নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাব্বির আহমেদ শাওন

....।

সমালোচক মশাই

আমি দুনিয়ার আইলসা একটা ছেলে। সারাদিন খাই ঘুমাই। আর গেম খেলি। আর ইচ্ছা হলে মাঝে মাঝে লেখালেখি করি। আমার একখান ফেইসবুক আইডি আছে। নাম সাব্বির আহমেদ শাওন।

সমালোচক মশাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

গাড়ি আর মা

০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৫

আশফাক সাহেব অনেক বড় মাপের ইঞ্জিনিয়ার। ঢাকাতে নিজের বাড়ি গাড়ি সব ই আছে। সমাজের উচ্চশ্রেণীর লোক বলতে যা বুঝায়।

আশফাক সাহেবের মেজাজ আজ খারাপ। তার গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে। রিক্সার জন্য আধা ঘন্টার উপরে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু রাস্তায় একটা রিক্সাও নেই। তার অফিস থেকে তার বাসা খুব বেশি দুরে নয়। হেটে গেলে ২০মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়। অনেক দিন হাটা হয় না রাস্তার মুক্ত বাতাস খাওয়া হয় না। তাই আজ আশফাক সাহেব হেটেই বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন।চিরচেনা ঢাকার রাস্তা আজ তার কাছে খুব অপরিচিত লাগছে। সব কিছুই অচেনা লাগছে খুব। গাড়ির ভিতর থেকে এগুলো বুঝা যায় না। গাড়ির ভিতরে বসলে মনে অন্য রকম ফিলিংস আসে। রাস্তার দিকে তাকাতে ইচ্ছে হয় না। রাস্তায় হাটা মানুষগুলো কে খুব নগন্য মনে হয়।অথচ আজ থেকে ৭বছর আগে আশফাক সাহেব রাস্তার লোক ছিলেন। টিউশনি করে মাসের প্রথমে রিক্সা দিয়ে গেলেও মাসের শেষে হেটেই মেসে ফিরতেন। রাস্তা থেকে ভাপা পিঠা কিনে খেতেন। আশফাক সাহেব দেখলেন রাস্তায় ভাপা পিঠা বিক্রি হচ্ছে তার আজ অনেক দিন পর রাস্তার ভাপা পিঠা খেতে ইচ্ছা হচ্ছে।



আশফাক সাহেব ১০টাকা দিয়ে বেশি গুরের একটি ভাপা পিঠা নিয়েছেন রাস্তার পাশে দাড়িয়ে খাচ্ছেন।হঠাৎ তার চোখ রাস্তায় শুয়ে থাকা মা ও ছেলের দিকে চোখ গেলো। ছেলেটির বয়স ৫-৬ হবে। মায়ের সাথে ফুতপাতের কোনায় শুয়ে আছে।আশফাক সাহেবের পিঠার দিকে আর খেয়াল নেই তিনি গভীর মনোযোগ দিয়ে মা ও ছেলের কথোপকথন শুনতে থাকলেন।

-কিরে বাবা আজ কি কি পড়লি?

-আপু আজ আমাদের আপেল বানান করা শিখাইছে। আর আমাদের সবাইবাই কে আপেল খাওয়াইছে।

-আপেল খেতে মজা লাগসে বাবা?

-হুম মা। আপেল অনেক মজা। আমার আবার আপেল খাইতে মন চাইতাছে।

-তাই বাবা। মায়ের কাছে তো টেকা নাই। টেকা পাইলে তোরে আপেল খাওয়ামুনে হে।

-আইচ্ছা মা। আমি বড় হইলে প্রতি দিন আপেল কিন্যা খামু হে। তুমি আর আমি সারা দিন আপেল খামু।

-ওরে আমার বাবা টা রে। তুই বড় হয়ে কি হবি বাবা?

-ইঞ্জিনিয়াল হমু।

-ইঞ্জিনিয়াল আবার কিরে বাপ।

-আমি কইতে পারি না। আপু কইছে আপু নাকি ইঞ্জিনিয়াল হইতেছে। আমিও আপুর মতন হমু।

-আইচ্ছা হইস বাবা।

-আমি ইঞ্জিনিয়াল হইলে তোমারে প্রত্যেকদিন আপেল খাওয়ামু আমাগো আর রাস্তায় থাকোন লাগবো না।

-ওরে আমার বাপধন আয় আমার বুকে আয়। ঘুমা।

আশফাক সাহেব সব গুলো কথা মন দিয়ে শুনেছে। তার পিঠা ঠান্ডা হয়ে গেছে। আর পিঠা খেতে ইচ্ছা হচ্ছে না। আশফাক সাহেবের তার মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো। কাজের ব্যাস্ততায় ৫দিন হয়ে গেছে মায়ের সাথে কথা হয় নি। ১৫দিনের উপরে হয়ে গেছে দেখতে যাওয়া হয় নি। হঠাত করে আশফাক সাহেবের নিজের ছোট বেলার কথা মনে পরে গেলো তারা রাস্তায় থাকতো না। তাদের ঘর ছিলো।

-বাবা আশফাক ঘুমা বাবা।

-হুম মা ঘুমামু। মা আমার প্যান্ট ছিড়া গেছে। একটা নতুন প্যান্ট কিন্যা দিবা?

-তোর বাবায় বেতন পাইলে কিন্যা দিমু নে। আর কাইল প্যান্ট শিলায় দিমু নে বাপ। এখন ঘুমা।

-আইচ্ছা মা। তয় আমি বড় হইলে ইঞ্জিনিয়ার হমু তখন আর শিলাইয়া প্যান্ট পিনতাম না। আর তোমার ও ছিড়া শাড়ি পরনন লাগতো না।

-ইশ। আইচ্ছা বাপ।

-হুম তোমারে প্রত্যেক দিন একটা কইরা শাড়ি কিন্যা দিমু।

-হইছে এখন ঘুমা অনেক রাইত হইছে।



আশফাক সাহেব রাস্তা দিয়ে হটছে আর কান্না করছে। কান্না করার মতো যথেষ্ট কারন আছে। সে কথা রাখেনি। তার মাকে সে বৃদ্ধা আশ্রমে রেখে এসেছেন। এ কি ভুল করেছেন তিনি। সমাজের উচুস্তরে থেকে তার অতিত ভুলে গেলেন কিভাবে তিনি। কিভাবে মায়ের কাছে মুখ দেখাবেন। আজ তার খুব কষ্ট হচ্ছে। মায়ের বুকে শুয়ে ঘুমাতে ইচ্ছে করছে খুব। …



আশফাক সাহেব রাস্তা দিয়ে হাটছেন। তার চোখ গেলো রাস্তায় সিগনালে আটকে থাকে গাড়ির দিকে। তিনি স্পষ্ট দেখতে পেলেন একজন লোক তার দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। হয়তো ওই লোকটা আশফাক সাহেব কে রাস্তার লোক ভাবছেন তাই এতো নগন্য দৃষ্টি। কিন্তু তাতে আশফাক সাহেবের কিছু আসে যায় না। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন তিনি আর কোন দিন গাড়িতে উঠবেন না। ওই যন্ত্রটা খুব খারাপ। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে ফেলে। শিকড় থেকে নিয়ে যায় অনেক দুরে

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.