![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...
আজাদ আঙুল তুলে বারান্দাটা দেখায়, 'এমন বারান্দাইতো তোমার পছন্দ, তাই না? খোলা বারান্দা?'
দীপা রিকশার হুডের উপর দিয়ে ঘাড় বাকিয়ে তাকায়, তারপর হাসে, 'হ্যা'।
- 'কিন্তু এদের দোলনাটা দেখ, ফালতু, এতো ছোট! এমন দোলনা তোমার পছন্দ?'
- 'নাহ। কিন্তু কি করবে বল? ছোট বারান্দায় এর চেয়ে বড় দোলনা কিভাবে হবে?'
- 'কেন? বারান্দাটা আরও বড় হবে, মাঠের সমান, তাহলেইতো হল'।
- 'মাঠের মতন বারান্দা এই শহরে?' দীপা চোখ বড় বড় করে তাকায়, 'মানুষের পা ফেলে দাঁড়ানোর জায়গা নেই, আর মাঠের মতন বারান্দা! তুমি আসলেই পাগল!'
আজাদ গম্ভীর হয়ে যায়, 'কিন্তু এইটুক দোলনায়তো একজনের বেশী বসাই যাবে না!'
দীপা হাসে, 'কি আর করা! না হয় আমি একাই বসলাম'।
আজাদ এবার আরও গম্ভীর হয়, 'তাহলে আমি? আমি কি করব?'
- 'কি আর করবে? দোলনার পেছনে দাড়িয়ে আস্তে আস্তে ধাক্কা দেবে। জোরে দিও না কিন্তু, পড়ে যেতে পারি!'
আজাদ চুপ করে যায়। দীপা হাসে। আজাদের এই ক্ষেপে গিয়ে চুপ হয়ে থাকাটা তার বেশ লাগে। সে আজাদের গালে হাত রাখে, 'কেন? আমাকে দোলাতে ভালো লাগবে না? অন্য কাউকে দোলাতে চাও?'
আজাদ দীপার হাত সরিয়ে দিয়ে বলে, 'আমার খোলা মাঠের মতন বারান্দা চাই। দুজন বসে থাকার মতন দোলনা, একটা লোক রেখে দেব, সে এসে দোলনা দোলাবে। আর সাবধান, ওই তিতা কফি আমারে দিবা না বলে দিলাম'।
দীপা এবার হো হো করে হাসে। সে তাকিয়ে আছে আজাদের দিকে। আজাদ অবাক গলায় বলে, 'কি হল? হাস কেন? তাকিয়ে আছো কেন ওভাবে?'
দীপা হাসতেই থাকে, দীপা তাকিয়েই থাকে, হাসতে হাসতে তার চোখে পানি চলে আসে। সে মনে মনে বলে, 'এই পাগল, তুমি কি জানো, তুমি এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পাগল! যার জন্য আমি এই জন্ম কেন, পরজন্মেও পাগলী হব!'
আজাদ বোঝে কিনা কে জানে! সে মাথা উঁচু করে আকাশ দেখে!
রিকশাটা মোড় ঘোরে। খানিক আগের ছায়া ঢাকা পথ শেষ হয়েছে। এখানে প্রবল রোদ। রিকশার হুড তুললে আজাদের দমবন্ধ লাগে, কিন্তু তেতে ওঠা সূর্য এখন যেন আগুন ঢালছে।
- 'হুড তুলে দেই?' দীপা জানতে চায়।
- 'নাহ, আমার দমবন্ধ লাগে'। আজাদ কলারের কাছে শার্টের একটা বোতাম খুলে দেয়।
- 'তাহলে? গরম তো অনেক। আমি রোদে আমি পুড়ে যাচ্ছি!' দীপা হাতের ব্যাগ তুলে কপাল ঢাকে।
- 'এখন একটু সহ্য কর। ক'দিন বাদেতো গাড়ীই কিনছি। তখন আরাম করে যেও'।
- 'হুহ, আরাম? তুমি থাকতে? তুমি দরজা জানালা বন্ধ করা গাড়ীতে বসে থাকতে পারবে?'
আজাদ খানিক থতমত খেয়ে যায়। কথা সত্য। সে এসি সহ্য করতে পারে না। জানলা বন্ধ গাড়ীও না। এই জন্য তার প্রিয় বাহন বাস। লোকাল বাস। হাওয়া মে উরতা যায়ে... সে চুপ করে থাকে। তারপর খানিক ভেবে জবাব দেয়, 'আচ্ছা, তাহলে গাড়ী হবে দুটা। তোমার টা এসি, আমারটা নন এসি। এবার ঠিক আছে? প্রবলেম সল্ভড'!
এবার দীপা গম্ভীর হয়ে যায়। সে গম্ভীর গলায় বলে, ' না সল্ভড না, তুমি নিশ্চয়ই আমাকে ক্যাটক্যাটা হলুদ রঙের ট্যাক্সি ক্যাব টাইপ গাড়ী কিনে দিবে না?'
- 'কেন? হলুদ রঙের কেন কিনে দিব?'
- সেদিন যে বললে!'
- 'আরে ধুর!! ওটাতো অইদিন অত বেশী দামী ট্যাক্সি ক্যাব দেখে বলেছি। নতুন হলুদ ট্যাক্সি গুলা। কি ভাড়া দেখেছ?'
- 'তাহলে আমাদের গাড়ীর রঙ কি হবে?'
আজাদ সাথে সাথে জবাব দেয় না। সেই গম্ভীর মুখে রাস্তার চারপাশে গাড়ী দেখতে থাকে। চকচকে কালো রঙের গাড়ীটা দেখিয়ে বলে, 'ওটা? ওটা হলে কেমন হয়?'
দীপা খানিক সময় নিয়ে ঘাড় নাড়ে, 'উম্মম, হুম, চলবে'।
- 'ওকে, ডান'। আজাদ হাসে।
চটপটিতে ঝাল বেশি হয়েছে। দীপার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। কিন্তু তার খাওয়া কমছে না। আজাদ হাতে পানির গ্লাস নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু দীপার তাতে খেয়াল নেই, সে সমানে চটপটি শেষ করে ফুচকা গিলছে। প্রচণ্ড গরমে দরদর করে ঘামছে। হঠাৎ সে হিসহিসে গলায় বলল, 'তোমাকে না বলছি, গরমের ভেতর আর রাস্তার পাশে ফুচকা খেতে আসব না'।
আজাদ নিরীহ গলায় বলল, 'আচ্ছা, আর আসব না'।
- 'তাহলে কোথায় যাব?'
- 'কেন? আজকাল বড় বড় শপিং মলের ফার্স্টফুডে ফুচকা বিক্রি হয়, ওখানে এসি থাকে, আমরা ওখানে যাব'।
- 'কিন্তু ওতে তো অনেক দাম?'
আজাদ শ্রাগ করে, 'আরে ধুর! দাম কত টাকা আর? তখন তো গাড়ী থাকবে, বাড়ী থাকবে, লম্বা বারান্দা থাকবে...'
দীপা আজাদের হাত থেকে গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি খায়। আজাদের কথা আপনাআপনি থেমে যায়, সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে দীপার দিকে তাকিয়ে থাকে, 'একটা মানুষ এতো সুন্দর কি করে হয়! কি করে হয়!!'
দীপা পানি শেষ করতেই, আজাদ চোখ ফিরিয়ে নেয়, সে কেন যেন সরাসরি দীপার চোখে তাকাতে পারে না। সে দীপাকে দেখে লুকিয়ে লুকিয়ে। তার লুকিয়ে দেখা শেষ হয়েছে। আজাদ আবার আগের কথায় ফিরে যায়, 'দীপা, তুমি যে কেন এতো টাকার চিন্তা কর, বুঝি না। আর কয়েকটা দিন, আমি জাস্ট ধানমণ্ডিতে ফ্ল্যাটটা কিনে নেই দাঁড়াও, তারপর গাড়ী...'
আজাদের কথা শেষ হয় না, দীপা মাঝপথে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, 'ওকে মিস্টার বিলগেটস পুত্র, আপনি বাড়ী, গাড়ী এক মিনিট পরে কিনেন প্লিজ, তার আগে ফুচকার দামটা দেন...'
আজাদ ত্বরিত পকেটে হাত দেয়, এ পকেট- সে পকেট করে সে করুণ মুখে পকেট থেকে হাত বের করে, তার হাতের মুঠোয় একটা কয়েন। একটা রুপালী রঙের এক টাকার কয়েন। সে কাঁচুমাচু মুখে বলে, 'এই, আমি না ভুলে মানি ব্যাগ রেখে এসেছি!'
দীপা, চোখ কটমট করে তাকায়, 'তাই না?'
আজাদ কোন কথা বলে না। সে তাকিয়ে আকাশ দেখে। দীপা ফুচকার দাম দিয়ে হনহন করে হেঁটে এসে লেকের পারটাতে বসে। আজাদও। সে চুপিচুপি এসে দীপার পাশে বসে। দীপা তার ব্যাগের ভেতর থেকে একটা মানিব্যাগ বের করে। আজাদ সেদিকে তাকিয়ে জিভ কাটে, 'এটা তোমার কাছে!'
দীপা আবারো কটমট চোখে তাকায়। আজাদ মুহূর্তেই নিভে যায়। দীপা বলে, 'এই মানিব্যাগ গত চারদিন আমার কাছে, মানিব্যাগেতো ফুটো পয়সাটা পর্যন্ত নেই, শেষ যেদিন দেখা হয়েছিল, সেদিনও বলেছিলে, তোমার খেয়াল নেই? চারদিন পকেটে এই ১ টাকা নিয়ে ঘুরতেছ?'
আজাদ মুখ তুলে তাকায়, মুখে জবাব দেয় না, কিন্তু মাথা উপর নিচ করে। তারপর মিন্মিন করে বলে, 'কি করব, টিউশনির টাকাটা এখনও দেয় নি তো!'
দীপা মানিব্যাগটা আজাদের হাতে তুলে দেয়, 'গাড়ী কিনবা না? মাঠের মতন বারন্দাওালা বাড়ী কিনবা না?'
আজাদ কাঁচুমাচু মুখে বলে, 'কিনবোতো...!'
- 'চুপ! একদম চুপ!' দীপা হঠাৎ রেগে যায়। আজাদ মুহূর্তে চুপ হয়ে যায়, সে তাকিয়ে থাকে নিজের পায়ের আঙুলের দিকে। সেখানে নখগুলো বড় হয়েছে। দীপা দেখলে আবার বকবে! সে ভীত চোখে দীপার দিকে তাকায়। দীপা হঠাৎ হি হি করে হাসে। সেই হাসিতে অজস্র বৃষ্টিপাতের শব্দ। আজাদ সেই বৃষ্টির জলে ভিজে যায়। দীপা তার কাছে এসে দুহাতে গাল চেপে ধরে, 'তুমি এমন পাগল কেন?'
আজাদ কি বলবে? সে কিছুই বলে না। নাকি ফিসফিস করে বলে, না কি মনে মনে বলে, 'তুমি কি জানো, তুমি এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পাগলী! যার জন্য আমি এই জন্ম কেন, পরজন্মেও পাগল হব!'
দীপা কি শুনতে পায়? হয়তো পায়।
-----------------------------------------------------------
এক পাগল এবং এক পাগলীর গল্প/ সাদাত হোসাইন
০৮/০৬/২০১৪
২| ২০ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫
জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
স্বপ্নময় কিছুক্ষণ ৷ মুগ্ধ ভালবাসায় হয়ত স্বপ্নগুলো অধরা রয়ে যায় ৷ গোছানো গল্প ভাল লাগল ৷
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:২৪
জাফরিন বলেছেন: খুব সুন্দর হয়েছে। মায়াময় একটা গল্প।