![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
You must remember that, you fighting against destiny. You have to make your own future.
মায়ের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ।আজ থেকে বছর তিনেক আগের এক নভেম্বরের ১৬ তারিখে মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। কিন্তু মনে হচ্ছে, মা আছে, আমার চারপাশে, আমার অস্তিত্বে।আগে ভাবতাম আমার মা হয়তো বেঁচে থাকবেন আজীবন। আর নামাজ পড়ে বলতাম, আল্লাহ তুমি আমার মায়ের আগে আমাকে নিয়ে যেও কারণ মা হারা নিজেকে আমি ভাবতেই পারতাম না একদম।
বিজয় স্বরণীর ঐ রাস্তাটার কথা এই তিন বছরে একটি দিনের জন্যও ভুলতে পারিনি। যত কোটিবার সেখান দিয়ে যাই তত কোটিবার মায়ের কথা মনে পড়ে। আমি মাকে নিয়ে যাচ্ছিলাম হাসপাতালে। আমি আর পরিচিত একজন। সেদিনের মত জ্যাম বোধহয় ঢাকা শহরে কখনো হয়নি। আল্লাহকে স্মরণ করতে করতে দেখছি মায়ের নি:শ্বাস বেরিয়ে যাচ্ছে।আমি অপারগ। দ্রুত ফার্মএগটের এক হাসপাতালে নিলাম। তারা বললেন, এক্সপায়ার্ড্।সেখান থেকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে তারা টেস্ট করলেন। সেখানেও শুনলাম এক্সপায়ার্ড্ শব্দটি।কিভাবে নিজেকে সংবরণ করলাম জানিনা।একে একে ভাইবোন সবাইকে জানালাম। কি শান্তভাবে। বড় দুলা্ভাইকে শান্তভাবে জানালাম বড়প্পাকে সরাসরি বলবেন না, সে সহ্য করতে পারবে না। ছোট দুলাভাইকেও তাই বললাম। কিন্তু আমি নির্বাক। দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। মাকে প্রাথমিকভাবে সৎকার করতে হবে গ্রামে নিয়ে যাবার জন্য। সব ভাইবোনের ছোট এবং বিবাহিত নই বলে একের পর এক ফোন আসছে ভাইবোনের কাছ থেকে। তুমি কোথায় আছ বল, আমরা আসছি। আমি তাদের অভয় দেই। বলি, আমি মাকে নিয়ে আসছি। একটি ইসলামিক হাসপাতাল থেকে গোসল করিয়ে মাকে কফিনে ভরে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে গেলাম মিরপুর বোনদের কাছে। সবাই মাকে রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে, আমি ঠিক আছিতো।হ্যাঁ তখনো আমি ঠিক ছিলাম কিন্তু বাড়িতে যাবার পরে কয়েকদিন কি হল আমি জানিনা। যখন বোধোদয় হল সবাই বলছে আমি নাকি অস্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলাম।কিন্তু চাকরীজীবিদের কি অস্বাভাবিক হলে চলে? অফিসইবা কদিন সেক্রিফাইস করবে?
অবশেষে মাকে রেখে ঢাকায় যাত্রা করলাম। ফিরলাম নাগরিক ব্যস্ততায়। কিন্তু এই ব্যস্ততা কি একদিনের জন্যও ভোলাতে পেরেছে আমার মাকে? মনে হয় আমার কাছে হার মেনেছে নাগরিক ব্যস্ততা।যদি নাই মানতো তবে এখনো কেন চারপাশে মাকে খুঁজে পাই? কেন মাঝে মাঝেই ঘুমের মধ্যে মাকে দেখে ফুপিয়ে কেঁদে উঠি।মা যখন চলে যায় তখন আমি একা ছিলাম। এখন আমার সঙ্গে একজন আছে। মাঝে মাঝে কাঁদতে কাঁদতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি দুটি হাত স্বান্তনা দিচ্ছে। কিন্তু সবারইতো একটা ধৈর্যের সীমা আছে তাইনা? মাসে একদিন দুদিন এমন হলে স্বান্তনা দেয়া যায় তাই বলে মাসের প্রায় দিনই যদি এমন হয় তাহলে কি ধৈর্য্ থাকে? তাই হয়তো নিয়মিত এখন আর সেই স্বান্তনার হাতটি খুঁজে পাইনা।অভ্যস্ত হয়ে যাই এটা মেনে নিতে।মৃত্যু এখন আমার খুব কাছের জিনিস। এটাকে বুঝতে এখন হাতরাতে হয়না। সপ্তাহের প্রতিটি দিন, মাসের প্রতিটি সপ্তাহ এবং বছরের প্রতিটি মাস আমি মায়ের মৃত্যুর সময়টাকে অনুভব করি। এটা কি ইচ্ছে করে? মোটেই না। অজান্তেই আমার সামনে ভেসে ওঠে সেই অবর্নণীয় চিত্র।কিভাবে সামাল দেই ভেবে পাইনা। কিন্তু আমাকে সামলে নিয়ে সামনে যেতে হয়। জোয়ারের প্রতিকূলে ভেসে চলি আমি।
অনেকে জিজ্ঞেস করে আপনার বাবা মা কোথায়? ঢাকায় নাকি গ্রামে। উত্তর দিতে ইচ্ছে হয়না। তারপরও ওপরে মুখ তুলে বলি, আকাশে।তখন হয়তো তারা বলে ওহ স্যরি। কিন্তু এই অনুকম্পাটুকুও যে আমি কারো কাছে চাইনা।অনুকম্পা কিংবা করুণা আমার সহ্য হয়না। আমার বাবা মা যে এই শিক্ষা আমাকে দেননি।
আগে প্রতিদিন সকাল শুরু হত মায়ের ফোন দিয়ে। যদি কখনো ফোন দিতে দেরি হত মা ভাবত নিশ্চয়ই আমার কিছু হয়েছে।এখন একদিন ফোন না দিলে কেউ কি ভাবে আমাকে নিয়ে? অবশ্যই না। কেউ যদি বলে মায়ের চেয়ে আপন কেউ আছে কিংবা মায়ের মত আপন কেউ আছে তবে আমি নিশ্চিত, এটা ডাহা মিথ্যা কথা।
জগতের সকল মায়ের আত্মা শান্তি পাক।
২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৩৩
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: জগতের সকল মায়ের আত্মা শান্তি পাক।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১৯
দীপংকর চন্দ বলেছেন: মা হচ্ছেন মা
তবু ভালো থাকুন!
ভালো থাকার চেষ্টা!