![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাফির আজ মন খারাপ। অসম্ভব রকম খারাপ। মন খারাপ মাপার কোনো মিটার আবিষ্কার হয়নি। থার্মোমিটারে জ্বর মাপা যায়, থার্মোমিটার এর মাপের সীমানা সাধারনত ১০৮ ডিগ্রী পর্যন্ত হয়। রাফির ধারণা, মন খারাপ মাপার মিটার থাকলে তার মন খারাপের পরিমান মিটারের সীমা অতিক্রম করে যেত। ঠিক ১০ বছর আগে তার একবার এমন মন খারাপ হয়েছিল, যেদিন রিতিশার বাবার বদলি হয়ে যাবার কথা জানতে পারল সে। রিতিশা তার খেলার সাথী ছিল। একসাথে খেলাধুলা করতে করতে ছোট থেকে বড় হয়েছে তারা। রিতিশা রাফির চেয়ে ৩ বছরের ছোট ছিল। যেদিন এই গোল গোল ফ্রেমের চশমা পরা কিউট পিচ্চিটা এসে তাকে বলল, "রাফি ভাইয়া জানো, আব্বুকে না বস আঙ্কেল দিনাজপুরে পাঠিয়ে দেবে আগামী মাস থেকে। আমরা ওখানে এত্ত বড় একটা বাসায় থাকব", সেদিন রিতিশা না বুঝলেও রাফি বুঝেছিল, প্রিয় খেলার সাথীটিকে হারাতে বসছে সে।
আজ ১০ বছর পরও তার ঠিক এতটাই মন খারাপ হলো, আর আজকেও তার মন খারাপের কারণ রিতিশা।একটু আগে যখন ধানমন্ডি লেকের কিনারে বসে চা হাতে নিয়ে উদাস হয়ে বসেছিল, পাশ থেকে একটা বাক্য শুনে তার ধ্যান ভাঙ্গলো, "...পাইনি। আবার যদি কখনো রাফি ভাইয়াকে হাতের কাছে পাই, ওর পাওনা ৫ টা কিল. আর ৩ টা চিমটি দিয়ে দেব। "
হুম, মেয়েটা অনেক বদলে গেছে। কিউট পিচ্চির বদলে সামনে অপরুপা সুন্দরী রিতিশাকে দেখে রাফির তাই মনে হলো। শুধু বদলায়নি মেয়েটার চশমা, এখনো পিচ্চিকালের মতই গোল ফ্রেমের চশমা পরে ও।
-রিতিশা।.!! অস্ফুট চিত্কার বের হয়ে আসে রাফির মুখ থেকে। রিতিশা পিছনে তাকায়, রফিকে দেখেই চিনে ফেলে।
-আরে, রাফি ভাইয়া!! তুমি এখানে? জানো, তোমাকে কত খুজেছি তোমার গিয়ে?
-আসলে বাবা মারা যাবার পর মাকে গ্রামে রেখে এসে পরেছিলাম। এখন..এইতো, এদিকেই থাকি।
-হুম, তো বিয়ে করনি? ভাবি কই?
-কপালে এখনো মেয়ে জুটে নাই রে!!
-হেহেহেহে তুমি যে কি বল না রাফি ভাইয়া!!
রিতিশা হাসছে, সেই ছোট্টবেলার মতই নিষ্পাপ হাসি।রাফি তাকিয়ে দেখছে। এমন সময়,
-রিতিশা, তুমি এইখানে? আমি তোমাকে ঐদিকে খুজছিলাম।
রাফি তাকাতেই তার শ্বাস আটকে গেল। তার অফিসে তারই অধীনে কাজ করা মিজান সাহেব এসে দাড়িয়েছে রিতিশার পাশে। রাফিকে দেখে চমকে বলে উঠলো," স্যার আপনি এইখানে?"
-ওহ!! হ্যা, এমনি ঘুরতে এসেছিলাম।
যা বুঝার বুঝে নিল রাফি।রিতিশা অন্য কারো হয়ে গিয়েছে। ছোটবেলার খেলার সাথী রিতিশা ঠিক যেইভাবে গোল্লাছুটের ঘর আকার চকগুলো সুনিপুন দক্ষতার সাথে হিসেব করে যত্নে রাখত, সেই রিতিশা আজ নিজের জীবনের সমীকরণ মিলিয়ে নিয়েছে। রাফি চোখের পানি লুকাতে লেকের পাশ দিয়ে হাটতে লাগলো, গন্তব্য তার অজানা।
-রাফি, এই রাফি!! কি হলো??
চোখ খুলেই রাফি গোল ফ্রেমের চশমা পরা এক জোড়া চোখ দেখতে পেল। তার উপর ঝুকে আছে। উঠে বসে চোখ মুছে ব্যাপারটা বুঝতে তার কিছু সময় লাগলো, তারপর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস।
- কি হয়েছে তোমার?
- সেই স্বপ্নটা আবার দেখেছি। ওই যে, মিজান সাহেবকে নিয়ে তুমি....
-রাফি, উঠ তো, অফিসে কি ঝামেলা হয় উনার সাথে, আর তুমি সেসব ভেবে রাতে হাবিজাবি স্বপ্ন দেখো!! এখন যাও, দেখো, তোমার তুলতুলি বেগম নাস্তা করবে না, তোমার হাতে খাবে বলে জিদ ধরে বসে আছে।
ঐদিন রাফি রিতিশাকে মিজান সাহেবের সাথে দেখেছিল বটে, তবে উনার সাথে রিতিশা দেখা করতে গিয়েছিল উনার আর উনার বৌএর ঝগড়া মিটানোর উদ্দেশ্যে। উনার বউ আবার রিতিশার বেস্ট ফ্রেন্ড কিনা, তাই। আর তারপর পরই রাফি রিতিশাকে প্রপোজ করে বসে, রিতিশা ও না করেনি। পারিবারিকভাবেই বিয়েটা হয়ে যায়। আর তাদের একমাত্র মেয়ে আরিশা, যাকে রাফি আদর করে তুলতুলি বেগম ডাকে। রাফির মনে না থাকলেও রিতিশা আর ৪ বছর বয়সী আরিশার ঠিকই মনে আছে, তাই তো আজ বাবাকে সে ঘুম থেকে জাগায়নি গাল টেনে!!
রাফি হাতমুখ ধুয়ে পাশের ঘরে রওনা দিল, তুলতুলিকে খাওয়াবে বলে, রিতিশা বিছানায় বসে মুচকি হাসছে। একটুপর পাশের ঘরে গিয়ে দেখে রাফি আরিশাকে কলে নিয়ে ঘরভরা বেলুনের মধ্যে হাসছে। রিতিশাকে দেখে ইশারায় চত্ব করে বলল, থ্যাঙ্কস। রিতিশা রাফির পাশে গিয়ে দাড়াতেই দুম করে একটা চুমু খেয়ে বসলো রাফি তার গালে। আর তার পরেই,
-বাবা, আমি কিন্তু দেখে ফেলেছি, তুমি মাকে পাপ্পি দিয়েছ!!
-তাই বুঝি? দুষ্ট বুড়ি, একেবারে মায়ের পাকনা হয়েছ? দাড়াও, তোমারে আজকে পিট্টি দিব।
-ইহ! তুমি আমাকে ধরতে পারবে না!!
-দাড়াও, দুষ্ট মেয়ে কোথাকার!!
রাফি আরিশার পিছন পিছন পুরো ঘর দৌড়াতে দৌড়াতে রিতিশাকে হাসতে দেখে, আর ভাবে, দৌড়ের উপর থাকলেই বা কি!! জীবনটা আসলেই মন্দ নাহ!!
১২ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:১৮
নিলনয়না নিলাঞ্জনা বলেছেন: কারো টা হয়ে যায়, কাকতালীয়ভাবে...!!
বেশিরভাগেরই হয় না।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ২:২৫
অপু তানভীর বলেছেন: ভালু !!
জীবন এমন হলে ভালই হত ।
কিন্তু এমন টা হয় না !