নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম \'বোধ\'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবি

সাদাত হোসাইন

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...

সাদাত হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বভাব মুগ্ধ!

১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:২৭

আমার স্বভাব মুগ্ধ হওয়া, আমি কারণে অকারণে মুগ্ধ হই।

যারা কথায় কথায় ছন্দ মিলিয়ে কবিতা বানাতে পারেন, তারা যেমন ‘স্বভাব কবি’, আমি তেমনি ‘স্বভাব মুগ্ধ’।

দুটো উদহারন দেই। সামনে আরও দেয়ার ইচ্ছে রইলো।



আমি তখন এস এস সি পরীক্ষা দিব। বয়স ১৫ কি ১৬। আম্মা সেবার কি এক দরকারে আমাকে গ্রাম থেকে ঢাকা পাঠাবেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কার সাথে পাঠাবেন? লঞ্চে সদরঘাট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলে আর চিন্তা নেই, আব্বা এসে নিয়ে যাবেন। কিন্তু আলাভোলা আমাকে একা লঞ্চে ছাড়তে আম্মার ভীষণ ভয়। বাড়ীর পাশের আলী হোসেন ঢাকা আসবেন। আমরা ওনাকে দাদা বলে ডাকি। বৃদ্ধ মানুষ। থুতনির নিচে একগোছা দাড়ি। কুচকুচে কালো একজোড়া ঠোঁট। সেই ঠোঁটের বা পাশে সবসময় জ্বলজ্বল করে আকিজ বিড়ি।



তার সাথে ঢাকা চলে এলাম। লঞ্চের ডেকের ভাড়া তখন পঞ্চাশ টাকা। আম্মা তাকে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে দিয়েছেন। সদরঘাটে লঞ্চ থেকে নামার সময় আলী হোসেন একটা টিকেট কাটলেন। শুধু তারটা। লঞ্চের গেটে টিকেট চেকার বলল, ‘টিকেট আরেকটা কই?’



আলী হোসেন চোখ কপালে তুলে বললেন, ‘আরেকটা টিগিড কিয়ের?’



-‘এই পোলার টিকিট’।



-‘ও আল্লাহ! এইডা কি কন? এইটুক দুধের বাচ্চার আবার টিগিড? ওর বয়স জানেন? দেইখ্যা মনে হয় সিক্স-সেভেনে পড়ে। আসলে ঘটনা তা না। এইডা আমার নাতি। আমাগো বংশ হইছে বাঁশ বংশ। বাঁশের মত খালি লম্ফা হয়। খালি লম্ফা হয়। মাইনসে ভাবে কি না কি বয়স’!



আলী হোসেন গলা চড়িয়ে চারপাশে তাকালেন। গেটের সামনে বড়সড় জটলা বেঁধে গেছে। তিনি আড়চোখে আশেপাশে তাকিয়ে আরেকটু গলা চড়ালেন,-‘এই যে যাত্রী ভায়েরা, আফনেরাই কন? কি মনে হয় আফনেগো? মনে হয় এই পোলা কেলাস ফোরে পড়ে? করবেন বিশ্বাস আফনেরা? করবেন? জানি, করবেন না। কিন্তু ঘটনা হাচা (সত্য)। এর বড় ভাই পড়ে কেলাস সেভেনে। এ ফোরে। তয় এর বড় ভাই মাশাল্লাহ লম্ফা চূড়ায় আরেক ইঞ্চি বাড়তি। তারে দেখলে বলবেন সে দুই বাইচ্চার বাপ। কিন্তু ঘটনাতো অইন্য’।



লঞ্চ থেকে নামার অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের আর তর সইছিল না। আলী হোসেনও ছাড়ার পাত্র নন। মুফতে ৫০ টাকা আয়! হেলাফেলার বিষয় না।



যাত্রীদের মধ্য থেকে একজন চেচিয়ে বললেন, ‘আরে ছাইড়া দেন না, বাচ্চা পোলাপাইন। এর আবার টিকিট...’

আলী হোসেন তার কথা শেষ করতে দেন না, তার আগেই আমার হাত ধরে টানতে টানতে বলেন, ‘চল চল, এইহানে পথ আটকাইয়া থাকিস না। এত্তগুলান লোকের পথ আটকাইয়া থাকন ঠিক না। তাগো অসুবিধা। বাইর হ, বাইর হ’। লঞ্চের গেট দিয়ে তিনি আমাকে টেনে বের করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসলেন। ততক্ষণে অন্য যাত্রীরা হুড়মুড়িয়ে নামতে শুরু করেছে।



আলী হোসেন, পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকার লাল নোটখানা বের করে আমাকে দেখিয়ে বললেন, ‘বুজ্ঝস পোলা, বেয়ান বেয়ান পইঞ্চাশ টেকা কামাই কইরা ফেললাম। মাথায় মাল থাকলে পকেটেও মাল থাকে’।

তিনি পঞ্চাশ টাকার নোটখানা পকেটে ঢুকিয়ে আরাম করে একখানা আকিজ বিড়ি ধরালেন। তারপর আয়েশ করে টান দিলেন। তার মুখ ক্রমশই ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে।



আমি মুগ্ধ চোখে তার ধোঁয়াশা মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।





আমার চাচাত বোন পলি আপা। তার দুই ছেলে বায়েজিদ আর তাসকিন। বায়েজিদ শান্তশিষ্ট আর তাসকিন তার ১৮০ ডিগ্রী বিপরীত। তাসকিনের বছর চারেক বয়স। ওরা গ্রামেই থাকে। এবার ঈদে বাড়িতে গেছি। তাসকিন কিছু একটা খাচ্ছে। খাবারের অর্ধেক তার মুখে, বাকী অর্ধেক হাতে। খাবারসহ তার হাতখানা সে তার পেছনে লুকিয়ে রেখেছে। মুখের ভেতরের খাবারটুকুও খাচ্ছে খুব সতর্কভাবে। আমি বললাম, ‘মামা, কি খাও’?



সে আমাকে হতভম্ব করে দিয়ে বলল, ‘গু খাই’।



আমি ভাবলাম, আমি কানে ভুল কিছু শুনেছি। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি খাও মামা’?



সে এক পা আমার দিকে এগিয়ে বলল, ‘আফনে কি বয়ড়া? কানে কম হুনেন? গু খাই, গু’।



আমি হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম। সে আরাম করে ‘গু’ খাচ্ছে। তার চোখমুখে গু খাওয়ার পরম তৃপ্তি। আমার হতভম্ব অবস্থা কাটছে না। চার বছরের এক বাচ্চা এসব কি বলছে! আমাকে আমার হতভম্ব অবস্থা থেকে উদ্ধার করলেন আমার মা। আম্মা হাসতে হাসতে বললেন, ‘এইটায় এমুনই। সে যখন কিছু খায়, তখন তার ভাই যেন সেই জিনিস তার কাছে চাইতে না পারে, এই জন্য সে এই কথা বলে। এই কথা বল্লেতো আর কেউ এই জিনিস খাইতে চাইতে পারবে না’।



ঘটনা সত্য। কারো পক্ষে আর যাই হোক, কারো কাছ থেকে গু চেয়ে খাওয়া সম্ভব না। সুতরাং, নো চিন্তা। তাসকিন গপগপ করে খেয়ে চলছে।



আমি চার বছরের পিচ্চি তাসকিনের মুখের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:০৮

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

লেখাটি ভাল লাগল ভাই ++++

২০ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:১১

সাদাত হোসাইন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ভালো থাকবেন।

:)

২| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৫

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ভালো লেগেছে।

দ্বিতীয় প্লাস।

২০ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:১২

সাদাত হোসাইন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ভালো থাকবেন।

:)

৩| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৫

মামুন রশিদ বলেছেন: মুগ্ধ হতে পারা ভাল গুন । মুগ্ধতা প্রকাশে কিপটামি করা ঠিক না ।

২০ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:১২

সাদাত হোসাইন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ভালো থাকবেন।

:)

৪| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৯

অপরাজিতার কথা বলেছেন: দারুন লাগল!!বিশেষ করে শেষেরটা!! :D :D

২০ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:১২

সাদাত হোসাইন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ভালো থাকবেন।

:)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.