![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শীর্ষ স্থানীয় ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ডাচ-বাংলা ব্যাংক ৭০০ শিক্ষানবিস কর্মকর্তার সঙ্গে প্রতারণা করছে। ব্যাংকটিতে ২ বছর ধরে চাকরি করলেও এ সব শিক্ষানবিস কর্মকর্তাদের চাকরি স্থায়ী করা হচ্ছে না। এতে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এই বিষয়ে দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে. সামসি তাবরিজের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কে. সামসি তাবরিজ বলেন, ‘এই বিষয়ে কোনো কথা আমি বলতে চাই না’।
জানা গেছে, ২০১০ সালের ১১ আগস্ট ‘দৈনিক প্রথম আলো’ ও ‘দ্য ডেইলি স্টার’ পত্রিকায় ডাচ-বাংলা ব্যাংক ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট রিলেশনশিপ অফিসার’ (এআরও) পদে লোক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়। এরপর সারাদেশে ৭০০ জনকে ওই পদে নিয়োগ দেয়।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির চুক্তি অনুযায়ী, এআরও পদে নিয়োগের ২ বছর পূর্ণ হওয়ার পর ৭০০ জনকে ‘ট্রেইনি অফিসার’ (টিও) পদে স্থায়ী করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু এখন এই পদে চাকরিতে স্থায়ীর নামে কর্মকর্তাদের মানসিক নির্যাতন করছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক।
দ্য রিপোর্টের প্রতিবেদকের কাছে শিক্ষানবিস কর্মকর্তাদের নিয়োগপত্রের কপি রয়েছে।
শিক্ষানবিস কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এই ৭০০ জন কর্মচারী ২ বছর পর যখন বুঝতে পারে তাদের চাকরিতে স্থায়ী করা হবে না, তখন কোনো পথ না পেয়ে তারা গত ২৩ এপ্রিল সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দাবি আদায়ের জন্য মানববন্ধন করে।
জানা যায়, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের চাকরি স্থায়ী করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা করছে না। ডাচ-বাংলা ব্যাংক ৭০০ কর্মকর্তার মধ্য থেকে কিছু সংখ্যককে চাকরিতে স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির চুক্তি অনুযায়ী, ট্রেইনি অফিসার (টিও) পদে নয়। এবার তারা সৃষ্টি করেছে দুটি নতুন পদ- ‘জুনিয়র ক্যাশ অফিসার (জেসিও)’ ও ‘ট্রেইনি ক্যাশ অফিসার (টিসিও)’।
এই নতুন দুটি পদে বেতনের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ট্রেইনি অফিসার’ পদের প্রায় অর্ধেক।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ‘শিমরাইল’ শাখায় অ্যাসিস্ট্যান্ট রিলেশনশিপ অফিসার পদে কর্মরত একজন দ্য রিপোর্টকে জানান, কর্তৃপক্ষের প্রতারণার বিরুদ্ধে আমরা মানববন্ধন করেছি। কিন্তু মানববন্ধন কর্মসূচিতে ৭০০ জনের মধ্যে মাত্র ১৫০-২০০ জন আসতে পেরেছিল। বাকিদের অনেককেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মানববন্ধনে অংশ না নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়। এমনকি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অনেককে মানববন্ধনে আসা থেকে বিরত রাখার জন্য তাদের নিজ নিজ কর্মরত শাখায় তালা মেরে আটকে রেখেছিল।
ব্যাংকটির কারওয়ান বাজার শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, মানববন্ধন করার পর আমাদের নানা ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, আমরা যেন নিজ থেকেই চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে দেই। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব। ২ বছর অপেক্ষার পর অন্য চাকরিতে আবেদন করার মতো বয়স অথবা সময় কোনোটিই আমাদের এখন আর নেই। আমরা এখন মানসিক এবং আর্থিক নির্যাতনের শিকার। আমাদের ভবিষ্যৎ শঙ্কিত।
তিনি জানান, কোণাবাড়ি শাখায় অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে কর্মরত ‘মোমি’ নামে এক কর্মকর্তা যখন জানতে পারলেন যে, চাকরি স্থায়ী হবে না তারপর তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তিনি এখন নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মতিঝিল শাখায় এআরও পদে কর্মরত একজন জানান, ডাচ-বাংলা ব্যাংক এই মানববন্ধনে যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এমন চারজনকে অলিখিতভাবে চাকরি থেকে ছাঁটাই করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন মতিঝিল প্রধান অফিস, কোণাবাড়ি শাখা, গুলশান শাখা ও শিমরাইল শাখায় এআরও পদে কর্মরতরা। এমনকি তাদের অফিসে ঢুকতেও দিচ্ছে না।
জানা গেছে, ৭০০ শিক্ষানবিস কর্মকর্তাকে মানসিক ও আর্থিকভাবে নির্যাতনের পেছনে ব্যাংকটির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর-১ শিরিন আহমেদ জড়িত। ডাচ-ব্যাংলা ব্যাংকের যে মোবাইল ব্যাংকিং প্রক্রিয়াটি রয়েছে এটা মূলত শিরিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে। শিরিন আহমেদ এআরও পদ থেকে ‘ট্রেইনি অফিসার’ পদে নিয়োগের বদলে ‘জুনিয়র ক্যাশ অফিসার’ ও ‘ট্রেইনি ক্যাশ’ অফিসার পদে প্রায় অর্ধেক বেতনে নিয়োগের প্রস্তাব করেছেন।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর শিরিন আহমেদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি দেখা দেননি। একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ ছাড়া মুঠোফোনে ম্যাসেজ পাঠালেও এ বিষয়ে তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
©somewhere in net ltd.