নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম \'বোধ\'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবি

সাদাত হোসাইন

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...

সাদাত হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি একটা সিনেমা বানাবো

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৯

সম্ভবত আহমদ ছফা’র কোন এক উপন্যাসে ঘটনাটা পড়েছিলাম।

অনেক অনেক বছর আগের কথা। ইরফান নামে এক ছেলে পড়তো কলকাতা মেডিকেলে। আর সব সিনেমার গল্প বা নায়কদের মতো এই গল্পের নায়কও গরীব এবং যথারীতি মেধাবী। শহরে থাকার জায়গা নেই। সে থাকে লজিং। অবধারীতভাবেই সেই লজিং বাড়ীতে সে একটি কিশোরী মেয়েকে পড়ায়। গল্পের প্রয়োজনেই সেই মেয়েটি অপূর্ব রূপবতী এবং অনিবার্যতার সূত্র মেনেই ইরফান তার সেই কিশোরী ছাত্রীর প্রেমে পড়ে দিশেহারা হয়ে যায়।



একদিন ইরফান হঠাৎ আবিস্কার করে, তার সেই কিশোরী ছাত্রী কখনো আড়চোখে তার দিকে চায় নি, তাকে দেখে কখনো হাসে নি, কখনো টেবিলের ফাঁকে হাত কিংবা পায়ের ছোঁয়া লাগে নি, নির্বিকার সেই মেয়ে চুপচাপ এসে পড়তে বসে, পড়া শেষে নিভৃতে চলে যায়। ইরফান ভাবে, কি করবে সে? সে কি করলে মেয়েটা তার দিকে তাকাবে, হাসবে, মুগ্ধ হয়ে ছুঁয়ে দিতে চাইবে... ভালবাসবে!



ইরফান আয়নার সামনে দাঁড়ায়, সে দেখতে সুন্দর না, তার টাকা নেই, আজকাল তার পড়াশোনাও হচ্ছে না। তার ধারণা, এই মেয়েকে ভেবে ভেবে তার বাকীটা জীবন পাড় হয়ে যাবে, সে আর কখনোই পাশ করে বেরুতে পারবে না। তাহলে?



মেয়েটাকে সে মুগ্ধ করবে কি করে? ইরফান মেয়েটাকে মুগ্ধ করবার উপায় খুঁজতে থাকে। সুন্দর করে মাথা আঁচড়ায়, মুখে তেল, স্নো, পাউডার ঘষে। গড়গড় কর মুখস্ত কবিতা বলে যায়, সুপ্রাচীনকাল থেকে ভারতবর্ষের ইতিহাস বলে চমকে দেয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু মেয়েটা সেই নির্বিকার, নিভৃতচারী। ইরফানের হঠাৎ মনে হয়, তাকে এমন কিছু একটা করতে হবে, মেয়েটা যেন চমকে যায়, মুগ্ধ হয়ে যায়, অভিভূত হয়ে যায়।



কিন্তু এমন কি করবে সে?



ইরফান এমন কিছুই খুঁজে পায় না। সে মন খারাপ করে বসে থাকে, তার মেয়েটাকে ছুঁতে ইচ্ছে করে। তার হাত ধরে বসে থাকতে ইচ্ছে হয়। ফিসফিস করে গল্প করতে ইচ্ছে হয়। গভীর রাতে বুকের সাথে জাপটে ধরতে ইচ্ছে করে, সর্বস্ব নিঃশোষিত করে চুমু খেতে ইচ্ছে হয়, বিলীন হতে ইচ্ছে করে পরস্পরে। ইরফানের শরীর জুড়ে তীব্র আকাঙ্ক্ষা, তার হৃদয় জুড়ে প্রবল তৃষ্ণা। সে ছটফট করে, তার কিছু ভালো লাগে না। সে মেয়েটাকে মুগ্ধ করতে চায়, এমন কিছু করতে চায়, যা দেখে মেয়েটা অদ্ভুত মুগ্ধতায় তাকিয়ে থাকবে। তাকিয়েই থাকবে, ভালবাসবে...



একদিনের ঘটনা।



বাজার থেকে ফিরছে ইরফান, তার হাতের ব্যাগভর্তি বাজার। হঠাৎ রাস্তার পাশে জটলা দেখে থমকে দাঁড়ায় সে। এক ম্যাজিশিয়ান ম্যাজিক দেখাচ্ছে। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকেই মুগ্ধ হয়ে গেলো সে। মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল, এই ম্যাজিক তাকে শিখতেই হবে। সে সারা বিকেল দাঁড়িয়ে রইল। সন্ধ্যার আঁধার নামতেই ম্যাজিশিয়ানের জাদুর আসর ভাঙল। ইরফান তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো, ‘আমি জাদু শিখতে চাই’



-‘জাদুতো সহজ জিনিস না বাবা, চাইলেই শেখা যায় না, এইটার জন্য সাধনা দরকার, সাধনা। দীর্ঘ সাধনা’। ম্যাজিশিয়ান জবাব দিলো।



তারপরের ঘটনা সহজ, ইরফান সেই বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে আর বাড়ী ফিরে যায় না। সে মিশে যায় সেই ম্যাজিশিয়ানের দলে। ঘুরে বেড়ায় ভারতবর্ষের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। সে ম্যাজিকের সত্যিকারের সাধক হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে ম্যাজিশিয়ানের সবচেয়ে প্রিয় শিস্য। বৃদ্ধ ম্যাজিশিয়ান প্রতিদিন ইরফানকে নানান রকম টিপস দেয়, ম্যাজিক শেখায়, কৌশল শেখায়। বছরখানেক বাদে এক সন্ধ্যায়, ম্যাজিশিয়ান ইরফানকে শেখাল আরও একটি দুর্দান্ত কৌশল। কিন্তু ইরফান হঠাৎ অধৈর্য গলায় বলে উঠলো, ‘গুরুজী, ‘প্রায় বছর হতে চলল, আমি আপনার সাথে আছি, আপনি যেভাবে যা বলছেন তা-ই শুনছি, কিন্তু কই আপনিতো আমাকে এখন পর্যন্ত একটা জাদুও শেখালেন না!’



ম্যাজিশিয়ান হতভম্ব হয়ে ইরফানের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর খুব ধীর কণ্ঠে বললেন, ‘ইরফান, এ তুমি কি বলছ! আজ এই মুহূর্তে তোমাকে আমি আমার জানা শেষ ম্যাজিকটিও শিখিয়ে ফেললাম, আমার জানা সর্বশেষ ম্যাজিক। গত এক বছর তোমার একাগ্রতা, তোমার সাধনা, তোমার অধ্যবসায়ে আমি মুগ্ধ! তাই আমি প্রতিদিন তোমাকে আমার জ্ঞানের ভাণ্ডার উজাড় করে দিয়ে ম্যাজিক শিখিয়েছি! আর আজ তুমি এসে এ-কি বলছ!’



ইরফান বৃদ্ধ ম্যাজিশিয়ানের চেয়েও বিস্মিত গলায় বলল, ‘এ আপনি কি বলছেন গুরুজী? আপনিতো আমাকে কোন ম্যাজিক শেখান নি!’



ম্যাজিশিয়ান হতাশ গলায় বললেন ‘তাহলে এই একবছর সারাটা দিন রাত্রী তোমাকে আমি কি শিখিয়েছি! আমি আমার দীর্ঘ জীবনে যা শিখেছি, সব তোমাকে শিখিয়েছি আমি। সব!’



ইরফান চোয়াল শক্ত করে ফিসফিস করে বলল, ‘আপনি আমাকে যা শিখিয়েছেন, তা ম্যাজিক না গুরুজী, তা ট্রিকস, হাত সাফাইয়ের কৌশল! মানুষের চোখে ধোঁকা দেয়া। আমি এই ট্রিকস শিখতে চাই নি, আমি ম্যাজিক শিখতে চেয়েছি, ম্যাজিক, সত্যিকারের ম্যাজিক!’



এবার আর কোন কথা বললেন না বৃদ্ধ ম্যাজিশিয়ান। তিনি এক দৃষ্টিতে ইরফানের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর তাকালেন শুন্য আকাশে। দীর্ঘক্ষণ! এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। তারপর একসময় ইরফানের চোখে চোখ রেখে ফিসফিস করে বললেন, ‘তুমি যে ম্যাজিক শিখতে চাইছ, তা আমি জানি না ইরফান। আমি তা জানি না। অপার্থিব কিছু আমার জানা নেই’।



‘তাহলে কে জানে?’



ম্যাজিশিয়ান আবারো চুপ করে গেলেন। আবারো তাকালেন রাতের আকাশে। সেখানে অজস্র তারা। তিনি সেই তারাদের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললেন, ‘আমি জানি না ইরফান, আমি সেই ম্যাজিকের কথা জানি না। সত্যি জানি না’।



‘তাহলে? কিন্তু আমাকে যে সেই ম্যাজিক শিখতেই হবে, আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে মুগ্ধ করতে ট্রিকস দেখাতে চাই না, আমি সত্যিকারের ম্যাজিক শিখতে চাই, সত্যিকারের। আমি কার কাছে যাবো? কোথায় যাবো?’



ম্যাজিশিয়ান ইরফানের দিকে তাকালেন না। কিন্তু সেই তারা বোনা আকাশের দিকে তাকিয়ে খুব ধীর গলায় বললেন, ‘আমি সত্যি জানি না ইরফান, সেই ম্যাজিকের উৎস কোথায় আমি সত্যিই জানি না, তবে তুমি মসজিদে যেতে পারো, ওখানে মৌলভী আছেন, উনি হয়তো তোমাকে বলতে পারবেন, তুমি গির্জায় যেতে পারো, ওখানে পাদ্রী আছেন, তিনি হয়তো তোমাকে বলতে পারবেন, তুমি মন্দিরে যেতে পারো ওখানে পুরোহিত আছেন, উনি হয়তো তোমাকে বলতে পারবেন’।



ইরফান আর কথা বলল না, সে সত্যিকারের ম্যাজিকের উদ্দেশ্যে বৃদ্ধ ম্যাজিশিয়ানকে কদমবুসি করে ঘর থেকে বের হোল। তার বুকের ভেতর লুকিয়ে আছে সেই ছোট্ট কিশোরী। আর সেই কিশোরীর জন্য পৃথিবীর বিশুদ্ধতম অনুভূতি... ইরফান ছুটে চলেছে এক অন্য জগতের খোঁজে, সত্যিকারের ম্যাজিকের জগত অনুসন্ধানে, যে জগত হয়তো অনাবৃত, কিংবা যে জগত জুড়ে অফুরন্ত রহস্য... ইরফান ছুটে চলেছে সেই অফুরন্ত রহস্যের সন্ধানে... সেই জগত অনুসন্ধান শেষে, সত্যিকারের ম্যাজিক শিখে সে ফিরে আসবে তার বিশুদ্ধতম অনুভূতির কাছে, ভালোবাসার কাছে, সত্যিকারের ম্যাজিকের মুগ্ধতা নিয়ে... আসলে কি ঘটবে?



এরপরে শুরু হয় গল্প। গল্পটি ক্রমশই হয়ে ওঠে অসাধারণ কিংবা অনন্যসাধারণ!



আমার আজন্ম ইচ্ছে, যদি কখনো আমার বুকের ভেতর চেপে রাখা স্বপ্নটা পূরণ হয়, অন্তত একটা সিনেমা আমি যদি মৃত্যুর আগে কখনো বানাতে পারি, তাহলে, আই উইল জাস্ট টেক দিস স্টোরি ইনটু স্ক্রিন... আই উইল...



মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি চুপি চুপি রোজ সন্ধ্যায়, মাঝরাতে কিংবা হঠাৎ হাপিত্যেশের দুপুরে এই গল্পের সিনেমার জন্য চিত্রনাট্য লিখি! লেখা অংশগুলো পড়ি, পাল্টাই, কাটি, আঙুলের ফাকে ফ্রেম কল্পনা করি, রাস্তা ঘাঁটে হাঁটতে গিয়ে চরিত্রগুলো খুঁজি,এবং তারপর আবার লিখি... আবার ভাবি... আবার লিখি...



আমার রাতেরা ভোর হয়ে যায়, কিংবা হয় না...

আমার স্বপ্নেরা ঘুম হয়ে যায়, কিংবা হয় না...

------------------------------------------

আমি একটা সিনেমা বানাবো/ সাদাত হোসাইন

২৬.০১.২০১৪

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:২৮

হাসান ইকবাল বলেছেন: দারুন!!
শুভ কামনা।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:১২

সাদাত হোসাইন বলেছেন: থ্যাংক ইউ

:)

২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:০৬

ভিটামিন সি বলেছেন: দোয়া করি সফল হউক আপনার স্বপ্ন।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:১২

সাদাত হোসাইন বলেছেন: থ্যাংক ইউ

:)

৩| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৫৯

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: গল্পটা চমৎকার ফ্যান্টাসি দিয়ে ভরপুর! আপনার ইচ্ছা যেন পূরণ হয় এই কামনা রইল।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৩১

সাদাত হোসাইন বলেছেন: দোয়া করবেন :)

৪| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:০৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: নাম কী উপন্যাসটার?

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৪১

সাদাত হোসাইন বলেছেন: মনে নেইতো!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.