নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাকপ্রবাস

বাকপ্রবাস

সৈয়দ আহমেদ হাবিব

বাকপ্রবাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে....(২৭)

১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৪১





আগের পর্ব (২৬)



রিমি কিছু বলার আগেই বললাম, আমি সত্যিই দুঃখিত তোমাকে এভাবে বিব্রত করছি বলে, তবে আমি নিরূপায়, রুমি আমাকে দেখা করতে বলে লাপাত্তা, ওর কোন খবর পাচ্ছিনা, আমি চাইলে অন্য কোন উপায়ে খবরটা নিতে পারি কিন্তু সেভাবে শোভন হবেনা ভেবেই তোমাকে বিরক্ত করছি, আমাকে কি দয়া করে বলা যাবে? রুমির কি হয়েছে?

-রিমি বলল, "কেন শাকিল ভাই আপনি কি কিছুই জানেনা!"

- বললাম সত্যিই জানিনা

- "কেন রুমি কি আপনাকে কিছুই জানাইনি?"

- নাতো! কি হয়েছে রুমির?

- "গত শনিবার রুমির আকদ হয়ে গেছে।"



আমি নিথর হয়ে গেলাম, মোবাইলটা কানে ধরেই রইলাম, সম্ভবত রিমি হ্যালো হ্যালো করে নিজেই কেটে দিয়েছে লাইনটা,আমার আর মনে পড়েনা, আমি অফিস থেকে বের হয়ে এলাম, রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতে লাগলাম, আমার মাথায় তখনো শব্দগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে রুমির আকদ হয়ে গেছে, এই শব্দগুলোর কি অর্থ দাঁড়ায় সেটা আমার মাথায় কাজ করছিলনা, আমার শরীর কাঁপছে, তখনো চোখের জল বুঝতে পারেনি কি ঘটে গেল!



আর হাঁটা যাচ্ছেনা, আমি তালগোল পাকাচ্ছি, কোন পথ দিয়ে হাঁটব বুঝতে পারছিনা, কোথায় যাব আমি! কোথায় যাওয়া উচিত? আমার গন্তব্য কোথায়! মাথাটা ঘুরছে, কতদূর সামনে হেঁটে আবার উল্টো পথ ধরছি, মাথায় এলো নাহিম ভাই এর কাছে যাব, এই মুহুর্তে নাহিম ভাই ছাড়া পৃথিবীর আর কাউকে আপন মনে হ'লনা, আমার হাত কাঁপছে, কাঁপা কাঁপা হাতে অনেক কষ্টে নাহিম ভাই এর নাম্বারটা খুঁজে বের করলাম, বললাম নননাহিম ভভভাই আআপনি ককোথায়! খখুব দদরকার, আসলে আমার শব্দগুলো জড়িয়ে যাচ্ছিল, স্পষ্ট করে বলতে পারছিলামনা।



নাহিম ভাই তখন ওনার বাসায় ছিলেন, কথা আর না বাড়িয়ে আমাকে বললেন, "বাসায় চলে আসেন, সিএনজি নিয়ে আসেন, বাসে করে আসার প্রয়োজন নেই," নাহিম ভাই তখনই ধারনা করেছিল, ঘটনাটা, আমি সিএনজি ভাড়া করে চলে গেলাম, নাহিম ভাই এর বাড়ীটা মেইন রোড থেকে একটু ভেতরে, আমি আর চিনতে পারছিনা, সেন্স তখন কাজ করছিলনা, ড্রাইভার আমাকে মেইন রোডেই নামিয়ে দিয়ে চলে গেল।



মোবাইল হাতড়ে আবার ফোন দিলাম নাহিম ভাইকে, বললাম আমি বোধ'য় মেইন রোডে আছি, বাকি পথটা চিনতে পারছিনা, এখন কি করব? নাহিম ভাই বললেন, "আপনি যেখানে আছেন সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকেন, আর পারলে যে কোন দোকান এর সাইবোর্ড থেকে একটা নাম পড়ে শুনান," একটা ডিসপেনসারী ছিল পাশে, নামটা বলে ওখানেই দাঁড়ালাম।



নাহিম ভাই নিতে আসলেন, আসা মাত্রই আমি জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু, রাস্তায় আমি উচ্চস্বরে কাঁদছি আর নাহিম ভাইকে জড়িয়ে ধরে রেখেছি, নাহিম ভাই কিছুই বললেননা, আমাকে একটা অন্ধ গলির ভেতরে হাঁটিয়ে নিয়ে গেলেন, আমি তখনও উচ্চস্বরে কাঁদছিলাম আর রাস্তায় হেঁটে যাওয়া মানুষগুলো কান্নার শব্দ শুনে আবার পেঁছনে ফিরে তাকাচ্ছিল, কান্না আর থামেনা, আমি কেঁদেই চলেছি.........



"অনেক হয়েছে এবার দয়া করে থামেন, তা না হলে কিন্তু আমি বকাবকি করব, আমি আপনাকে সহজ পথ দিয়ে না এনে ঘূর্ণী পথ দিয়ে নিয়ে আসলাম কারণ আপনাকে কেঁদে হালকা হবার একটা উপায় করে দিলাম, আপনারতো দেখি থামার আর নাম নেই, বাসায় যেতে হবে, এবার দয়া করে থামুন, বাসায় বলে রেখেছি আজ আপনি খাবেন এবং থাকবেন আমার সাথে, সব আয়োজন শেষ, এখন গিয়ে দুজন মিলে খাব, তারপর ঘুম দেব।" নাহিম ভাই বললেন।



আমি খেতে চাইনি তবুও যেহেতু আয়োজন করাই আছে তাই খেতে বসতে হলো যদিও আমার গলা দিয়ে নামছিলনা কোন খাবার, সারা রাত পায়চারী করলাম ঘুম হল'না, নাহিম ভাইকেও ঘুমাতে দিলামনা, ওনি আমার পাশেই শুয়েছিলেন ইচ্ছে করে, আমার মাথায় হাত বুলিযে দিয়েছিলেন সারা রাত, আমি তখনো ফুঁপিয়ে কাঁদছিলাম।



পরের দিনগুলোর কথা আমার মনে নেই, সময়গুলো খুব ঘোলাটে ছিল। তবুও যা মনে করতে পারছি বলা যেতে পারে, জানিনা কথাগুলো সত্য কিনা! নাকি আমার মনের ভেতর নিজ থেকেই কিছু ঘটনা দূর্ঘটনা ঘুরপাক খেতে খেতে থেকে গেছে।



রুমির আকদ এর পর পাত্র পক্ষ তখনো বউ তুলে আনেনি, আয়োজন চলছে সেই অনুষ্ঠানের, আমি কোন ভাবেই নিজেকে মানাতে পারছিলামনা, রুমি কি জন্য আমার সাথে এমন একটা জঘন্য কাজ করল, আমিতো তার বিয়ে কোন ভাবেই ঠেকিয়ে রাখার অধিকার প্রাকাশ করিনি, সে যখন ইচ্ছে করেই হারিয়ে গেছে আমিতো খুঁজতে যাইনি, আমিতো নিয়তিকেই মেনে নিয়েছিলাম, তবে কেন আমার সাথে এমন আচরণ করল রুমি! শনিবার আমাদের দেখা হবার কথা, আমি ঠাঁই দাঁড়িয়েছিলাম রাস্তায় আর তখন রুমি তার বিয়ের আয়োজন নিযে ব্যাস্ত ছিল, এমন কি অপরাধ ছিল আমাকে এভাবে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে সে বিয়ের মন্ত্র পড়বে!



নিজের উপর ধীরে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছি এবার, পৃথিবী, সমাজ, সংসার এসব মূল্য হারাচ্ছে আমার কাছে, আমি যখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান চলাচল দেখতাম তখন খেয়াল করতাম বড় গাড়িগুলো যখন সবেগে চলে যায়, তখন পেছনের চাকাটা আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে, আমি সেকেন্ড এর হিসেব মিলাতাম চলমান গাড়ির প্রথম চাকা আমাকে ছেড়ে যাবার কত সেকেন্ড পর দ্বিতীয় চাকাটা আমাকে ছেড়ে যায়! এই অনু সময়টায় কি পারা যায় দ্বিতীয় চাকাটাকে আপন করে নিতে!



হঠাৎ মনে হল রুমির বিয়ে হয়নি, আমার সাথে মিথ্যে কথা বলা হচ্ছে, হয়তো রুমিকে বুঝিয়ে অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করেছে তাই আমাকে এড়িয়ে চলার জন্য এমন করা হচ্ছে, ভাবলাম যে করেই হোক একবার রুমির মুখোমুখি হওয়া চাই, পরের শনিবার আবার গেলাম কলেজে, বাস থেকে নামতেই রুমির মুখোমুখি, সে ক্লাশ সেরে ঘরমুখি, কলেজ গেইটে দেখা, আমাকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে গেল কিন্তু স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করল।



প্রথম কথাটা আমিই বললাম, রুমি তোমার হাত দেখতে চাই বলে, রুমি বলল "কেন? এখানে সবাই আমার ষ্টুডেন্ট চল যেতে যেতে কথা বলি," আমি বললাম কোথায় আর যাব, আমি শুধু তোমার হাতটা একটু দেখব তারপর চলে যাব, সে দুই হাত বাড়াল..

-মেহেদী নেই কেন হাতে?

-দেয়া হয়নি

-আমার সাথে মিথ্যে বল'ছ নাতো?

- না সত্যি আমার বিয়ে হয়ে গেছে

-আমাকে জানালে কি খুব ক্ষতি হত?

-থাকনা ওসব, যা হবার তাতো হয়েই গেছে।



আমরা হাটছিলাম রাস্তার পাশদিয়ে, আর চোখ রাখছিলাম খালি সিএনজি টেক্সি পাওয়া যায় কিনা, রুমি বিয়ের আগে যদিও বাসে করে যাতায়াত করত এখন সে সিএনজি করেই আসা যাওয়া করে, পাওয়া গেছে একটা, রুমি নিজেই দরদাম করল, এবং গাড়িতে উঠে বসল।

-কই এসো

-তুমি এখন অন্যের স্ত্রী, এভাবে তোমার সাথে গাড়িতে চড়াটাকি ঠিক হবে? তুমি একা যাও আমি বাসে করে চলে যাব।

- না, তুমি এসো কিছু হবেনা, আমার বাসা পর্যন্ত একসাথে যাব, তারপর তুমি ওখান থেকে চলে যে-ও।



চলবে...



পরের পর্ব (২৮)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.