নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গতকাল ফেইসবুকে আধুনিক কবিতা নিয়ে পড়তে গিয়ে পেলাম এটা, ওয়াহিদ সুজন বড় ভাইয়ার এই কবিতার বই নিয়ে লিখেছেন, আমার জানা ছিলনা, বড় ভাইয়াও হয়তো জানেনা, কেননা তিনি অনেকটা প্রচার বিমুখ, কৃত্রিম উপসর্গ নিয়ে ওনি প্রচার করতে অভ্যস্থ নন, উনি কম্পিউটার ইউস ও ভাল জানেননা, আমি ছুটিতে গেলে সাহায্য করব ভাবি কিন্তু সময় হয়ে উঠেনা দুজনারই।
ভাইয়ার কবিতা আমরা পড়িনা বললেই চলে, পত্রিকায় প্রথম প্রথম ছাপাতো এখন খুব একটা না, ডায়রীতে লিখে আর উনাদের সঙস্কৃতি ও বিদ্যাচর্চাপীঠ নামের একটা সংগঠন আছে সেখানেও এখন অনিয়মিত, আমরা আর পাইনা কবিতা আর পেলেও যেহেতু বুঝিনা তাই ভাইয়া, আমরা কবিতা সবাই আলাদা জগতে থাকি। যাই হোক ওয়াহিদ সুজন এর লিখাটা হুবুহু তুলে দিলাম, আমার সংগ্রহে থাকল তাই এাই পোষ্ট এর অবতারনা।
কবি কী গো ভালোবাসে প্রভু / ওয়াহিদ সুজন
কবিতা কি, কেন বা কোত্থেকে আসে? কবিতা লেখে নাকি দেয়া হয়? কেউ চোখ কপালে তুলবেন, কেউ হাসবেন। স্বীকার করি প্রশ্নের মধ্যে নাদানী আছে। কিন্তু যদি আনাড়ি হন- এ ধরণের প্রশ্ন তুলে মাফ পেতে পারেন। আনাড়ি হয়তো গুছিয়ে বলতে পারে না- কিন্তু সে কি খুঁজে পেয়েছে তার নমুনা তো দেখাতে পারে। এই মুহুর্তে সামনে আছে সৈয়দ আহমদ শামীমের কবিতার বই অনেতিহাসের লোকগান ।
২০০১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল প্রথমটি, অবলীলাদের বাড়ি। এ নতুন কাব্যগ্রন্থ দশকের চিন্তা, ভাব ও প্রকাশের তুলনামূলক খতিয়ানও বটে। এ লেখার কাজ তা নয়। বরং, আনাড়ি প্রশ্ন ধরে দেখা যাক অনেতিহাসের লোকগান উপরের প্রশ্নের কি উত্তর দেয়-
এক.
অনেতিহাসের লোকগান। সৈয়দ আহমদ শামীম। চট্টগ্রাম সংস্কৃতি কেন্দ্র। ফেব্রুয়ারী ২০১২। ৬৪ পৃষ্টা। দাম একশ টাকা।
অনেতিহাস মানে কি। যা ইতিহাস নয় বা ইতিহাসকে অতিক্রম করে যায়। বিগ ব্যাং-র সূত্র ধরে আলোচনা করলে চলবে না। কবির সম্ভাবনা যুক্তিকে বয়ে আনে না, সম্ভাবনাই তার পাটাতন। অনেতিহাস যুক্তির কালের ধারণাকে গায়েব করে দেয়। অথচ ইতিহাসের ঘরে অনেতিহাসের কথা তুলছেন।
দ্ব্যর্থকতা বাদে ইতিবাচক অর্থে ইতিহাসের যৌক্তিক করণের বাইরে মানুষ নামটি অনন্ত সম্ভাবনা ও অনাদি রহস্যকে পুষে রেখেছে – শামীমের কবিতা তারই অনুভব। এ বাসনার মর্মে ধর্ম ও শিল্প গলা জড়াজড়ি করে আছে। তিনি শেফালী ঘোষের গান ব্যবহার করেছেন। আবার অনেতিহাস ধর্মের/মর্মের এলাকা। এর বাইরে আছে উপচে পরা সমূহবাসনা- বিভেদের ভেতর অভেদের চৌকিদারি। অন্তত শামীমের তরিকা এই। এটা নতুন না, একজন কবি মানুষের গভীরতম সংবেদনাকে প্রকাশ করে। মানুষের গভীরের অভেদ চেতনার স্বপ্রাণ প্রকাশ।
লোকগানের প্রাকৃতিক ও আদিম চরিত্র আছে। কিন্তু প্রান্তিকতার চিহ্ন উপনেবৈশিক চেষ্টার অংশ। অনেতিহাস যদি মানুষের অনিবার্য নিয়তি হয়, তবে যা কিছু অনেতিহাস তা শ্বাশত। যার অনুরণন কবি শোনে- তা মানুষের মূলের কথায় বলে। এটাই প্রধান স্বর। কিন্তু শামীম প্রথম কবিতায় চমকে দেন। কবিতা একমাত্র নিয়তি নয়, তাই প্রথম কবিতায় বলছেন-
কবিতাও শৃঙ্খলার নাম/ যখন কবিতা লিখতে হবে না/ সে রকম সুর আর উদ্বাহু উল্লাসের ঋতু/ আমি কোনোদিন জীবনে পেলে/ সেই মুক্তির কথা আমি কবিতা লিখবো না (কবিতা, পৃ: ০৯)
কবিতা কি নফসের প্রতীক! দুনিয়া জোড়া ফাঁদ আর উসিলা। মানুষের পয়দা রক্ত-মাংস আর ভাব- দুইয়ে মিলে। অনেতিহাস ফাঁদে পরে না নিজেই ফাঁদ পেতে কবিকে ডেকে আনে। যদি ডেকে আনে অথবা কবিই স্মরণ আনেন- তবে কবিতা ও অনেতিহাসের পীরিতি খানিক অনুমিত হয়। প্রান্তিক হৃদয়ে মানব রহস্যের অপার সম্ভাবনা আর কিছু নয়, শেফালী ঘোষের গান। সে গানে শঙ্খ নদী, মাঝি আর দয়িতা সমগ্রের আকুতি ।
কাপ্তাই হ্রদের তীরে আজো কেউ গান গেয়ে যায়/ শঙ্খনদীর মাঝি আঁই তোয়ার লগে রাজি/…… অনীতি বাসনার শিল্পছল ছদ্মরূপ ভুল পুষ্প ফোটায়নি/ তাহলে আজও তো প্রাচীন সব সুর বেঁচে আছে সেই সব/ প্রাণ উজাড় চরণ বেঁচে আছে শঙ্খনদীর মাঝি/ কেন বিধি রহস্য মরিয়া যায় (রহস্য মরিয়া, পৃ:১১)
এ রহস্য ফরসা না হওয়া জিনিস। তার সাথে শুদ্ধতার সম্পর্ক! তাই শেফালী ঘোষের জরুরত শুধুমাত্র কাব্যিক নয়, মানুষের সাথে প্রকৃতির সম্পর্কের দিক থেকেও। শুদ্ধতা প্রাকৃতিক বিষয় বটে! তবে কবিতাও রহস্য। সে ফরসা হয় নাই। অনেতিহাস রহস্যের বিষয় বা কবিতা পয়দা হওয়ার শর্ত। রহস্য তরল হলে কি অনেতিহাসের চিহ্নের সিলসিলার বিস্মরণ ঘটে! তাহলে শৃংখলামুক্তের শর্ত হলো রহস্য থাকা নাকি প্রভুর রহস্য ভেদ হওয়া, নাকি প্রভু রহস্যে নিজেকে সমর্পণ।
আমি আর কী রূপে বা জীবনের প্রকৃতিলগন সেই পবিত্র শ্রুতি ও/ স্মৃতির দীর্ঘ আবাহন করি, আমাদের ধর্মরা বলে এ জীবন/ পুত্তলি নয় আর সংগীতের প্রবাহকে এই মরমীয়া মন/ মূর্তি করে ফেলে আমাদের পৌত্তলিক স্বভাব গড়ায়, তবু/ এই সব লোকগানের ভেলা ছেড়ে আমার শরীরে বৃক্ষ অরণ্য হ্রদ/ আর মায়াবী জনপদ ধেয়ে আসে (শেফালী ঘোষ, পৃ: ১২)
দুই.
শামীমের ইতিহাসে কবিতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কবিতায় পারে অনেতিহাসকে অর্থ দিতে, অনেতিহাসের অর্থকে ধরতে। যে অধরাকে পূর্ব স্মৃতিতে মেলে তাকে অর্থময় করতে-
খুবরে কঠিন বিধি কবিতা রচনা/ প্রাণের আধারে যদিও জল কেঁদে যায়/ কিন্তু জগত বাহিরে জটিল দৃশ্য/ দৃশ্যতাপে চোখ গেছে বহুতর পুড়ে/ কঠিনরে লাগে বিধি সংগীত রচনা/ সুর এসে পায়ে ধরে তারে যেন লই/ কিন্তু বা কাকে ধরি কারে বিস্মরি/…. এ সব নিয়া যে সাঁই কবিতা রচনা/ লেখার বাসনা কেন প্রাণ ফুঁড়ে জাগে/ এসব রচনা কদাচ সত্য দ্যুতি ধরে/ কবির বাসনা জম্মে মর্ম যায় মরি (কদাচ, পৃ: ৩১)
কবিতার কারবার ভাষার জগতে। অনেতিহাস কদাচ ভাষা হয়েই বসত করে। ভাষার বাইরে সে কদাচের সত্য থাকে না। এমন হলে যে মাঝির সাথে রাজি সে মাঝি মানুষের ঘরে কাকে ডাকবে। হয়তো ভাষা জগতে নতুন অর্থ তৈরির কারবার। কিন্তু এমন স্থির মূল্যে কবিতা শুধুমাত্র বিজ্ঞান। ভাষা আর অনুভূতি সমার্থক নয়। তাই বলা যায় একদিন কবিতাকে ছেড়ে যাবো। ভাষার জগত একমাত্র সত্য নয়। ভাষার জগত খানিকটা মায়া!
সৌন্দর্য, শিল্পের ছলে কবিতায় পরম আবির্ভূত হন। ধরা পড়া ভাষার রূপ কেমন হবে! আধুনিক ভাষা রীতিতে সে পরম কিভাবে ধরা পড়ে! শামীমের কাছে সহজ প্রকৃতিবাহিত শেফালী ঘোষের আকুতি। শেফালী ঘোষই অনেতিহাসিককে ডেকে আনার এক তরিকা। শামীম কবিতায় সে তরিকা খুজিঁ, যা আরো তীব্র কিছুর প্রকাশ। যা হারিয়ে ফেলেছি- শেফালী পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আধুনিক মানুষের অক্ষমতাকেই ঢোল বাজিয়ে জানান দেয়। তাই লোকগান শব্দটি বাংলার মনীষাকে বুঝার অক্ষমতাও। প্রাচীন গীতকবিতা মানুষের আপনার বিভাকে কথন ও করণে প্রকাশ করে। শামীম অনেকটায় হৃদয়বৃত্তির বিভায় নির্দিষ্ট। উৎস খুঁজতে গিয়ে শঙ্খ নদীর মাঝির ঐতিহাসিক রূপ পেছনে ঢাকা পড়ে। তারপরও এ চিহ্নটুকু খুঁজে নেন-
আমারই অনুভবের চেয়ে তীব্র কোনো কবিতা পড়িনি/ আমারই মানব স্বভাব তাই সকল শিল্প বিভা ছাড়িয়া গিয়াছে/…. এখন ইতিহাস ভালোবসি বলে ঘোরতর মিথ্যা বিবাদ/ একটি চিরায়ত বম্পমান লুকোছাপা হৃদয় নিয়ে/ তুমি ইতিহাস কতোদিন আঁকড়ে থাকো (বিবাদ, পৃ: ৩৬)
এ অনুভূতি কবিতা আবির্ভাবের বসত বাটি। এই আবির্ভাব শব্দের উৎসমুখের পরিচয়। এক অন্তহীন সহজ চিহ্ন মানুষে দৃশ্যমান হতে তৎপর। মর্মে খেলা করা চিহ্ন ধরে হাঁটে কবি ও কবিতা-
কিন্তু শব্দ ও ভাষা দিয়েও/ দেখা গেছে ইতিহাসে সত্য এসেছে/ এবং প্রকৃত নীরবতার শ্লীলতায় গিয়ে/ আমাদের নতুন ভাষার গান প্রাচীন ধর্মের মতো খুঁজে নিতে হবে (মনোমালিন্য, পৃ: ৪৬)
তিন.
ঢোল বাজের আর মাইক বাজের/ আঁর পরানে কেন গরের/ কেন গরি যাইয়াম পরর ঘর (ঢোল বাজে, মাইক বাজে। আমার পরাণ কেমন করে। কি করে যাবো পরের ঘর)
বখশি দিঘির দক্ষিণ সড়ক বেয়ে পালকি নিয়ে চলে গেছে মেহেরুন্নিসা/ এ বিলাপের পাশে মালকাবানুর গান দিঘির জলে মর্মরিত হয়/ সারা গ্রাম মনুমিয়ার ব্যথাতুর প্রাণরচনা করে/ মেহেরুন্নিসার আলতামাখা পায়ের পাতাকে দূর গ্রামে যেতেই দেয়নি। (শঙ্খ, পৃ: ২০)
আত্মা দীনতা হয়ে বসে থাকে জড়ো হয়ে/ পাশে তার প্রবৃত্তিময়তারা/ আমি কী গো ভালোবাসি প্রভু/ প্রকৃতই একটি ভালোবাসার মানব জীবন জগতে (আত্মা দীনতা হয়ে, পৃ. ২৬)
পর আর আপন ঘর! কি আছে প্রাচীন ধর্মে! আমাদের তাগিদ পর নয় আপন ঘরের তাগিদ। তার তালা আবার পরের ঘরে। অর্থ্যাৎ, অনেতিহাসের নিত্য সাধনার খবর মেলে ইতিহাসে। মুহম্মদ (স.) কবিতা করতে আসেন নাই। তাঁর উপর ওহি নাজিল হয়েছে আর তিনি উত্তরাধিকারে কবিদেরই দাঁড় করান। প্রাজ্ঞ আর প্রগাঢ়তায়। কবি ভাব দেয়া-নেয়ায় পরান জুড়ায়।
আমি বিধি এইসব বুঝিয়াছি/ প্রসারিত বক্ষ জুড়ে যতখানি পরম প্রশান্তি ততখানি/ ভাষাহীন অবোধ আরাম/ ভাষা নয, যুক্তি এরিস্টটল নয়/ লেখ্যভাষার তুমি যারে নিরেট অযোগ্য করে মরুর গুহার ভেতর ধ্যান/ করিয়েছিলে/ তার ছুতোয় তুমি জগতেরে আলো উজ্জ্বল করেছো (জগতবাহিতে নেমে, পৃ: ৬৩)
জগতবাহিত আলোক উজ্জ্বলতার আদিম সম্পর্কসুত্র সব মায়ের ছেলেকে এক করে। একাকার শুধু অনেতিহাসের মর্ম বাসনা নয়, তাকে সম্ভব করতে ইতিহাসে আছে যুথবদ্ধতার মর্ম। সেখানে ঐতিহাসিক মানুষের মাঝে অনেতিহাস অনুভূত হয়- যা পরম কাঙ্খারই প্রতিনিধি। এখানে একজন অচেনা ভিখারিনী বিলাপ করে। শামীম প্রশ্ন করেন মা তাকে কি দিয়েছিলেন-
আমার কানে বাজে ‘মায় কউ’ তেমন শব্দে/ আমার প্রাণ কেঁদে বেঁকে যায়/ ভিখারির হাত হতে চোখের পানির মতো চাল ঝরে যায়/ তেমন দুপুরে ভিক্ষুক এলে আমার কেমন লাগে/ যেন উত্তরবঙ্গের সেই মহিলার আত্মা এল চিৎকার করে কাঁদতে (আত্মীয়তা, পৃ: ১৮)
হৃদয়গ্রাহী এ কবিতায় অসহজ বাসনা চুর্ণ হয়। প্রান্তিকতা ছ্ন্নি করে মা আমাদের মূলে ফিরিয়ে নেন। সদা হাজির অনেতিহাসের প্রস্তাব শুধুমাত্র ব্যক্তিক নয়। আমি কি গো ভালোবাসি- থেকে যাত্রা। ধর্মের এ ইশারা ধরা কবির কাজ- এ কথা তিনি বলছেন। কবিতা শুধু বিস্ময় নয়, মানুষের জম্মদাগ ফরসা করে তোলে -
আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ শৈশব ছিলো না/ মা সকাল সন্ধ্যা বেহেশত দোযগ ঘুরিয়ে আনতেন/ ভয় ও আনন্দে এক সঙ্গে সব ভাই বোন মিলে/ এক সুরে সল্লাল্লাহ পড়েছি/… আমরা কেউই পুঁজির হতাশার ভেতর বারবার/ শূন্য প্রাসাদ গড়িবার হাস্যকর প্রণোদনা নই (আজও, পৃ: ৩৭)
পথ পরিষ্কারের লড়াইয়ের চিহ্ন উপস্থিত। নইলে কবিতা পুজিঁর বিপরীতে কি করে দাড়ায়। এ ভাই-বোন দুনিয়াজোড়া হলে ভালোবাসার বহুমাত্রিক যাপনে কবিতা প্রকৃত মানব জীবনের দরোজার পাহারাদার।
কবিতার প্রগাঢ় অনুভূতি কে দেয় বা কিভাবে আবির্ভূত হয়- তা হয়তো পষ্ট নয়। ঘরের কিছু খবর তো জানা গেল। সে খবর একেবারে বিমূর্ত নয়। একের ভেতর অনেক অর্থকে ধারণ করে মানুষের ঐতিহাসিক সম্ভাবনাকে অতিক্রমের পথ দেখায়। শামীমের কবি ধরে যা কিছু সহজ তা-ই পারে মানুষের কৃত্রিম খোলস ধরে টান দিতে । প্রকৃত যাত্রায় এটাই কবির অনন্য উপহার।
আত্মা দীনতা হয়ে বসে থাকে জড়ো হয়ে/ পাশে তার প্রবৃত্তিময়তারা/ আমি কী গো ভালোবাসি প্রভু/ প্রকৃতই একটি ভালোবাসার মানব জীবন জগতে (আত্মা দীনতা হয়ে, পৃ. ২৬)
শামীমের কবিতা ভাবকে পল্লবিত করে। গীতলতা দেয়। তবে লোকগানের সহজবোধ প্রমিত বচনে দূরের তারকার মতো জ্বলজ্বল করে। কখনো শব্দের গাম্ভীর্যে স্বর্তঃস্ফুর্ত ভাব থমকে যায়। সবোর্পরি কবিতা দর্শন নয়। হয়তো পাঠককে ক্ষুদ্ধ করে। কিন্তু যে বিস্ময় জাগায়- তাতে পাঠকের ক্ষুদ্ধতা হারিয়ে যায়। কবির ছায়া দীর্ঘ হোক।
কৃষ্ণচূড়ার রঙিন বেশে জল চলে যায়/ বৃক্ষ ছেড়ে আকাশ আর আকাশ হতে পাখির পালক/ আর আমি লোক গানের ওপর শুয়েছিলাম/ দেখো আনন্দ একটি পাতা এসে চোখে বসে/ আমি তোকে দেখেছি পাতা তুই সেই হারিয়ে যাওয়া অচেনা হাত/ যাকে আমি বাসনার অকলুষে চিনি/ সেই হাত যত দূর দূর দূর দূরে চলে গেছে/ সে রকম বিষাদের গর্ভ থেকে নেমে আসা শিল্প আর/ শিল্পযাচনা থেকে নেমে আসা কলুষের বৈরাগ্যহীন কঠিন সহজ গান/ আমি গাইতে চেয়েছিলাম/ তুই সে পাতা আমি তোকে চিনি/ কলুষেতে মরে যখন গিয়েছে আমার মন তখনই এই পাতা ও প্রকৃতি/ এই কৃষ্ণচূড়ার রঙিন জলভাসা আর মানুষহীন লোকগান (ইতিহাস ও সর্বার্থ সহজ মানুষের উর্ধ্বগতি, পৃ: ১৪)
লিঙক : View this link
©somewhere in net ltd.