধ্যমে পুঁজি ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলতে এদের পাষাণ হৃদয় বিন্দুমাত্র বিচলিত হয় না। সুতরাং চিকিৎসা সেবা নামধারী এসব বহুজাতিক কর্পোরেট কোম্পানির কুমিরছানারা এদেশের স্বাস্থ্যসেবায় কী ভূমিকা রাখছে, তা অবিলম্বে তদন্তে এনে এদের জবাবদিহিতায় বাধ্য করা সরকারের অন্যতম প্রধান সমাজকল্যাণমূলক পদক্ষেপ হবে বলে মনে করি।

প্রসঙ্গত, আমাদের বড় পরিবার। কেউ চিকিৎসক হয়নি। এটা এক মহাসঙ্কট মনে হচ্ছে এই চল্লিশ পার করে এসে। তাই বহু সাধের সাংবাদিকতাকে ধীরে ধীরে বিদায় জানাতে চিকিৎসকের পথে পদার্পণ ঘটেছে কিছুকাল আগে। আত্মপ্রত্যয় এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের মৌলিক নীতির ভিত্তিতে বলছি, এতো বড় বড় নামি-দামি হাসপাতাল প্রয়োজনের চেয়ে বরং এদেশের চিকিৎসা জগতকে অস্থির এবং অরাজকতার দিকে এগিয়ে দিতেই অনেক বেশি ভূমিকা রাখছে। যেহেতু এরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের মৌলিক নীতিরীতি লঙ্ঘন করে বাণিজ্যকেই করেছে প্রধান অবলম্বন। সুতরাং এদের অনুসরণ করে দেশের ছোট-মাঝারি সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারওয়ালারাও যে হিপোক্রেটিস বিরোধী চিকিৎসা কার্যক্রমে শামিল হচ্ছে না বা হবে না, কে দেবে এই গ্যারান্টি? আর এসব ইউনাইটেড প্রভাবে বাণিজ্য মানসিকতাসম্পন্ন বা বুর্জোয়া শ্রেণীর চিকিৎসকরা যে সেবার নামে রোগীর গলা কাটছে না বা কাটবে না, তাও কে বা কারা দেখবে? এমনিতেই ভেজালে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের চিকিৎসা জগতের সামগ্রিক পরিস্থিতি মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। শুধু কিছু ওষুধ তৈরি এবং রপ্তানির ক্ষেত্রেই খানিকটা অগ্রগতি। দেশে সুচিকিৎসার সূচক এখনো অনেক পেছনে। কাজেই একজন আসলামের এই মৃতদেহ আটকে ২০ লাখ বকেয়া দাবিকে একটি সিম্বল অমানবিকতা এবং নীতিবিরুদ্ধ চিকিৎসা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে সোচ্চার হওয়া অতীবজরুরি। এটি ইউনাইটেডের মহাদুর্নীতি। চরম অমানবিকতা।

আসুন; এই চরম অমানবিকতার ধিক্কার জানাই আপনি আমি সবাই। সরকার কোথায়? কোথায় সচেতন জনগণ? কোথায় মানবতাবোধে জাগ্রত শানিত আমজনতা? একটু করে ঘৃণা ছিটিয়ে দিন চিকিৎসার নামে লুটপাটকে। আর স্ব স্ব অবস্থান থেকে এই হীন লুটতরাজকে প্রতিহত করার পন্থা অনুসন্ধান করুন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:১৬

না পারভীন বলেছেন: আপু, ১৯ টি শপথ ডাক্তার করে কোন ক্লিনিক কি করে? আমার জানা নাই। ইউনাইটেড, স্ক্যয়ার এদের কোনটির ই মালিকানা ডাক্তারের না। এগুলো ব্যবসায়ীদের। ৭ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, যাদের টাকা আছে তাদের জন্যই ওই সব হাসপাতাল এমনকি তারা চাইলে বিদেশেও যেতে পারে।
আর গরীবদের দুয়ারে চিকিৎসা সেবা পৌছানোর জন্য সরকার অনেক ব্যবস্থাই করছে।
ডেড বডি আটকে রেখে বিজনেস কোনদিন কোন ডাক্তার করবে কিনা আমার জানা নাই, তবে ডেডবডি আটকে রেখে ব্যবসায়ীরা নজির সৃষ্টি করেছে।
তাও তাদের ব্যাখ্যা শুনলে বুঝতে পারা যাবে কেন এত টাকা বিল এসেছে। এ ব্যাখ্যা এখনো তারা দেয়নি। কারণ লজিস্টিক সাপোর্ট, ড্রাগ অনেক সময় ব্যায় বহুল হয়।
এত কথার সারমর্ম হিসেবে এটাই বলতে চাই সবকিছুই ডাক্তারের দোষ হিসেবে দেখার সংষ্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.