নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাকপ্রবাস

বাকপ্রবাস

সৈয়দ আহমেদ হাবিব

বাকপ্রবাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে......(৯)

১৬ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:০২





আগের পর্ব (৮)



শাকিল চিন্তা করছিল সুমাইয়ার সাথে প্রতিদিনের কথাবার্তাটা একটু টু-মাচ হয়ে যাচ্ছে, তাই ভাবছিল সরাসরি জিজ্ঞেস করে ব্যাপারটার একটা ইতি টানা দরকার, এভাবে আরব্য রজনীর ইতিহাস এর মতো ব্যাপারটাকে তালগোল পাকানোটা ঠিক হচ্ছেনা, তাই এবার যখন সুমাইয়া নক করবে তখন ব্যাপারটার একটা ইতি টানা হবে বলে ঠিক করে রেখেছে শাকিল মনে মনে...



যথারীতি সুমাইয়ার আগমন



সুমাইয়া: আন্টিকে স্বপ্নে দেখেছি

শাকিল: কোন আন্টি



সুমাইয়া: আপনার আম্মাকে

শাকিল: তাই নাকি, হঠাৎ করে ওনাকে কেন দেখলেন



সুমাইয়া: জোৎস্না আপু আপনার আম্মুর এতো প্রশংসা করছিলেন যে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল, তাই হয়তো রাতে স্বপ্নে দেখলাম, আন্টি নাকি খুব ভাল ছিলেন

শাকিল: আন্টিকে না দেখে মরহুমা হবু শ্বাশুরিকে দেখলে আমিও উদ্ধার হতাম আর কি!



সুমাইয়া: আন্টি সম্পর্কে বলেননা, আমি শুনব

শাকিল: বলব, তবে শর্ত আছে



সুমাইয়া: কি শর্ত?

শাকিল: আমি বলা শুরু করব আর যখন শেষ হবে সেটাই হবে আমাদের শেষ সাক্ষাৎ, তারপর আমাদের আর যোগাযোগ হবেনা, বিশেষ করে আপনি আমাকে আর নক করবেননা, কেননা আমি আপনার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছি যা উচিত হচ্ছেনা



সুমাইয়া: আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি বলুন আমি শুনব তবে আমাদের শেষ কথা হবে আজ না, আগামী সপ্তাহের কোন একদিন, ধরুণ সোমবার, আগামী সোমবার আমাদের শেষ কথা হবে, ঠিক আছে?

শাকিল: ওকে ডান...



সুমাইয়া: আপনাকে আর একটা কথা বলে রাখি, আমি কিন্তু আপনার সাথে একটা মিথ্যা কথা বলেছি, মিথ্যে ঠিকনা আপনাকে বলা হয়নি, আজ বলব

শাকিল: আমি যানি আপনি কি বলতে চাচ্ছেন



সুমাইয়া: কি বলুনতো!

শাকিল: আপনার সাথে কারো রিলেশান আছে এইতো!



সুমাইয়া: হুম। হুম না

শাকিল: হুম। হুম না, মানে কি?



সুমাইয়া: ঠিক বলেছেন আবার ঠিকও না

শাকিল: মানে কি দাঁড়াল? ঘোড়ার ডিম?



সুমাইয়া: মানে হল আমার সাথে একজনের একটা রিলেশান আছে তবে সেটা রিলেশান না, সেটা কি আমি নিজেও জানিনা

শাকিল: না জানলে আমাকে বলার ও দরকার নেই, সেটা আপনার কাছেই থাক



সুমাইয়া: না, আপনাকে বলি, কোন সমস্যা নেই, আমার এক সহপাঠি, ইন্টার মিডিয়েটে আমরা একসাথে পড়েছি, তারপর তো আমি চলে আসলাম এখানে, বছর দেড়েক আগের কথা, আমাদের আবার পরিচয় ফেইসবুক থেকে, সে এখন অষ্ট্রেলিয়াতে আছে, সেই থেকে আমাদের যোগাযোগ, শুধুই নেটেই সীমাবদ্ধ, আমাকে পাগলের মতো পছন্দ করে, আমি বলে দিয়েছি, "তুমি যদি তোমার পেরেন্টস কে প্রপোজাল নিয়ে আমাদের ঘরে পাঠাতে পার তাহলে একটা সলিউশান হতে পারে, অন্যথা না।" কিন্তু সে একটু ভিতু টাইপ এর, আর যেহেতু সে এখনো স্টুডেন্ট তাই ও দ্বিধা দ্বন্দে আছে, ওদিকে ওর বাবা একটু বদ মেজাজি আর ছেলেকে নিয়ে উচ্চ বিলাসী, ছেলের মুখে এখন আমার ব্যাপারে বা বিয়ে নিয়ে কিছু শুনলে নিশ্চিত ওকে ত্যাজ্য করবে, আমাকে প্রতিদিন কনভিন্স করার চেষ্টা করে যে আমি যেন একটু ওয়েট করি তার পড়া লিখা শেষ হওয়া পর্যন্ত, কিন্তু আমার পক্ষে তা আদৌ সম্ভব না, আমি আমার ফেমিলীকে কষ্ট দিয়ে কিছু করতে পারবনা, আমার মা বাবাকে কষ্ট দিয়ে কিছু করার ইচ্ছে আমার নেই, তাছাড়া আমি তো মেয়ে, আমার বয়েস হচ্ছে, আমার এখন সংসার করা দরকার, আমিতো অনন্তকাল অপেক্ষা করতে পারিনা.........

শাকিল: হুম, শুনলাম



সুমাইয়া: এবার আপনি বলুন, আমি শুনছি, আমি সিরিয়াস হলাম কোন দুষ্টামি করবনা

শাকিল: কি শুনতে চান?



সুমাইয়া: আপনি, আপনার ফ্যামিলি ইত্যাদি, আসলে সত্যি কথা বলতে কি, আপনাকে আমার কেমন লাগে আমি জানিনা তবে আপনার কথাগুলো খুব ভাল লাগে, শুধু শুনতে ইচ্ছে করে

শাকিল: একটু বেশী হয়ে যাচ্ছেনা..



সুমাইয়া: একদম বেশী না, যা সত্য তাই বলছি, আপনি শুরু করুন

শাকিল: কি বলব, কোথথেকে শুরু করব জানিনা, মাকে দিয়েই শুরু করি

জানেন, মা'র জন্য খুব কষ্ট হয়, সারা জীবন আমাদের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন, আজকে আমি ভাইয়া স্বাবলম্বী অথচ মাকে যে একটা শাড়ী কিনে দেব তার উপায় নেই, চলে গেলেন, সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে যখন সুখের মুখ দেখার সময় ঠিক সেই সময় মা বিদায় নিলেন, খুব কষ্ট হয় মাঝের মধ্যে, আমার খুব ইচ্ছে হয় মা এর জন্য একটা সুন্দর শাড়ী কিনব।



আমাদের ঘরে খুব অল্প সময় ব্যাবধানে অনেক কিছু ঘটে গেল, আসলে পুরো পরিবার প্রস্তুত ছিলামনা এমন কতগুলো সিচুয়েশান ফেইস করার।



বাবা রিট্যায়ার করলেন, একই সময়ে মা এর ক্যানসার ধরা পড়ল, বড় ভাইয়া তাহমিনা আপু আমি আর তন্দ্রা তখনো ষ্টুডেন্ট, আমাদের তেমন জায়গা সম্পত্তি নেই যে ঘর চালানোর, বাবার উত্তরাধীকার সূত্রে ভাইয়া চাকরীটা পাবার কথা কিন্তু ভাইয়ার মাষ্টার্স এর আরো ছয় মাস বাকী আছে এবং চাকরী ওনি করবেননা, ওনার এইম ইন লাইফ হল শিক্ষকতা করবেন, এদিকে আমি মাত্র অনার্স ফাষ্ট ইয়ার. আমি যদি বাবার অফিসে জয়েন্ট করি তাহলে পিয়ন এর পোষ্ট ছাড়া আর উপায় নেই, কেননা আমার শিক্ষকতা যোগ্যতা ইন্টার মিডিয়েট, অবশেষে তাহমিনা আপাই চাকরীতে জয়েন্ট করলেন।



এদিকে বাবা ঘরের সবাইকে নিয়ে বসলেন, বড় আপাও আসলেন মা এর অসুস্থতার নিউজ শুনে, বাবা বললেন, আমার রিটায়ার্ডমেন্ট বাবাদ যা পাব ওটা কি করব তোমারা সিদ্ধান্ত নাও, ওটা কি অন্যকোন ইনকাম এর উৎস হবে নাকি তোমাদের মা এর চিকিৎসা করানো হবে, তবে আমার ইচ্ছে হচ্ছে আমি চাইনা আমার ছেলে মেয়ের পড়ালিখা বন্ধ হোক, আল্লাহ নিশ্চয় কোন উপায় করে দেবেন।



আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম আগে আম্মার চিকিৎসা হোক পরেরটা পরে দেখা যাবে।



চলবে..........



পরের পর্ব (১০)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.