নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দুঃসাহসী স্বপ্ন দেখা তরুণ

সাইফুল ইসলাম জুয়েল

দুঃসাহসী স্বপ্ন দেখা তরুণ। জন্ম \'সাগরকন্যা\' পটুয়াখালী জেলায়। স্বপ্নচারী। ভ্রমণপ্রেমী। অলস। ভীষণ ঘুমকাতুরে। ভালো লাগে গল্পের বই পড়তে। সবথেকে বেশি পছন্দ করি রহস্য-রোমাঞ্চ-থ্রিলার ও রম্য লেখা।

সাইফুল ইসলাম জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেলফি কর্নার : উড়ব আমি বাধন হারা

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:৩১

ফরমান আলীর মনটা খুবই খারাপ আজ। মাঝে কয়েকটা দিন শরীরটা খুব খারাপ ছিল। ডাক্তান কড়া হুশিয়ারী দিয়েছেন, বেড ছেড়ে ওঠা যাবে না। ডাক্তারের ফরমান ফরমান আলী ভালোভাবেই পালন করেছেন। কিন্তু আজ কেন জানি তার মনটা ওই চারহাত জায়গার ভেতরে টিকছিল না। তখনও ভোরের আলো পৃথিবীর বুকে এসে পৌঁছায়নি। ফরমান আলী চুপি চুপি তার বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েন। বন্ধ দরজার ছিটকিনিটা সাবধানে খুলে বের হয়ে যান বাইরে।

ভোরের প্রকৃতিটা কেমন যেন খুব রহস্যময়। খুব বেশি মায়ায়ভরা। ফরমান আলী হাঁটতে হাঁটতে বাসার কাছাকাছি পার্কটাতে চলে আসেন। রোজ ভোর রাতের আগ আগ শহরের কাকগুলো জেগে উঠে ‘কা কা’ রেওয়াজ শুরু করে দেয়। কাকের ডাকটা কর্কশ। কিন্তু তাদের দায়িত্বটা কী মহান! ওরা জানে, সকাল বেলা এই শহরবাসী ঘুম থেকে উঠে যখন রাস্তায় বের হবে, তখন তারা কোনো দুর্গন্ধ পছন্দ করবে না। তারা চাইবে না কোনো মরা ইঁদুর তাদের চলার পথে পড়ে থাকুক। অথচ এই ময়লাগুলো তারাই সৃষ্টি করেন। উপর তলা থেকে কোনো বাছবিচার ছাড়াই নিচে ছুড়ে মারেন ময়লা ভর্তি পলিথিন ব্যাগটি। সেটা কোথায় পড়লো, কোনো পঁচা ডিম তাদেরই মতো কোনো পথচারীর মাথায় পড়লো কিনা সেটা তারা ভেবে দেখেন না। তারা ভাবেন, এটা ছুড়ে মারলে স্রেফ হাওয়া হয়ে যাবে! শহরের এই অপাংক্তেয় প্রাণীগুলো মানুষের মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্যই বুঝি অতি ভোরে তাদের কাজ শুরু করে দেয়। বেডে শুয়ে শুয়ে ফরমান আলী রোজ শুনেন, কাকদের ভোরে ওঠার পরে তাদের কাজ করার শব্দ। আসলে তো তারা ‘কা কা’ করছে না, নিজেদের কাজের সময় তারা একে অপরকে তাড়া দিচ্ছে। তাদের ভাষাটা হয়তো আমাদের কাছে কানে এসে পৌঁছে হয়- ‘কা কা কা...’

পার্কের ভেতরে ফরমান আলীর মতো আরো গুঁটিকতক মানুষ্যকুল আছেন। কিছু কাক দূরে বসে ‘কা কা’ করছে। ফরমান আলীর বয়োবৃদ্ধ কানেও সে শব্দ এসে আঘাত করছে। মাঝে মাঝে কয়েকটা কাকের বেশধারী কোকিল কুহু কুহু করে উঠছে। এখানেও তো কাকদের সেই মহত্ব! গ্রাম থেকে কোকিল বিলুপ্ত হতে চলেছে। ফরমান আলীর মনে হয়Ñদেশে যতো কোকিল আছে তার আশিভাগই এখন শহুরে হয়ে গেছে! আসলে যতদিন এই শহরে কাক থাকবে, ততদিন তারাও টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত হবে...। কিন্তু কতদিন টিকবে তাদের সেই সংগ্রাম? তবে ফরমান আলী জানেন, যতোদিন শহুরে ডাস্টবিনগুলো ময়লার পরিপূর্ণ থাকবে, ততদিন কাকের বিলুপ্তি ঘটবে না।

ফরমান আলী গত দুইটা ঘণ্টা ধরে পার্কের আনাচে কানাচে খুঁজলেন। কিন্তু কোথাও কোনো দোয়েলের দেখা পেলেন না। অথচ এই দোয়েলই কিনা আমাদের জাতীয় পাখি। ফরমান আলীর মনে জাগে- হয়তো একদিন দোয়েলের জায়গায় অন্য কোনো পাখিকে জাতীয় পাখি বলে ঘোষণা করতে হবে। আর সেটা কাক হবার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু দোয়েল কী দোষ করলো? শহুরে আ্রগাসনে সে আজ বিপন্ন। শুধু দোয়েল কেন- শালিক, শ্যামা, বুলবুলি, বউ কথা কও, ফিঙে, ঘুঘু সহ কতো কতো পাখি আজ আমাদের চোখের আড়াল হয়ে আছে। ফরমান আলী ভাবেন, আচ্ছা তারা কী স্বেচ্ছায় নির্বাসনে আছে, নাকি বিলুপ্ত হতে চলেছে? যেই চড়–ইয়ের গায়ে শহুরে অভিজাত পাখির তকমা সেটে গিয়েছিল, আজ তারই বা সেই দাপট কোথায়?

বাসায় ফিরে আনমনে সদ্য হকারের দিয়ে যাওয়া পত্রিকাটি হাতে নেন তিনি। একটা দৃশ্য দেখে চোখের পানি আটকে রাখতে পারেন না। কয়েকদিন আগে শিলাঝড়ে একটি পাখি অভয়াশ্রমের কয়েক হাজার পাখি মারা গেছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে- সবগুলো পাখি মরে নিচে পড়ে আছে। প্রকৃতি না হয় মাঝে মাঝে এমন নিষ্ঠুর আচরণ করে ফেলে, কিন্তু মানুষ? রোজ তো মানুষের হাতেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হাজারো পাখি নির্মমতার শিকার হয়ে চলেছে। শহুরে আগ্রাসন, অপরিকল্পিতভাবে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার, বন উজার আর পাখি চোরা শিকারীদের দ্বারা পাখিরা মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াবার অধিকার হারাচ্ছে। যেই পরিমাণ পাখি মারা গেল, তার চেয়ে বেশি পাখি ‘পাখি ব্যবসায়ীদের’ জিম্মায় আটকে আছে। ওরা কি কখনো উড়ার স্বাধ পাবে?

উত্তরটা ফরমান আলীর জানা নেই।



http://epaper.ittefaq.com.bd/#

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.