![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...
ক্রিং ক্রিং ক্রিং।
টেলিফোনের ওপার থেকে সেই কণ্ঠ। রিনরিনে, নিরুত্তেজ, শান্ত কিন্তু উষ্ণ, 'মেয়েটা কে?'
আমি অবাক হবার ভান করি, 'কার কথা বলছ?'
- 'তুমি জানো'।
- 'নাহ, জানলে জিজ্ঞেস করছি?'
- 'হ্যা, করছো। মানুষ এমনই, কিছু জানা উত্তরও জানতে চায়'।
- 'আমি তেমন নই'।
- 'কেমন?'
- 'কেমন সেটা বুঝে নিতে হবে। বলে ফেললে আবিস্কারের ইচ্ছেটাই আর থাকবে না'।
- 'আবিষ্কারটা জরুরী?'
- 'খুব, খুব জরুরী'।
- 'কেন?'
- 'কারণ, খোলা পাতা পড়া অনেক সহজ। বন্ধ পৃষ্ঠা রোজ খুলতে ইচ্ছে হয়। একটু একটু নতুন করে'।
- 'তাহলে সবাই একদিন পুরনো হয়?'
- 'হু হয়। আমরা কেউ কেউ রোজ নতুনের ভান করি। আর কেউ সেই ভান করতে পারি না'।
- 'তাহলে? উপায়?'
- 'অতল জলের ছোঁয়া চাই বুকের ভেতর'।
- 'তাতে লাভ?'
- 'অনুভূতিরা যত গভীর, রোজ তার ছুঁয়ে যাওয়াও নতুন। আবিস্কারের নেশা তাই রোজ থাকে'।
- 'সেই অতল জল বুকের ভেতর থাকে?;
- 'হু, বুকের ভেতর। অনুভূতি হয়ে'।
আমরা খানিক থামি। চুপচাপ বাতাস। কিংবা সুদীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস।
আমি হঠাৎ বলি, 'আচ্ছা, এবার বলো, কার কথা জানতে চাও?'
- 'যে তোমার ফেসবুক আগলে থাকে, ওই যে, সেই মেয়েটা'।
- 'সেতো কতজনই থাকে! তুমিও'।
- 'উহু, তুমি ঠিক জানো, আমি কার কথা বলছি'।
আমি এই প্রশ্নের জবাব দেই না। ইথারে ভারী নিঃশ্বাস ভেসে বেড়ায়। আমরা সেই নিঃশ্বাসের শব্দ শুনি। শব্দ!
আমি বলি,- 'ওর কথা শুনে তুমি কি করবে?'
সে বলে,- 'প্রয়োজন আছে'।
- 'কিসের প্রয়োজন?'
- 'প্রয়োজনের'।
- 'প্রয়োজনের আবার প্রয়োজন থাকে নাকি?'
- 'থাকে, আর ওটাই সবচেয়ে বেশি, সবচেয়ে তীব্র'।
- 'শুনলে কি হবে?'
- 'প্রয়োজনের প্রয়োজন মিটবে'।
আমি আবার চুপ করে থাকি। তারপর বলি, 'আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রয়োজনের নাম অপেক্ষা'।
সে অবাক হয়,- 'অপেক্ষা কারো প্রয়োজন হয়?'
- 'হয়। অপেক্ষাই সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন। সবচেয়ে তীব্র প্রয়োজন। বুকের ভেতর যখন অপেক্ষা থাকে না। তখন আর কিচ্ছু থাকে না। না ভালোবাসা, না কান্না, না আনন্দ। না অন্য কিছু, কিছুই না'।
- 'তাইতো! এভাবেতো ভাবি নি!'
আমি এবারও সাথে সাথে কথা বলি না। হাসি। নিঃশব্দ হাসি।
তারপর বলি,- 'সেই যে অতল জলের অনুভূতি, তা বুঝতে ওই অপেক্ষাটা প্রয়োজন। খুব প্রয়োজন। অপেক্ষা ছাড়া অনুভূতির গভীরতাটা বোঝা যায় না'।
এবার টেলিফোনের ওপারে চুপ। সে চুপ হয়ে আছে। তারপর ফিসফিস করে বলে, 'তোমার কোন অপেক্ষা আছে? কারুর জন্য?'
আমি বললাম, 'আছে'।
- 'কে সে? ফেসবুকের সেই মেয়েটি?'
আমি আবারও হাসি, হেসে বলি, 'নাহ!'
- 'তাহলে?'
- 'আমি তোমার জন্য অপেক্ষায় থাকি'।
সে থমকে যায়। মুহূর্তকাল। কিংবা তারচেয়ে খানিক বেশি। তারপর বলে,- 'তুমি সত্যি আমার অপেক্ষায় থাকো?'
আমি শান্ত গলায় জবাব দেই, 'হু, থাকি। পৃথিবীর আর সকল অপেক্ষার চেয়েও বেশি অপেক্ষায়'।
- 'কেন?'
- 'কারণ, আমি তোমার চোখে তাকাতে পারি না'।
- 'তাতে কি?'
- 'তাতেই সব। পৃথিবীর আর সকল চোখে তাকাতেতো আমার ভয় হয় না! শুধু ওই চোখেই ভয়'।
- 'কিসের ভয়?'
- 'ডুবে যাবার'।
সে হাসে। যেন একগোছা কাঁচের চুড়ি ভাঙার রিনরিনে শব্দ। তারপর কণ্ঠে হঠাৎ অদ্ভুত মাদকতা মেখে বলে, 'আমার চোখ নদী না সাগর?'
আমি বলি,- 'কেন?'
- 'ওই যে বললে ডুবে যাবার ভয়'!
- 'হু'।
- 'তাহলে বলো, নদী না সাগর?'
- 'পুকুর'।
- 'পুকুর কেন?'
- 'কারণ ওই পুকুরে যে পদ্ম ভাসে। ও-তো পদ্মপুকুর'।
- 'তাহলে? ডুবে যেতে ভয়?'
- 'নাহ, ভেসে থাকতে'।
- 'তখন যে বললে ডুবে যাবার ভয়?'
- 'হ্যা, ভয়। পুরোপুরি ডুবতে না পারার ভয়। যতটা গভীর হলে ডুবে যাওয়া যায়, চোখ যদি অতটা গভীর না হয়?'
- 'না হলে কি?'
- 'অর্ধেক ডুবে ভেসে থাকতে হবে যে! ভালোবাসায় ভেসে থাকা খুব কষ্টের'।
- 'ডুবে যেতে হয়?'
- 'হু, ডুবে যেতে হয়, সবটুকু নিয়ে'।
সে আবার চুপ করে থাকে। তারপর ফিসফিস করে বলে,- 'যতটা গভীর হলে ডুবে যাওয়া যায়, অতটা গভীর হতে কি থাকতে হয়?'
- 'জল থাকতে হয়। গভীর জলের নদী'।
- 'অতটা জল আমার আছে। আছে বুকের ভেতর, অপেক্ষার পুরোটা জুড়ে।
- 'কার অপেক্ষা?'
সে আরও গভীর, আরও ভেজা, আরও খানিক ফিসফিসিয়ে বলে, 'তোমার, তোমার অপেক্ষা। পৃথিবীর আর সকল অপেক্ষার চেয়ে গভীর। অতল জলের মতন গভীর, এই জলে রোজ আবিস্কারের অনেক আছে। অনেক'।
- 'সত্যি?'
- 'সত্যি।'
- 'কিন্তু কিভাবে?'
সে জবাব দেয় না। নিঃশ্বাসের শব্দ হয় না। হঠাৎ কোথাও বৃষ্টির শব্দ হয়। পাতার ভেতর পাতায়, শ্রাবণের কান্না বাজে। বসন্তে আগুন লাগে আকাশে আকাশে। আমি টেলিফোনের এপার থেকেই চোখ বন্ধ করি। বুকের ভেতর অতল জলের তীব্র ছোঁয়া টের পাই। সেই ছোঁয়া তিরতির ছুঁয়ে যায় ক্লান্তিহীন অপেক্ষা। টেলিফোনের ওপারে আঙুলের ডগায় কেউ জল ছোয়। সেই জল চোখের, সেই জল গালের, সেই জল বুকের ভেতর। আমি সেই জলের ভেতর ডুবে যেতে যেতে বলি, 'ভালোবাসি'।
সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। এই কান্না পৃথিবীর আর সকল কান্নার চেয়ে গভীর। আর সকল প্রাপ্তির চেয়ে প্রিয়। এই কান্নার ফোঁটাফোঁটা জল বুকের গহিন কোণের অতল ছুঁয়ে আসা অপেক্ষা।
আমি সেই অপেক্ষা ছুঁয়ে ছুঁয়ে বলি, 'ওই জলে ডুবে যেতে চাই, সবটুকু নিয়ে'।
---------- ------------ ----------- -------- --------
আয় তোকে ছুঁই/সাদাত হোসাইন
২| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:২২
বৃতি বলেছেন: সুন্দর।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৫৪
উজবুক ইশতি বলেছেন: হয়। অপেক্ষাই সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন। সবচেয়ে তীব্র প্রয়োজন। বুকের ভেতর যখন অপেক্ষা থাকে না। তখন আর কিচ্ছু থাকে না। না ভালোবাসা, না কান্না, না আনন্দ। না অন্য কিছু, কিছুই না'
এই লাইন খুব খুব ভালো লেগেছে
খুব ভালো লাগল।
ভালো লাগার বাটন না কাজ করছে না। অনেক চেষ্টা করলাম ,আফসোস
ভালো লাগা রইল