![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নেই কোন বৃত্তান্ত, একই বৃত্তে ঘুরতে ঘুরতে হচ্ছি শ্রান্ত
৯ ডিসেম্বর রাত্রিবেলা টিভির চ্যানেল মোড়াচ্ছি। কোন এক দেশীয় চ্যানেলে খবরের শেষাংশ দেখানো হচ্ছে,সেখানে জানানো হলো আজ ছিলো বেগম রোকেয়া দিবস,১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি জন্ম লাভ করে ১৯৩২ সালের একই দিনে(তথা ৯ ডিসেম্বরেই) তিনি গত হয়েছেন। দিবস উপলক্ষে কে কী বাণী দিয়েছে তা খবরে উল্লেখিত হলো। তখন মনে পড়লো সকালে উঠে পত্রিকার কোন এক চিপাতেও এরকম কিছু পড়েছিলাম। রবীন্দ্রনাথ আর হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিন এলে মিডিয়াতে বিয়েবাড়ির ন্যায় সাজ সাজ রব পড়ে যায়, অথচ বাঙ্গালী নারীমুক্তির আন্দোলনের পথিকৃতকে নিয়ে মিডিয়ার এতো অবহেলা কেন কিংবা উল্টিয়ে বলা যেতে পারে হুমায়ুন রবীন্দ্রদের নিয়ে মিডিয়ারই বা বাড়তি উতসাহ কেন?
আমাদের এই তথাকথিত আধুনিক যুগটি হলো পুরুষতান্ত্রিক মিডিয়া প্রনোদিত কনসিউমার সোসাইটির নিদর্শন। খুনাকুনীর খবর কিংবা চটকদার বিজ্ঞাপনের দ্রব্য, সবই মিডিয়ার কাছে পণ্য।মিডিয়াতে সেটাই প্রদর্শিত হয় যা মানুষ গিলবে। এবং পুরুষতান্ত্রিক মিডিয়ার কাছে রোমান্টিসিজম হলো সেই পন্য যা সহজেই যেকোনকিছুর সাথে গুলিয়ে মানুষকে গেলানো যায়। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন রোমান্টিক কবি, নারীকে কখনো দেবী কখনো প্রেয়সী বানিয়ে তিনি রচনা করেছেন অজস্র রোমান্টিক গান। রবীন্দ্র রচিত রোমান্টিসিজম যে সাহিত্যিক রস আস্বাদনের ক্ষেত্রে অনেক উচ্চমানের সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই, কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক মিডিয়ার কাছে রবীন্দ্ররচিত রোমান্টিসিজম হলো স্রেফ ভোগ্যপণ্য। রবীন্দ্রনাথের জন্ম দিবসে রবীন্দ্র ভক্তরা রবীন্দ্রসংগীত শোনার আশা নিয়ে টিভি সেটের সামনে বসবেন সেটাই স্বাভাবিক।কিন্তু এ বিষয়টিকে মিডিয়া দেখবে, যে ঐদিন একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর দর্শক বা কনসিউমার বিদ্যমান,তাই সারা বছর রবীন্দ্রনাথের পাত্তা না থাকলেও ঐদিন রবি ঠাকুরকে নিয়ে হৈ চৈ করলে জুটে যাবে বিজ্ঞাপনের স্পন্সর। এই বিজ্ঞাপনই মিডিয়াকে পুরুষতান্ত্রিক রূপ দেবার পেছনে মূল কারিগর।বিজ্ঞাপনে পন্যের উপযোগীতা বর্ণনায় নারী নিজেই পণ্যরুপে আবির্ভুত হয়।টিস্যু পেপারের মতো স্বচ্ছ শাড়ির আচল উড়িয়ে এক নারী ঘরময় হেটে বেড়াচ্ছে,দেখে মনে হলো এটা বুঝি শাড়ির বিজ্ঞাপন, বড়জোর টিস্যু পেপারের বিজ্ঞাপন হতে পারতো কিন্তু পরে বোঝা গেলো,নারীর হাতে রয়েছে মশা তাড়াবার স্প্রে,এটা আসলে মশার স্প্রে-এর বিজ্ঞাপন।ওয়েস্টার্ণ বিজ্ঞাপনগুলোতে অবস্থা আরো ভয়াবহ, আমাদের বিজ্ঞাপনে দেখানো হয় নারী নেচে গেয়ে স্প্রে ছিটাবার পরে মশারা দৌড়ে পালাচ্ছে, আর বিদেশী বিজ্ঞাপনে একজন পুরুষ বাথরুমের বেসিনে দাঁড়িয়ে বডি স্প্রের শিশিখানা বের করলেই সেই বাথরুমে দুনিয়ার তাবত নারীর সমাবেশ ঘটে যায়।তবে পশ্চীমা বিশ্বর মিডিয়াতে নারীর শারীরিক উপস্থাপনা যেমন তীব্র তেমনি সেই উপস্থাপনা নিয়ে গবেষণা এবং সমালোচনাও তীব্রতর।আমাদের দেশের নারীবাদিরা নির্বিষ। তারা সেই পুরুষতান্ত্রিক মিডিয়ার পত্রিকাতে লিখে অথবা টিভি চ্যানেলের টকশোতে এসে হয় সেই একই গতবাধা কথা বলেন যার চার লাইন শুনলে আমরা দশবার হাই তুলি অথবা উনারা আকস্মিক কিছু বলে ফেলে অযথা বিতর্ক তৈরী করেন (যেমন মিতা হোক কিছুদিন আগে করেছিলনে)। অবশ্য নারীবাদ ব্যাপারটাই বা কি তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। সে নিয়ে আলোচনা আরেকদিন হবে।
রবীন্দ্রনাথের রোমান্টিসিজম নিয়ে মিডিয়াতে যা ঘটে, সেই একই ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে হুমায়ুন আহমদে কে নিয়েও (বিশেষ করে তার মৃত্যুর পরে)। হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিনে চ্যানেল আই পালন করে হিমু দিবস। হুমায়ুন ভক্তদের মাঝে হিমুর পাশাপাশি মিসির আলীও অনেক জনপ্রিয় কিন্তু চ্যানেল আই হিমুকে পিক করেছে কারণ হিমু হলো একটি তরুন রোমান্টিক চরিত্র, পিস্তল হাতে ভয়ঙ্কর খুনী কিংবা জোছনা রাতে তরূনী সবাই হিমুর সামনে আবির্ভুত হয় রোমান্টিক আবহ নিয়ে।অন্যদিকে মিসির আলী হলো মিডীয়ার কাছে একজন রোমান্টিসিজিম বর্জিত বুড়ো লোক যে কিনা সারাদিন ভূত-পেত্নী খুজে বেড়ায়।
সাহিত্যিক একইসাথে সমাজকে চ্যালেঞ্জ করে আবার সমাজের কাছে সে আত্নসমর্পণ করতেও বাধ্য থাকে। সেই কারনে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সাহিত্যেও পাওয়া যায় পুরুষতন্ত্রের সুবাস।নারী চরিত্রগুলোর প্রাধান্য নির্ধারিত হয় পুরুষতন্ত্রের মাপকাঠিতে। হিমুর বান্ধবী রূপা হলো অপরূপা, জীবানন্দের বনলতা রহস্যময়ী, হৈমন্তি নিষ্পেষিত নারীর প্রতিচ্ছবি কিন্তু আইবড়ো হয়েও যে সে কতটা সুন্দরী সেটা বলতে তার স্বামী ভুলে নি।বেগম রোকেয়াকে “প্রেম-রহস্য” গল্প হতে উদ্ধৃতি করছি “যাবতীয় উপন্যাসের নায়িকাই “সুন্দরী” হইতে বাধ্য হইয়াছে।নাহিলে নায়িকা প্রথমে দর্শকদের নয়নরঞ্জন, অতঃপর চিত্তরঞ্জন করিতে সমর্থ হইতে পারে না”।
একজন সাহিত্যিক নিজে মতো করে সাহিত্য রচনা করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল,শরতচন্দ্র, জীবানন্দ, এবং হুমায়ুনরা এসেছিলেন বলেই আমাদের সাহিত্য এতটা ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর,তাদেরকে নিয়ে তুলুনা করাটাও অমূলক,কিন্তু যখন প্রশ্ন আসে মিডিয়া রিপ্রেজেন্টেশনের তখন পর্দার আড়ালে উকি দেয় অসমতা।সেই অসমতা রবীদ্রনাথ এবং বেগম রোকেয়ার মাঝে নয় বরং নারী-পুরুষের অসমতাতে কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মাপকাঠিতে নারীর এক্সট্রিম প্রেজেন্টেশনটাই বিজ্ঞাপনমুখী মিডিয়ার নিকট মুখ্য বিষয়।বেগম রোকেয়ার রচনায় সেরূপ প্রেজেন্টশনের কোন উপাদান নেই, বরং তিনি ছিলেন নারীর রূপচর্চা কেদ্রিক সৌন্দর্য্য-এর সমালোচক।মিডিয়ার সাথে রোকেয়ার আদর্শিক দ্বন্দ্বটা এখানেই।মিডিয়ার কোন আদর্শের দরকার নেই, তার দরকার ব্র্যাণ্ডের সিল বা ছাপ্পড় যা বিজ্ঞাপনে প্রসাধনী ও অলঙ্কারিক সৌর্দয্যে উপস্থাপিত নারীর দেহে অদৃশ্যভাবে লেপ্টে থাকে। অন্যদিকে নারী অলঙ্কার সম্বন্ধে বেগম রোকেয়া মতিচুর গ্রন্থে বলেন “ আমাদের অতিপ্রিয় অলঙ্কারগুলি-এগুলি দাসত্বের নির্দশন বিশেষ।কারাগের বন্দীগণের হাতকড়ি লৌহ নির্মিত, আমাদের হাতকড়ি স্বর্ণ-বা রৌপ্য নির্মিত চুড়ি। এই অলঙ্কারের জন্য ললনাকুলের কত আগ্রহ। মাদক দ্রব্যের যতই সর্বনাশ হউক না কেন,মাতাল তাহা ছাড়িতে চাহে না সেইরূপ আমরা অঙ্গে দাস্বতের নির্দশন ধারণ করিয়াও আপনাকে গৌরবান্বিত মনে করি-গর্বে স্ফীতা হই”।
প্রশ্ন আসতে পারে, মিডিয়াকে কেন পুরুষতান্ত্রিক বলা হয়? মিডিয়া তো প্রচুর নারীর কর্মসংস্থানও বটে।তবুও মিডিয়াকে পুরুষতান্ত্রিক বলা হয় ক্রণ মিডিয়া যে দর্শন প্রচার করে তা সমাজের নারী পুরুষের অসমতাকেই প্রকট করে তোলে। একদিকে যেমন পত্রিকার চিপায় কেন বেগম রোকেয়ার স্থান তা নিয়ে হা হুতাশ করা যায় অন্যদিকে পত্রিকার পাতায় বেশ বড় আকারেই দেখা যায় সিনেমার নায়িকাদের গ্ল্যামারাস ছবি এবং তাদের প্রেম-কেচ্ছা নিয়ে চটকদার সব খবর।পুরুষেরা যেমন এ সকল খবরের ভোক্তা তেমনি নারীরাও।কারণ মিডিয়া নারীকে দেখিয়ে দিচ্ছে এই হলো সৌন্দর্যের মাপকাঠি, আপনি এই ক্রীম মাখুন, ঐ সাবান ব্যাবহার করুন। সমাজবিজ্ঞানী বদরিলার “consumer society” বইতে এ প্রসঙ্গে বলেন “Woman is sold to women…while doing what she believes in preening herself, clothing herself, scenting herself, in a word creating herself, she is, in fact, consuming herself.
বেগম রোকেয়ার আদর্শ ধারণ করে নারী শিক্ষার আহবান নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে কি পৌছানো সম্ভব হয়েছে? BANBEIS-এর তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালে প্রাইমারী স্কুল থেকে মেয়েদের ড্রপ-আউট রেট ৫৯.৮৪ শতাংশ(ছেলেদের ক্ষেত্রেও আশঙ্কাজন, ৫২.২২ শতাংশ)।এস.এস.সি-তে বেগম রোকেয়া রচিত “জাগো গো ভগিনী” পড়েছিলাম।এক বড়ভাই একদিন দুষ্টূমি করে সেটাকে বলেছিলেন “ভাগো গো ভগিনী”। কথাটি রসিকতা হলেও মিডিয়ার ক্ষেত্রে এটি বাস্তব। এখন পণ্য বিক্রির আসায় নারীর পণ্যমাফিক উপস্থানপনা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে কড়া নেড়ে মিডিয়া উতসাহ দিচ্ছে অমুক-তমুক পণ্যের পেছনে যেন ভগীনিগণ ভাগিতে থাকে।শিক্ষার আলো বঞ্চিত যে নারী আগে ছিলো নিজ গৃহে অবরোধবাসীনি,সেই নারী পুনরায় বন্দী হয়েছে পুরুষতান্ত্রিক মিডিয়ার বডি স্প্রে-এর বিজ্ঞাপণী শিশিতে।সেই একই মিডিয়া যে রোকেয়া দিবসে রোকেয়ার কিছু অবদান খবরের শেষ পর্যায়ে এসে মনে করিয়ে দিয়েছে এইতো অশেষ কৃপা। নারীমুক্তির পথ দেখিয়ে বেগম রোকেয়া আজ নিজেই তার নিজ রচনায় বন্দীনি, রোকেয়া দিবসে বছরে একটিবার উনার আদর্শের প্যারোলে মুক্তি ঘটে।
(রোকেয়া দিবসের জন্য লেখাটি লিখেছিলাম, বিভিন্ন কারণে পোস্ট দিতে দেরী হয়ে গেলো বলে দুঃখিত)
২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৩
সাদরিল বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ মামুন ভাই
২| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৩
ক্যাপটেন জ্যাক স্প্যারো বলেছেন: লেখা পড়ে ভালো লাগল।
মিডিয়ার কোন আদর্শের দরকার নেই, তার দরকার ব্র্যাণ্ডের সিল বা ছাপ্পড় যা বিজ্ঞাপনে প্রসাধনী ও অলঙ্কারিক সৌন্দর্য্যে উপস্থাপিত নারীর দেহে অদৃশ্যভাবে লেপ্টে থাকে।
২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:১৯
সাদরিল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ক্যাপ্টান।আপনার ব্লাক পার্ল জাহাজ আমার ব্লগে ভীড়াবার জন্য ধন্যবাদ।
৩| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২২
এস এম আর পি জুয়েল বলেছেন: শিক্ষার আলো বঞ্চিত যে নারী আগে ছিলো নিজ গৃহে অবরোধবাসীনি,সেই নারী পুনরায় বন্দী হয়েছে পুরুষতান্ত্রিক মিডিয়ার বডি স্প্রে-এর বিজ্ঞাপণী শিশিতে।সেই একই মিডিয়া যে রোকেয়া দিবসে রোকেয়ার কিছু অবদান খবরের শেষ পর্যায়ে এসে মনে করিয়ে দিয়েছে এইতো অশেষ কৃপা।
ভাল ছিল
২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২২
সাদরিল বলেছেন: থ্যাঙ্কস রুবেল
৪| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৮
শুঁটকি মাছ বলেছেন: সুন্দর লেখা!!!!!!!!!!!!
২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩২
সাদরিল বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩১
আরজু পনি বলেছেন:
প্রথমত ব্যবসা ( অর্থ ), দ্বিতীয়ত পুরুষের মনোরঞ্জন হবে না রোকেয়াবলীতে
তাই রোকেয়া দিবসে অত মাতামাতি নেই ...
প্লাস, শেয়ার এবং প্রিয়তে
২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৭
সাদরিল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৬| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৭
সন্দীপ হালদার বলেছেন: মিডিয়ার ভাষা এবং পরিবেশন এতমাত্রায় পুরুষতানত্রিক যে সেখানে বেগম রোকেয়া কে আনার ইচ্ছেই তাদের নেই। ভাল লাগল আপনার বিশ্লেষণ।
২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৬
সাদরিল বলেছেন: আপনার সাথে সহমত।মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
৭| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৬
প্যাপিলন বলেছেন: বেগম রোকেয়াকে নিয়ে মিডিয়া মাতামাতি করেনা তা একদিক থেকে ভালই। একারণে যে, বেগম রোকেয়া পণ্য হওয়া থেকে বেচে আছেন। লালন যেমন এখন পুরোই কর্পোরেট প্রোডাক্ট হয়ে গেছেন। শাহ আব্দুল করিমকেও নিয়ে টানাটানি ভালই চলছে।
এখানে মিডিয়া ব্যবসা ছাড়াও প্রতিযোগিতার একটি ব্যাপার আছে। রবীন্দ্রনাথ আমাদের লিডিং সাংস্কৃতিককর্মীদের কাছে নমস্য, সেই হিসেবে তাকে নিয়ে নামতে রিস্ক নেই। মিডিয়া কবিকে কত বেশি ফোকাস করতে পারে তার একটি প্রতিযোগিতা করে। এখানে সম্মান জানানোর চেয়ে ব্যবসাটাই বেশি। যেমন একটি চ্যানেলকে দেখেছি গত বছর নজরুলকে নিয়ে বেশ প্রোগাম করেছে, এ বছরও করেছে কিন্তু অন্য চ্যানেল এগিয়ে আসেনি। অর্থাত নজরুলকে নিয়ে উৎসব লাভজনক হচ্ছেনা। এখন রোকেয়াকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে কোন প্রোডাক্ট সাহস করবেনা সেটাই স্বাভাবিক।
আমাদের প্রতিষ্ঠিত প্রবীণ সংস্কৃতিক কর্মীরা একটা সময় নাম মাত্র সম্মানী, কখনও বিনে পয়সায় কাজ করে গেছেন। শেষ সময়ে এসে মিডিয়ার কল্যানে তারা একটু পেশাদারী হয়ে গেছেন এবং নবীনরাও পেশাদার শিল্পি হওয়ার সাহস পাচ্ছেন। সেই হিসেবে মিডিয়ার মাতামাতি খারাপনা। পকেটে ভাল পয়সা আসতে থাকলে মিডিয়া কবিকে সম্মান করছে না ব্যবসা করছে সেটা ভাবতে কে যায়। সম্মান ধুয়ে খেলেতো পেট চলবেনা।
আর পুরুষতান্ত্রিকতা বা নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার এ শব্দগুলো নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। আপনি সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই ভাবতে পারেন। কোন নারী যদি নিজের ইচ্ছায় স্বল্প পোশাকে কোন গাড়ির মডেল হয়ে ভাল উপার্জন করে, কিংবা সেভিং ক্রিমের বিজ্ঞাপন করে অর্থ উপার্জন করে তখন উপার্জনের সেই পথটাকে অন্যান উপার্জনের মতো একটা বৈধ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা না করে নারী পন্য হিসেবে বিকোচ্ছে ভাবাটা কি ভুল নয়? হ্যাঁ, যদি এমনটি হয় যে এভাবে এড করাটা আইন ও বিধি বহির্ভুত তাহলে ঠিক আছে।
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫০
সাদরিল বলেছেন: আপনার কমেন্ট পড়ে বুঝলাম আপনি লেখাটা বেশ খুটিয়ে খুটিয়ে পড়েছেন।সে জন্য প্রথমেই অসংখ্য ধন্যবাদ।
"বেগম রোকেয়াকে নিয়ে মিডিয়া মাতামাতি করেনা তা একদিক থেকে ভালই। একারণে যে, বেগম রোকেয়া পণ্য হওয়া থেকে বেচে আছেন। লালন যেমন এখন পুরোই কর্পোরেট প্রোডাক্ট হয়ে গেছেন। শাহ আব্দুল করিমকেও নিয়ে টানাটানি ভালই চলছে।"
আপনার এ কথার সাথে সম্পূর্ণ একমত। লালন আর বাউল আব্দুল করিম গান রচনা করেছেন তাই তারা মিডিয়ার কাছে লোভনীয় অন্যদিকে রোকেয়া শিক্ষার আদর্শ প্রচার করতে চেয়েছেন যা বিক্রী করা যায় না। আর যা বিক্রী করা যায় না তাতেই মিডিয়ার অরুচী।এই কারণটাকেই সুত্র ধরে বেগম রোকেয়ার সাথে মিডিয়ার দ্বন্দ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি।
নজরুলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েও আপনি একটি গুরত্বপূর্ন বিষয় আমাকে অনুধাবন করিয়েছেন। রবিন্দ্রনাথের মতো নজরুলকে নিয়েও কিন্তু মিডীয়ার রিস্ক নাই,তারপরও নজরুল উতসব লাভজনক হচ্ছে না কারণ রবিন্দ্রনাথ যেখানে রোমান্টিক কবি নজরুল সেখানে বিদ্রহী কবি। মিডিয়া নিজেই রোমান্টিসজমকে প্রতিশঠিত করেছে। ফেব্রুয়ারী মার্চ আর ডিসেম্বরে দুই একটা দেশ নিয়ে বিজ্ঞাপন দেখবেন কিন্তু বাকী সব সময়েই বিজ্ঞাপন বা নাটকে রোমান্টিসিজমের প্রাধান্য। আর মিডীয়ার কারণে যে পেশাদারিত্বে গতি এসেছে এ কথা আমিও স্বীকার করি।পোস্টে মিডিয়ার কারণে কর্ম সংস্থানের কথা উল্লেখ করেছি।
আরেকটা বিষয়, নারী যদি নিজের ইচ্ছায় পোশাক নির্বাচন করে থাকে তাহলে বডি স্প্রে-এর বিজ্ঞাপনে এসেই সবার স্বল্প পোশাক পরিধানের ইচ্ছে হয় কেন? কারণ পোশাক নির্বাচন মডেলদের হাতে নেই, মডেল কোন পোশাক পড়বে তা নির্ভর করবে এডভারটাইজিং পলিসির উপর। এক্ষেত্রে নারীর অর্থ উপার্জন যতটা না মুখ্য তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো নারী মডেলদের খ্যাতির চূড়ান্তে পৌছে দিচ্ছে মিডিয়া। তবে আমি এখানে যা ব্যাখা করলাম তা নারীর পন্য হওয়া নিয়ে একটি একমুখী ব্যাখা।আরো নানামুখি ব্যাখা আছে সমাজবিজ্ঞানে যা নিয়ে ভবিষ্যতে ব্যাখা করার আগ্রহ রাখি। আপনাকেও তখন সাথে পাবো আশা রাখি।
৮| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১৫
বাটাগোর বাস্কা বলেছেন: ''মাজবিজ্ঞানী বদরিলার “consumer society” বইতে এ প্রসঙ্গে বলেন “Woman is sold to women…while doing what she believes in preening herself, clothing herself, scenting herself, in a word creating herself, she is, in fact, consuming herself.''
শুধু বাংলাদেশেই নয়,, বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতেও নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। সে গণমাধ্যমগুলোও অনেকটাই পুরুষতান্ত্রিক।যতদিন পুঁজিবাদ আর পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোর পুর্নবিন্যাস না হবে ততদিন নারী পণ্য হিসেবেই উপস্থাপিত হবে। তবে বাস্তবতা এই যে,,শুধু গণমাধ্যমেই নয় রাষ্ট্রের অন্যান্য কাঠামোয় বিরাজমান পুরুষতান্ত্রিকতা বিলুপ্ত করা আদতে সহজ নয়।
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩৪
সাদরিল বলেছেন: আপনার সাথে সহমত।রাষ্ট্রের অন্যান্য কাঠামোয় পুরুষতন্ত্র বিরাজমান বলেই মিডিয়ায় এর উপস্থিতি প্রকট। অনেক ধন্যবাদ কমেন্টের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০২
মামুন রশিদ বলেছেন: সুন্দর বিশ্লেষণ করেছেন । আমাদের মিডিয়া সব কিছু কমার্শিয়াল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখে থাকে । মহীয়সী বেগম রোকেয়া নিয়ে মাতামাতি করা কমার্শিয়ালি লাভজনক হবে না, তাই তারা চুপ ।