নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম \'বোধ\'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবি

সাদাত হোসাইন

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...

সাদাত হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন শিক্ষক কিংবা স্বপ্নের ফেরিওয়ালা...

৩০ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৮





আমি সবসময়ই ব্যাকবেঞ্চার ছিলাম। আক্ষরীক এবং সর্বৈব অর্থেই ব্যাকবেঞ্চার। ক্লাশে এবং ক্লাশের বাইরেও। সবসময় নিজেকে নিয়ে চূড়ান্ত হীনমন্যতায় ভুগতাম। ব্যাপারটা এমন না যে আমার মেধা কিংবা জানাশোনাগত সীমাবদ্ধতাগুলো খুব প্রকট ছিল। বরং আমার চারপাশের আর আট-দশজনের চেয়ে আমি বরং একটু বেশী-ই জানতাম! কিন্তু নিজের ভেতর কেন যেন কখনোই কোন আত্মবিশ্বাস পেতাম না!



বড় হয়েছি অজপারাগায়ের এক ইশকুলে। সেখানে ছাত্র-ছাত্রী কিংবা শিক্ষক কারোরই খুব বেশী কিছু জানার তেমন বালাই ছিলনা। যে ছেলে ইংরেজীতে নিজের নামও ঠিক করে বানান করে লিখতে পারতোনা, দেখা গেলো সেই ছেলেই ক্লাশে ফার্স্ট সেকেন্ড কিছু একটা হয়ে আছে। বাকীদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। স্যার হয়ত কোন ক্লাশে জিজ্ঞেস করলেন, বলতো, সোমালিয়ার রাজধানীর নাম কি? আমাদের বাড়ীতে ৬ ব্যাটারির একটা বিশাল সনি টেপ রেকর্ডার ছিল, তাতে নিয়ম করে আমার মা সংবাদ শুনতেন। সে সময় সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষ নিয়ে প্রতি ঘণ্টার সংবাদ জুড়েই বিস্তারিত খবর থাকতো। সে সুত্রে সোমালিয়ার রাজধানীর নাম ছিল আমার ঠোঁটস্থ। কিন্তু আমি কোন এক অদ্ভুত ভয়ে, জড়তায়, পেছনের বেঞ্চ থেকে মাথা উঁচু করে, মেরুদণ্ড সোজা করে, মুখ হা করে স্যারকে বলার সাহস করে উঠতে পারতাম না। কখনো কখনো যে সাহস করে উঠে দাঁড়াইনি তা না। কিন্তু দাঁড়ানোর পর কি হতো জানিনা, সোমালিয়া হয়ে যেত মালোয়শিয়া! অথচ, আমার সহপাঠীরা বুক চিতিয়ে একেরপর এক নির্দ্বিধায় সোমালিয়ার রাজধানী বানিয়ে ফেলত নয়াদিল্লী কলম্বো থেকে শুরু করে আমেরিকা বা আমাদের নারায়ণগঞ্জকেও!



সেই আমার জড়তা কিংবা হীনমন্যতা কিছুটা হলেও কাটে হাইস্কুলে ক্লাশ নাইন টেনে এসে। নাইনে নাসির স্যার নামে আমাদের ম্যাথমেটিকসের এক শিক্ষক ছিলেন। মুখে জলবসন্তের গোটাওয়ালা ছোটোখাটো গড়নের ফরশা এক মানুষ। সেই ছোটোখাটো মানুষের বড় সর চোখ দেখে স্কুলের তাবত শিক্ষক-ছাত্র থেকে বাঘে মহিষে এক ঘাঁটে পানি খেত! নাইনের অংক পরীক্ষার খাতা নিতে গিয়ে দেখি আমার খাতার উপরীভাগে একটা চমৎকার চশমা আঁকা। ১০০ মার্কসের পরীক্ষায় আমি জ্বলজ্বলে গোল দুটো শুন্য পেয়েছিলাম। সেই শুন্য দিয়ে নাসির স্যার যত্ন করে চশমা এঁকেছিলেন। ভয়ে আমার পেটের ভাত সরাসরি ধান হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারনে নাসির স্যার আমাকে কাছে টেনে নিয়ে কাধে হাত রেখে বলেছিলেন, ‘এমন করলে হয়? তুইতো লেটার মার্কস (৮০) পাওয়ার ছাত্র!’ আমি বরাবরই বিলাই স্বভাবের, রাগ দিয়ে কোনোকালে কিছু হয়নি। সেদিন ভেতরে ভেতরে কিছু হয়েছিলো- আশি আমাকে পেতেই হবে-লেটার মার্কস! পরের পরীক্ষায় আমি স্যারের কথা রাখতে পারিনি। আশি পাইনি।



পেয়েছিলাম আশি টপকে ৯৭।



স্যার আমাকে সত্যি সত্যি একটি লেটার দিয়েছিলেন। চিঠি! সেই চিঠি আমি যত্ন করে রেখে দিয়েছি।



আমার বুকের ভেতর বিশ্বাসের শেকর গাথার বীজ!



গাঁওগ্রাম থেকে হুট করে ইউনিভারসিটিতে পা দিয়েই টের পেলাম কী অথৈ জলেই না পড়েছি! কোথাও যেন ঠাই নেই, কোথাও না! আবারো সেই দ্বিধা, শংকা। আবারো সেই পেছনের বেঞ্চ। নিজের ভেতর অবিরাম যুদ্ধ, বোঝাপড়া। শক্ত হতে হতে ভেঙ্গে পড়া। রোজ ভেঙ্গে পড়া। সম্ভবত থার্ড ইয়ারের কোন এক মেঘলা দিনে, দীর্ঘদিনের অসুস্থতা শেষে, ক্লাসরুমে দেরী করে ঢুকতেই দেখি কালো সাদা মিশেলের শাড়ী পড়া একজন ম্যাম ক্লাশ নিচ্ছেন। যাকে আগে দেখিনি। পিএইচডি করতে দেশের বাইরে ছিলেন এতদিন । পড়াচ্ছিলেন কার্ল মার্ক্সের ‘রিলিওজন’। পুরোপুরি শুকনো খটখটে সেই বিষয় শোনার চেয়ে ব্যাকবেঞ্চে বসে জানালার ভাঙ্গা শার্শিতে আকাশ দেখা অনেক শ্রেয়! তারপর শেষ হোল অনার্স, মাস্টার্স, ইউনিভার্সিটি। তারপর আরও অনেক দিন। সেই ম্যামের সাথে তখন আমার বলতে গেলে তেমন কথাই হয়নি। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষকের সাথেই হয়নি। কেমন গর্তজীবী সেইসময়। আমি আমার দ্বিধা নিয়ে, সংকোচ নিয়ে আরও বেশী বেশী নিজের ভেতর ডুবে থাকতাম। কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারণে, অদ্ভুতভাবে এই মানুষটির কথা আমি গোগ্রাসে গিলতাম, মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। ক্লাশে, সেমিনারে কিংবা এক আধটুকুন যখন কথা বলবার সুযোগ হত তখন। আর আমার ভেতর ভেতর কোথায় যেন আমি জেগে উঠতাম, আমার স্বপ্নরা জেগে উঠত।



ম্যাম, আপনি কী জানেন, কিভাবে কিভাবে যেন বুকের ভেতর বুনে দিয়েছেন অজস্র স্বপ্নের বীজ।

------------------------------------------------------



-ছবির মানুষঃ ড. আইনুন নাহার, বিভাগীয় প্রধান, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।



-ছবির আলোকচিত্রীঃ সাদাত হোসাইন

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৩০

মামুন রশিদ বলেছেন: আইনুন ম্যাডামের ছবি দেইখা অবাক হইছি । আপনি কি জাবি'র স্টুডেন্ট ??


স্মৃতিচারণ ভালো লাগছে । গল্প পাইনা অনেক দিন ।

৩১ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:১৮

সাদাত হোসাইন বলেছেন: হুম, আমি জাবি'র স্টুডেন্ট। আপনিও?

আগামী বইমেলার জন্য একটা উপন্যাস লিখছি। শেষের দিকে, শেষ হলেই গল্প শুরু করবো।

২| ৩১ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৭

বোকামানুষ বলেছেন: পড়তে ভাল লাগলো

একজন ছাত্র/ছাত্রীর জীবনে শিক্ষকের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ

একজন শিক্ষকের একটু উৎসাহ দিয়ে বলা ভাল কথা , ভাল আচরণ একজন ছাত্র/ছাত্রীর উপর কি পরিমান প্রভাব যে ফেলে অনেক শিক্ষকই হয়তো তা জানে না

০১ লা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৩

সাদাত হোসাইন বলেছেন: একদম ঠিক বলেছেন। শিক্ষকরা এটি অনুধাবন করলে রোজ রোজ আরও অজস্র স্বপ্নের শুরু হতো। সত্যি হতো।
ধন্যবাদ।

৩| ৩১ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৪

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
উপন্যাসের অপেক্ষায় রইলাম।

০১ লা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৬

সাদাত হোসাইন বলেছেন: আমিও।

আসামাত্রই জানাবো। ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।

:)

৪| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:২৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: পোস্টে ভাল লাগা, লেখক।

০৭ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:২৮

সাদাত হোসাইন বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.