নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগের পর্ব (২১)
সমুদ্রে জোয়ার যখন আসে বেড়ে যায় ঢেউ এর উচ্চতা আর ভাসমান খড়-খুটো গুলো আছড়ে ফেলতে চায় তীরের দিকে, তবে ভাটার টান যে কি ভয়ংকর সেটা সেই বুঝে যে তলিয়ে গেছে বা তলিয়ে যেতে যেতে ফিরে এসেছে, আমারও এমন অনেক অভিজ্ঞতা আছে ভাটার টানে যাওয়া আসা তবে সাঁতার জানা ছিল বলেই রক্ষা।
আমার চাকরী বদল হল, নতুন জয়েন্ট করলাম একটা ব্যাংকে, স্যুট টাই লাগিয়ে রীতিমত সাহেব বনে গেলাম, চেষ্টা করছিলাম কর্পোরেট জীবন যাপনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেবার।
সমস্যায় পড়লাম যখন আমার মোবাইলে রিং আসে, যেই রিং করুকনা কেন, মোবাইলে সাউন্ড হলেই আমার মনে হতো রুমি ফোন করেছে আর সাথে সাথে কেঁপে উঠতো প্রথমে আমার বুক তারপর পুরো শরীর, মাঝে মাঝে মনে হতো মোবাইলে রিং হচ্ছে কিন্তু যখন রিসিভ করার জন্য হাতে মোবাইল নিতাম দেখতাম কোন কল আসেনি আমি ভুল শুনেছি, ব্যাপারটা স্বাভাবিক মনে হলেও আমি বুঝতে পারছিলাম পরে হয়তো আমি বড় কোন মানসিক সমস্যায় পড়তে যাচ্ছি।
নতুন চাকরী কিন্তু খুব ঘন ঘন ভুল পোষ্টিং দিচ্ছিলাম অফিস কাজে, আমার সিনিয়র নোমান ভাই এর আন্ডারে কাজ করছিলাম, নোমন ভাই আমাকে বেশ কবার হিন্ট্স ও দিচ্ছিলেন, আমি নাকি এবসেন্ট মাইন্ড হয়ে যাই কাজের ফাঁকে, শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম মাথা থেকে আপাতত রুমি ঝাড়তে হবে, অন্তত প্রোবে'শনাল পিরিয়ডটা যাক, আর বদলে নিলাম মোবাইল সিমটা, যাতে আমার আর ধারনা না হয় রুমি ফোন করেছে, কেননা তার কাছেতো আমার নাম্বার নেই।
ব্যাক অফিসে বসে কিছু কাজ করছিলাম, কিছু ভাউচার জমে গিয়েছিল পোষ্টিং দেয়া হয়নি, কাজটা আমার ছিলনা, ম্যানেজার রিকোয়েষ্ট করেছিল যদি সময় পাই তাহলে যেন ওগুলো পোষ্টিং দিয়ে এডজাষ্ট করে দিই, মোবাইলটা বেজে উঠলো, রিসিভ করেই আবার সব উলোট পালট হয়ে গেল..
হ্যালো শব্দটা শুনেই বুকের মধ্যে ভুমিকম্প শুরু হল, প্রথম শব্দটা শুনেই নিশ্চিত ছিলাম এটা রুমির কন্ঠ...
-হ্যালো আমি রুমি বলছি
=হুম চিনতে পেরেছি, কেমন আছ?
- ভাল, তুমি কেমন আছ?
=ভাল আছি
-তুমি কি এখন একটু আসতে পারবে?
=কোথায়?
-তুমি হয়তো জাননা, আমি কলেজে জয়েন্ট করেছি, আমাদের বাড়ির কাছের কলেজটাতে, যেটাতে আমি ইন্টার পড়েছিলাম, এখানেই আসতে পারলে ভাল হ'ত, পারবে?
=এখনতো আসা যাবেনা, আমিওতো আগের জবটাতে নেই, ওই জবটাতে থাকলে পারতাম বাট এখন পারা যাবেনা, আমার সপ্তাহে দুইদিন বন্ধ আছে, শুক্র আর শনি, তুমি চাইলে এই দুইটা দিন বেছে নিতে পার
-তাহলে শনিবার দেখা কর, আমি শনিবার কলেজ করবনা, সকাল ন'টায় আমি তোমার আগের অফিসের পাশের মার্কেটটায় থাকব।
= ঠিক আছে, আচ্ছা তুমি আমার মোবাইল নাম্বারটা কোথায় পেলে? আমিতো নাম্বার চেন্জ করেছি বেশীদিন হয়নি
-সেটা পরে বলব, এখন রাখি, খোদা হাফেজ।
আমার খুব আত্মবিশ্বাস ছিল রুমি আবার আসবে, যদিও আমি এখনো নিশ্চিত নই এটা কি ফিরে আসা নাকি বিদায় নেবার আয়োজন, রুমির বিয়ে হয়ে যায়নিতো! সেদিন যদি বরকে সংগে করে এনে পরিচয় করিয়ে দেয় ব্যাপারটা কেমন হবে! আমার নতুন নাম্বারটা কিভাবে পেল? এই নাম্বারতো রিমি বা অন্য কাউকে দেয়া হয়নি এখনো, আমার চাকরীর খবর ও কি জানে? হাজার উদ্ভট চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে শুরু করল, আর সময় যেন কাটতে চাইছেনা কোনভাবে, শনিবার যেন অনেক দূর।
অবশেষে মুখোমুখি হওয়া গেল শনিবারের, আমার পৌঁছতে একটু লেইট হল, পথে জ্যামে পড়েছিলাম, দূর থেকেই দেখতে পাচ্ছিলাম মার্কেটের প্রবেশ পথে রুমি পায়চারী করছিল, আমাকে দেখেই বলে উঠলো, এতক্ষণে আসলে, আমি সেই কখন থেকেই অপেক্ষা করছি, মুখে সরি বললাম যদিও মনে মনে ভাবছিলাম আজকে আমার দেড়টা বছর রাত আর দিন দুটোই নির্ঘুম কেটেছে এই অপেক্ষা নামক শব্দটার পেছনে, অথচ আজ ৩০ মিনিট দেরী হল তাই সরিও বলতে হল।
রুমি বলল "চল কোথাও যাই।"
আসলে আমি প্রস্তুত ছিলামনা একসাথে কোথাও যাবার, একেতো আমার কোন অভিজ্ঞতা নেই এসব ব্যাপারে, আজকাল সবাইতো প্রেম করে, তারা কোথায় যায়! কেন যায়, কিভাবে যায় এসবের ধারণা নেই আমার কাছে, তাছাড়া রুমি আজকে কেন দেখা করতে বলেছে তারওতো কোন ইংগীত পাওয়া যায়নি, তবুও রুমির বলার ধরণটা দেখে আমার মনে হলো কোথাও যাওয়া উচিত, মনে মনে একটু ভেবে নিলাম কোথায় যাওয়া যায়।
নাহিম ভাই এর কথা মনে পড়ে গেল, আমার সব সময় মন খারাপ থাকতো তাই নাহিম ভাই চেষ্টা করতেন আমার মাইন্ড চেইন্জ করার জন্য, প্রায়ই কলিগদের সবাইকে নিয়ে ট্যুর এর আয়োজন করতো, সিলেট, বান্দরবান, কক্সবাজার এসব লং ট্যুর এর পাশাপাশি আশে পাশের কোন জায়গাও বাদ দেননি, সীতাকুন্ডের পাহাড়, চকরিয়ার দুলহাজরা ইকোপার্ক ইত্যাদি, নাহিম ভাই এর ধারণা প্রকৃতির সাথে মিশলে আমার মন চেন্জ হয়ে যাবে ধীরে ধীরে, কিন্তু ফল হতো উল্টো, যখন কোন সুন্দর প্রকৃতি দেখতাম আমার মনে হত ইশ আজ যদি রুমি থাকতো পাশে!
হঠাৎ মাথায় এল চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট এর দিকে যাওয়া যায়, কর্ণফুলি নদীর মোহনা দেখা ছাড়াও এয়ার পোর্টটা নতুন করে সাজানো হচ্ছে, খুবই সুন্দর, একপাশে কিছু অস্থায়ী ছোট ছোট টি স্টল আছে এবং পাশে গাছের ছায়ায় ঘাসের উপর মাদুর বিছিয়ে দেয়, একেবারে প্রকৃতির কোলে বসে চা পান, রুমিকে বললাম, চল তোমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যায়, আমার খুবই প্রিয় যায়গা, জানিনা তোমার কেমন লাগবে, তবে যত বারই আমি সেখানে গিয়েছি তোমার শুন্যতা অনুভব করেছি, রুমি বলল চল যাওয়া যাক........
চলবে...........
পরের পর্ব (২৩)
©somewhere in net ltd.