![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সংস্কৃতি : সম্পর্কিত আলোচনা
........................
‘সংস্কৃতি’ শব্দটি গঠিত হয়েছে ‘সংস্কার’ শব্দ থেকে ‘সংস্কার’ অর্থ শুদ্ধি, পরিষ্করণ, মার্জন, ব্যাকরাণাদির শুদ্ধি, ভুল সংশোধন, মেরামত, ব্যুৎপত্তি, কর্ম ও স্মৃতিজ মনোবৃত্তি, স্বভাবসিদ্ধ স্থায়ীভাব। আর ‘সংস্কৃতি’ অর্থ সংস্করণ, সংস্কারকরণ, বিশুদ্ধিকরণ, অনুশীলন লব্ধ দেহ-মন-হৃদয় ও আত্মার উৎকর্ষ। ‘সংস্কৃতি’ শব্দটির আরেকটি অর্থ ‘কৃষ্টি’। এ শব্দটির ‘বৃষ’ ধাতু নিষ্পন্ন। এর অর্থ ভূমি কর্ষণ, হালচাষ, কৃষিকর্ম, অনুশীলন, মানবতার সর্বাঙ্গীন উৎকর্ষের সাধনা ইত্যাদি। এ দিক থেকে বিচার করলে সংস্কৃতি ও কৃষ্টি প্রায় সমার্থবোধক হলেও সাধারণ্যে সংস্কৃতিই বহুল প্রচলিত। বাংলায় ‘কৃষ্টি’ শব্দটি সংস্কৃতির চাইতে বেশি অর্থবোধক। কিন্তু শব্দটিতে যেহেতু কর্ষণ ও কৃষি অর্থ জড়িত তাই অনেকেই এর প্রতি বিমুখ।
সংস্কৃতি মূলত সংস্কৃত ভাষার শব্দ। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো কালচার Culture এটি জার্মান কুলটুর Kultor শব্দ থেকে আতগত। এর আরবী প্রতিশব্দ হলো আস সাকাফা। এর সাধারণ বোধগম্য অর্থ হলো, মার্জিত রুচি ও উত্তম স্বভাব। ভদ্রজনিত আচার আচরণের অর্থেও শব্দটি ব্যবহার করা হয়। যেমন অশিক্ষিত ও অমার্জিত স্বভাবের লোকদেরকে Uncultured এবং সুশিক্ষিত, সুরুচি সম্পন্ন ও ভদ্র আচরণ বিশিষ্ট মানুষকে Cultured Man বলা হয়। আসলে এ তিনটি (সংস্কৃতি, কালচার ও সাকাফাহ) শব্দেই ঠিকঠাক করা, সংশোধন করা ও পরিশুদ্ধ করার অর্থ নিহিত রয়েছে। এর পারিভাষিক সংজ্ঞাতেও এ অর্থটি পুরোপুরি রক্ষিত হয়েছে।
পরিভাষায় বিশ্বাসলব্ধ মূল্যবোধে উদ্ভাসিত, পরিশীলিত ও পরিমার্জিত মন-মানসিকতাকেই সংস্কৃতি বলা হয়। প্রখ্যাত দার্শনিক কবি T.S Eliot এর মতে সংস্কৃতি ও ধর্ম সমার্থবোধক না হলেও ধর্ম সংস্কৃতিরই উৎস। সংস্কৃতি রাষ্ট্র-শাসন পদ্ধতি, ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা এবং দর্শনমূলক আন্দোলনেও প্রভাবিত হতে পারে। মি. ফিলিপ বাগবী তাঁর Culture and History নামক গ্রন্থে Concert of Culture শীর্ষক এক নিবন্ধে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন: সর্বপ্রথম ফরাসী লেখক ভলটেয়ার ও ভ্যানভেনার্গাস এ শব্দটির ব্যবহার করেছেন। এদরে মতে মানসিক লালন ও পরিশুদ্ধ করণেরই নাম হচ্ছে কালচার। অনতিবিলম্বে উন্নত সমাজের চাল-চলন, রীতি-নীতি, শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিক্ষা ইত্যাদিও এ শব্দের আওতায় গন্য হতে লাগল। অক্সফোর্ড ডিকশনারীর সংজ্ঞা মতে বলা যায়, ১৮০৫ সন পযর্ন্ত ইংরেজী ভাষায় এ শব্দটির কোন ব্যবহার দেখা যায়না। সম্ভবত ম্যাথু আর্ণল্ড ক্যালচার পরিভাষাটি প্রথম ব্যবহার করেছন। সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত এ শব্দটি অস্পষ্ট রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা নিজ নিজ রুচি অনুযায়ী এর সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তবে মি. ফিলিপ বাগবী এর একটি চমৎকার সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তাঁর মতে কালচার বলতে যেমন চিন্তা ও অনুভূতির সকল দিক বুঝায়, তেমনি তা কর্মনীতি, কর্ম পদ্ধতি এবং চরিত্রের সকল দিককে ও পরিব্যাপ্ত করে। কালচার বা সংস্কৃতি শব্দের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করায় সবচেয়ে বেশি অসুবিধা দেখা দেয় এই যে, তার পূর্ণ চিত্রটি উদঘাটন করার জন্য মন ঐকান্তিক বাসনা বোধ করে বটে, কিন্তু তার বাস্তব অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য বিশেষজ্ঞরা খুব বেশী বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই সংস্কৃতির বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতাকে নাম দেয়া হয়েছে কালচার বা সংস্কৃতি। আসলে এগুলো সংস্কৃতি নয় সংস্কৃতির বাহন মাত্র। তবে উল্লেখিত সংজ্ঞার আলোকে সংক্ষেপে আমরা বলতে পারি যে, মানব জীবনের সার্বিক কার্যক্রমের পরিমার্জিত রূপই হচ্ছে সংস্কৃতি।
©somewhere in net ltd.