নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Qma Sadique Setu

Qma Sadique Setu

sadiquesetu

I'm the real last survival in Savar Tragedy Rana Plaza Disaster. I survive 5 days or more than 100 hours by the grace of Almighty God.

sadiquesetu › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইমাম জয়নুল আবেদীন (রাঃ)

১৩ ই মে, ২০১৬ সকাল ৮:৩৫


ইসলামের উজ্জলতম নক্ষত্র: ইমাম জয়নুল আবেদীন সাজ্জাদ (রা.)
উমাইয়া শাসক হিশাম বিন আবদুল মালিক হজ করতে এসেছেন। কাবা ঘরের হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরের কাছে হাজিদের প্রচন্ড ভীড়। খলিফা আবদুল মালিক কালো পাথরের কাছে যাবার জন্যে অনেক কষ্ট করেও ভীড় ঠেলে তেমন একটা এগুতে পারছিলেন না। এখানে যে একজন খলিফা আছেন ও তাকে পথ ছেড়ে দিতে হবে এমন মানসিকতাও কারো মধ্যেই দেখা গেল না। বরং দেখা গেল সৌম্য ও নূরাণী চেহারার এক ব্যক্তিকে মানুষ প্রাণঢালা সম্মান জানিয়ে পথ ছেড়ে দিচ্ছে ও ঐ ব্যক্তি সহজেই পৌঁছে গেলেন কালো পাথরের কাছে। হিশামের আত্মসম্মানে তীব্র ঘা লাগলো। তিনি ইমামকে চিনলেন না বা চিনেও না চেনার ভান করে মহাবিরক্ত ও বিদ্রুপাত্মক ভঙ্গিতে জানতে চাইলেন কে এই ব্যক্তি যাকে লোকেরা এতো সম্মান প্রদর্শন করলো!? সেযুগের কবি ফারাজদাক ছিলেন সেখানে উপস্থিত। তিনি খলিফার প্রশ্নের উত্তর দিলেন তাতক্ষণিকভাবে একটি অনুপম কবিতা রচনা করে। কবিতাটির কয়েকটি পংক্তি ছিল এ রকম:
মক্কার মাটি ও প্রতিটি ধুলি-কণা তাঁর পায়ের শব্দ চেনে
এবং পবিত্র কাবা ও আশপাশের ভূমিগুলোও তাঁর সঙ্গে পরিচিত।
(কিংবা) এতো তিনি যাঁর পদক্ষেপ চেনে প্রতিটি ধূলিকণা
যিনি অতি আপন এই সর্বজননন্দিত কাবা ঘরের কাছে
ইনি তো তাঁর সন্তান যিনি খোদার রাসূলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম
আর ইনি তো নিজেই শ্রেষ্ঠ এবাদতে ও তাসবীহ তাহলীলে,
নির্মল নিষ্কলুষ,পূতপবিত্র সততায় দীপ্ত নিশানবরদার ইসলামের
ইনি তো সন্তান ফাতেমা বিবির,
তার সম্পর্কে যদি না জেনে থাকো তুমি;
জেনে রাখো এঁর প্রপিতামহের মাঝেই সমাপ্তি নবুয়্যত ধারার
খোদাকে যে চিনেছে সে-ই তো জানে ইনিই তো মর্যাদায় ও শ্রেষ্ঠত্বে আগে সবার যেহেতু সারা বিশ্বে পৌঁছেছে ধর্মের বাণী এঁরই রক্তধারার উসিলাতে
হ্যাঁ,আজ আমরা এমন এক মহাপুরুষের কথা বলছি যাঁর রক্তধারা পৃথিবীর বুকে প্রকৃত ইসলামকে টিকিয়ে রেখেছে। ইসলামের বাহ্যিক লেবাস ঠিক রেখে ভেতর থেকে ধীরে ধীরে এ পবিত্র ধর্মকে নিষ্প্রাণ ও বিলীন করে দেয়ার উমাইয়া ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে শহীদগণের নেতা হযরত ইমাম হুসাইন (রা.) কারবালার যে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন সে বিপ্লবের বাণী ও কারবালার প্রকৃত ঘটনা যিনি পরবর্তী যুগের মুসলমানদের জন্যে সংরক্ষিত করেছিলেন তিনিই হলেন আমাদের আজকের আলোচ্য মহাপুরুষ হযরত হুসাইন বিন আলী তথা জয়নুল আবেদীন (রা.) ।
ইমাম হুসাইন (রা.) ’র পুত্র ইমাম জয়নুল আবেদীন ৩৮ হিজরীর ৫ই শাবান তথা খৃষ্টীয় ৬৫৮ সালে মদীনায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল আলী। আল্লাহর অত্যধিক এবাদত বন্দেগীর কারণে তিনি জয়নুল আবেদীন বা ইবাদতকারীদের অলংকার উপাধি পেয়েছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে নামাজ ও সিজাদায় রত থাকতেন বলে তিনি সাজ্জাদ নামেও পরিচিত ছিলেন। ইমাম সাজ্জাদ কারবালার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। দশই মহররমের সেই ভয়াবহ ঘটনার দিনে মারাত্মক অসুস্থ থাকায় তিনি জিহাদে যোগ দিতে পারেন নি। ইয়াজিদের সেনারা তাকে হত্যা করতে গিয়েও তাঁর ফুফু জয়নাব (রা.)’র প্রতিরোধের মুখে এই মহান ইমামকে জীবিত রাখতে বাধ্য হয়। পরবর্তীকালেও আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান । আসলে মহান আল্লাহই এভাবে তাঁকে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব দেয়াসহ কারবালার কালজয়ী বিপ্লবের পরবর্তী অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করা ও এ বিপ্লবের প্রকৃত বাণী মুসলমানদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্যে জীবিত রেখেছিলেন।
কারবালার ঘটনার পর ইমাম জয়নুল আবেদীন ও তাঁর বোন হযরত জয়নাব (রা.) যদি জীবীত না থাকতেন তাহলে কারবালার শহীদদের আত্মত্যাগ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত ঐ বিপ্লবকে নিছক একটা দুর্ঘটনা বলে প্রচার করার ইয়াজিদী চক্রান্ত সফল হতো। উমাইয়া শাসকরা তখন এটাও প্রচার করতো যে ইমাম হুসাইন (রা.) ইয়াজিদের মতো তাগুতি শাসকের শাসন মেনে নিয়েছিলেন। আর এর ফলে পবিত্র ইসলাম ধর্মকে অবিচারের ব্যাপারে আপোসকামী ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্রও সফল হতো। কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছায় হযরত ইমাম সাজ্জাদ ও জয়নাব (রা.) কারবালা থেকে বন্দী অবস্থায় কুফা ও দামেস্কে যাবার পথেই স্বল্প সময়ে জনগণকে জানিয়ে দেন যে কারবালায় প্রকৃত ঘটনা কি ঘটেছিল এবং কারা ছিল ইসলামের জন্যে নিবেদিত-প্রাণ ও কারা ছিল ইসলামের লেবাসধারী জালেম শাসক মাত্র।
কুফায় ইবনে জিয়াদের দরবারে এবং দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে জয়নুল আবেদীনের তেজোদৃপ্ত ও সাহসী ভাষণ জনগণের মধ্যে এমন জাগরণ সৃষ্টি করে যে পরবতীকালে সে জাগরণের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল তাগুতি উমাইয়া শাসকদের তাখতে তাউস।
ইবনে জিয়াদ ও ইয়াজিদের দরবারে তেজোদৃপ্ত বক্তব্য রেখেছিলেন হযরত জয়নাব (রা.) । একই ধরনের বক্তব্য রেখেছিলেন নতুন ইমাম হযরত জয়নুল আবেদীন ( রা.)। কুফায় ফুফু জয়নাব ( রা.) ও বোন ফাতিমার ভাষণ শুনে জনগণ যখন মর্মাহত হয় ও কাঁদতে থাকে তখন তাদের সমাবেশে নতুন এই ইমামও বক্তব্য রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: হে মানুষেরা,আমি আলী,হুসাইন ইবনে আলী(রা.)’র সন্তান। আমি তাঁর সন্তান যার সব কিছু লুট করা হয়েছে,যার পরিবারের সবাইকে বন্দী করে এখানে আনা হয়েছে। আমি তাঁর সন্তান,যে ফোরাতের কিনারায় মর্মান্তিক ও নৃশংসভাবে নিহত হয়েছে। হে লোকেরা! তোমরা কিয়ামতের দিন কিভাবে নবী(সা.)’র সামনে দাঁড়াবে? রাসূল (সা.) যখন তোমাদের বলবেন,“ তোমারা আমার পরিবারবর্গকে এভাবে কতল করেছ আর আমার মর্যাদাও অক্ষুণ্ণ রাখনি,তাই তোমরা আমার উম্মত নও।”
নতুন ইমামের এ বক্তব্য শুনে কুফাবাসী চিতকার ধ্বনি দিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এবং একে-অপরকে তিরস্কার করে বলতে থাকে : আমরা এতই দুর্ভাগা যে নিজেরা যে ধ্বংস হয়ে গেছি তাও জানি না।
মৃত্যুর ভয়হীন যুবক ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা.)
ইবনে জিয়াদ নতুন ইমামকে হত্যার নির্দেশ দিলে ফুফু যেইনাব বলেন,তাহলে আমাকেও হত্যা কর্ তাঁর সঙ্গে!
নতুন ইমাম বললেন,আপনি ওর সঙ্গে কথা বলবেন না,আমি ওর সঙ্গে কথা বলছি।
তিনি জিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন: “ ওহে জিয়াদের ছেলে! আমাকে হত্যার ভয় দেখাচ্ছ? তুমি কি জান না শহীদ হওয়া আমাদের প্রথা ও শাহাদত বরণ আমাদের মর্যাদা….।”
ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা.) সব সময় দিনে রোজা রাখতেন ও পুরো রাত জেগে ইবাদত করতেন। রোজা ভাঙ্গার সময় তিনি বাবার ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত অবস্থার কথা উল্লেখ করে এত বেশি কাঁদতেন যে অশ্রুতে খাবার ভিজে যেত এবং খাবার পানিতেও অশ্রু মিশে যেত। জীবনের শেষ পর্যন্ত এই অবস্থা ছিল ইমাম জয়নুল আবেদীনের (রা.)। একদিন তাঁর খাদেম ইমামের কান্নারত অবস্থায় তাঁকে বলেন: আপনার দুঃখ ও আহাজারি শেষ হয়নি?
উত্তরে তিনি বলেন: তোমার জন্য আক্ষেপ! ইয়াকুব (আ.) আল্লাহর একজন নবী ছিলেন। তাঁর ১২ জন সন্তান ছিল। কিন্তু আল্লাহ তাঁর এক পুত্র ইউসুফকে চোখের আড়ালে রাখায় শোকে, দুঃখে ও অতিরিক্ত কান্নায় তিনি প্রায় অন্ধ হয়ে পড়েন, চুল পেকে যায় ও পিঠ বাঁকা হয়ে যায়। সন্তান জীবিত থাকা সত্ত্বেও তাঁর এ অবস্থা হয়েছিল। আর আমি আমার পিতা, ভাই এবং পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে মাটিতে পড়ে যেতে ও শহীদ হতে দেখেছি; তাই কিভাবে আমার দুঃখ ও অশ্রু থামতে পারে?
গভীর ধার্মিকতা ও আল্লাহর প্রেমে সিজদা-প্রবণ ছিলেন বলে ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা.)-কে বলা হত 'সাজ্জাদ'।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.