নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাকপ্রবাস

বাকপ্রবাস

সৈয়দ আহমেদ হাবিব

বাকপ্রবাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে...(২৩)

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৫





আগের পর্ব (২২)



সেদিন গাড়িতে রুমি বলছিল শীত শীত লাগছে একটু, আমি নিরব ছিলাম, কথাটাকে তখন তেমন গুরুত্ব দিয়ে শুনা হয়নি, কেন জানি সংকোচ বোধ করছিলাম আমি, কি কথা বলা যায়, কিভাবে শুরু করা যায় ভাবছিলাম, আমার অনুভুতিগুলো তখন কাজ করছিলনা, চিন্তাগুলো তালগোল পাকছিল, তাই রুমির কথাটা তখনো আমার বুঝা হয়ে উঠেনি, হয়তো আজও বুঝে উঠতে পারিনি কথাটারা কি মানে, তবে হঠাৎ হঠাৎ মনে পড়ে কথাটা এখনও, একটা ছোট কবিতাও লিখা হয়েছে বিষয়টা নিয়ে আরও অনেক পরে, ছোট কবিতা তাই মুখস্থ আছে আজও, আবৃত্তি করা চলে তবে একটু পরেই করা যাবে, এখন আবার ফিরে যাওয়া যাক সেই শনিবারে।



আমরা গিযে বসলাম সেই গাছের ছায়ায়, ঘাসের উপর বিছানো মাদুর এর উপর। রুমিকে খুব স্বাভাবিকই মনে হলো সেদিন, সে যে দেড়টা বছর আত্মগোপন ছিল আমার কাছে, তার কোন ভাবলেষ দেখলামনা, আমি যখন নিরব ছিলাম মৌনতাটা সেই ভাঙগাল একটা প্রশ্ন করে, "তুমি কি আমার বাসায় ফোন করতে মাঝের মধ্যে? বিশেষ করে রাতে!" বললাম কখনো করিনি, কতবার হাত নিশফিশ করেছে একবার ফোন করি, কতবার ০১১২....... অক্ষরগুলো ডায়াল করতে করতে আর করা হয়নি, খুব কষ্ট হতো আমার, অসহ্য রকম একটা অনুভূতি হত, নিজেকে সামলাতে না পেরে ভাবতাম একবার ফোন করেই ফেলি, মোবাইল সেইভে থাকা নাম্বারটা স্ক্রিনে এনে সেন্ড বাটনে টিপ দিতে দিতে আর দেয়া হয়না।



অঞ্জন দত্তের গানটা নিশ্চয় শেনা আছে তোমার, আমি তোমাকে গিফ্ট করেছিলাম, "হ্যালো ২৪৪১১৩৯" গানটা আমার প্রতি রাতের সংগী হয়ে গেল, সারা রাত শুনতাম, শেষে হয়ে গেলে গান রিপিট দেয়া আছে, বাজতেই থাকত, আমি থাকতাম আধো ঘুম আর আধো জাগরণে, বাবা যখন মাঝরাতে তাহাজ্জুত পড়ার জন্য উঠতেন তখন আমার রুমে এসে বন্ধ করে দিতেন।



অন্য রকম একটা জগৎ তৈরী হয়ে গেছে আমার নিজের কাছে, পৃথিবীর কোন কিছুর প্রতি যেন আমার আর কোন আগ্রহ নেই, অন্য রকম একটা নেশার জগৎ, সেখানে নেই কোন আনন্দ, হাসি-কান্নার বাড়াবাড়ি, নেই কাউকে পাবার আনন্দ কিংবা হারাবার ভয়, আমি থেকে থেকে ঢুকে যেতাম সেই জগতে, কখনো কখনো অফিসে কাজের ফাকেঁও কতবার ঢুকে গেছি, তখন একটু যে প্রবলেম হয়না তা নয়, তবে প্রতি রাতে আমি সেই জগতে বিচরণ করি, বিশেষ করে বৃহষ্পতি আর শুক্রবারের রাতটা, রাতে ইচ্ছে করে ঘুমাতামনা, গান শুনতাম আর টুকটাক কবিতা লিখতাম।



রুমি হঠাৎ বলে বসল আমার মুখে গানটা শুনবে, আমিও পড়লাম বিপদে, গান অনেকেই গাইতে পারে, অনেকে গান না শিখেও মোটামোটি বন্ধু বান্ধবের সাথে আড্ডায় একের পর এক গেয়ে যেতে পারে, সেখানে তাল লয় ঠিক না থাকলেও তখন শুনতে মন্দ লাগেনা, তবে আমি কোন ভাবেই গাইতে পারিনা, এমন বেসুর কেন আমার কন্ঠটা আমি নিজেও বুঝিনা, গান গাইলে সেটা শুনতে মনে হয় কবিতা পড়ছি, কোন ভাবেই যায়না আমার মুখে গান গাওয়া বিষয়টা, এদিকে রুমি গো ধরে বসে আছে, কোন কথা বলবেওনা কিংবা শুনবেওনা, আগে গানটা তাকে শুনানো চাই, হার মানতো হলো, প্রতিবারইতো হার মানি, আজকে না হয় আবার মানলাম।



বেলা বোষ



চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছ

এখন আর কেউ আটকাতে পারবেনা

সমন্ধটা এবার তুমি ভেস্তে দিতে পার

মাকে বলে দাও বিয়ে তুমি করছনা।।

চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্যি

আর মাত্র কয়েকটা মাস ব্যাস

স্টার্টিং এ ওরা ১১০০ দেবে

তিন মাস পরে কনফার্ম

চুপ করে কেন বেলা কিছু বলছনা

এটা কি ২ ৪৪ ১১ ৩৯

বেলা বোস তুমি পারছকি শুনতে

দশ বারো বার রং নাম্বার পেরিয়ে তোমাকে পেয়েছি

দেবনা কিছুতেই আর হারাতে।

হ্যালো ২ ৪৪ ১১ ৩৯

দিননা ডেকে বেলাকে একটিবার

মিটার যাচ্ছে বেড়ে এই পাবলিক টেলিফোনের

জরুরী খুব জরুরী দরকার।

স্বপ্ন এবার হয়ে যাবে বেলা সত্যি

এত দিন ধরে এত অপেক্ষা

রাস্তার কত সস্তা হোটেলে বদ্ধ কেবিনে বন্দি দু'জনে

রুদ্ধশ্বাস কত পরীক্ষা।।

আর কিছুদিন তারপর বেলা মুক্তি

কসবার ঐ নীল দেওয়ালের ঘর

সাদা-কালো এই জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার শহরে

তোমার আমার লাল-নীল সংসার

এটা কি ২ ৪৪ ১১ ৩৯

বেলা বোস তুমি পারছকি শুনতে?

দশ বারো বার রং নাম্বার পেরিয়ে তোমাকে পেয়েছি

দেবনা কিছুতেই আর হারাতে।

হ্যালো ২ ৪৪ ১১ ৩৯

দিননা ডেকে বেলাকে একটিবার

মিটার যাচ্ছে বেড়ে এই পাবলিক টেলিফোনের

জরুরী খুব জরুরী দরকার।

চুপ করে কেন, একি বেলা তুমি কাঁদছ?

চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি সত্যি

কান্না কাটির হল্লা হাটির সময় গেছে পেরিয়ে

হ্যালো ! তুমি শুনতে পাচ্ছ কি? ।।

.....................................

.....................................

......................................

.......................................

.......দূর ছাই ২ ৪৪ ১১ ৩৯.....।



তারপর দু'জনই অনেক্ষণ নিরবে বসে ছিলাম, গানের কথাগুলো যেন আমাদের নিজেদের কথা হয়ে গেল, আমি মিলাচ্ছিলাম আমার সাথে, ওদিকে রুমিও বোধ'য় তার নিজের সাথে মিলাচ্ছিল গানের কথা গুলো।



টি বয় এসে পেঁয়াজু দিযে গেল, সংগে মুড়ি, পেঁয়াজু আমার খুব প্রিয় একটা খাবার, এমন সুন্দর পরিবেশ, বটবৃক্ষের নিচে ঘাসের উপর মাদুর পাতা, এমন সুন্দর পরিবেশে যেন পেঁয়াজুই খাওয়া উচিত, চা টা একটু পরেই দিতে বলেছি, রুমি হাত বাড়িযে পেঁয়াজু নিল একটা, সাইজটা বেশী বড় নয়, ছোট ছোট, হাতেই রেখে দিল, মুখে আর দিলনা, কি যেন ভাবছে রুমি, আমি আর লোভ সামলাতে পারলামনা, মুখে দিয়েই দিলাম।



"আচ্ছা তোমার বাসায় রিং করেছি কিনা প্রশ্নটা কেন করলে?" জিজ্ঞেস করলাম রুমিকে, সে হাসল একটু করে শব্দহীন, তারপর বলল, " আমার বাসায় প্রায়ই রিং আসতো, আমি কখনো মোবাইল রিসিভ করতামনা, কেননা মা আমাকে সন্দেহ করত, রিং পড়তেই থাকতো, হয়তো মা কিচেনে আমাকে বলল রিসিভ করতে আমি করতামনা, মা নিজেই এসে রিসিভ করত, আর ওদিকে কোন শব্দ নেই, মা হ্যালো হ্যালো করে রেখে দিত, আর বাঁকা চোখে তাকাত আমার দিকে।



চলবে...............



পরের পর্ব

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৫

শাবা বলেছেন: এ পর্ব সুন্দর হয়েছে। আগেরগুলো পড়তে হবে।
আমার ব্লগে আমন্ত্রণ।

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:২৭

বাকপ্রবাস বলেছেন: খুবই ধন্যবাদ জানবেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.