নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহাবুব আলম

সাহাবুব আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুতেন খামেনের অভিশাপ এবং রহস্য সংগ্রহ

২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২২

তুতেন খামেনের অভিশাপ
এবং এর রহস্যময় পরিণতি

১৮৯১ সালের কথা।
হাওয়ার্ড কার্টার নামক একজন
অল্পবয়স্ক ইংলিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ
মিশরের মাটিতে পা রাখেন।
মিশরের প্রাচীন স্থাপনা নিয়ে তার
প্রচন্ড আগ্রহ! কারণ স্থাপত্য শিল্পের
এত প্রাচীন এবং সুসংবদ্ধ নমুনা
পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায়নি।
বছরের পর বছর তিনি কাজ করে
গেলেন। তার অদম্য শিল্পগুণকে কাজে
লাগিয়ে রানী হৎসিপসুটের
মন্দিরের দেয়ালের ছবিগুলোর নমুনা
তৈরী করলেন প্রায় ছয় বছর ধরে।
মিশরে থাকাকালীন বছরগুলোতে
তিনি তার প্রাপ্ত গবেষণা এবং
অনুসন্ধান থেকে এটা অনুভব করছিলেন
যে, কমপক্ষে একটি অনাবিষ্কৃত
সমাধি এখনো মিশরে রয়েছে। আর
তা হচ্ছে ফারাওদের মধ্যে
একেবারেই অপরিচিত রাজা তুতেন
খামুনের সমাধি এবং তার ধারণাই
সত্যি ছিল।
ফারাওদের ১৮তম রাজবংশের
রাজাদের মধ্যে তুতেন খামুন ছিলেন
১১ বা ১২তম। তিনি 1333 – 1324 B.C.E.
(কারো কারো মতে 1336 – 1327 B.C.E)
পর্যন্ত মিশরের রাজত্ব করেন। তিনি
রানী আনখেসেনপাতিন নাম
অল্পবয়স্ক এক যুবতীকে বিয়ে করেন।
অনেক গবেষকের মতে, রানী
আনখেসেনপাতিন আসলে তুতেন
খামুনের বোন ছিলেন। তুতেন
খামুনের পিতার নাম ছিল আখেন-
আতেন। তার পিতার পরই তিনি
সিংহাসনে বসেন।
তার পিতা “আতেন (সূর্য দেবতা)”
নামক একটি নতুন ধর্ম গ্রহণ করার জন্য
জোর প্রচেষ্টা চালান। আগে
মিশরের লোকেরা “আমুন (বায়ু এবং
শ্বাস নিঃশ্বাসের দেবতা)”-এর
উপাসক ছিল। তার পিতা তখনকার
মিশরের জনগণের উপর তার সৃষ্ট ধর্মটি
চাপিয়ে দিতে চাপ প্রয়োগ শুরু করে
এবং পূর্বের ধর্মীয় উপাসনালয় এবং
স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা শুরু করে। তার
লক্ষ্য ছিল আমুন নামটি বিলুপ্ত করা।
ফলে তৎকালীন মিশরের জনগনে মধ্যে
বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। তখন তার পিতা
মারা যান। কিন্তু কী কারণে কেউ
জানে না। তবে অধিকাংশ
গবেষকের মতে, তাকে হত্যা করা
হয়েছিল।
পিতার মৃত্যুর পর মাত্র নয় বছর বয়সে
তুতেন খামুন সিংহাসনে আরোহণ
করেন এবং আবার পুরাতন ধর্ম অর্থাৎ
“আমুন” এর উপাসনা প্রচলন করেন। সে
অনুসারে নিজের নাম পরিবর্তন করে
জনগনকে আশ্বস্তও করেন। তুতেন
খামুনের পিতার নাম পূর্বেই বলা
হয়েছে “আখেন-আতেন” এবং তুতেন
খামুনের মায়ের নাম তিয়ু। তিয়ু
ছিলেন আখেন-আতেনেরও মা।
আখেন- আতেনের অন্য এক স্ত্রীর নাম
নেফারতিতি (যিনি তাঁর
সৌ্ন্দর্যের জন্য বিখ্যাত ছিলেন)।
তুতেন খামুনের বিয়ে হয়
নেফারতিতির মেয়ে
আনখেনপাতিনের এর সাথে, যিনি
কূমারী বয়সে তাঁর পিতা আখেন-
আতেনের সন্তানের জননী হন! তুতেন
খামুনের প্রকৃত নাম ছিল তার পিতার
মত “তুতেন-খাতেন” এবং তার স্ত্রীর
নাম ছিল রানী আনখেসেনপাতিন।
কিন্তু তার পিতাকে সাপোর্ট
দেয়ার জন্য সে শীঘ্রই নীজের নাম
তুতেন-খাতেন থেকে তুতেন-খামুনে
এবং স্ত্রীর নাম আনখেনপাতিন-
আমুনে পরিবর্তন করেন।
গবেষকদের মধ্যে তুতেন খামুনের নাম
নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। কারো
কারো মতে তার নাম তুতেন-খামুন,
কারো মতে তুতেন-খামেন, আবার
কারো কারো মতে তুতেন-খাতন।
প্রকৃতপক্ষে তার নামগুলো বেশির
ভাগই হায়ারোগ্লিফিক হরফে লেখা
ছিল, যার অর্থ আধুনিক সভ্য মানুষের
কাছে প্রায় ১৮০০ বছর ধরে দুর্বোধ্য
ছিল। এর অর্থ উদ্ধারের পদ্ধতি
আবিষ্কৃত হয়েছে মাত্র উনিশশো
শতকে।
ভাষাকে লিখে প্রকাশ করার
সবচেয়ে প্রাচীন পদ্ধতির একটি ছিল
এই হায়ারোগ্রাফি। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত
সবচেয়ে প্রাচীন হায়ারোগ্লিফিক
লিখাটি প্রায় খ্রিস্টের জন্মেরও
প্রায় ৩৩০০ বা ৩২০০ বছর পূর্বে লিখা।
হায়ারোগ্লিফিতে কোন Vowel নেই।
এ কারণে ঠিক কিভাবে
হায়ারোগ্লিফি উচ্চারণ করতে হবে,
এটা বের করা প্রায় অসম্ভব। আর এ
কারণেই তুতেন খামুনের নামের সঠিক
উচ্চারণ নিয়ে নানাজন নানা মত
প্রকাশ করে।
ইতিহাসের কোথাও এটা খুঁজে
পাওয়া যায়নি যে, কীভাবে তুতেন
খামেনের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু
বেশির ভাগ গবেষকেরই ধারণা,
তাকে হত্যা করা হয়েছে। কারণ
তুতেন খামুন দুটি মৃত সন্তানের পিতা
হয়েছিলেন। আর অনেক গবেষক এটা
বিশ্বাস করেন, তুতেন খামুনের কোন
বংশধর না থাকায় তাকে হত্যা
করলেই “আয় (Ay)”-এর লাভ। আয় ছিলেন
তৎকালীন রাজাকে সাহায্য করার
জন্য সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি।
হত্যাকাণ্ডে তুতেন খামুনের স্ত্রী
এবং তাকে বহনের কাজে
নিয়োজিত গাড়ির চালকও জড়িত
বলে অনেকে মত প্রকাশ করেন। এটা
সত্য হওয়ার যথেষ্ট কারণও রয়েছে।
তুতেন খামেনের মৃত্যুর পর তার পরবর্তী
রাজা হন “আয়” এবং তার কাছ থেকে
ক্ষমতা দখলকারী তৎকালীন
সেনাপতি “হোরেম-হ্যাব”। উভয়েই
সমস্ত রাজকীয় দলিল দস্তাবেজ,
খোদিত দেয়াল লিখন হতে তুতেন
খামেনের নাম মুছে দেন এবং তার
সম্পর্কিত যাবতীয় জিনিস ধ্বংস করে
দেন। ফলে ইতিহাস থেকে তুতেন
খামেনের নাম মুছে যায় চিরতরে।
কিন্তু ভুলক্রমে কতিপয় দালান এবং
দ্রব্যসামগ্রীতে তার নাম রয়ে যায়।
তুতেন খামুনের সমাধি আবিষ্কারের
পর তার শরীর প্রায় তিনবার এক্সরে
করা হয়েছিল। সর্বশেষ এক্সরের
তথ্যমতে মিশর, ইতালি, সুইস এবং
ন্যাশনাল জিওগ্রাফির বিশেষজ্ঞরা
একমত প্রকাশ করেন যে, কোন কারণে
তুতেন খামুনের বাম পা
মারাত্মকভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং
সে পায়ের হাড়ে চিড় দেখা দেয়।
ফলে খুবই অল্প সময়ে তুতেন খামুনের
মৃত্যু ঘটে।
সংক্ষেপে তুতেন খামেনের বাহ্যিক
গঠনঃ
মাথা: সম্পূর্ণ মুন্ডিত।
চোখ: বিস্তৃত।
কান: ৭.৫ মিলিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট
ছিদ্র যুক্ত।
করোটি: সম্পূর্ণ খালি। (মস্তিষ্ক)
আক্কেল দাঁত: সামান্য উত্থিত।
উচ্চতা: ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি।
বয়স: প্রায় ১৮।
আসুন, আমরা আবার সেই হাওয়ার্ড
কার্টারের কাহিনীতে ফিরে যাই।
এই অংশটুকুর নাম দেওয়া যায় –
“অভিশাপের শুরু” !
হাওয়ার্ড কার্টার তার বিশ্বাসকে
কাজে পরিণত করতে অর্থাৎ এ
সমাধিটি খুঁজে বের করতে লর্ড
কার্নার্বন নামক একজন সম্পদশালী
লোকের সাহায্য পেলেন। লর্ড
কার্নার্বন হাওয়ার্ডকে তার সমস্ত
অভিযানের খরচের যোগান দিলেন।
তখন সবাই ধারণা করত, কিং
ভ্যালীতে অর্থাৎ তৎকালীন মিশরের
রাজাদের সমাধির জন্য নির্দিষ্ট
উপত্যকায় যত সমাধি ছিল তার
সবগুলোই ইতিমধ্যে আবিষ্কার হয়ে
গেছে এবং বেশির ভাগ সমাধিই
সম্পত্তিই চোর-ডাকাতেরা লুটপাট
করে নিয়েছে। এটা বুঝাই যাচ্ছিলো
যে, কিং ভ্যালীতে আবিষ্কার
কারার মতো কিছু বাকী নেই। হলোও
তাই।
পাঁচ বছর ধরে অদম্য হাওয়ার্ড তার
অভিযানের দল নিয়ে সম্পূর্ণ কিং
ভ্যালী চষে বেড়ালেন, অসংখ্য
জায়গা খুঁড়লেন। কিন্তু কাজের কাজ
কিছুই হল না। মনে হল, ৫ বছর যাবত
তিনি শুধু সময়ই নষ্ট করেছেন। ১৯২২
সালের দিকে লর্ড কার্নার্বন
হাওয়ার্ডকে ইংল্যান্ডে ডেকে
পাঠান এবং জানান যে, তিন আর এ
অভিযানের খরচ বহন করবেন না। পাঁচ
বছরের সমস্ত কষ্ট বৃথা যাবে, এটা
ভেবে হাওয়ার্ড শেষ আরেক সিজন
খোঁড়াখুঁড়ির জন্য অর্থ দিতে
কার্নার্বনকে রাজি করান।
এবার মিশরে আসার সময় হাওয়ার্ড
কার্টার সাথে করে একটি হলুদ
ক্যানারি পাখি নিয়ে আসেন।
ইংরেজিতে “ক্যানারি”-এর একটি
অপ্রচলিত অর্থ হল, গুপ্তচর। হাওয়ার্ডের
দলের সুপারভাইজার একারণেই তাকে
বলেছিল “গোল্ডেন বার্ড”। এটি হয়ত
তাদেরকে সেই গুপ্ত সমাধির সন্ধান
এনে দিবে।
আর হয়তো সেটাই ঘটেছিলো!
১৯২২ সালের নভেম্বরের ৪ তারিখ।
হাওয়ার্ডের কর্মচারীরা কাজ করার
সময় তুতেন খামেনের সমাধির
প্রবেশপথে সর্বপ্রথম হোঁচট খেল।
তারা রাজা Ramesses IV এর
সমাধিতে প্রায় দুই লক্ষ টন
ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করার পর নিচে
পাথর কেটে তৈরী করা একটি
সিঁড়ির সন্ধান পেলেন। খুঁড়তে খুঁড়তে
তারা একই রকম আরো প্রায় ১৫টি
সিঁড়ি অতিক্রম করে অবশেষে একটি
প্রাচীন এবং সীল করা দরজার
সামনে এসে উপস্থিত হলেন। দরজার
উপর হায়ারোগ্লিফিকে বড় করে
লিখা ছিল, “তুতেন খামেন”। এ
দরজাটি অতিক্রম ভেতরে ঠিক একই
রকম আরেকটি দরজা পাওয়া গেল। সে
দরজাটি অতিক্রম করে ভেতরে ঠিক
একই রকম আরেকটি দরজা পাওয়া গেল।
অবশেষে সেটি অতিক্রম করে
অভিযাত্রী দলটি পৌছে গেল তুতেন
খামুনের সমাধিতে।
ভেতরে পাওয়া গেল স্বর্ণমণ্ডিত
একটি কফিন। তা খুলে দেখা গেল
ভেতরে ঠিক একই ধরনের আরেকটি
কফিন। সে কফিন খুলে দেখা গেল
তার ভেতরে ঠিক একই রকম স্বর্ণমণ্ডিত
আরেকটি কফিন এবং অবশেষে সে
কফিন খুলে পাওয়া গেল তুতেন
খামুনের মমিকৃত শবদেহ।
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যপার হল, ৫৫০০ বছর
পরও সবকিছু এতটাই পরিষ্কার ছিল যে,
ওগুলো ঝকঝক করছিলো! যেন
আগেরদিনই পরিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া সমাধির আশেপাশের
কক্ষগুলোতে পাওয়া গেল অসংখ্য
মহামূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী, যার
বেশিরভাগই ছিল স্বর্ণমণ্ডিত।
চামরার তৈরী দ্রব্য সামগ্রীগুলোও
নষ্ট হয়নি। তবে দর্শকদের সবচেয়ে
অবাক করে মমির পাশে রাখা এক
তোড়া ফুল, এতদিনেও যা নষ্ট হয়নি।
এ সম্পত্তির পরিমাণ এতই বেশি ছিল
যে, এক কথায় বলতে গেলে তুতেন
খামুনের সমাধি আবিষ্কারের পর
সারা পৃথিবীর মানুষ রীতিমত স্তব্ধ
হয়ে যায়। কারণ তুতেন খামুন ফারাও
রাজাদের মধ্যে খুবই অল্পসময় রাজত্ব
করেন এবং খুবই অপরিচিত ছিলেন।
তার সমাধিতেই যদি এত ধন-সম্পত্তি
পাওয়া যায়, তাহলে বড় বড়
সমাধিগুলোতে কত সম্পত্তি লুকানো
ছিল??? বর্তমান যুগে এটা খুবই বড় প্রশ্ন।
কিন্তু ওগুলো কথা এখন আর ভেবে লাভ
নেই কারন চোর-ডাকাতের বহুআগেই
তা হস্তগত করে নিয়েছে। তুতেন খামুন
খুবই অপরিচিত ফারাও রাজা ছিলেন
বলে চোর-ডাকাতেরা তার সমাধি
খুজে পাওয়া কোন চেষ্টাই হয়তো
করেনি। একারণেই আধুনিক বিশ্বের
আবিষ্কৃত একমাত্র অক্ষত সমাধিটিই হল
তুতেন খামুনের সমাধি।
যেদিন অভিযাত্রী দল প্রথম তুতেন
খামুনের সমাধির হদিস পেলো,
সেদিন রাতেই হাওয়ার্ড কার্টার
তার বাসায় ফিরে এসে তার
কাজের লোকের হাতে কয়েকটি হলুদ
পালক দেখতে পান। ভয়ে আতঙ্কিত
কাজের লোকটির কাছে তিনি
জানতে পারেন, একটি কোবরা তার
ক্যানারি পাখিটিকে খেয়ে
ফেলেছে। হাওয়ার্ড কুসংস্কারকে
মোটেই বিশ্বাস করতেন না এবং
তিনি মোটেও ঘাবড়ে না গিয়ে
কাজের লোকটিকে এটা নিশ্চিত
করতে বলেন যে, সাপটি এখন আর
বাসার ভিতরে নেই। কাজের
লোকটি হাওয়ার্ডের হাত ধরে
তাকে অনুরোধ করেন, “ফারাওদের
সাপ আপনার পাখিটিকে খেয়ে
ফেলেছে কারণ এটি তাদের সমাধি
খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে।
ফারাওদের সমাধিতে তাদের
বিরক্ত করা আপনার উচিত হবে না।”
সত্যিকার অর্থেই ফারাওদের সুরক্ষার
প্রতীক হচ্ছে কোবরা এবং শকুন।
আপনারা তুতেন খামেনের বর্মটির
উপর তাকালেই দেখবেন মাথার উপর
একটি কোবরার প্রতিকৃতি।
হাওয়ার্ড শীঘ্রই লর্ড কার্নার্বনের
কাছে একটি টেলিগ্রাম করেন এবং
তাকে তার আবিষ্কার নিজের
চোখে দেখার জন্য মিশরে আসতে
অনুরোধ করেন। লর্ড কার্নার্বনকে তার
বন্ধু Count Louis Hamon, যিনি "হাত
গণনাকারী" হিসেবে পরিচিত
ছিলেন, মিশর যেতে বারণ করে।
কারণ তিনি দুর্ঘটনাক্রমে জানতে
পারেন যে, লর্ড কার্নার্বন তুতেন
খামেনের সমাধিতে আঘাত পেয়ে
অসুস্থ হয়ে পড়বেন, যা কখনো সেরে
উঠবে না এবং মিশরেই তিনি মৃত্যুবরণ
করবেন।
পাঁচ পাঁচটি বছর যিনি কোনো
প্রাপ্তির আশা না করেই তুতেন
খামেনের সমাধি খোঁজায় অর্থ
ঢাললেন, তার আগ্রহকে দমিয়ে
রাখে - এমন কেউই তখন ছিল না। তাই
লর্ড কার্নার্বন সমস্ত বাধা অতিক্রম
করে মিশরে এসে পৌঁছলেন এবং
হাওয়ার্ডের সাথে ৩০০০ বছরের মধ্যে
এই প্রথম কেউ সমাধিটিতে হস্তক্ষেপ
করল।
ফারাও রাজাদের সমাধিগুলোতে
অভিশাপ ছিল কিনা সন্দেহ ছিল।
কারণ সবগুলো সমাধি অফিসিয়ালি
আবিষ্কারের পর দেখা গেছে,
সমাধিগুলো সীল করার পরেও কেউ
না কেউ প্রবেশ করেছে এবং
বহনযোগ্য সম্পত্তিগুলো নিয়ে গেছে।
যদি অভিশাপ থাকতোও, তাও কারো
না কারো উপর হয়তো বর্ষিত হয়ে
গেছে, যা জানা যায়নি। কিন্তু
তুতেন খামুনের সমাধিটিই ছিল
একমাত্র সমাধি, যাতে তাকে
সমাধিত করার পর আর কেউই প্রবেশ
করেনি। এ কারণেই যিনি একে প্রথম
উন্মোচিত করেছেন, তার উপরই
অভিশাপ আরোপিত হওয়ার কথা এবং
হয়েছেও তাই। সম্ভবত সে কারণেই
তুতেন খামুনের অভিশাপ সবার নজরে
চলে আসে।
যাই হোক, লর্ড কার্নার্বন সমাধিটি
খোলার পর রহস্যজনক হলেও সতিকার
অর্থেই আর বেশিদিন বাঁচেননি।
গালে একটি মশার কামড়ের জন্য
তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেভ করার
সময় মশার কামড়ের স্থানটা কেটে
যায় এবং ইনফ্যাকশন হয়ে একসময়
নিউমোনিয়ায় রূপ নেয়।
শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে
তাকে দ্রুত কায়রো হাসপাতালে
স্থানান্তরিত করা হয়। এ সময় বিতর্কিত
এক ব্রিটিশ লেখিকা ম্যারি কুরেলি
সতর্ক করে বলেছিলেন, "খুবই সম্মানের
সাথে এবং নির্বিঘ্নে শায়িত
একমাত্র অনাবিষ্কৃত ফারাও রাজার
সমাধিতে এবং সেখানে রক্ষিত ধন
সম্পদে হস্তক্ষেপ করায় কিছু আতঙ্ক
চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে, এবং এটা
ছাড়া আমার মাথায় কিছুই আসছে না।
আমার কাছে “The Egyptian History of
the Pyramids” নামে খুবই প্রাচীন এবং
দুর্লভ একটি আরবি বই রয়েছে। যাতে
লিখা আছে “ফারাও রাজার
সমাধিতে যে অনধিকার প্রবেশ
করবে, তার জন্যে অপেক্ষা করছে
সবচেয়ে ভয়ংকর শাস্তি। বইটিতে
কয়েকটি বিষের কথা উল্লেখ আছে
এবং সেগুলো ফারাও রাজার
কফিনে এতই সুচারুভাবে লাগনো
আছে যে, কেউ এটা স্পর্শ করলে সে
জানতেও পারবে না, কীভাবে সে
ভুগতে যাচ্ছে।” সেই জন্যেই আমি
জিজ্ঞেস করছি, “এটা কি সত্যিই
কোন মশার কামড় ছিল, যে কারণে
লর্ড কার্নার্বন এতটা অসুস্থ হয়ে
গেলেন?”
ব্রিটিশ লেখিকা ম্যারি কুরেলির
কথাকে সত্য প্রমাণিত করে তুতেন
খামুনের সমাধি উন্মোচিত করার
মাত্র ৭ সপ্তাহের মাঝেই ৫৭ বছর বয়সী
লর্ড কার্নার্বন প্রচণ্ড কষ্ট পেয়ে
মারা গেলেন। খুবই রহস্যজনকভাবে ঐ
রাতেই হাজার কিলোমিটার দূরে
থাকা তার পোষা কুকুরটি অদৃশ্য
কোনোকিছুর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড গর্জন
করতে থাকে, আর রক্ত হিম করা
ভৌতিক শব্দে আর্তনাদ করতে থাকে।
এভাবেই একসময় মারা যায়।
লর্ড কার্নার্বনের মৃত্যুর সময় সমস্ত
কায়রো শহর বিদ্যুতহীন ছিল। আরো
রহস্যজনক ব্যাপার হল, লর্ড
কার্নার্বনের মৃত্যুর মাত্র দুইদিন পরে
তুতেন খামুনের মমিকৃত দেহটি
পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, মমিটির
বাম গালে কার্নার্বনের মত ঠিক একই
জায়গায় একটি ক্ষত রয়েছে। সারা
বিশ্বের পত্র-পত্রিকায় বিষয়টি খুবই
ফলাও করে প্রচার করা হয়। অনেক
পত্রিকা এটা নিয়ে বাড়াবাড়িও শুরু
করে। তারা প্রচার করে, সমাধির
প্রবেশ পথে হায়াগ্লিফিক হরফে
লিখা ছিল: “Death shall come on swift
wings to him who disturbs the peace of the
King” । পত্রিকাগুলোর মতে, এর অর্থ
বুঝতে পারার সাথে সাথেই
হাওয়ার্ড কার্টার এটি সেখান
থেকে সরিয়ে ফেলেন। কারণ এর অর্থ
বুঝতে পারলে তার সমাধিতে কর্মরত
শ্রমিকদের মনে ভয় জাগ্রত হতে পারে
এবং এতে সমাধি আবিষ্কারের
অভিযান থেমে যেতে পারে।
এ সময় অনেক নামিদামী ব্যক্তি
অভিশাপের অস্তিত্বের পক্ষে
তাদের মত প্রকাশ করেন। এদের অন্যতম
হলেন স্যার অর্থার কোনান ডয়েল,
যার রচিত “শার্লক হোমস” সারা
বিশ্বের মানুষের কাছে এখনো
সবচেয়ে দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা কাহিনী।
প্রায় ৫০০ বছর আগে বিখ্যাত
ভবিষ্যতবক্তা “নস্ট্রাডামুস”ও তার বই
“Quatrain 9.7” এর কবিতায় এ ব্যাপারে
ভবিষ্যতবাণী করে বলেছিলেন: “সেই
ব্যক্তি, যে খুঁজে পাওয়া সমাধিতে
ছুটে আসবে এবং তা উন্মোচিত
করবে, কেউ প্রমাণ করতে পারবে না
কিন্তু তার উপর শয়তান আছর করবে।
হয়তো বা তিনি কোন ব্রিটন বা
নরম্যান কিং হবেন। অভিশাপের
কোন প্রমাণই পাওয়া যাবে না,
কিন্তু অনেকের বিশ্বাসই যথেষ্ট।“
উল্লেখ্য, লর্ড কার্নার্বন একজন
সম্ভ্রান্ত আর্ল সদস্য ছিলেন, যারা
সম্রাটের অবর্তমানে দেশ শাসন
করতেন।
যাক, লর্ড কার্নার্বনের মৃত্যুর পর সব
শেষ হয়ে গেলেও হতো। কিন্তু আরও
অনেক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে
লাগলো। কার্নার্বনের মৃত্যুর কিছুদিন
পর এ অভিযানের আরেকজন
নেতৃস্থানীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ Arthur
Mace হোটেল কন্টিনেন্টালে প্রচণ্ড
রকম ক্লান্তি অনুভব করতে থাকেন
এবং অভিযান দলের ডাক্তার এবং
স্থানীয় ডাক্তারদেরকে হতবুদ্ধ করে
দিয়ে কিছুক্ষণ পরে মৃত্যুর কোলে ঢলে
পড়েন।
George Gould নামক কার্নার্বনের এক
বন্ধু কার্নার্বনের মৃত্যুর কথা জানতে
পেরে মিশরে রওনা দেন। কিন্তু
দুর্ভাগ্য, সমাধিটি দেখার পরের
দিনই তিনি প্রচণ্ড জ্বরের কবলে পড়েন
এবং ১২ ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু ঘটে।
Joel Wood নামক একজন শিল্পপতি
সমাধিটি ভ্রমণ করে দেশে যাওয়ার
পথে প্রচণ্ড জ্বরে মৃত্যুবরণ করেন।
ডাক্তাররা এর জন্য কোন সঠিক
ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি। Archibald Reid
নামক একজন রেডিওলজিস্ট তৎকালীন
সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তুতেন খামুনের
এক্স-রে রিপোর্ট করে তার বয়স এবং
মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা
করেছিলেন। “প্রচন্ড ক্লান্ত” - এই
অভিযোগে তিনি ইংল্যান্ডে
ফিরে যান। কিন্তু ইংল্যান্ডে
অবতরণের কিছুক্ষণ পরেই
রহস্যজনকভাবে তার মৃত্যু ঘটে!
সমাধিটি আবিষ্কারের চার মাস পর
কার্নার্বনের ব্যক্তিগত সেক্রেটারি
Richard Bethell –কে তার বিছানায় মৃত
অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সংবাদ শুনার
পর তার পিতা আত্মহত্যা করেন।
সমাধিটি উন্মোচনের সময় যে কয়জন
লোক উপস্থিত ছিলেন, তার মধ্যে ১২
জনই পরবর্তী ৬ বছরের মধ্যে মারা যান
এবং মৃত্যুগুলো ঘটে অস্বাভাবিক
কারণে। একইভাবে, ২ জন ছাড়া
বাকি সবাইও পরবর্তী ৭ বছরের মধ্যে
অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। লর্ড
কার্নার্বনের সৎ ভাই পাগল হয়ে যান
এবং আত্মহত্যা করেন। পরবর্তীতে খনি
খননের কাজে বিভিন্ন ভাবে জড়িত
প্রায় ২১ জন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন। খনি
খননের কাজে নিয়োজিত সবার মধ্যে
একমাত্র হাওয়ার্ড কার্টারই ১৯৩৯
সালে বৃদ্ধ বয়সে স্বাভাবিকভাবে
মৃত্যুবরণ করেন।
হাওয়ার্ড কার্টার ছিলেন তুতেন
খামুনের সমাধি উন্মোচনের নাটের
গুরু। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তারই
স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। কথা হল, সবাই
তার মত ভাগ্যবান ছিলেন না। যখন
অভিশাপের অস্তিত্ব নিয়ে অসংখ্য
মিশর গবেষক এবং শিক্ষাবিদ সন্দেহ
প্রকাশ করছিলেন, তখন অনেকেই এ
অভিশাপের প্রভাবে মৃত্যুবরণ করছিল।
তুতেন খামুনের সমাধিতে প্রাপ্ত
প্রাচীন নমুনা সমূহ নিয়ে একটি
প্রদর্শনীর আয়োজন করার জন্য ফ্রান্স
মিশরের সাথে একটি চুক্তি করে।
কিন্তু মিশরের প্রাচীন এবং
ঐতিহাসিক দ্রব্যসামগ্রী বিভাগের
পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহীম এর
বিরোধিতা করেন। তিনি স্বপ্নে
দেখেছিলেন, যদি এ দ্রব্য সামগ্রী
মিশরের বাইরে যায়, তাহলে তার
কী ভয়ানক পরিনতি হতে পারে!
কিন্তু তিনি আলোচনা করে
সরকারকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে
আসেন এবং দিনের বেলাতেই খালি
রাস্তায় একটি প্রাইভেট কারের
সাথে ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলেই
মারা যান।
তবে অভিশাপ সম্পর্কিত সবচেয়ে
অদ্ভূত ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল
সম্ভবত Richard Adamson এর বেলায়।
তুতেন খামুনের সমাধি আবিষ্কারের
ঘটনার সাথে জড়িত সবার মধ্যে ১৯৬৯
সাল পর্যন্ত বেঁচে থাকা একমাত্র
ব্যক্তি ছিলেন এই Richard Adamson।
তিনি লর্ড কার্নার্বনের দেহরক্ষী
ছিলেন। তিনি তুতেন খামুনের
অভিশাপের বিরুদ্ধে যখন প্রথমবার মুখ
খোলেন, তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তার
স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন। তিনি যখন
পরবর্তীতে আবার জনসম্মুখে
অভিশাপের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তার
ছেলে একটি বিমান দূর্ঘটনায় কোমর
ভেঙ্গে ফেলে। কিন্তু তিনি তার
পরেও অভিশাপটিকে বিশ্বাস করতে
রাজি ছিলেন না এবং ব্রিটিশ
টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে
আবারও সেই একই কথা বলেন। সেইদিনই
তিনি যখন টেলিভিশন স্টুডিও ছেড়ে
যাচ্ছিলেন, পথে তার ট্যাক্সি
বিধ্বস্ত হওয়ার সময় তিনি ঝাপিয়ে
পড়েন, আর আচমকা দিক পরিবর্তন করা
একটি গাড়ী তার মাথার মাত্র কয়েক
ইঞ্চি দূর দিয়ে চলে যায়। হয়তো
কর্মক্ষেত্র একসময় দেহরক্ষী হিসেবে
দায়িত্ব পালন করায় আত্মরক্ষার কিছু
কায়দা রিচার্ড অ্যাডামসনের
জানা ছিল। শরীরের কয়েক জায়গায়
ফ্র্যাকচার সহ থেঁতলানো অবস্থায়
তাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে
নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই ৭০
বছরের জীবনে প্রথমবারের মত তিনি
অভিশাপটির কথা শিকার করেন।
অভিশাপটির সবচেয়ে বড় প্রমাণ
হিসেবে আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল
১৯৭২ সালে, যখন তুতেন খামুনের
সমাধির মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী লন্ডনের
ব্রিটিশ মিউজিয়ামের খুবই
খ্যাতিমান একটি প্রদর্শনীতে আনা
হয়েছিল। এ ঘটনাটি ঘটেছিল পূর্বে
উল্লিখিত মিশরের প্রাচীন এবং
ঐতিহাসিক দ্রব্য সামগ্রী বিভাগের
পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহীমের
পরবর্তী ঐ একই পদে অধিষ্ঠিত Dr Gamal
Mehrez এর ক্ষেত্রে। তিনি তুতেন
খামুনের প্রতি উপহাস করে
বলেছিলেন, “আমি আমার সারা
জীবন মিশরের প্রত্নতত্ত্ব গবেষণায়
কাটিয়েছি এবং আমি জানি তুতেন
খামুনের অভিশাপ সম্পর্কিত সমস্ত
দুর্ঘটনা শুধু নিছক দুর্ঘটনাই। এগুলো
সত্যিকার অর্থেই কাকতালীয়।”
হয়তো এ কথা বলার কারণেই, অথবা
কাকতালীয়ভাবে ইংল্যান্ডের
রয়েল এয়ার ফোর্স প্লেনে বয়ে আনা
তুতেন খামুনের সমাধির প্রাচীন দ্রব্য
সামগ্রী বোঝাই বাক্সগুলো পরিদর্শন
শেষে পরবর্তী রাতেই তার মৃত্যু ঘটে!
ইংল্যান্ডে সেই রয়েল এয়ার
ফোর্সের বিমানে ক্রু-রাও পরবর্তী
জীবনে অস্বাভাবিক মৃত্যু, শারীরিক
দুর্ঘটনা, দূর্ভাগ্য, দুর্যোগ ইত্যাদিতে
পতিত হন। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট Rick
Laurie চার বছরের মাথায় হার্ট
অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন। কেউ হয়তো
তখন এটাকে তুতেন খামুনের অভিশাপ
বলে মনে করেননি। কিন্তু Rick Laurie
এর স্ত্রী প্রকাশ্যে সবার সামনে
ঘোষণা করেন, তুতেন খামুনের
অভিশাপেই তার মৃত্যু হয়েছে।
যে সময়ে তুতেন খামুনের সমাধির
দ্রব্য সামগ্রী ইংল্যান্ডে আনা
হয়েছিল, সেই ফ্লাইটের প্রধান
টেকনিক্যাল অফিসার “Ian Lansdown”
কৌতুক করে তুতেন খামুনের মৃতদেহ
বহনকারী বাক্সটিকে লাথি মেরে
বলেছিলেন, “দুনিয়ার সবচেয়ে দামি
জিনিসকে লাথি মারলাম হা হা
হা।” কিছুদিন পর অন্য একটি প্লেন
থেকে নামার সময় তার পায়ের
নিচের প্লেনের সিড়িটি
আকস্মিকভাবেই ভেঙ্গে পড়ে এবং
“Ian Lansdown” সেই পা-টি
মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে যায়।
যে ফ্লাইটে করে তুতেন খামুনের
সমাধির দ্রব্য সামগ্রী ইংল্যান্ডে
আনা হয়েছিল, সেই ফ্লাইটে
অবস্থানকারী Jim Webb নামক একজন
ফ্লাইট লেফটেন্যান্টের সমন্ত ধন
সম্পত্তি আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়।
একই ফ্লাইটের Brian Rounsfall নামক
একজন পানীয় ও খাবার
পরিবেশনকারী তুতেন খামুনের
শবদেহ বহনকারী কফিনের উপর কার্ড
খেলেছিলেন বলে স্বীকার করেন।
তিনিও পর পর দু্ইবার হার্ট-
অ্যাটাকের পর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ
করেন। সেই বিমানেরই একজন মহিলা
অফিসারকে একটি গুরুত্বপূর্ণ
অভিযানের পর ইংল্যান্ডের রয়েল
এয়ার ফোর্স টিম থেকে পদত্যাগ
করতে বাধ্য করা হয়।
অনেকেই বলেন অভিশাপ টভিশাপ
বলে কিছু নেই। আর এই ধারণার
সবচেয়ে বড় প্রমাণ হতে পারেন
হাওয়ার্ড কার্টার। সমাধিটি
খোলার বহু আগে থেকেই তিনি এর
উপর কাজ করে আসছিলেন। সমাধিতে
প্রাপ্ত হাজার হাজার দ্রব্যাদির
ক্যাটলগ তৈরি করেছিলেন, কোথায়
কোন জিনিস কীভাবে ছিল তার
ছবি বা নমুনা তৈরি করেছিলেন।
যিনি তার জীবনের এতো সময় ব্যয়
করেছেন তুতেন খামুনের সমাধিকে
কেন্দ্র করে, তার উপরেই তো
অভিশাপ পড়ার কথা সবার আগে!
অন্তত যদি আপনি বিশ্বাস করেন,
অভিশাপ বলে কিছু আছে। তাই না?
কিন্তু এমন কিছুই ঘটেনি।
অভিশাপে বিশ্বাস করে এমন
অনেকেরই ধারণা - খুব সম্ভব মিশরের
প্রতি হাওয়ার্ড কার্টারের
ভালোবাসাই তাকে অভিশাপ
থেকে রক্ষা করেছে। লর্ড কার্নার্বন
তুতেন খামুনের সমাধি আবিষ্কারে
অর্থ সহায়তা দেন ঠিকই, তবে
একেবারেই নিঃস্বার্থভাবে নয়।
তুতেন খামুনের সমাধি আবিষ্কারের
পর তিনি সমাধির সকল দ্রব্যাদি
ইংল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা
করছিলেন। তখন মিশরের ইতিহাস ও
ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হাওয়ার্ড
কার্টার এর বিরোধিতা
করেছিলেন। একজন ইংলিশ হওয়া
সত্ত্বেও ১৭ বছর বয়স থেকেই তিনি
মিশরের বিভিন্ন সমাধির
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষনের জন্য
কাজ করে আসছিলেন এবং জীবনের
শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মিশর নিয়েই কাজ
করে গেছেন। একারণেই
অভিশাপটিকে সম্পূর্ণরূপে অবিশ্বাস
করা সত্ত্বেও মিশরের প্রতি তার
ভালোবাসাই হয়ে গিয়েছিল তাকে
রক্ষাকারী শক্তি। তার কবরের
বেদীর উপর লিখা এপিটাফ থেকেই
তা বোঝা যায়। সেখানে লেখা
আছে, “May your spirit live, May you
spend millions of years, You who love
Thebes, Sitting with your face to the north
wind, Your eyes beholding happiness”।
উল্লেখ্য যে, এই কথাগুলোই তুতেন
খামুনের সমাধিতে লেখা ছিল।
এ অভিশাপটি এমন কোন ব্যাপার না
যে, তা শুধু কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং
অশিক্ষিত লোকেরাই বিশ্বাস করে।
অনেক বিজ্ঞ এবং বিজ্ঞানমনস্ক
মানুষও এটা বিশ্বাস করেন বলে
প্রচলিত আছে। স্যার আর্থার কোনান
ডয়েলের পর এ অভিশাপে
বিশ্বাসীদের অন্যতম হলেন
আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত
প্রত্নতত্ত্ববিদ জাহী হাওয়াজ।
মিশরের বিভিন্ন সমাধি নিয়ে কাজ
করায় তার রয়েছে দীর্ঘদিনের
অভিজ্ঞতা।
২০০৫ সাল তুতেন খামুনের শবদেহের
সর্বশেষ যে ত্রিমাতৃক CT Scan করা হয়,
সেই দলের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন
তিনি। হাওয়াজ বলেন “আমি
অভিশাপের সম্ভাবনা নাকচ করে
দিচ্ছি না, কারণ আজকে আমার
জীবনে বহু কিছু ঘটে গিয়েছে।
আজকের দিনে আমাদের দল খুবই
মারাত্মক একটি দুর্ঘটনায় পড়ে
গিয়েছিল। কিন্তু সামান্যর জন্য
আমরা বেঁচে গিয়েছি। আমরা যখন CT
Scan করছিলাম, তখন বাইরে প্রচণ্ড ঝড়
শুরু হয়েছিল। আমাদের CT Scan করার
কম্পিউটারটি কোন কারণ ছাড়াই
দু’ঘন্টা ধরে সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল।” সবশেষে
তিনি বলেন যে, “I think we should still
believe in the curse of the Pharaohs.”
তুতেন খামুনের অভিশাপ নিয়ে রহস্য
রয়ে গেছে, এবং থাকবে। কারণ
বছরের পর বছর ধরে একই সমাধির দ্রব্য
সামগ্রীর সাথে জড়িত অসংখ্য মানুষ
কাকতালীয়ভাবে মারা যাচ্ছে,
এটা বিশ্বাস করার চেয়ে অভিশাপে
বিশ্বাস করা অনেক সহজ। হয়তো
সত্যিই ৩৫০০ পূর্বের পবিত্রভাবে
শায়িত ফারাও মমিগুলোকে
রক্ষাকারী এক অন্ধকার এবং অতি-
প্রাকৃত শক্তি পৃথিবীর বুকে সবার
অগোচরে অফুরন্ত রহস্যের এবং
দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়ে এখনো রয়ে
গেছে!

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩৯

আবু তালেব শেখ বলেছেন: ইতিহাস জানা আমার বরাবরই একটা নেশা। ভাল লাগলো। আখেন আটেনের রাজ্যত্ব সময় মনে হয় নবী ইউসুফের আগমন হয়। আমুন পুজা ছেড়ে তার কাছে শাফায়ত গ্রহন করে। আতেন কথার অর্থ একেশ্বরবাদ।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২৭

সাহাবুব আলম বলেছেন: পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:১৪

মিথী_মারজান বলেছেন: খুব ভাল লাগল আপনার লেখাটি।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২৮

সাহাবুব আলম বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:১৯

গঢভবণণ বলেছেন: https://youtu.be/ooBJjcAyCoQ

আপনি কি 3D তে অঙ্কন করতে চান? আপনার উত্তর যদি হ্যা হয় তাহলে এই ভিডিওটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। সবচেয়ে সহজ ভাবে আপনার এন্ড্রয়েড ফোন দিয়ে এক মিনিটেই অঙ্কন করতে পারবেন আপনার ইচ্ছ মতো 3D আ্যাট।এবং পাঠিয়ে দিতে পারবেন আপনার বন্ধুর নিকট। আর অবাক করে দিন আপনার বন্ধুকে।

https://youtu.be/ooBJjcAyCoQ

৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২১

এম আর তালুকদার বলেছেন: এত সুন্দর একটা পোষ্টের জন্য অসংখ্য ধন্যবান। কিছু কিছু লাইন কয়েকবার করে পড়ে ভাল ভাবে বোধগম্য করার চেষ্টা করেছি। খুব খুব ভাল লাগলো।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২৮

সাহাবুব আলম বলেছেন: পাঠ ও
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

৫| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪২

টারজান০০০০৭ বলেছেন: ভালো লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.