![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...
রফিকের পকেটে সাকুল্যে তেরো টাকা।
একটা দশ টাকার নোট, একটা দু টাকার নোট আর রূপালী রঙের রঙচটা একখানা একটাকার কয়েন। মোট তেরো টাকা। সংখ্যাটাই আনলাকি। সবগুলো প্যান্টের পকেট তন্ন তন্ন করে খোঁজে রফিক। নেই। কোথাও টাকা পয়সার আর নাম গন্ধ পর্যন্ত নেই। পেনবক্স, টেবিলের ড্রয়ার, তোশকের তলা কোথাও নেই। জানালা দিয়ে থুক করে এক দলা থু থু ফেলে সে। বাসী মুখটা কেমন তেতো হয়ে আছে। একটা বিচ্ছিরি ব্যাপার হয়ে যাবে আজ। আজ সতেরোই ডিসেম্বর। একবছর আগের এই দিনেই নীতুর সাথে তার প্রেম।
নীতুর সাথে তার পরিচয়ের ঘটনাটা অদ্ভুত। রফিক গিটার বাজিয়ে গান গাইছিলো রবীন্দ্র সরোবরে। গান শেষ হতেই নীতু সোজা চলে এলো রফিকদের জটলায়।
‘আপনি আমাকে গিটার শেখাবেন?’
নীতুর সোজা সাপ্টা প্রশ্নে বন্ধুদের মাঝেও রফিক যেন খানিকটা ভড়কে যায়। কিন্তু নীতুকে সে গীটার শেখানোর চেষ্টা করেছিলো। যদিও শেষ পর্যন্ত আর হয়ে ওঠে নি। নীতু পড়ে রাজশাহী মেডিকেলে। সেখানেই থাকে। ছুটি ছাটায় ঢাকায় এসে যে কদিন থাকে তাতে আর গীটার শেখা হয়ে ওঠে না। রফিকের নানা ব্যস্ততা থাকে। সময় হয় না।
নীতু আফসোস করে বলতো, ‘আপনি হলেন গিয়ে বড় মানুষ, তিমি মাছ। আর আমি হলাম গিয়ে এই এত্তটুকু পুঁটিমাছ। আপনি আমাকে পাত্তা দিবেন কেন?’
সেই শুরু। এরপর থেকে নীতুর কাছে রফিকের নাম হয়ে গিয়েছিলো তিমি মাছ আর রফিকের কাছে নীতু পুঁটি মাছ।
রফিক জানালার সামনে দাঁড়ায়। বাইরে রোদ তেঁতে উঠেছে। লঙ্কাকান্ড হয়ে যাবে আজ। গতকাল ছিলো ষোলোই ডিসেম্বর। বিজয় দিবস। সারাদিন বন্ধুদের সাথে হৈ-হুল্লোড় শেষে মেসে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলো সে। রাত একটার দিকে রুমমেট রোহান তাকে ঘুম থেকে জাগায়। রফিককে না পেয়ে রোহানের ফোনে ফোন করেছে নীতু। রফিক ধড়ফড় করে জেগে ওঠে। সে ভুলেই গেছিলো ষোলোই ডিসেম্বর রাত বারোটার পরেই সতেরো ডিসেম্বর।
নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠেছিলো রফিক, ঊনচল্লিশবার ফোন করেছে নীতু!
শেষমেস কোনভাবে ট্যাকেল দেয়া গিয়েছিলো নীতুকে। এই একটা মাত্র দিনের জন্য রাজশাহী থেকে ঢাকায় এসেছে মেয়েটা। মেডিকেলের ফাইনাল প্রফ যে কি কঠিন জিনিস, তা কেবল বোঝে মেডিকেল স্টুডেন্টরাই। নীতুর ফাইনাল প্রফ চলে। সে তারপরও কোনমতে সময় বের করেছে। রাতের ট্রেনে আবার রাজশাহী ফিরে যাবে।
ইশ্, রফিক আজ মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে কি করে?
সেই প্রথম দিন থেকে নীতুর একটা মাত্র চাওয়া। একটা স্বপ্ন। একটাই। এই দিনে রফিকের কাছে সে সতেরোটি গোলাপ চায়। সতেরোটি লাল টকটকে গোলাপ। রফিক অদ্ভুত দৃষ্টিতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। বা হাতে পকেট চেপে ধরে। সেখানে চুপচাপ পড়ে আছে একটা দশটাকা, একটা দুটাকা আর একখানা এক টাকার কয়েন।
সাকূল্যে তেরো টাকা!
একটা গোলাপের দাম কম করে হলেও আট টাকা। তারমানে আট-সতেরো একশো ছত্রিশ। আরো একশো তেইশ টাকা। রফিক রোহানের শূন্য বিছানার দিকে তাকায়। খুব ভোরে বেরিয়েছে রোহান। টাকা পাওয়ার কোথাও কোন আশা নেই আর। রফিকের সত্যি সত্যি মন খারাপ হয়ে যায়। এই মেয়েটাকে সে অসম্ভব ভালোবাসে। কিন্তু কখনো বোঝাতে পারে না। সবসময় সবকিছু গোলমাল করে ফেলে সে। কিন্তু আজ?
রফিক বাথরুমে ঢোকে। গাল জুড়ে থাকা খোচা খোচা দাড়িগুলো আয়নায় দেখে। এই দাড়ি নীতুর ভীষণ পছন্দ। রফিক আয়নার দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসে। নীতু কি জানে যে সে ইচ্ছে করেই দাড়িগুলো এমন করে রাখে?
রফিক স্যান্ডেল জোড়া পায়ে গলিয়ে বেরুতে যাবে। এই মুহুর্তে নীতুর ফোন।
‘পাঞ্জাবীটা পড়েছো?”
রফিকের বুকের ভেতরটা ধ্বক করে ওঠে। সে পাঞ্জাবীর কথা ভুলেই গিয়েছিলো। মাসখানেক আগে নীতু যখন ঢাকায় এসেছিলো সে নীল রঙের একটা পাঞ্জাবী কিনে দিয়েছিলো রফিককে। আর পইপই করে বলে দিয়েছিলো, সেই পাঞ্জাবীর প্যাকেট যেন রফিক না খোলে। খুলবে সতেরোই ডিসেম্বর। আজ সতেরোই ডিসেম্বর কিন্তু রফিক দিব্যি ভুলে গেছে সেই পাঞ্জাবীর কথা।
সে মিনমিন করে বললো, ‘এখন পড়বো, পড়েই বেরুচ্ছি।’
‘আচ্ছা। আর শোনো, গোলাপের কথা মনে আছেতো?’
‘আছে।’ রফিকের গলা শুকিয়ে আসে। সে প্যান্টের পকেটে হাত দেয়। পকেটে তেরো টাকা। রফিক অতি কষ্টে ঢোক গেলে।
‘শোনো, দুই টাকা দামের চিমসা গোলাপ কিনবে না কিন্তু। গোলাপ কিনবে বড় বড়। সূর্যমূখীর মতো। তাজা, টকটকে লাল গোলাপ। বুঝেছো?’
‘বুঝেছি।’ রফিক মিনমিন স্বরে জবাব দেয়। কি করবে ভেবে পায় না। নীতু ফোন রেখে দেয়। রফিক দরদর করে ঘামে। নীতুর সামনে গিয়ে কি করে দাঁড়াবে সে?
খাটের নিচের ট্রাংক খুলে পাঞ্জাবীর প্যাকেটটা বের করে রফিক। গাড় নীল পাঞ্জাবী। প্যাকেট খুলে পাঞ্জাবীটা বের করে ভাঁজ খোলে। ভাঁজের ভেতর থেকে টুপ করে কিছু একটা পড়ে। ভাঁজ করা সাদা একটা খাম। মেঝে থেকে খামটা তুলে নেয় রফিক। খামের ভেতর পাঁচশো টাকার দুখানা নোট। আর একটা ভাঁজ করা চিরকূট। চিরকূটের ভাঁজ খোলে রফিক। ডাক্তারদের হাতের লেখা নাকি ভয়ঙ্কর রকমের বাজে হয়। কিন্তু নীতুর হাতের লেখা গোটাগোটা অক্ষরগুলো কি যে সুন্দর!
‘মিস্টার তিমি মাছ,
হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? এখুনি সিএনজি করে শাহবাগ যান। আমি শাহবাগে খোঁজ নিয়েছি। ভালো বড় গোলাপের দাম একেকটা ষোলো টাকা। কয়টা গোলাপ আনবেন, মনে আছোতো?
তাড়াতাড়ি আসেন।
-ইতি, আপনার পুঁটিমাছ।’
বি:দ্র: আপনার জন্য ধাঁধা, বলেনতো কে বেশী বড়? তিমি মাছ, না পুঁটি মাছ?
১৫ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:৪৬
সাদাত হোসাইন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ!
২| ১৫ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:৪০
আসফি আজাদ বলেছেন: শেষ অংশটুকু ভালো লাগল...
৩| ১৫ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:৪৬
সাদাত হোসাইন বলেছেন: আপনার অনুভূতি জেনে ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ।
৪| ১৫ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৫
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: মিষ্টি!
১৫ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৫:২৪
সাদাত হোসাইন বলেছেন:
৫| ১৫ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:২৩
ইমরান নিলয় বলেছেন: সুন্দর। আপ্নারে অনুসরনে নিলাম।
১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:০১
সাদাত হোসাইন বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:৩৯
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
আপনি হলেন গিয়ে বড় মানুষ, তিমি মাছ। আর আমি হলাম গিয়ে এই এত্তটুকু পুঁটিমাছ। আপনি আমাকে পাত্তা দিবেন কেন?
পুঁটি মাছ আর তিমি মাছ এর গল্প বাহ দারুন