নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"কিভাযে কী হয়ে গেল বুঝতে পারিনি তখন,'' বলছিল জেসিকা। "বাবা-মা, বিশেষ করে বাবা আমার উপর আস্থাটা রাখতো একটু বেশী। আমার স্কুল পর্ব শেষ হয়ে যাবার পর তারা নিশ্চিত ছিল আমার ভুল করার বয়সটা পার হয়ে গেছে। তাদের না জানিয়ে আমি আর কিছু করবনা। তারা তখন আমার চাইতে ছোট বোন জুলিয়ার দিকে বেশী খেয়াল রাখতে লাগল। আসলে আমারও কোন ইচ্ছে বা প্ল্যান ছিলনা এমন কিছুু করার, তবুও হয়ে গেল।" বলতে বলতে কান্না জুড়ে দিল জেসিকা। টিস্যু পেপার মুছে নিল চোখ। নিজেকে সংবরন করে কিছুক্ষণ চুপ মেরে ছিল। তারপর আবার বলতে শুরু করল।
সুপার মল এর চাকরীটা নিয়েছিলাম শখ করেই। বাবা মা কে বলেছিলাম আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। তারাও অমত করলনা। চব্বিশ ঘণ্টা খোলা। আমার ডিউটি ছিল ডে শিফ্ট এ। দুপুর বারটা থেকে সন্ধ্যে ছয়টা। ছয় ঘন্টা কাজ। ষ্টিভেন এর সাথে তখনো আমার পরিচয় হয়নি, তার ডিউটি ছিল নাইট শিফ্ট। আমি যখন কাজ ছেড়ে আসতাম তখন সে ইন হতো, কখনো দেখা হত মলে প্রবেশ মুখে, ক্যাশ কাউন্টার এর সামনে কিংবা গাড়ি থেকে নামছে আর আমি যাত্রী ছাউনিতে গাড়ির অপেক্ষায়। কখনো চোখাচোখি হতো, দু'একবার হায় হ্যালোও হয়েছে। এভাবে কিছুদিন চলার পর অপিষ ছুটি হলে আমি যেন তার প্রত্যাশায় থাকতাম একবার দেখা হয় কিনা। কেন যেন তাকে একবার দেখে যেতে ইচ্ছে হতে লাগল। কোন কিছুর প্রতি তার নির্লোভ চাহনি, তার ড্রেসআপ, হাঁটার স্টাইল ইত্যাদি আমাকে আকৃষ্ট করতে লাগল।
ম্যানেজার জনসন যখন আমাকে জিজ্ঞেস করল নাইট শিফটে কাজ করতে ইচ্ছুক কিনা কিংবা কোন অসুবিধা হবে কিনা আমি লুফে নিলাম অফারটা। আমার ঘন্টা প্রতি মাইনেটাও বাড়ল আগের চাইতে। ষ্টিভকে এখন আরো অনেক বেশী সময় ধরে দেখা যাবে কিংবা সংগ পাওয়া যাবে।
কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে গেল, আমরা যে যার কাজে ব্যাস্ত থাকি, টুকটাক কথাবার্তা হয় কিন্তু আমাকে বা কাউকে আকৃষ্ট করে কথা বলা বা চলার কোন আকার ইংগিত লক্ষ্য করলামনা তার চাল-চলনে। শেষমেষ আমি নিজেই তাকে অফারটা করলাম। বললাম আমরা কী অপিষ ছুটির পর কোন কফি শপে বসতে পারি? সে বলল তার একটা কাজ আছে আজ নয়, আগামী রোববার দু'জনেরই অফ ডে, আমরা সেদিন দেখা করতে পারি গির্জায়। সে প্রতি সপ্তাহে গির্জায় যায়। হুম ঠিক আছে বলে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম কাজে, তারপর থেকে আমার যেন সময় কাটতেই চাইছেনা, প্রতিটা সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টাকে অনেক বড় মনে হচ্ছিল আর অপেক্ষায় আছি কখন আসবে রোববার।
আমি স্বভাবতই একটু আগে পৌঁছলাম, তবে বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ষ্টিভ এসেছিল ঘড়ির কাটায় ঠিক সময়েই। হাতে একগুচ্ছ ফুল। আমি বেশ পুলকিতই হলাম, আমার জন্য ফুুল উপহার। আমিও অবশ্য একটা টাই এনেছিলাম উপহার স্বরূপ। অবাক হলাম যখন ষ্টিভ আমাকে ফুলের তোড়াটা দিলনা। বলল, চল তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেব একজনের সাথে। আমরা হেঁটে গেলাম পাশের সিমেট্রিতে। কী হতে যাচ্ছে তখনো আমি বুঝতে পারছিনা। ভেতরে প্রবেশ করে প্রান্তের শেষের দিকে একটা কবর। ষ্টিভ আমাকে ফুলের গোছাটা হাতে দিয়ে বলল, এই হল হান্নাহ, ফুলটা ওকে দাও।
সপ্তাহে না হোক, মাসে অন্তত একবার হান্নাহ'কে ফুল দিয়ে যায় ষ্টিভ। তার প্রাক্তন প্রেমিকা। রোড এক্সিডেন্ট এর মারা গেছে আজ প্রায় দু'বছর। তারপর আর কারো সাথে রিলেশানে জড়ায়নি, জড়াবেনা তাও নয়, মনকে স্থির করতে সে সময় নিচ্ছিল। প্রাক্তন প্রেমিকার প্রতি এমন কমিটমেন্ট আমাকে আরো বেশী আকৃষ্ট করল ষ্টিভ এর প্রতি। আমরা জড়িয়ে পড়লাম তুমুল প্রেমে। আমি তখনো বাবা মা'কে কিছুই বলিনি ষ্টিভ সম্পর্কে। তবে তারা হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিল আমার চাল-চলনে। সময়টাতে আমার মনে কী যেন এক বসন্তের হাওয়া বয়ে যেত লাগল, বারবার অন্য মনষ্ক হয়ে পড়ছি, চুপিচুুপি হাসছি, গুনগুন গান করছি, কেমন যেন চঞ্চল হয়ে পড়ছি দিনকে দিন। একদিন খেতে বসে যখন অযথা হাসছিলাম মা দেখে নিশ্চিত হল আামি কোন সম্পর্কে জড়িয়েছি। মা কিছু একটা বলতে চেয়েও আর বলেনি, আমি বুঝতে পারছিলাম মা কিছু একটা জিজ্ঞেসা করতে চাইছে।
ষ্টিভ এর বাবা-মা বেড়াতে গেছে তার বোনের কাছে, ফিরবে দশ/পনের দিন বাদে। ষ্টিভ আমাকে অফার করল আমরা চাইলে একান্তে সময় কাটাতে পারি এই দিনগুলোতে ওদের বাড়িতে। অফারটা মন্দ নয়, আমরা খুব মজা করেছিলাম দিনগুলোতে, বই পড়া, টিভি দেখা, রান্না করা ইত্যাদি। কিভাবে যে ফুরিয়ে গেল দিনগুলো।
ষ্টিভকে বলছিলাম, খাবার প্রতি আমার কেন যেন অনিহা আজকাল, খেতে গেলে কেমন স্মেল পাচ্ছি। ষ্টিভ ঠিকই আন্দাজ করতে পেরেছিল, পরের দিন আমাকে একটা বক্স ধরিয়ে দিল। প্র্যাগনেন্সি ট্যাষ্ট কিট। আমি আকাশ থেকে পড়লাম। এটা কেন? আমরাতো প্রটেকশান ইউজ করেছিলাম। ওহ মাই গড!! ষ্টিভ বলল শিউর না, তবে তুমি টেষ্ট করে দেখ। কারো সাহায্য লাগবেনা, প্যাকেটে লেখা আছে কী করে কী করতে হবে, জাষ্ট ফলো দা ডাইরেকশান।
পজেটিভ। একসপ্তাহ যাবৎ আমি পাগল প্রায়। কী করব বুঝতে পারছিলামনা, এটা কী হল? ষ্টিভ আমাকে অভয় দিল, সে সব দায়িত্ব নেবে, এভাবে আমাকে বিপদে ফেলে সে সরে যাবেনা। পরামর্শ দিল আমার বাব মা এর সাথে আলাপটা যেন সেরে নিই, তাদের কী সিদ্ধান্ত সেটা জানাতে বলল ষ্টিভকে, তারপর ষ্টিভ তর করনিয় করবে।
মা চিৎকার করে পুরো বাড়ি তোলপাড় করল। জুলিয়া তার রুমে বসে কাঁদছে। বাবা এল আমার কাছে। কিছুই বললনা। আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদল বাবা। বাবাকে জড়িয়ে ধরে আমি ফিরে গেলাম সেই ছোট্ট বেলায়। আমি আর বাবা শপিং করতে গিয়েছিলাম। পিংক কালার জামাটা আমি নিজেই চয়েজ করেছিলাম, দামটা একটু বেশী ছিল তবুও বাবা না করলনা, কিনে দিয়েছিল। লিপষ্টিক, নেলপলিশ হতে শুরু করে সাঁজগোজ করার যা যা প্রয়োজন সব কিনে দিয়েছিল বাবা। সেই নতুন জামা, জুতো পরে আমরা গিয়েছিলাম গির্জায়, আমাদের মতো আরো অনেকে এসেছিল মা,বাব, ভাই বোন সবাই। আমরা ছোট ছোট মেয়েরা বাবার হাত ধরে নেচেছিলাম আর শপথ করেছিলাম আমরা আমাদের সতিত্ব সুরক্ষা করব, আমাদের বর এর জন্য সংরক্ষণ করব বিয়ের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত।
২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:০০
বাকপ্রবাস বলেছেন: শুভেচ্ছা জানবেন কবি
২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৩
বিজন রয় বলেছেন: হরহামেশা এমন গল্প সামনে পড়ে।
তবে আপনার উপস্থাপনা, লেখা, ঘটনার বর্ণনা ভাল হয়েছে।
২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:০২
বাকপ্রবাস বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন বিজয়দা
৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৩
শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: সহজ সরল সাবলীল বর্ননা
২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:০৬
বাকপ্রবাস বলেছেন: আপনার গল্পগুলো ভাল হয়। ধন্যবাদ জানবেন
৪| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: আকাশে ওড়ার সময় একটি কবুতরের সঙ্গে একটি কাকের দেখা হল। কবুতর কাককে জিজ্ঞেস করল: ‘তুমি কোথায় যাচ্ছ?’ কাক বলল: ‘আসলে আমি কোথাও যেতে চাই না। কিন্তু কেউ আমার কণ্ঠ পছন্দ করে না। তাই সবার কাছ থেকে দূরে কোথাও চলে যাচ্ছি।’ কবুতর বলল: ‘তোমার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। কারণ, তুমি যেখানেই যাও সেখানেই কেউ না কেউ থাকবে এবং তোমার কণ্ঠস্বরও পরিবর্তিত হবে না।’
২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:১০
বাকপ্রবাস বলেছেন: একটা ডালের দুই প্রান্তে বসে কাক ও কুকিল। দুজনই ডাকতে থাকে। আমি জানলা খুলে উপভোগ করি। কুকিলের মধুর সুকে হারিয়ে যায় কাক। অবশেষে বসন্ত চলে যায়। কুকিল ও থাকেনা আর। আমার জানলার কার্ণিশে এসে বসে কাক। ডাকতে থাকে। আজ ডাকে, কাল ডাকে, ডাকে প্রতিদিন। আমি ধীরে ধীরে কাকের প্রেমে পড়ে যাই। কুকিলেরা ভার বাসতে জানেনা।
৫| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: দারুণ উপস্থাপনা। প্রেক্ষাপট ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড কান্ট্রি, পাত্র-পাত্রী সবই। সবশেষের প্যারাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। 'আমরা আমাদের সতীত্ব সুরক্ষা করবো বিয়ের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত।' কিন্তু কীভাবে কী হয়ে গেলো!! প্রেম এমনই, সবকিছু উলট-পালট করে দেয়। আরেকটা সত্য হলো, পৃথিবীর সব দেশে সব যুগেই অবৈধ প্রেগ্নেন্সি অগ্রহণযোগ্য ছিল।
আপনার কবিতা ও গদ্য, দুটোই সাবলীল।
২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:১২
বাকপ্রবাস বলেছেন: প্রশংসা পত্র পেয়ে ভালই লাগছে। তবে নিয়মিত লিখতে পারিনা, আমাকে তায় অনেকেই স্বভাব কবি বলত। কথায় কথায় ছন্দ দিয়ে কমেন্ট করতাম বলে।
৬| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:২০
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: লাস্ট লাইনটাই পুরো গল্পকে সার্থক করে দিয়েছে...
২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:১৩
বাকপ্রবাস বলেছেন: বিচার মানি, তাল গাছও আপনার হা হা হা
ধন্যবাদ জানবেন কিন্তু
৭| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৩৬
মৌরি হক দোলা বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন
২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:১৪
বাকপ্রবাস বলেছেন: খুবই ধন্যবাদ জানবেন দোলাপু
৮| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৪০
জাহিদ অনিক বলেছেন:
বাহ আপনার লেখার টানটা বেশ ভালো লাগলো।
গল্প যেমন সাহেবদের দেশের তেমনি গল্পের গতিও ঠিক তেমনি সাহেবী কেতায়-- চমৎকার
২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:১৫
বাকপ্রবাস বলেছেন: চেষ্টা চিল, গল্পে যেন দেশী স্মেল না থাকে। ধন্যবাদ জানবেন কবি
৯| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:২৭
পল্লব কুমার বলেছেন: আমার মনে কী যেন এক বসন্তের হাওয়া বয়ে যেতে লাগল, বার বার অন্য মনস্ক হয়ে পড়ছি, চুপিচুপি হাসছি, গুনগুন গান করছি, কেমন যেন চঞ্চল হয়ে পরছি দিনকে দিন।
প্রথমবার আবেগ আসলে অনেকটা এমনই হয়। ভালো লাগল অনেক।
২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:১৬
বাকপ্রবাস বলেছেন: হুম, প্রথম প্রেমের অনুভূতি খুব মজার। ধন্যবাদ জানবেন কিন্তু
১০| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:১০
বর্ণা বলেছেন: ভালো লিখছেন
২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:২৯
বাকপ্রবাস বলেছেন: ধন্যবাদ রইল কিন্তু বর্ণাপু
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:২৮
নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: ভালো লাগলো, সুন্দর লিখেছেন।