নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগের পর্ব (৭)
হঠাৎ করেই তন্দ্রার বিয়েটা হয়ে গেল, বড় ভাইয়া মোবাইল টেক্সট পাঠিয়েছিল, "তন্দ্রার জন্য দোয়া করিস ওর বিয়ের আয়োজন চলছে, বিস্তারিত ফোনে জানাব"
সেকি! তন্দ্রার বিয়ে অথছ আমি থাকবনা! শাকিল ভেবেছিল তন্দ্রার বিয়াটা ধূমধাম আয়োজন করে দেবে, কেননা বড় আপার যখন বিয়ে হয় তখন সে ছোট ছিল, যদিও সেই বিয়েতে খুব মজা করেছিল শাকিল, ঘরের মধ্যে বাজনার তালে নাচ দিয়েছিল, সেই দৃশ্য মনে পড়লে এখনো হাসি পায় শাকিলের, তার পরের বড় ভাইয়ার বিয়েটা ওনি নিজেই সাদামাটা করে করেছেন, জীবনের চাকচিক্যের ধার ধারেননা ওনি, একদম সাদামাটা করে করেছেন, আর গায়ে হলুদ টলুদ ইত্যাদিরতো প্রশ্নই আসেনা, হাতে যখন মেহেদী ও দেবেনা বলে ঘোষনা দিয়েছিলেন তখন বড় আপা চালাকি করে বলেছিলেন, হায় হায় সুন্নত মিস হয়ে যাচ্ছে, তখন রাজি হয়েছিলেন, বড় আপা আর ছোট আপা জাস্ট হাতের তালূতে মেহেদী গোল করে লেপ্টে দিয়েছিলেন।
ছোট আপা তাহামিনার বিয়েটা হল এক দূর্যোগের মতো, শাকিলের মার ক্যানসার ধরা পড়েছিল, মৃত্যু পথযাত্রী, শেষ সময়ে ওনার ইচ্ছে হলো তাহমিনার বিয়েটা দেখে যাবেন, তাহমিনার গাত্র বর্ণটা একটু কালচে শ্যাম বর্ণ হওয়াতে মা একটু চিন্তিত ছিলেন ওর বিয়ের ব্যাপারে, আসলে সে যে হাজার গুণে গুনান্বিতা সেটা তো এক দেখায় বুঝা যাবেনা, গায়ের রং দেখেইতো বেশীরভাগ বিয়ে গুলো হয়, এদিকে মার শেষ ইচ্ছে মেয়ে জামাই দেখেই পরপারে যাবেন, বাবাও ইমোশনাল হয়ে পড়লেন, যে কেউ প্রস্তাব নিয়ে আসলে বাবা বিয়ে দিয়ে দেবেন এমন একটা পরিস্থিতি, সত্যি সত্যি একটা প্রস্তাব আসল, সবাই তখন ব্যাস্ত মা এর সেবা শশ্রুষা নিয়ে, বাবা পাশের বাড়ির শফি কাকাকে বলে আসলেন, আপনি একটু কষ্ট করে পাত্র দেখে আসেন, আপনি শুধু আমাকে বলবেন বিয়ে দেয়া যাবে কিনা, ওটার উপর আমি বিয়ে দিয়ে দেব, কাকা দেখে এসে বলে দিলেন হুম দেয়া যাবে, সাথে সাথে বাবা ডিকলেয়ার করে দিল তাহমিনার বিয়ে, সবাই ভেবাছেকা, তাহমিনা আপু বলল আমি পাত্র দেখব, তারপর আমার মতামত দেব, যেই কথা সেই কাজ, শাকিলরা কেউ আর পাত্র দেখেনি, তাহমিনা তার এক বান্ধবীকে নিয়ে চোখে মুখে একেবারে হিজাব করে চলে গেল পাত্রের অফিসে, নিজেকে পাত্রীর গার্ডিয়ান পরিচয় দিয়ে সরাসরি কথা বলে এসে বলল পাত্র আমার পছন্দ হয়নি, এদিকে বাবা বিয়ে দেবেনই, লেগে গেল হট্টোগোল একদিকে মাকে শুনানো যাচ্ছেনা বাসায় কিসের হাংগামা, তাহমিনা সারারাত কান্না কাটি করে বালিশ ভেজাল, অবশেষে বিয়েটা হয়েই গেল, মা পাত্রের মাথায় হাত রেখে দোয়া করে দিয়ে বিদায় নিলেন।
এদিকে এমন কি হল যে তন্দ্রাকে তাড়াহুড়ো করে বিয়ে দিতে হবে, বড় ভাইয়ার সাথে কথা বলে যা বুঝা গেল তা হল, পাত্রের খালা হলেন বড় ভাইয়ার কলিগ, তন্দ্রার ব্যাপারে আগেই কথা বলে রেখেছিলেন, ছেলে ইউরোপ প্রবাসী, ফ্যামিলিও খুব ভাল মনে হল, ছেলের বাবা হঠাৎ স্ট্রোক করে প্যারালাইজড, তাই ছেলে বাবাকে দেখতে আসল কোন প্ল্যান ছাড়াই, থাকবে মাস দুয়েক, এখন গেলে আবার আসাটা একটু ঝামেলার ব্যাপার তাই তারা তাড়াহুড়া করে বিয়েটা সেরে ফেলতে চায়, এখন বিয়ে করে চলে যাবে, এবং গিয়ে তন্দ্রাকে নিয়ে যাবার পেপার রেডি করবে এই হলো পরিস্থিতি, বড় ভাইয়া অবশ্য বলেছিলেন তাদের আর একটু ওয়েট করলে শাকিল আসলে একসাথে দুটো বিয়ের আয়োজন করা যেত, এখন একটা বিয়েরে আয়োজন করলে ওদিকে শাকিল এর বিয়ের ব্যাপারে টাকা পয়সার টানাটানি হয়ে যাবে, কিন্তু পাত্র পক্ষ নাছোড় বান্দা, "আপনারা শুধু খোরমা খেজুর মুখে দিয়ে আমাদের পাত্রী দিয়ে দেন, যা অনুষ্ঠান করার আমরা করব, আমরা বৌভাতের আয়োজন করব, ওখানে আপনাদের যত গেষ্ট আছে দাওয়াত দেবেন খরচ আমাদের, বড় ভাইয়া বলল তা কি করে হয়ে, ছোটখাট প্রোগ্রাম করা যাবে।
তন্দ্রার বিয়ের ব্যাপারে আরো একটা কারণ অবশ্য ছিল, সেটা বড় ভাইয়া ডিটেল্ড বলেনি, ভাবির সাথে কথা বলে জানা গেল ইদানিং ঘন ঘন তন্দ্রার মোবাইলে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসছে, পাশে কেউ থাকলে ওটা হয়ে যাচ্ছে রং নাম্বার তাই ব্যাপারটা নিয়ে ভাইয়া ভাবি একটু চিন্তিতই ছিল, আর যেহেতু ভাল পাত্র পাওয়া গেল তাই তাড়াহুড়ো হলেও মন্দ হবেনা বলে ধরে নেয়া যায়।
তবুও শাকিল চেয়েছিল বিয়েতে এটেন্ড করবে, কিন্তু বড় ভাইয়া নিষেধ করলেন, বললেন তুই তোর সময় মতো আয়, তেমন আয়োজন হচ্ছেনা, তোর বিয়েটাই ভাল আয়োজন করে দেয়া যাবে, এমনিতেই আগের বিয়েগুলোর ব্যাপারে অনেক আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশী একটু নাখোষ হয়ে আছে, সেটা তোর বিয়েতে পুষিয়ে দেয়া যাবে
চলবে.........
পরের পর্ব (৯)
©somewhere in net ltd.