![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার সম্পর্কে কিছু একটা বলতে হবে। ভাবছি কি বলা যায়। কিছু একটা তো বলতে হবে। ঠিক আছে বলছি, প্রতিটা মানুষই স্বতন্ত্র, আমি আমার মত আর তুমি তোমার মত। তারপরও কারো কারো সাথে আমাদের চেনা জানা হয়ে যায়, একে অপরকে ভাল লাগে, বন্ধুত্ব গড়ে উঠে।
প্রতিদিন সকালে নাস্তার টেবিলে বদন-বইয়ের পাতায় চোখ বুলাতে বুলাতে বন্ধুদের খোঁজ খবর জেনে নেই। প্রবাসে থাকলেও মনটা হরহামেশাই পরে থাকে প্রাণের দেশ বাংলাদেশে। গত কয়েকদিনের বাংলাদেশ যেন অনেকটাই অন্যরকম। মশাল আর মিশিলের ঢাকা সহ সারা দেশ ফুসে উঠেছে। একটাই দাবী রাজাকার মোল্লার ফাঁসি চাই, সকল রাজাকারের ফাঁসি চাই। এমন একটি সময়ে দেশে নেই ভাবতেই মনটা কেমন হয়ে উঠে।
ফেবুতে বন্ধুদের দেয়ালে চোখ বুলাচ্ছি, প্রতিদিনের মত আজকের সকালটা একেবারেই ভিন্ন, রক্তে টান টান উত্তেজনা অনুভব করছি।
প্রজন্মের দাবী আর গন-মানুষের জোয়ার থেকে তোলা জিয়া রায়হান ভাইয়ের অনবদ্ধ কিছু ছবি দেখলাম, তাঁর একটি স্ট্যাটাস থেকে জানতে পারলাম। শাহবাগ মোড়ের নতুন নাম করণ হয়েছে “প্রজন্ম চত্বর”।
ফেবুর দেয়ালে চোখ রাখছি আর উত্তেজনার ব্যারোমিটারের উঠানামায় ভিতরে টান টান উত্তেজনা উনুভব করছি। মনটাকে সামলে নিয়ে, সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। কথা কবিতার কয়েকটি কবিতার লাইনে চোখটি আঁটকে গেল। বারবার পড়ছি-
লাখো শহীদ ডাক দিয়েছে
সব শহীদদের খবর দে
সারা বাংলা ঘেরাও করে
রাজাকারদের কবর দে ------
আরও একটু সামনের দিকে গিয়ে দেখি মাহফুজ মেহেদী চমৎকার একটি ছড়া উপহার দিয়েছেন, এমন আহবানে মনটা আরও চঞ্চল হয়ে উঠলো। কিঞ্চিৎ দ্বিধা আর উত্তেজনায় ছড়াটাও বারবার পড়ছিলাম-
সবাই মিলে আওয়াজ তুলে
বদলে দিতে রায়
আয় শাহবাগে আয়।
ইন্দ্রজালের কলম সেনা
শোধতে হবে মায়ের দেনা
কবর থেকে ডাকছে ওরে
শহীদ রুমীর মায়
আয় শাহবাগে আয়।
আয়রে ছুটে শপথ বুকে
এই তামাশা দিবোই রুখে
যে রায় শুনে আসামীরও
মুখে হাসি পায়,
সে রায়টাকে বদলে দিতে
আয় শাহবাগে আয়।
দেশ শুধু ঢাকাতে জ্বলে উঠেনি, ওদিকে সিলেট থেকে তরুণ পাপলু বাঙালী লিখেছেন-
এসো বন্ধু তোমার নরম হাত আজ মুষ্টিবদ্ধ হোক
এসো বন্ধু তোমার কোমল উচ্চারণ আজ সিংহের গর্জন দিক
রসো বন্ধু প্রিয়ার উষ্ট ছুঁয়ে যাক বিপ্লবের লালটে স্রোতে
এসো বন্ধু স্লোগান মুখর হোক আমাদের বিজয়ের শহীদমিনার
-ভাবতে পারিনি বিচারের রায় নিয়েও আমাদের রাজপথে নামতে হবে।
ভালোই লাগছে, লাখো মানুষের গন-জোয়ারে এবার যদি দুর্নীতি, গুম, হত্যা সন্ত্রাসের সাথে মানুষ খেকোরাও ভেসে যায়, তাহলে আমার কাঙ্গালি বাংলা আবার সোনার বাংলায় পরিণত হতে পারে। কিন্তু না, এমনটি তো হবার নয়, দেশের মানুষের অনুভূতি আর আবেগকে তুচ্ছ করে গনমানুষের দাবিকে রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ দিতে চাচ্ছে সুবিধাবাদীরা। এমন একটি ইঙ্গিত পেলাম অনেকগুলি স্ট্যাটাসে। সেই রকম একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তির্যক নীল, তিনি লিখেছে-
শাহ্বাগে বেহুদাই লাফালাফি করছেন সবাই!
হেড লাইন দেখেই ক্ষেপে গেলেন? বাঙালী হলে যা হয় আরকি! কানে হাত না দিয়েই চিলের পিছনে কানের জন্য দৌড়ানো আরকি।
আপনার কি মনে হয়! কাদের মোল্লার ফাঁসি হোক এটা আওয়ামীলীগ চায়না? আদালতের উপর প্রভাব খাটিয়ে জামাতে ইসলামীর সাথে আঁতাত করে ফাঁসির পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে? বিএনপি কে বাদ নিয়ে জামাতকে নিয়ে নির্বাচন করার প্রস্তুতি এটা?
প্রশ্নই আসেনা।
দেখুন না খাম্বা-দল কেমন বোকার মতো হাঁ করে তাকিয়ে আছে। কোন কিছুই যেন বলার নাই। আসলেই বলার মতো কিছু নাই। খা-লেদার ঘিলুতে এই মারপ্যাঁচ কখনোই ঢুকবে না।
আরেকটু গভীরে চিন্তা করুন:
আওয়ামীলীগ একেবারে ঠাণ্ডা মাথায়, অনেক বুঝে শুনে, গভীরভাবে চিন্তা করেই এই রায় দিয়েছে।
আরে বাবা এটাইতো ফাইনাল না। আপিল হবে আবার শুনানি হবে, আবার রায় হবে। আবার রায়ে ফাঁসি দিলে ক্ষতিটা কি? ততদিনে তো একটা বছর কেটে যাবে। ফাঁসির রায় দিয়ে যেতে পারলে ক্ষমতার পালা বদল হয়ে গেলেও আন্দোলনের উৎকৃষ্ট একটা খাদ্য হাতে থেকে যাবে।
জনগণ এই আউল-ফাউল একটা বিষয় নিয়ে লাফালাফি করে অন্তত: কিছুটা দিন ব্যস্ত থাকুক না! আওয়ামীলীগ হটাও অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে লাফালাফিটা তো বন্ধ হলো। জনগণের দৃষ্টিটা কি অন্যদিকে ঘুরানো হলো না?
আমরাও বোকা জনগণ রাজনৈতিক দলের কাছে রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে এভাবেই ধোঁকা খাচ্ছি বারবার।
আবারও আশংকা আবারও রাজনৈতিক পতিতাদের দৌড়াত্ব। আমাদের কি এই রাজনৈতিক পতিতাদের হাত থেকে রক্ষা নেই। না, এমনটি ভাবতেই চাইনা। আমরা ৫২’তে ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি, এটাই তো সেই ভাষার মাস। ৭১’এর সংগ্রামী শক্তিকে পুঞ্জিভূত করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব। দেখিয়ে দেব, রাজনৈতিক পতিতাদের ব্যবসা করার সময় শেষ হয়ে এসেছে। তাঁদের স্বার্থ চরিতার্থ করার দিন খতম হয়েছে। এতদিন আমাদেরকে মুলা দেখিয়ে, নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়ে তা ইচ্ছে তাই করেছো বাছাধনরা এবার আমাদের পালা, গনমানুষের গণআন্দোলনের স্রোতে এবার তোমরাও ভেসে যাবে।
আমার পূর্বপুরুষেরা যেমন দলবল নির্বিশেষে ৫২’তে ভাষার জন্য হাসিমুখে প্রাণ দিয়েছেন, ৭১’এ স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছেন, আমরাই তো সেই পূর্ব পুরুষের প্রজন্ম, লাখো শহীদের রক্তের দামে অর্জিত আমার সোনার বাংলাদেশকে শোষণের হাত থেকে মুক্ত করবোই করবো। আর সেই জন্য সবার আগে দেশটাকে কলঙ্ক মুক্ত করতে হবে। আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী বর্বর কসাই রাজাকারদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেশটাকে কলঙ্ক মুক্ত করে নতুন উদ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যাব, “জাগো বাংলাদেশ”।
©somewhere in net ltd.