![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...
ঠিকঠাক রাস্তাঘাট নাই, এমন গ্রামেও আজকাল বাহন হিসেবে অটো রিকশা খুব জনপ্রিয়।
এই এট্টুক এক অটোরিকশায় আমরা যাত্রী ছয় জন। পারলে এক জন আরেকজনের ঘাড়ের উপরে উঠে বসে বসে অবস্থা। আমার সামনেই বসেছেন আপাদমস্তক বোরকা ঢাকা এক বৃদ্ধা। পান খাওয়া দন্ত বিহীন ফোকলা মুখ। নির্দিষ্ট গন্তব্যে নামতে যাওয়ার আগে তিনি হঠাৎ ছোট্ট এক কাপড়ের পুঁটলি বের করলেন। শক্ত গিঁট দিয়ে বাঁধা। সেই গিঁট খুলে তিনি কতোগুলো ১০ টাকা ২০ টাকার নোট বের করলেন। ভাড়া দিতে হবে। তিনি আমার দিকে দু'খানা নোট বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, 'দেহেনতো বাজান, এইডা কয় টাহা? আর এইডা কয় টাহা?'
আমি তার বাড়িয়ে দেয়া টাকার নোটের বদলে বিস্ময় নিয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কী সরল আর মায়াময় একজোড়া চোখ। বয়সের ভারে অনেকটাই ফ্যাকাশে। নির্জীব। কিন্তু সেই চোখজোড়া জুড়ে অদ্ভুত সারল্য।
আমি তার হাত থেকে খুব ধীরে নোট দু'খানা নিলাম। তারপর খুব শিশুতোষ কৌতূহল নিয়ে বললাম, 'আপনি টাকা চেনেন না চাচী?'
তিনি বললেন, 'ক্যামনে চিনমু বাজান! আমিতো পড়া ল্যাহা কিছু করি নাই। টাহার গায় কয় টাহা ল্যাহা (লেখা) হেইডাতো পড়তে পারি না বাজান।'
আমার এতো মায়া হোল! আমি খুব যত্ন নিয়ে তাকে চেনালাম, 'এই যে এইটা, এইটা দশ টাকা চাচী, আর এইটা হচ্ছে বিশ টাকা।'
তারপর একটু সময় নিয়ে বললাম, 'কিন্তু চাচী, আপনি যে টাকা চেনেন না, এটা কেমন কথা? এখানে সেখানেতো মানুষ আপনাকে ঠকাবে! তাছাড়া, একটা ৫ বছরের বাচ্চাও আজকাল শুধু টাকার চেহারা-ছবি, ছাপা দেখেইতো বলে দিতে পারে কোনটা কত টাকার নোট!'
তিনি অসহায় ভঙ্গীতে বললেন, 'বাজান, আমিওতো চেনতাম। ল্যাহা দেইখ্যা পড়ন লাগতো না। দোয়েল পক্ষী দেইখ্যাই দুই টাহার নোট চেনতাম, গাঙ্গের মইধ্যে নাও যাইতেছে হেই ছবি দেইখ্যা ৫ টাহা চেনতাম, গেরস্ত ব্যাটায় জাগ দেওয়া পাঁট ধুইতেছে হেই ছবি দেইখ্যা কুড়ি টাহা চেনতাম। হগলই চেনতাম। এহনতো আর চিনি না বাজান। হগল জিনিস বদলাই যাইতেছে। এহন বাজান হগলই অচিন লাগে।'
আমি একটা ধাক্কার মত খেলাম। চাচী নেমে গেলেন তার গন্তব্যে। আমি পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করলাম। আসলেইতো! টাকাগুলো থেকে কোথায় যেন সবুজ হারিয়ে যাচ্ছে। জেগে উঠছে কংক্রিটের দেয়াল আর ইট কাঠের সুকঠিন কাঠামো। হারিয়ে যাচ্ছে চিরায়ত বাংলাদেশ! হারিয়ে যাচ্ছে মমতার ছোঁয়া। এই মানুষগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এই মানুষগুলোর চিরায়ত জীবন হারিয়ে যাচ্ছে! জেগে উঠছে খটখটে শুকনো এক আকণ্ঠ তৃষ্ণা।
আসলেইতো, ক্রমশই চারপাশের "হগলই অচিন লাগে!"
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৫৫
সাদাত হোসাইন বলেছেন: ঠিক তাই
২| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:১২
কালোপরী বলেছেন:
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৫৫
সাদাত হোসাইন বলেছেন:
৩| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৭:৩২
মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: টাচিং একটা লেখা, বুড়া চাচী টাচিং এবং হাচা কয়েকটা কথা কইছেন
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:০৯
সাদাত হোসাইন বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:১০
আমি চাই বলেছেন: আগের দিনগূলোর কথা মনে পরে গেল,,,
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:১০
সাদাত হোসাইন বলেছেন: হুম। স্ম্রিতিকাতরতা
৫| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৩
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: হুমম! আসলেই অনেক কিছুই আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে চিরায়ত বাংলাদেশ! হারিয়ে যাচ্ছে মমতার ছোঁয়া।
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:১০
সাদাত হোসাইন বলেছেন: দিনগুলো মোর সোনার খাঁচায় রইলো না.।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:০৭
আমাবর্ষার চাঁদ বলেছেন: সবই হারিয়ে যায় সময়ের অতল গহ্ববরে..................