![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...
একটা ঘড়ির খুব শখ।
ক্যাসিও ঘড়ি। স্টিলের সরু চেনওয়ালা ডিজিটাল ঘড়ি। হাতের কব্জির ওপর ফুলের মতন ফুটে থাকে। দেখতে কি যে সুন্দর লাগে! কি যে সুন্দর লাগে! রতনের আব্বা বিদেশ থেকে রতনের জন্য এই ঘড়ি পাঠিয়েছে। রতন টাইম দেখতে জানে না, কিন্তু সেই ঘড়ি হাতে ফুলবাবু সেজে ঘুরে বেড়ায়। আমাকে দেখলেই বলে, 'এই ঘড়ির দাম সবচে বেশি, বুঝছস?'
আমি বলি, 'ক্যান? বেশি ক্যান? ঘড়িতো ইট্টুহানি! দাম বেশি হইব ক্যান?'
রতন বলে, 'এহ! আইছে! এইডা কি বাংলা ঘড়ি পাইছ? এইডা হইল ইংরাজি ঘড়ি'।
আমি বলি, 'ঘড়ির আবার ইংরাজি বাংলা কি?'
রতন বলে, 'যেই ঘড়িতে কাটা ঘোরে, সেই ঘড়ি হইল বাংলা ঘড়ি। দাম কম। আর যেই ঘড়িতে ইংরাজি অক্ষর ওঠে, সেই ঘড়ি হইল ইংরাজি ঘড়ি। দাম বেশি'। আমি রতনের জ্ঞান গরিমায় মুগ্ধ! প্রবল মুগ্ধতা নিয়ে জিজ্ঞেস করি, 'এখন কয়টা বাজে?' রতন হাতের উল্টোপিঠে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঘড়ি দেখল। তারপর ভাব গম্ভীর মুখে বলল, 'এগারোটা তিরিশ'। আনোয়ার চাচা ইশকুলে যাচ্ছেন, আমি দৌড়ে গিয়ে তাকে বললাম, 'ও মাস্টার চাচা, এখন কয়টা বাজে?'
তিনি বললেন, 'প্রায় দশটা বাজেরে ব্যাটা। দশটা বাজতে ইট্টু বাকী আছে। ১৫ মিনিট। ১৫ মিনিট পরেই ১০ টা বাজব!' আমি ভ্রু উঁচিয়ে কিংবা বাঁকা করে রতনের দিকে তাকাই, 'কি রে, দেখলি? তুইতো টাইমই চিনস না। আবার ঘড়িও হাতে দেস!'
রতন দীর্ঘক্ষণ কোন কথা বলল না। চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে বসে রইল। তারপর হঠাৎ মুখ তুলে রাশভারী গলায় বলল, 'তোর না কোন দিন বুদ্ধি হইব না। ইংরাজি আর বাংলা ঘড়ির টাইম কি সমান হইব কোন দিন? দামী জিনিস আর সস্তা জিনিসের দাম কি সমান হয়? এই জন্য ইংরাজী ঘড়িতে বাংলা ঘড়ির চেয়ে সবসময় বেশি টাইম বাজে'!
অকাট্য যুক্তি! এই যুক্তি ফেলে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। একটা বেশি দামী ইংরাজি ঘড়ির আফসোস বুকে চেপে আমি রতনের দিকে তাকিয়ে থাকি।
সেদিন আম্মা হঠাৎ আমাকে বুকের সাথে জাপটে ধরে ফিসফিস করে বললেন, 'আমার আব্বুর কাছে সবচেয়ে বেশি দামী কি?' এই প্রশ্ন এবং উত্তরের খেলা আমরা মাতা-পুত্র অসংখ্যবার খেলেছি। আবারও খেল্লাম। আমি গাল ফুলিয়ে বললাম, 'তুমি'।
আম্মা বললেন, 'তাইলে আমি আমার আব্বুকে যা দিব, সেইটা কি সবচেয়ে বেশি দামী না?'
আমি কিছুক্ষণ বিভ্রান্ত চোখে তাকিয়ে থেকে উপর নিচ মাথা তুললাম। আম্মা তার আঁচলের তলা থেকে নারকেল পাতা দিয়ে বানানো এক ঘড়ি বের করলেন। তারপর আমার হাতে পরিয়ে দিতে দিতে বললেন, 'তাইলে, এইটা এখন কি? সবচেয়ে দামী ঘড়ি না?'
আমি কোন কথা বললাম না। সেই ছোট্ট আমি কি বুঝেছিলাম, জানি না। তবে চুপ করে বসে ছিলাম আম্মার কোলে। পরদিন রতনের সাথে দেখা হতেই রতনকে জিজ্ঞেস করলাম, 'তোর ঘড়িতে কয়টা বাজে?' রতন আগেরদিনের মতই বলল, 'এগারোটা তিরিশ'।
আমি বললাম, 'মাত্র এগারোটা তিরিশ? আমারটায় কয়টা বাজে জানস?'
রতন অবাক চোখে আমার হাতের দিকে তাকাল। আমার হাতে কি এটা! তারপর মুখভর্তি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, 'ঘ...ড়ি? এইডা ঘ...ড়ি? হুহ! তোর এই ঘড়িতে আবার বাজেও, কয়টা বাজে?'
আমি অনেকক্ষণ সেই নারকেল পাতার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রইলাম, তারপর বললাম, 'একলক্ষ এগারোটা তিরিশ বাজে!' রতন চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, 'ঘ্যাট! এতো কোনোদিন বাজে!!
আমি বললাম, 'বাজে। দামী ঘড়ি হইলে বাজে! এইটা পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ঘড়ি'।
-------------------------------------------------------------------------------
পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ঘড়ি/ সাদাত হোসাইন
৩১/১০/২০১৪
২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩১
সকাল হাসান বলেছেন: অসম্ভব সুন্দর একটি লিখা!
অবশ্য টাইটেল দেখে ভেবেছিলাম রোলেক্সের কোন ঘড়ির বিবরন দেওয়া হয়তো
তবে গল্পটা ভাল লেগেছে!
+++
৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৪
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: শিরোনাম দেখে টিপিক্যাল কোন লেখা ভেবেছিলাম ।
পোষ্টে ২য় ভালোলাগা ।
ভালো থাকবেন
৪| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৮
কলমের কালি শেষ বলেছেন:
চমৎকার হইছে । +++
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪১
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: মায়ের হাতে সকল কিছূই যে পৃথিবীর সবচে দামী!
+++