![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...
সেই সময়ের কথা। ক্লাশ সিক্স বা সেভেনে পড়ি।
আমার হাতের লেখা সুন্দর। হোমওয়ার্কের খাতায় গোটা গোটা অক্ষরে সুন্দর হাতের লেখা দেখে আমার শিক্ষকেরা প্রায়ই বলেন, 'কি রে, ঘটনা কি?' আমি বলি, কি ঘটনা?'
শিক্ষকেরা বলেন, 'বাড়ি থেকে যা লেইখা আনস, তাতো মাশাল্লাহ টাইপ করা অক্ষর। কিন্তু ইশকুলে লিখতে দিলেই এই অবস্থা কেন? কাউয়ার ঠ্যাঙ, বকের ঠ্যাঙ...'
আমি কথা বলি না। মাথা নিচু করে চুপ করে থাকি। শিক্ষকেরা বলেন, 'ঘটনা কি? ঘটনা বল?'
আমি ঘটনা বলি না। চুপ করে থাকি। একদম চুপ। আমার সহপাঠীদের ধারণা, বাড়িতে বসে অন্য কেউ আমাকে লিখে দেয়, তাই হোমওয়ার্কের খাতার লেখাগুলো এতো সুন্দর হয়। আমি সেগুলো নিজের বলে চালিয়ে দেই। ইশকুলে এলেই লবডঙ্কা। এ মহা অন্যায়। তারা তাই প্রায়ই জিজ্ঞেস করে, 'কি রে তোর হাতের লেখা এতো সুন্দর হয় কি করে?' আমি তখনও কথা বলি না। মাথা নিচু করে চুপ করে বসে থাকি। তারা আমার অগোচরে ফিসফাস করে। হাসাহাসি করে। আমি লুকিয়ে চুরিয়ে কাঁদি। মন খারাপ করি। আমি জানি, এই হাতের লেখা আমার। আমার নিজের লেখা। আমি এও জানি, ইশকুলে এসে লিখলে আমার হাতের লেখা কেন এতো পচা হয়। আমি জানি। কিন্তু তা আমার কাউকে বলতে ইচ্ছা করে না। একটুও বলতে ইচ্ছে করে না। একটুও না।
সেবার এসএসসি পরীক্ষার আগে শিক্ষকদের হঠাৎ অদ্ভুত খেয়াল হোল। তারা রাত বিরাতে ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে গিয়ে হানা দেন। গিয়ে দেখেন, ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করছে, না ঘুমুচ্ছে! সেদিন রাতে হঠাৎ এক স্যার আসলেন। সবচেয়ে ভয়ংকর স্যার। তিনি ঘরে ঢুকেই থমকে দাঁড়ালেন। আম্মাকে ডেকে বললেন, 'কি ব্যাপার? এতো তারাতারি ও বিছানায় উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে, আর আপনে কিছু বলছেন না?'
আম্মা মিনমিন করে বললেন, 'ও ঘুমাচ্ছে না'।
স্যার বললেন, 'ঘুমাচ্ছে না মানে? তাহলে কি করছে?'
আম্মা বললেন, 'ও লিখতেছে'।
স্যার অবাক গলায় বললেন, বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে, বুকের নিচে বালিশ দিয়ে লিখতেছে? এইটা কোন ধরনের পড়াশোনা? পোলাপান পড়াশোনা করব টেবিল চেয়ারে বইসা। এইটা কি?'
আম্মা আরও মিনমিনে গলায় বললেন, 'স্যার, আমাদের ঘরে কোন টেবিল চেয়ার নাই। এই একটা মাত্র চৌকি। এই চৌকি ছাড়া পড়ার কোন জায়গা নাই। ও তাই এমনে উপুর হইয়া, বুকের নিচে বালিশ দিয়াই লেখে।'
স্যার থমকে যাওয়া চোখে ঘরের চারপাশে চোখ বুলালেন, ছোট্ট একটা চৌকি। তারপর কাঁচা মাটির এক চিলতে মেঝে। সেখানে দুখানা কাঠের পিঁড়ি। তার পাশে পাতার বেড়ার গা ঘেঁসে ভাত তরকারির হাড়ি পাতিল। তিনি খানিকক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর ভারী গলায় বললেন, 'আচ্ছা, একটা কথা বলেনতো, ও বাড়িতে বইসা যা লেইখা নেয়, সেইগুলার হাতের লেখা খুব সুন্দর, কিন্তু ইশকুলে বইসা লিখলেই হাতের লেখার অবস্থা যাচ্ছেতাই, ঘটনা কি? বাড়িতে কি অন্য কেউ আছে যে লেইখা দেয়?'
আম্মা অনেকক্ষণ কোন কথা বললেন না। চুপ করে থাকলেন। তারপর বললেন, 'না স্যার, কেউ লিখে দেয় না। ও নিজেই লেখে। আসলে চেয়ার টেবিল নাই বইলা বাড়িতে বইসা সবসময় এমনে উপুড় হইয়া শুইয়া বুকের নিচে বালিশ দিয়া লেখতে লেখতে অভ্যাস হইয়া গেছে। এখন ইশকুলে যাইয়া উঁচা বেঞ্চের উপর বইসা আর লেখতে পারে না। সমস্যা হয়। এই জন্য হাতের লেখা খারাপ হয়'।
স্যার আর কোন কথা বললেন না। আম্মাও না। তারা দুজনই তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। আমি নির্বিকারভাবে লিখে যেতে থাকলাম। যেন জগতের আর কোন কিছু প্রতি আমার কোন লক্ষ্য নেই, আগ্রহ নেই। আমি আর কিছু শুনছিও না। আমি কেবল লিখে যেতে থাকলাম। লিখে যেতে থাকলাম। সেই লেখা ভর্তি কান্না, সেই লেখা ভর্তি অশ্রু।
একখানা টেবিল আর চেয়ারের কান্না।
২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৩
নিরব জ্ঞানী বলেছেন: "লাইক"
৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:১০
কাফী হাসান বলেছেন: ভালো লাগলো ।
৪| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪০
কলমের কালি শেষ বলেছেন: গল্পটা মন ছুঁয়ে গেল ।
চমৎকার । ++++++
৫| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:০৮
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: অসাধারণ +
শুভেচ্ছা
৬| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৩
জলমেঘ বলেছেন: দারুণ
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:০৫
বৃতি বলেছেন: ভালো লাগলো