নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পুঁটি মাছটা ঘাটের কিনারায়, ডুবো জলে সিড়ির শেওলা থেকে সে খাবার খুঁজছিল বোধয়। বিপত্তি বাঁধল মেম্বার কন্যার স্নান করতে এসে। পুকুরটা সোবহান মেম্বার এর পারিবারিক পুকুর। দুপুরের এই সময়টায় মেম্বার সাহেবের একমাত্র কন্যা শিউলি আকতার স্নান করতে আসে। সমগ্র দুপুরে যখন নিস্তব্ধ চারপাশ এই সময়টায় স্নান করতে এসে অন্য এক জগতে চলে যায় শিউলি। কতো রাজ্যের ভাবনা চলে আসে তার মনে। ঘাটে বসে দুই পা পানিতে নামিয়ে দিয়ে ভাবে আর হাসে। নিজের সাথে কতো কথা বলে তখন তার ইয়াত্তা নেই।
আজকের ভাবনাটা একটু আঁচ করা যায়। কেননা ও পাড়ার হাসমত আলীর ছেলেটা খুব দুষ্টু। চুলের ষ্টাইল দেখলেই বুঝা যায় এই ছেলে দুষ্টের শিরোমনি হবে। সে ক'দিন যাবৎ ঘুরঘুর করছে শিউলির পেছনে। শিউলি চাইলে বাবাকে বলে একটা বিহিত করতে পারে কিন্তু সেই ঝামেলায় যেতে চায়না সে। কিংবা বলা যায় এই ঘুরঘুর ভাবটা তার ভালই লাগছে।
পুঁটি মাছটা তখন ওদিকটায় নেই। সে চলে গেছে উত্তর পারে। কাতলা মাছটাওর যেন কী হল আজকাল। কেমন যেন মন মরা হয়ে থাকে। পুঁটি মাছ গিয়ে খবরটা দিল তাকে। ওইযে দক্ষিণ পারে বটের ডাল ঝুলে আছে পুকুরের দিকে, তার ছায়ায় একটা মাছ দেখলাম ঠিক তোমাদের জাতের। কাতলা মাছ শুনেও না শোনার ভান করল। তবে মনেমনে ভাবল একবার দেখে আসা যাক।
ঠিক তায়। দক্ষিণের কাতলাটা লেজ নাড়িয়ে সাঁতার কাটছে। বটের ডালের পাতের ফাঁকে সূর্য কিরণ পানি ছাপিয়ে সেই কাতালের উপর এসে পড়ল। খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। দূর থেকে অনেক্ষণ তাকিয়ে ছিল উত্তরের কাতালটা। দক্ষিণের কাতাল সেটা লক্ষ্য করল কিন্তু বুঝতে দিলনা, সে তার মতো মগ্ন তার কাজে।
উত্তরের কাতাল ভাবল সারা পুকুরতো রোজ দু'একবার ঘুরে আসা হয়, কখনো চোখে পড়লনা দক্ষিণের এই মাছটাকে। ভাবতে ভাবতে এগিয়ে এলো মাছটার কাছে। দক্ষিণের মাছটার যেন কোন অনুভূতিই নেই। সে সরে গেল অন্যপাশে। পুকুর পারের গাছের শেকড় যেগুলো পানির নিচু অব্দি চলে গেছে তার ভেতর সে আড়াল হয়ে হারিয়ে গেল। ফিরে গেল উত্তরের কাতাল।
সপ্তাহ পার হয়ে গেল। এরই মাঝে বেশ কবার আসা যাওয়া, চোখাচোখি হয়ে গেল দুই কাতলার। অবশেষে উত্তরের কাতাল যখন কাছে ঘেষল দক্ষিণের সে আর সরে গেলনা। দু'জনের ভাব হয়ে গেল পরের সপ্তাহে। সারা পুকুর দাপিয়ে বেড়ায় দু'জন মিলে। ঘোলা হয়ে আসে পুকুরের জল। মেম্বার সাহেব সকালে দাত ব্রাশ করতে করতে ভাবছিল পুকুর ঘাটে। আজম ঘটক একটা প্রস্তাব এনেছিল শিউলির জন্য। ছেলে ঢাকায় থাকে। ভাল কোম্পানিতে জব করে। এরিয়া ম্যানেজার। কথা আরো কিছু এগুনোর পর শিউলি আক্তারকে দেখতে আসার দিনও সাব্যস্ত হয়ে গেল।
দুই কাতলার আর তর সইছেনা, এবার ঘর বাঁধার পালা। উত্তরের কাতলা প্রস্তাব দিতেই রাজি হয়ে গেল দক্ষিণের কাতলা। খুশিতে প্রথমে লেজ নেড়ে পানির উপরে ঝাপটা মেরে দিল দক্ষিণের জন। দেখাদেখি উত্তরের কাতলারও একই কাজ। সারা পুকুর নেচেনেচে ঝাপটা মেরে ঘুরে বেড়াতে লাগল দু'জন।
এদিকে ঘাটে জাল হাতে প্রস্তুত সোবহান মেম্বার। মেয়েকে দেখতে আসবে আজ। বড় মাছ ধরা চাই হবু মেয়ে জামায় এর জন্য। জল নড়তেই মেরে দিল খোপ। দু'জন দু'দিকে জোরে সাঁতার কেটে পালাবার চেষ্টা। কিন্তু যেতে পারলনা বেশী দূর। জালের বাঁধা। জাল গুটাতে লাগল ধীরে। দু'জনের দূরত্বও কমতে কমতে লেগে গেল একজনের শরীর অন্য জনের সাথে। এভাবে এতো কাছাকাছি কখনো আর আসেনি দু'জন তার আগে। অবশেষে উঠে এলো জালের সাথে। সোবহান মেম্বারও বেশ খুশী। এক খোপেই দুই কাতলা। ওদিকে জালের কোনায় পুঁটি মাছও দেখা যাচ্ছে একটা। পুঁটি মাছটা আলতো করে জাল ছাড়িয়ে ছেড়ে দিল সোবহান মেম্বার। সে কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়েছিল, তবুও লেজ নেড়ে দ্রুত পালিয়ে গেল জলের ভেতর।
কাতাল মাছ দু'টো প্লাষ্টিকের নীল বালতি করে ঘরের দিকে হাঁটা দিল সোবান মেম্বার। দুই কাতাল চুপ করে শুয়ে আছে। তাদের শ্বাস নিতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। উত্তরের কাতাল বলল আমার জন্যই ধরা পড়লে তুমি। ক্ষমা করো আমাকে। দক্ষিণের কাতাল কিছুই বললনা। মনে মনে ভাবল খুব ইচ্ছে ছিল দু'জনের সংসার হবে। কতো মজাই না হতো। অথচ আজ জ্বলন্ত চুলোয় গরম হাড়িতে হতে যাচ্ছে তাদের বাসর।
২৭ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:০৯
বাকপ্রবাস বলেছেন: আপনি অনেক সাবলিল গদ্যে ,আমি দ্বন্দে পড়ে যাই, সত্য বয়ান নাকি গদ্য লিখেন,এতোটা মন ছুয়ে যায়
২| ২৭ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৫৬
নেওয়াজ আলি বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। উপভোগ্য পড়া।
২৭ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১১:০৩
বাকপ্রবাস বলেছেন: বরাবরের মতো ধন্যবাদ জানবেন আলি ভাই
৩| ২৭ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১১:১৬
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর।+
২৭ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১১:২৯
বাকপ্রবাস বলেছেন: খুবই ধন্যবাদ জানবেন আনোয়ার ভাই
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:০২
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি গদ্য পদ্য এবং ছড়া চমৎকার লিখেন।