নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগের পর্ব (৩)..
বেশ কিছুদিন আর যোগাযোগ হয়নি শাকিল, সুমাইয়ার। শাকিল ইচ্ছে করেই নক করেনা, একটা নির্মোহ ভাব নিয়ে থাকবে বলে মনে মনে কল্পনা করে রাখে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওটা ধরে রাখা যায়না, নকটা যদিও প্রতিবার সুমাইয়াকেই করতে হয় তবুও কথার ব্যাপ্তি কিছুটা বাড়তেই ধরা পড়ে যায় শাকিলের দূর্বলতা কাজ করছে সুমাইয়ার প্রতি।
শাকিল অফিসের কাজ করছিল কিন্তু আজকাল কাজে মন বসছেনা, বার বার অন্য মনস্ক হয়ে যাচ্ছে, সামনে ছুটিতে যাবে, বিয়ের কথাবার্তা চলছে টুকটাক, হয়তো এবার ছুটিতে গেলে বিয়ের কাজটাও সেরে আসতে পারে ইত্যাদি। যারা প্রবাসে থাকে তারা দেশে যাবার দুই একমাস আগে থেকেই দেশের জন্য একটা টান অনুভব করে কখন পৌছবে দেশে, সবার সাথে দেখা হবে, কার কার জন্য গিফ্ট কিনতে হবে ইত্যাদির একটা মিশেলে দুই এক মাস আগে থেকেই মন উচাটন হয়ে যায়, শাকিলেরও তাই হচ্ছে এখন। কাজের ফাঁকে শাকিল ভুলেই গিয়েছিল ঘন্টা খানেক আগে তার মোবাইলে ম্যাসেজ টোন বেজেছিল, ভেবেছিল ইনভয়েসটা শেষ করে দেখবে কিন্তু আর মনে নেই, এখন মনে পড়ল।
তন্দ্রা পাঠিয়েছে ম্যাসেজ, " ভাইয়া সালাম নেবেন, বড় ভাইয়া বলেছে সময় করে ফোন করতে, জরুরী কথা আছে", তন্দ্রা।
আজ বুধবার, আগামীকাল বৃহষ্পতি, হাফ ডে, কাল ফোন করা যাবে ভেবে শাকিল আবার কাজে ডুব দিল.....
কাল ফোন করবে সেই পর্যন্ত কিছু সময় আছে এই ফাঁকে শাকিল এর ফ্যামিলি সম্পর্কে একটু ধারণা দিলে কেমন হয়!
শাকিলরা দুই ভাই তিন বোন, সবার বড় বোন তাহছিনা আপা, দুঃখ জিনিসটা উনার ডিকশেনারীতে নেই, সবসময় হাসির উপর থাকবে, শুনতে অবাক লাগলেও সত্য যে, যখন শাকিল এর মা মারা গিয়েছিল তার চার/পাঁচ দিন পর বাসার সবাই মিলে যখন বসে আলাপ করছিল তখন তাহছিন আপার কথায় সবাই এমন জোরে হেসে উঠল যে, পাশের বাড়ির খালাম্মা দৌড়ে এসে সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে মনে করিয়ে দিল যে মাত্র পাঁচ দিন আগে এই ঘর থেকে একজন বিদায় নিয়েছে, তাই এমন হাসির শব্দ বাইরের কেউ শুনলে সমালোচনা করবে। তারপর বড় ভাই সায়িদ শিক্ষকতা করেন, শাকিল যাকে খুব পছন্দ করে এবং গুরুর মতোই সম্মান করে, তারপর ছোট আপা তাহমিনা সংসার এবং চাকরীও করছে, খুব বদ মেজাজী, ছোট বড় সবাইকে শাসন করার দায়িত্বটা নিজ থেকেই যেন নিয়ে নিয়েছে তাহমিনা আপা, বাকী রইল শাকিল এবং তন্দ্রা এখনো লিখাপড়া করছে অনার্স থার্ড ইয়ার।
বৃহষ্পতিবার অফিস থেকে এসে শাকিল আচ্ছা করে ঘুম দেয়, উঠতে একটু দেরী হয়ে গেল, আছর নামাজ এর সময় যায় যায়, তাড়াতাড়ি উঠে নামাজটা পড়ে নিল, চা বানাল এক কাপ সাথে টোস্ট বিস্কিট, এখানে এসিআই কোম্পানীর টোষ্ট বিস্কিট পাওয়া যায় দোকানে, খুব চলে ওটা, দেশ থেকে মুড়ি ও আসে, শাকিল পছন্দ করে টোস্ট অথবা মুড়ি দিয়ে চা খেতে, খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে মাগরীব এর নামাজটা সেরে ফোন দিল সায়িদ ভাইকে...
হ্যালো ভাইয়া, আসসালামুআলাইকুম, কেমন আছেন? বাবা কেমন আছে? সবাই ভালতো? ইত্যাদি কুশালাদি শেষে সায়িদ ভাই জিজ্ঞেস করল, তুমিতো ওই ব্যাপারে কিছু বললেনা, ওদিকে জোৎস্না আপা বারবার খবর পাঠাচ্ছে ওদের সাথে বসে ব্যাপারটা ফাইনাল করে ফেলতে..
বলেছে নাকি? আমারতো মনে হয়, সুমাইয়া এ ব্যাপারে এগ্রি না, হয়তো ওর ফ্যামিলি প্রেশার ক্রিয়েট করছে বিয়ের ব্যাপারে।
কেন তোকে কিছু বলেছে নাকি? না করে দিয়েছে?
না করেনি তবে হা ও বলেনি, কথা বলে যতদুর বুঝেছি ও এখনো বিয়ের ব্যাপারে সিরিয়াস না, আমার সাথে গত একসপ্তাহে বেশ কবার কথা হয়েছে তবে বিয়ের ব্যাপারে কোন আলাপ হয়নি, সে ব্যাপারে ওর কোন আগ্রহ আছে বলে মনে হয়না, একটু চাইল্ডিস আর হেয়ালির মিশেল আছে বলে মনে হল।
তাহলে তোর মতামত কি? আমরা কি না করে দেব? প্রতিদিন কথা বলছ অথছ বিয়ের ব্যাপারে কোন আলাপ করছনা, ব্যাপারটা একটু কেমন দেখায়না? যদি ইয়েস হয় তাহলে না হয় ঠিক আছে, আর যদি নো হয় তাহলে যোগাযোগ এর কি প্রয়োজন আছে আর? দেখতে তো ভাল দেখায়না, আর তোমার ছুটির দিনতো কাছেই, যদি এটা নো হয়ে যায় তাহলে আমাদের তো অন্যদিকে দেখতে হবে, আমি ভাবছি তোমার বিয়েটা হয়ে গেলে তন্দ্রার ব্যাপারে এগুবো, হাতে কিছু ভাল প্রস্তাব আছে।
তাই নাকি, তাহলেতো ভালই, আগে তন্দ্রার বিয়েটা দিয়ে দিন, আমি এবার ছুটিতে তন্দ্রার বিয়েতে এটেন্ড করে আসলাম, আমার ব্যাপারে না হয় পরের বার দেখবেন
নানা আমরা আগে তোর বিয়েটা সেরে নিতে চাচ্ছি, তন্দ্রার ব্যাপারটা পরে দেখা যাবে, আমি তাহলে ওদেরকে না করে দিচ্ছি, এমনিতে এ ব্যাপারে বড় আপা আর তাহমিনার নিম রাজি, ওরা বলছিল মেয়ে বিদেশে থাকে, চাকরী করে, কেমন হয় না হয় ইত্যাদি, তাহমিনার অফিস থেকে দুই একটা প্রস্তাব আছে, ওর কলিগরা নিজ থেকে যেচেই প্রস্তাবগুলো দিয়েছে, ওরা তো আমাদের ফ্যামিলি সম্পর্কে জানে, আমাদের সবাইকে চেনে, তাই পাত্র দেখার ঝামেলাও নেই, আমরা কথা বলে রাখলে তুই যখন আসবি তখন ফাইনাল করা যবে, কি বলিস? তাহমিনাকে বলব? কথাবার্তা শুরু করার জন্য...
সত্য কথা বলতে কি, সুমাইয়াকে আমার পছন্দ হয়েছে, ওরা যদি এগ্রি থাকে তাহলে এগুতে পারেন, অথবা আপনার যা ভাল মনে হয় করবেন, আমার আর মতামত কি?
অ'কে তাহলে আমি জোস্না আপার সাথে কথা বলে এটা না করে দিচ্ছি আর তাহমিনাকে বলব অফিসের প্রস্তাবগুলো যাচাই বাছাই করতে, আজ রাখি তাহলে, আর শোন তোর আর ওই মেয়েটার সাথে যোগাযোগ রাখার দরকার নেই, আমি এদিক থেকেই না করে দেব
ঠিক আছে ভাইয়া, রাখছি তাহলে, আসসালামুআলাইকুম।
চলবে.........
পরের পর্ব (৫)
©somewhere in net ltd.