![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...
বাদল লজিং বাড়ি এসে পৌঁছেছে মাগরিবের পর।
বাড়িতে খানা পিনা চলছে। উঠানজুড়ে শামিয়ানা টানানো। আজহার উদ্দিনের বিশাল বাড়ি। বাড়ির চারপাশ ঘিরে উঁচু দেয়াল। তিনি তার দুই স্ত্রী, এক কন্যা আর বিধবা বোনকে নিয়ে থাকেন দোতলা ভবনে। ভবনের তিনপাশে বিস্তির্ণ ফাঁকা জায়গা। বাড়ির এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট ছোট টিনের ঘর। আজহার উদ্দিনের কাজে নানান লোকজনের দরকার হয়। এই ঘরগুলো তাদের জন্য।। বাড়িতে ঢোকার গেটের মুখে একতলা পাকা বৈঠকখানা। দক্ষিণ দিকের বাগানের পাশে লম্বা একসারি ছোট ছোট ঘর। এই ঘরগুলো অতিথিদের জন্য। এই অতিথি ঘরের একটি রুমেই থাকে বাদল।
বাদল রুমে ঢুকে জানালা খুলে দেয়। রুমজুড়ে ভ্যাপসা গরম। সুইচ টিপে বাতি জালাতেই ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে সে।
-তুমি এইখানে?
লাবণী দাঁড়িয়েছিল দরজার সামনে। সে টুক করে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
-ভয় পাইছেন? ভয়ের কিছু নাই।
-লাবণী, বাড়িভর্তি লোক। কেউ দেখলে ব্যাপারটা খুব খারাপ হবে।
-দরজাতো বন্ধ। কেউ দেখবে কিভাবে?
এই মেয়ের সাথে কথা বলার কোন অর্থ হয় না। যা হবার হবে। বাদল কাল সকালে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। সে আর এসব নিয়ে মাথা ঘামাবে না। এই মেয়েকে বোঝা তার সাধ্য না।
-আপনি এতোদিন থাকলেন কি মনে করে। কি ভেবেছিলেন? এসে দেখবেন আপদ বিদায় হয়েছে?
-তুমি আমার কাছে আপদ কেন হবে লাবণী?
-আশ্চর্য। হতদরিদ্র এতিম লজিং মাস্টারের প্রেমে যদি ছাত্রী হাবুডুব খায় তখনতো আপদ মনে হওয়ারই কথা।
-তুমি কখনো আমার প্রেমে হাবুডুব খাও নাই লাবণী।
-এইটা অবশ্য ঠিক বলেছেন। মেয়েরা দুই ধরনের ছেলেদের প্রেমে হাবুডুব খায়। এক, অতি গাধা। দুই, অতি বুদ্ধিমান। আপনি এই দুইটার কোনোটাই না। আপনি হচ্ছেন মাঝামাঝি টাইপ। এই মাঝামাঝি টাইপের স্বভাব হচ্ছে ব্যাঙের স্বভাব। এদের চারপাশে থাকে থই থই পানি কিন্তু পানিতে এরা বেশীক্ষণ থাকতে পারে না। এরা পানিতে ভেসে থাকা শক্ত ডালপালা খোঁজে। এদের ক্ষমতা ছোট ছোট লাফ দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এরা লাফ দেওয়ার সুযোগ খোঁজে। সুযোগ পেলেই ছোট্ট লাফে এক ডাল থেকে আরেক ডালে যায়। আপনি লাফ দেয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এখন টুক করে লাফ দিবেন। আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাওয়ার কিছু নাই। আপনি হাবুডুব খাওয়ার মতো কোন রসগোল্লা না।
-তোমর কি কোন কারণে মেজাজ খারাপ?
-কেন? আপনার কি ধারণা আমার মেজাজ ভালো থাকলে আমি আপনার সাথে লুতুপুতু টাইপ কথা বলি?
বাদল এই প্রশ্নের উত্তর দেয় না। সে আলনা থেকে তার ভাঙাচোড়া হ্যাঙ্গারগুলো নামিয়ে গোছায়। তার শার্ট প্যান্টগুলো ভাজ করে ব্যাগে ভরে। গামছাখানা বহু ব্যাবহারে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। দুচারটা ফুটোও উঁকি দিচ্ছে এখানে সেখানে। ব্যাগে ভরবেনা ভরবেনা করেও গামছাখানা ব্যাগে ঢোকায় বাদল। মশারি, বিছানার চাদর, বালিশের কভারগুলো খুলে ভাঁজ করে। একটা রাত এখানে কোনভাবে কাটিয়ে দেয়া যাবে। কাল খুব ভোরে উঠেই রওনা দিতে হবে। তখন এসব গোছানো যাবে না। সবকিছু এখন গুছিয়ে রাখাই ভালো। অঁজপাড়াগায়ের স্কুলে বেতন টেতন কবে পাওয়া যাবে তার ঠিক ঠিকানা নাই। তারচেয়ে যতটুকু সম্ভব পুরনো জিনিস নিয়ে যাওয়াই ভালো।
-লাফ দেয়ার প্রস্তুতিতো দেখি ভালোই। আপনি এক কাজ করেন তাবলিগ জামাতে ঢুকে যান। লাফালাফির সুবিধা হবে। এক মসজিদ থেকে টুক করে আরেক মসজিদ। জীবন চলে যাবে লাফাতে লাফাতে। মাঝখান থেকে সোয়াব কামাই হবে।
-তোমার মায়ের শরীর এখন কেমন?
-আম্মার শরীর ভালো। সে তার সতীনরে নিয়া আনন্দ ফূর্তি করতেছে। কন্যাবয়সি সতীনভাগ্য কয়জনের হয়? এই আনন্দে সে নাচতেছে। নাচের নাম ভোজপুরি নাচ। ভাবছি আব্বাকে নাচ দেখতে ডাকবো। কিন্তু সাহসের অভাবে পারতেছি না।
-তোমার সাহসের অভাব আছে বলেতো মনে হয় না।
-শুধু সাহস থাকলেই হয় না। বুদ্ধিও থাকতে হয়। আমার বুদ্ধি কম। এইজন্য সাহস দেখাইতে পারতেছি না। তবে শীঘ্রই দেখাবো। সাহস দেখে আমার আব্বাজান হা করে বসে থাকবেন। সেই হা আর বন্ধ হবে না।
-তুমি তোমার বাবার বিয়েটা ঠিক মতো নিতে পারো নাই লাবণী। তিনি কেন বিয়ে করেছেন, সেই ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন।
-এই বিষয় নিয়ে আপনার সাথে কথা বলতে চাই না। আপনারতো দেখি ‘নুন খাই যার, গুণ গাই তার’ অবস্থা। এইটা অবশ্য ভালো। আজকাল কৃতজ্ঞ লোকের বড় অভাব। আপনি যাবেন কখন?
-কাল ভোরে।
-একটা কথা বলি শোনেন। আপনার ধরণা ঠিক। আমি আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাই নাই। সুন্দরী মেয়েদের অভ্যাস হলো তার চারপাশের হাবাগোবা ছেলেদের নিয়া খেলা করা। এই খেলায় তারা আনন্দ পায়। আমিও আনন্দ পেয়েছি। আনন্দ দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
-লাবণী তোমার কি কিছু হয়েছে?
-আমার কি হবে? আমার কিছু হয় নাই। আপনাকে একটা কথা বলি। আপনি আর এই বাড়িতে আইসেন না।
লাবণী ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। বাদল কি বলবে বুঝতে পারেনা। সে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ লাবণী আবার ঘরে ঢোকে। তার হাতে একটা ব্যাগ। সে ব্যাগটা টেবিলে রেখে বেরিয়ে যায়। হতভম্ব বাদল ব্যাগটা খোলে। ব্যাগের ভেতর একটা নতুন মশারি, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কতগুলো শার্ট, দুখানা গামছা। সাবান, টুথব্রাশ, টুথপেস্ট। একজোড়া স্যান্ডেল। একটা খাম। বাদল খামটা খোলে। খামের ভেতর কতগুলো একশ টাকার নোট। একটা ছোট্ট চিঠি।
সেখানে গোটাগোটা হাতে লেখা:
‘আপনাকে ছুঁয়ে দেখার তীব্র ইচ্ছা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আপনার সামনে বসে থাকতাম! কিন্তু কখনো সাহস হতো না। আপনি ভাবছেন মেয়েটা কি অসভ্য! আমি কিন্তু কেবল শরীরের ছোয়ার কথা বলিনি। আমি জানি আমি আপনাকে কখনো কোনভাবেই ছুঁতে পারি নি। না শরীরে, না মনে। আজ হঠাৎ মনে হলো, ছোঁয়াছুয়ির বিষয়টা থাকে কানামাছি খেলায়। জীবনটাতো কানামাছি খেলাই। কে কখন কিভাবে ছুঁয়ে যায় কে জানে!'
--------------------------------------------------------------------
'আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই' উপন্যাসের অংশবিশেষ।
আসছে আমার তৃতীয় গ্রন্থ, প্রথম উপন্যাস 'আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই'।
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৭
সাদাত হোসাইন বলেছেন: সামনের বইমেলায় বেরুবে... আশা করি তখন পাবেন
২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০১
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: শুভকামনা রইল, লেখক।
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৭
সাদাত হোসাইন বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৯
মামুন রশিদ বলেছেন: দারুণ ! ভাল লাগল ।
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৮
সাদাত হোসাইন বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৪
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
শুভকামনা রইল।
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৮
সাদাত হোসাইন বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৭
খাটাস বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। তবে সামান্য হুমায়ন আহমেদের ছাপ আছে।
তবু ও ভাল লেগেছে। শুভকামনা।
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৮
সাদাত হোসাইন বলেছেন: ধন্যবাদ
৬| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪১
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: ভালো লাগলো। শুভকামনা রইল আপনার জন্য......
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৮
সাদাত হোসাইন বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০১
নষ্ট কাক বলেছেন: অংশ বিশেষ পইড়া তো উপন্যাস পড়তে ইচ্ছে করে ।
একপিস যদি পার্সেল করে দেওয়া যেত