![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...
অবশেষে ক্লাশ নাইনে উঠলাম।
ক্লাশে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭৩। সেই তেয়াত্তর জনের মধ্যে আমার রোল নম্বর ৬৭! আহারে বেচারা! যদিও রোল নম্বর যতটা বলছে, ছাত্র কিন্তু আমি মোটেই ততটা খারাপ ছিলাম না!
সুতরাং, নাইনে উঠেই খুব আগ্রহ নিয়ে প্রথমে যে কাজটি করলাম, তা হোল নানাবিধ কসরত করে, আব্বা, আম্মা, শিক্ষকদের ভুজং ভাজং বুঝিয়ে, সায়েন্স গ্রুপ নিয়ে নিলাম। কারণ, সেকালে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত সত্য ছিল যে -'যে ছেলে সায়েন্স নিয়েছে সে ছাত্র হিসেবে অতিব উত্তম। সুতরাং পরিচিত, অপরিচিত কিংবা অল্পপরিচিত কেউ যখন জিজ্ঞেস করে,
-'তা কোন ক্লাশে পড়, বাবা?'
আমি শার্টের তেল চিটচিটে কলারখানা আরও খানিকটা উঁচু করে জবাব দেই,
-'ক্লাশ নাইন, বিভাগ-বিজ্ঞান, মানে সায়েন্স গ্রুপ!'
মুহূর্তেই প্রশ্নকর্তাড় চোখে বিশেষ আভা ঝিলিক দিয়া ওঠে। অক্ষি দুখানা রসগোল্লার ন্যায় গোল করে তাকিয়ে থাকেন। আর সেই রসগোল্লা চোখে স্পষ্টতই রস টসটসে সমীহ ঝরে পড়ে। -আহা! কী সোনার টুকরা ছেলে!!
'সোনার টুকরা' ছেলের মধুচন্দ্রিমা কেটে যেতে সময় যে খুব একটা লেগেছিল, তা কিন্তু না। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা আসতেই পরোপুরি 'দাঁত-কপাটি' (দাঁতে দাঁত লেগে যাওয়া) অবস্থা। পদার্থ বিজ্ঞানকে খুব 'ভাব' নিয়ে 'ফিজিক্স' কিংবা রসায়ন শাস্ত্রকে 'ক্যামেস্ট্রি' বলাটুকু আয়ত্ব করতে পারলেও, এর বেশী আর কিছু সম্ভব হলোনা। পরীক্ষার ফলাফল সমূহ যখন 'নির্লজ্জ' রকমের খারাপ হতে শুরু করলো তখন বাবা মায়েরও টনক নড়ে।
অবশেষে সিদ্ধান্ত হোল, অন্য সকল বিষয় বাদ দিয়া অংক, পদার্থ বিজ্ঞান আর রসায়ন বিজ্ঞান অধ্যয়নে বেশী মনোযোগ দিতে হবে। কারণ, সৃজনশীল ছাত্র (বানাইয়া উত্তর লেখার প্রতিভাসমৃদ্ধ ছাত্র!) হিসেবে সেই সময়ে মোটামুটি ভালো নাম ডাক ছড়িয়ে পরেছিল। সুতরাং, সেই সৃজনশীল ছাত্রের পক্ষে অন্যান্য সাবজেক্টের উত্তর মনের মাধুরী মিশিয়ে বানিয়ে লেখাটা খুব কঠিন কিছু হওয়ার কথা না! বিধি বাম যে অংক, পদার্থ আর রসায়নের মতন বিষয়গুলো সে বানাইয়া লিখিতে পারেনা!
ঘটনা যা হোল, ফাইনাল পরীক্ষায় 'সামাজিক বিজ্ঞান' পরীক্ষার দিন হলে গিয়ে প্রশ্ন হাতে পেয়ে রীতিমত কান তব্দা দেয়া অবস্থা। 'ফিজিক্স''ক্যামেস্ট্রি'র কারণে পরীক্ষার আগের রাত ছাড়া এই সাবজেক্ট পড়ার আর চান্সই ছিলোনা। প্রশ্ন যা এসেছে, তার মধ্য থেকে কিছু শব্দই কেবল পরিচিত, যেমন- সামাজীকীকরন প্রক্রিয়া, পরিবার, রাষ্ট্র, সার্বভৌমত্ব, সরকার, অভিবাসন... কিন্তু এই শব্দ সমুহের সমন্বয়ে যে প্রশ্ন করা হয়েছে তাঁহার উত্তর- 'উত্তর-দক্ষিন-পূর্ব-পশ্চিম', মনের কোন কোণ হতেই উদ্ধার করা সম্ভব হলনা।
কিছুক্ষন বসে থেকে, কলমের পশ্চাতভাগ দাঁত দিয়ে ক্রমাগত ভক্ষন শেষে, সিদ্ধান্ত নিলাম, যা মনে আসে তাই লেখা শুরু করিব- 'বিসমিল্লাহ...'
পরিবার নিয়ে লিখতে গিয়ে হঠাৎ মনে হোল, দুয়েকজন মনিষীদের নাম দিয়া, তাদের উদ্ধৃত করে যদি লেখা যায় - যেমন, এ বিষয়ে অমুক মনিষী বা তমুক সমাজ বিজ্ঞানী বলেছেন যে... তাহলে মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখা বানানো উত্তরও যুতসই এবং অধিকতর গ্রহণযোগ্য ও নিঃসন্দেহ হয়ে উঠবে। স্যার নিশ্চয়ই এত কিছু জানেন না...
তাছাড়া, আমাদের সেই অজপারাগায়ের স্কুলে সেইভাবে কোন স্পেশালাইজড শিক্ষক-ও ছিলেন না। মনে পড়ে, একবার পদার্থ বিজ্ঞান স্যার পিস্টনের গতি পড়াইতে গিয়া পুরাই লেজে গোবরে অবস্থা! তাকে সেই লেজে গোবরে অবস্থা থেকে উদ্ধার করেছিল আমাদের স্কুলের দপ্তরি সালাম। কারণ, সালামের সেচ পাম্পের ব্যাবসা ছিল, সেই সুত্রে সে একজন মেশিন মেকানিকও বটে। অগত্যা উপায় না দেখে, পদার্থ বিজ্ঞান স্যার দপ্তরী সালামকে ডাকিয়া বলিলেন, -'এত চেষ্টা করিলাম, গাধাগুলা পিস্টনের গতির বিষয়টাই বুঝতেছেনা। মাথাটা একদম ধরে গেছে। দেখতো সালাম, এই গাধাগুলারে কিছু বুঝাইতে পারোস কিনা!' দপ্তরী সালাম তখন অতি আগ্রহের সহিত পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক হইয়া আমাদের গাধার দলকে পিস্টনের গতি বুঝাইয়া মানুষ করার চেষ্টা শুরু করিল... ;-P
তো পরিবার নিয়া লেখার মাঝামাঝি এসে মনে পরল, আরে! আমিতো সমাজ বিজ্ঞানের কোন মনিষীর নাম-ই জানিনা! আর যা-ও দুএকটা জানি, তারাতো সব পরিচিত নাম, আনকমন কেউনা। তাদের নাম দিয়া নিজের বানানো উত্তর চালাই দিলেতো স্যার ঠিক ধরে ফেলবে! তাহলে উপায়!
অবশেষে সৃজনশীল প্রতিভার বিস্ফোরণ! তখন দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন প্রয়াত হ্যনাসি ক্রনিয়ে। আমি ওয়ান থাউজেন্ড টাইম সিউর ছিলাম যে আমাদের স্যার জীবনেও ক্রিকেট খেলা দেখেননাই। সাথে সাথে লেখা শুরু করলাম- বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী, দক্ষিণ আফ্রিকার হ্যান্সি ক্রনিয়ে (দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন) সামাজীকীকরন প্রক্রিয়া নিয়ে বলেছেন যে..."তারপর, মনের মাধুরী মিশিয়ে বানিয়ে লেখা শুরু করলাম"। রাষ্ট্র ও সরকারের প্রক্রিয়া বর্ণনা করতে গিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিখ্যাত রাষ্ট্র বিজ্ঞানী স্টিভেন ফ্লেমিং (নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট টিমের সাবেক অধিনায়ক) এবং নাথান স্টল (নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট টিমের ততকালীন খেলোয়াড়) বলেছেন যে..."তারপর, মনের মাধুরী মিশিয়ে বানিয়ে লেখা শুরু করলাম"। সমাজ, রাষ্ট্র ও ব্যাক্তি সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘ গবেষণায় কিংবদন্তী সমাজ বিজ্ঞানী ও গবেসক 'তদাসা নইসাহো' (এই ভদ্রলোক কে, বলেনতো?) বলেছেন যে....এরপর মনের মাধুরী মেশানো... ;-P
পরীক্ষা শেষ। রেজাল্ট দেয়ার সপ্তাহখানেক আগে সামাজিক বিজ্ঞানের স্যার আমাকে ডেকে পাঠালেন। কাঁধে হাত রেখে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করিলেন,- 'ঘটনা কি বলত?'
- কোন ঘটনা?
- না মানে, তোর খাতা দেখে মনে হোল তুই অনেক পড়াশোনা করস। আউট বই টই-ও মনে হয় অনেক পড়স। অভ্যাস ভালো, ছাড়িসনা।
-জ্বী স্যার।
-শোন, খালি পাঠ্য বই পড়লে কি আর জ্ঞান বাড়ে? আউট বই পড়তে হবে, তাইলে আউট নলেজ বাড়বে। আউট নলেজের উপরে কিছু নাই! তোর খাতায় কত সব মনিষীদের quote দেখলাম! খুবই আনন্দের বিষয়।
আমি ঘাড় নাড়াইয়া অতিরিক্ত বিনয়ের সাথে বললাম 'জ্বী স্যার...'
স্যার পাঞ্জাবীর খুটে চশমার কাঁচ মুছতে মুছতে, আমার পরীক্ষার খাতাটা খুলে দেখতে দেখতে বললেন-' যদিও নামগুলা আগে শুনিনাই... তবে এইযে এই নামটা 'ত...দা...সা / ন...ই...সা...হো' এই নামটা পরিচিত লাগতেছে। কোথায় যেন পড়েছি! নাম শুনে মনে হচ্ছে ভদ্রলোক জাপানী!'
আমি অধিকতর বিনয়ের সাথে বললাম 'জ্বী স্যার... খাটি জাপানী, থ্যাবড়া নাক, ছোট ছোট চোখ.'
আচমকা বাম গালের উপর সশব্দে শক্ত হাতের থাপ্পরখানা টের পাইলাম, বাম কানসহ পুরো জায়গাটি বিকট শব্দে মুহূর্তেই অবশ হয়ে গেলো... পরমুহুরতে টের পাইলাম, স্যারের বিকট আঙ্গুলগুলো ছিরিয়া যাইবার মতো জোরে আমার কান ধরিয়া টানিয়া লইয়া ক্লাস রুমের দিকে যাইতেছে...
---------
উল্লেখ্য- কিংবদন্তী সমাজ বিজ্ঞানী ও গবেসক 'তদাসা নইসাহো' আসলে আর কেউই নন, এটি আসলে 'সাদাত হোসাইন' নামখানা উলটাইয়া লিখিয়াছিলাম :'(
০৪ ঠা জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৪০
সাদাত হোসাইন বলেছেন:
২| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ দুপুর ২:২১
মাথাল বলেছেন: হাহাহহাহাহহা
হাসাইতে হাসাইতে মাইরা ফালাইবেন নাকি মিয়া? স্যারের নামটা না দিলেও পারতেন। বাকি গুলো ঠিকাছে।
০৪ ঠা জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৩৩
সাদাত হোসাইন বলেছেন: হা হা হা! মারবো না, বাচিয়ে রাখব, হাসি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তো আরও ভালোভাবে বেঁচে থাকা!
এমন উচ্ছ্বসিত অনুভূতি জেনে ভালো লাগলো, ধন্যবাদ! ভালো থাকবেন।
৩| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ দুপুর ২:২২
মাথাল বলেছেন: ও ও ও ও
এইটা তো আপনার নামই দেখতেসি।
০৪ ঠা জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৩৪
সাদাত হোসাইন বলেছেন: আমার নাম-ই তো, এটা আমার নিজের ছেলেবেলার গল্পই।
৪| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৩১
এরিস বলেছেন: কিছুক্ষন বসে থেকে, কলমের পশ্চাতভাগ দাঁত দিয়ে ক্রমাগত ভক্ষন শেষে, সিদ্ধান্ত নিলাম, যা মনে আসে তাই লেখা শুরু করিব- 'বিসমিল্লাহ...'
পরিবার নিয়ে লিখতে গিয়ে হঠাৎ মনে হোল, দুয়েকজন মনিষীদের নাম দিয়া, তাদের উদ্ধৃত করে যদি লেখা যায় - যেমন, এ বিষয়ে অমুক মনিষী বা তমুক সমাজ বিজ্ঞানী বলেছেন যে... তাহলে মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখা বানানো উত্তরও যুতসই এবং অধিকতর গ্রহণযোগ্য ও নিঃসন্দেহ হয়ে উঠবে। স্যার নিশ্চয়ই এত কিছু জানেন না... বাহ, আপনিতো দারুণ ব্রিলিয়ান্ট, একদম আমার মতো!!!
আচমকা বাম গালের উপর সশব্দে শক্ত হাতের থাপ্পরখানা টের পাইলাম, বাম কানসহ পুরো জায়গাটি বিকট শব্দে মুহূর্তেই অবশ হয়ে গেলো... তবে মেয়ে হয়ে এই প্রতিভা ফলানোতে আপনার মতো এহেন সৌভাগ্যের হাত থেকে বেঁচে গেছি। অনেক মজা পেলাম পড়ে। ব্লগে ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনা অনেকেই লিখে। তবে, আপনি ভিন্ন ধাঁচে লেখেন। অসাধারণ লাগছে আপনার বর্ণনা। বিলিভ ইট অর নট, আপনার পোস্ট দেখেই লগইন করে মন্তব্য করতে এলাম। ভালো থাকুন। পরবর্তী লেখার অপেক্ষায়।
০৪ ঠা জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৩৯
সাদাত হোসাইন বলেছেন: এরিস, আপনি কি জানেন, আমার মতো একজন নতুন ব্লগারকে আপনি প্রায় নিয়মিত আরও আরও লেখার জন্য প্ররোচিত করছেন!! হা হা হা! সত্যি, অনেক অনুপ্রাণিত হচ্ছি। অনেক ধন্যবাদ!
আরেকটা কথা, আমার আগের একটা লেখা, 'আমরা কাঁদতে চাই, কাঁদতে চাই'-তে আমি আপনাকে 'ভাই' বলে সম্বোধন করেছিলাম।
ভালো থাকবেন।
৫| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:০১
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
পরবর্তী লেখার অপেক্ষায়।
০৪ ঠা জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৪
সাদাত হোসাইন বলেছেন: ধন্যবাদ। তবে আগেরগুলো পড়তে পারেন। আর ঠিক আগেরটা, 'গাধার গাধা' আমার ছেলেবেলার গল্পেরই আরেকটি।
৬| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ৯:১৮
মামুন রশিদ বলেছেন: মজারু
০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ১০:১৮
সাদাত হোসাইন বলেছেন: :-)
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৩৯
তোমোদাচি বলেছেন: হাসতে সাহতে জীবন শ্যাষ!!!