নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দুঃসাহসী স্বপ্ন দেখা তরুণ

সাইফুল ইসলাম জুয়েল

দুঃসাহসী স্বপ্ন দেখা তরুণ। জন্ম \'সাগরকন্যা\' পটুয়াখালী জেলায়। স্বপ্নচারী। ভ্রমণপ্রেমী। অলস। ভীষণ ঘুমকাতুরে। ভালো লাগে গল্পের বই পড়তে। সবথেকে বেশি পছন্দ করি রহস্য-রোমাঞ্চ-থ্রিলার ও রম্য লেখা।

সাইফুল ইসলাম জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্য গল্প : লাখপতি অফার!

৩০ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:০৬

কেল্টু মামা যে আমার নানার এগারো ছেলেমেয়ের মধ্যে সব থেকে ছোট, এ কথা অনেকেই জানেন। কিন্তু যেটা জানেন না, সেটা হলো-মামা ছোট হলেও তার ছোট থাকার কোনো মানসিকতা নেই। মামা সাইজে ছোট, ঠিক যেন আফ্রিকার পিগমি জাতির কোনো এক সদস্য ভুল ক্রমে বাংলাদেশে এসে পড়েছেন! মামা পরীক্ষায় ঝাড়া ফেল করেছেন, যে কারণেই মূলত তার কেল্টু নামের উদ্ভাবন হয়। নানা মামাকে দৈনিক হাত খরচের জন্য যে টাকা দেন, তাতে আমাদের এক মাস চলে যায়। কিন্তু মামা তাতেও সন্তুষ্ট নন। তার মতে, তিনি খুব গরিবী হালদে আছেন। তাকে বড়লোক, মানে ম্যালা টাকা-পয়সার মালিক হতে হবে। আবার, এ যুগে মানুষ পড়ালেখা ছাড়া কাউকে ‘সামনের কাতারের মানুষ’ বলে গণ্য করেন না। মামা চান তিনিও পড়ালেখা করে সামনের কাতারের এই বড় লোক (মানুষ) হবেন। প্রায়ই তিনি আফসোস করে বলেন, ‘ক্যান যে এই যুগে জন্মাইলাম না, তাইলে দুই-চাইরটা এ প্লাস নির্ঘাত পাইতাম।’
তার কথা শুনে আমরা তো অবাক। তানি আপু শেষে বলেই বসলেন, ‘মামা, তুমি তো কখনো পাসই করতে পারো নি, এ প্লাস পাবে কেমনে?’
কথা শুনে মামা চোখ দুটি বড় বড় করে তানি আপুর দিকে তাকালেন। মনে হলো-এই বুঝি মামা তাকে ‘ম্যাঙ্গো ক্যান্ডি’ বানিয়ে কাঁচা খেয়ে ফেলবেন! বললেন, ‘পাস তো আমি এমনিতেও করতে পারতাম। কিন্তু আমিই করতে চাইনি।’
‘করতে চাও নি! অ্যা বললেই হবে! যত্তসব চাপা।’, এবারে মিরাজ ভাই কথাটা বললেন। তা শুনে মামার জবাব, ‘তুই তো ছ্যাঁকা খেতে চাসনি। কিন্তু খেয়েছিস তো!’
মিরাজ ভাইয়ের কাঁটা গায়ে নুনের ছিটা পড়ায় তিনি একেবারে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন, ‘তো, কী হয়েছে তাতে?’
মামা মুচকি হেসে বললেন, ‘কেল্টু কোনো কিছু তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে হতে দেয় না। আমার তখন ইচ্ছে হয়েছিল-পাস করবো না, তাই ফেল করেছি। কিন্তু এখন পাস করতে চাইছি। মুড়ি-মুড়কির মতো যেখানে এ প্লাস পাওয়া যায়, সেখানে এই কেল্টু নির্ঘাত ‘ই’ গ্রেড হলেও পাবে!
‘ই’ গ্রেড বলে যে কোনো গ্রেড নেই, সেই ভুলটা আর মামাকে ধরিয়ে দেবার সময় পেলাম না। তার আগেই আহত বাঘ মিরাজ ভাই বলে উঠলেন, ‘ধান ছড়ালে তো চড়–ইয়ের পাশাপাশি দুই চারটা কাকের দেখা মিলবেই। তাই বলে তো আর ধানের মান কমে না।’
মামা এবারে একটু দমে গেলেন। একেবারে ভিজে বিড়ালের মতো বললেন, ‘আমি একবার স্বপ্নে দেখেছিলাম, বাবা-মায়ের আকিকা দেওয়া নামটা আমার জন্য শুভ নয়, একেবারে অপয়া। সে কারণে নামটা কীভাবে চেঞ্জ করা যায়, তা নিয়ে আমার গুরু ‘ওলা ওলা বাবা’র কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েই ফেল করেছিলাম। নচেৎ আমিও কাক নয়, বরং চড়–ই পাখিই হতে পারতাম...।’
মামার এই দুঃখি মার্কা কথা শুনে মনটা গলে গেল। কিন্তু মিরাজ ভাই দমলেন না, তিনি বললেন, ‘মামা, শেষ পর্যন্ত তুমি নানার এমন একটা নাম দিয়ে দিলে? নিজের নামটা চেঞ্জ হয়ে গেছে, এখন বাপের টাও!!!’
তানি আপুও বললেন, ‘ওলা ওলা! ছিঃ নানার জন্য তুমি এমন বিচ্ছিরি নাম রাখতে পারলে, তোমার সাথে কোনো কথাই নেই।’
মামা এবার যেন খাদে পড়ার মতো অবস্থা। তিনি বললেন, ‘আরে, আমি আমার বাবার কথা বলছি না।’
‘তাহলে আবার কোন বাবার কথা বলছো? কোনো পাতানো বাবা?’, আমি বললাম।
মামা বললেন, ‘আরে তাও নয়। এই ‘ওলা ওলা বাবা’ হলেন একজন মহামান্য জ্যোতিষী। যিনি মানুষের মুখ দেখে তার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত সবকিছু বলে দিতে পারেন।’
মামার এই জ্যোতিষীর দোহাই দেওয়া আমাদের পছন্দ হলো না। শেষে মামা ঠিক করলেন, তার সেই ওলা ওলা বাবার কাছে নিয়ে যাবেন আমাদেরকে।

দুই
ওলা ওলা বাবাকে দেখে আমার বাক শক্তিই যেন রোধ হয়ে গেল। আমাদের পাশের গ্রামের একটি শতবর্ষী বটগাছের নিচে চট বিছিয়ে পদ্মাসনের ভঙ্গিতে বসে আছেন তিনি। মাথার চুলে ঝট ধরেছে। কতগুলো মাছি সেই চুলকে খাবার মনে করে চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। তার চুলে মাখা সর্ষে তেলের গন্ধে পিঁপড়ের দল লাইন দিয়েছে।
মামাকে দেখে ওলা ওলা বাবা একটা থালা এগিয়ে দিলেন, তাতে কয়েকটা শব্দ লেখাÑনারী, টাকা, চাকরি, ক্ষমতা আরো কত কী।
মামাকে দেখলাম ইতস্তত ‘নারী’ লেখা কাগজটিই ধরতে চাইছেন! মিরাজ ভাইকে তিনি যতোই উপহাস করুক না কেন, তারও তো মনে প্রেম বলে কিছু আছে! তবে একমুহূর্ত তিনি মিরাজ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ‘টাকা’ লেখা কাগজটিই টেনে তুললেন। কাগজটি হাতে নিয়ে ওলা ওলা বাবা একমুহূর্তে গম্ভীর হওয়ার ভান করে বললেন, ‘তুই তো লাখপতি হয়ে যাবিরে বাছা।’
মামা কথাটি শুনেই বানরের মতো লাফ দিয়ে উঠলেন। বললেন, ‘সত্যি! আমি বড়লোক হবো। বাহ। আচ্ছা, আজ তাহলে যাই...।’ আমরা ফিরে আসার জন্য পা বাড়ালাম।
হঠাৎ সেই ওলা ওলা বাবা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন, ‘আরে বাবা, আমার হাদিয়া না দিয়ে গেলে তো, তোর সব টাকাই আমার হয়ে যাবে।’
এবারে মামা ভরকে গেলেন। পকেট হাতরে পেলেন মাত্র তেত্রিশ টাকা। তা দেখে জ্যোতিষ বাবার মেজাজ চড়মে, ‘তোর কপালে শনির দশা আছেরে...উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ ওলা বাবাকে তুই ভিক্ষে দিচ্ছিস!’
‘আমার কাছে তো এর বেশি টাকা নেই।’ এই পর্যন্ত বলে কেল্টু মামার চোখ জোড়া কেন যেন চকচক করে উঠলো। তারপর আমাদের সবার পকেট হাতরে পেলেন আরো ঊনসত্তর টাকা। সব মিলিয়ে হলো একশত দুই টাকা। মামা এক টাকা নিজের হাতে রেখে বললেন, ‘এই নিন আপনার একশত এক টাকা।’
ওলা বাবা এবার যেন আকাশ থেকে পড়লেন। ‘তোকে আমি লাখপতি বানাচ্ছি। আর তুমি আমাকে এই কয় টাকা দিচ্ছিস। ভস্ম হয়ে যাবি রে তুই। টাকা পয়সা কিছুই পাবি নারে।’
মামা আরো ভয় পেলেন। তাকে টাকার লোভে ধরেছে। মানে, তিনি হয়তো ওলা ওলা বাবার ফাঁদে পড়তে যাচ্ছেন। বললেন, ‘কত দিতে হবে বাবা?’
‘কাল রাতে চাঁদ ঢোবার আগে তুই আমাকে আরো দশ হাজার এক টাকা দিবি। না হলে এই টাকা একশত গুণ করার মন্ত্র পড়তে পারবো না আমি। তোর কপালে কিছুই জুটবে না। আর যত বেশি টাকা দিবি, টাকা ততগুণ বেশি হবে।’
মামা পড়ে গেলেন মহা চিন্তায়। ‘আগামী কালের মধ্যে এত টাকা কোথায় পাবো?’
‘জমি বেচে দে।’ ওলা ওলা বাবা নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন।
‘তাহলে যে আমি লাখপতি নয়, ভিখিরি হয়ে যাবো।’
‘হয়ে যাবি, তাতে আমার কী। তুই লাখপতি হলেও তো আমাকে টাকায় ভাসিয়ে দিচ্ছিস না। দশ হাজার টাকা আর এমন কী!’
‘আচ্ছা দেখি।’
আমরা চলে আসছিলাম। পেছন থেকে ওলা ওলা বাবা বলে উঠলেন, ‘ওরে নচ্ছর, ওই এক টাকা দিয়ে যাচ্ছিস না ক্যারে!’
মিরাজ ভাই টাকাটা মামার হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বললেন, ‘আমাদের পাড়ায় আজ একটা ক্রিকেট ম্যাচ আছে। এটা দিয়ে টচ হবে।’
সেদিন আর কিছুই হলো না। পরদিন শুনিÑনানা তার সমস্ত সম্পত্তি সাবাইকে ভাগ করে দিয়েছেন। কেল্টু মামাও বিরাট অংশ পেয়ে রাতারাতি বড়লোক হয়ে গেছেন।
আমি বললাম, ‘মামা, তুমি তো লাখপতি হয়ে গেলে। নিশ্চয় ওলা ওলা বাবার কীর্তি!’
‘আরে রাখ তোর ওলা ওলা বাবা। ওই ব্যাটা তো মহা ভণ্ড। এখন চল আমার সাথে।’
‘কোথায়?’
‘ব্যাটা মন্ত্র পড়ার আগেই লাখপতি হয় গেলাম। এবার ওর থেকে আমার একশ এক টাকা ফেরত আনতে হবে!’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.